বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম সিলেকশনের সময় যদি পারফরমেন্সে এগিয়ে থাকা ক্রিকেটারদের টিমে দেখতে চান; তবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের সময় না কেন? এক দেশে দুই নিয়ম কেন? ক্রিকেট টিমই কি শুধু বাংলাদেশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে? বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তারা করে না?
বাংলাদেশে ক্রিকেট টিমের ১১ সদস্যের দলে সাকিব, তামিম, মুশফিকের ও মাশরাফি এর পরিবর্তে কোনমতে ক্রিকেট ব্যাট ধরে ক্রিজে দাঁড়াইতে পারে কিংবা বল ছুড়ে মারতে পারে এই রকম যোগ্যতার ৩ জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কিংবা নাতি-নাতনি; ১ জন উপজাতি; ও ১জন জেলা কোটায় ১ খেলোয়াড় যোগ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমকে বিশ্বকাপে খেলতে পাঠানো হয় তবে সেই ক্রিকেট দল দেশ ও জাতিকে কি পারফরমেন্স উপহার দিবে তা নিশ্চয় বলে দিতে হবে না।
মেধা তালিকায় ৫০০/১০০০ সিরিয়ালের একজনকে কোটায় ফরেন সার্ভিসে নিয়োগ দিয়ে বৈদেশিক মিশনে পাঠালে সে কূটনৈতিক কর্মকর্তা দেশের স্বার্থ কতটুকু রক্ষা করবে সেটা বোঝার জন্য রকেট সাইন্টিস্ট হতে হয় না।
যোগ্য মানুষ থাকার পরেও অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতার মানুষদের কাছ থেকে সরকারি সেবা নিতে বাধ্য করা হবে দেশের করদাতারা?
=======================================================================
একজন কোটারি ও একজন মেধাবী ছাত্রের উদাহরণ (প্রথম জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় জন বুয়েটের)
=======================================================================
মেধা তালিকায় ভর্তি বুয়েটের ছাত্রটি যখন সারা বিশ্বে নিজের যোগ্যতার সাক্ষর রাখে তখন পোষ্য কোটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ছাত্রটি নিজের বিভাগের ১২ ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে অনার্স শেষে হয় ১২ তম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের কোন এক বিভাগে পোষ্য কোটায় এক শিক্ষকের ছেলেকে ভর্তি করা হয়; যে ভর্তি পরীক্ষায় টাইনা-টুইনা পাস নম্বর অর্জন করেছিল (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পাস নম্বর ৪০)। ঐ বিষয়ে ভর্তি হওয়া অন্য সকল ছাত্র-ছাত্রী ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় প্রথম ১০০ এর মধ্যে অবস্থান করা। ৪ বছরের অনার্স শেষে দেখা গেছে কোটারি ঐ ছাত্র তার ক্লাসে পিছন দিক থেকে প্রথম হয়েছে। কোটায় ভর্তি হওয়া ছেলেটি কেন ৪ বছরে নিজের যোগ্যতার কোন প্রমাণ দিতে পারলো না?
গতকালকে জানতে পারলাম এমন একজনের কথা যে কিনা সেই ১৯৪ সালে বুয়েট ভর্তি কোচিং এর সময় ঢাকার সবচেয়ে সেরা কোচিং এর প্রস্তুতি পরীক্ষায় প্রথম হতো। বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় সেই ছেলই প্রথম হয়ে কম্পিউটার সাইন্স বিভাগে ভর্তি হয়। সেই ছেলেটির নাম মোস্তাক আহমেদ; আশাকরি চিনতে পেরেছেন। আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় মোস্তাক আহমেদ, মনিরুল আবেদিন পাপ্পানা ও অন্য একজনকে (তৃতীয় জনের নাম এই মুহূর্তে মনে পড়তেছে না) নিয়ে যে স্থান অর্জন করেছিল (১১ তম) তা আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন ছাত্র-ছাত্রী ভাঙ্গতে পারে নাই। সেই সময় পত্রিকা পড়ে জানতে পেড়েছিলাম যে অনার্স শেষ করার পূর্বে মাইক্রোসফট কোম্পানিতে চাকুরী পায় মোস্তাক আহমেদ। বর্তমানে গুগল কোম্পানির অনেক বড় পদে চাকুরী করে; আমি যেই শহরে থাকি সেই ওয়াটারলুর গুগল অফিসে কর্মরত।
আশা করি বুঝতে পারতেছেন মেধা ও কোটার পার্থক্য।
মেনে নিলাম বর্তমান শিক্ষা বসায় অনেক ত্রুটি আছে তার পরেও এই গলদ শিক্ষা ব্যবস্হায় যে ছেলেটি শ্রেণী কক্ষে প্রথম হয় সে ঐ ক্লাসের সকলের চেয়ে ভাল কিছু দেওয়া যোগ্যতা রাখে। মেধা তালিকার পিছন দিক থেকে প্রথম, দ্বিতীয় হওয়াদের বেশি কিছু দেওয়া সম্ভব না (দুই একজন ব্যতিক্রম কখনও উদাহরণ হতে পারে না)।
পোষ্টে সংযোক্ত ছবিগুলো কোটা সংস্কার এর দাবিতে সারা দেশে মানব-বন্ধরত ছাত্র-ছাত্রীদের ছবি (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)।
আপনি যদি সত্যি-সত্যি জাতীয় সংগীতকে নিজের বুকে ধারণ করেন তবে দেশের স্বার্থে; দেশের মানুষের স্বার্থে সরকারি চাকুরীতে কোটা প্রথাকে না বলুন। আমি চাই সবচেয়ে যোগ্য ডাক্তারটির কাছে নিজের চিকিৎসা করারতে; আমি চাই সবচেয়ে যোগ্য প্রকৌশলীটি দেশের রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট তৈরি করুক; আমি চাই সবচেয়ে যোগ্য ছেলেটি রাষ্ট্রদূত হয়ে বৈদেশিক মিশনে যোগ দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সেবা দিক ও অন্য দেশে নিজের দেশের স্বার্থ রক্ষা করুক।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:২৫