somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহের উৎক্ষেপণ চূড়ান্ত মুহূর্তে স্থগিত করার সম্ভব্য কিছু কারণ (পূর্বের অভিজ্ঞতার আলোকে)

১১ ই মে, ২০১৮ সকাল ১১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শিক্ষা জীবনের অনেক সময়ই শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্য করে মন্তব্য করে যে এটা রকেট বিজ্ঞান না যে বুঝতে পারবা না। যদিও বুঝতে না পারার অনেক কারণই থাকতে পারে। যাই হউক, খুব বেশি তর্ক ছাড়াই বলা যায় রকেট বিজ্ঞান হলো পৃথিবীর অন্যতম কঠিন বিজ্ঞান। রকেট বিজ্ঞানের কোন-কোন পর্যায়ের সময়ের হিসাবগুলো করা হয়ে ১ সেকেন্ডের কোটি ভাগের এক ভাগ হিসাবে। এই সময়ের হিসাবে সামান্যতম তারতম্য হলেও মহাকাশে উৎক্ষেপিত রকেট তার অভীষ্ট লক্ষে পৌছাতে পারে না। অনেক সময় রকেট কৃত্রিম-ভূ উপগ্রহকে নিয়ে মহাকাশে ছেড়ে দিলেও ঐ সামান্যতম সময়ের তারতম্যের কারণে কৃত্রিম-ভূ উপগ্রটি সঠিক সময়ে নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৌছাতে পারে না। আমার পূর্বের পোষ্টে উল্লেখ করেছি যে একটা কৃত্রিম-ভূ উপগ্রহের অপারেশনাল লাইফ সাধারণত ৫ থেকে ১৫ বছর। কোন কারণে উৎক্ষেপিত কৃত্রিম-ভূ উপগ্রহটি যদি উৎক্ষেপণের পরে অভীষ্ট লক্ষে না পৌছাতে পারে তবে পরবর্তীতে কৃত্রিম-ভূ উপগ্রহে অবস্থিত ব্যাটারি থেকে অতিরিক্ত জ্বালানি পুড়িয়ে কৃত্রিম-ভূ উপগ্রহটিকে নির্দিষ্ট কক্ষ পথে পাঠাতে হয়। এই জন্য অতিরিক্ত সময় লাগে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো এতে করে কৃত্রিম-ভূ উপগ্রহের অপারেশনাল লাইফ টাইম উল্লেখ যোগ্য হারে কমে যায়। কারণ উৎক্ষেপণের সময় কৃত্রিম-ভূ উপগ্রহে যে জ্বালানি সরবরাহ করা হয় তার প্রায় ৭৫-৮০ ভাগ দিয়ে কৃত্রিম-ভূ উপগ্রহটি পরিচালনা করার কথা আগামী ৫ থেকে ১৫ বছর। অবশিষ্ট ২০ থেকে ২৫ ভাগ জ্বালানী ব্যবহার করা হয় কৃত্রিম-ভূ উপগ্রহটিকে মহাশূন্যে অবস্থিত কবর স্থানে কবর দেওয়ার জন্য।

কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহকে কবর দেওয়ার কথা শুনে আপনি মনে হয় আমাকে পাগল ভাবতে শুরু করেছেন। আপনি শুনে অবাক হবেন যে ঢাকার আজিমপুর গোরস্থানের মতো মহাশূন্যেও একটো কবরস্থান আছে; তবে সেই কবরস্থান মৃত মানুষের জন্য না; মৃত কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহের জন্য। যেহেতু প্রতিনিয়ত মহাশূন্যে উৎক্ষেপিত কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহের সংখ্যা বাড়তেছে; একই সাথে জীবন কাল শেষ হয়ে যাওয়া কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহের সংখ্যা বাড়তেছে তাই মহাকাশ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা নিয়ম করেছে যে মহাকাশে উৎক্ষেপিত Geostationary satellites গুলোকে অপারেশনাল লাইফ এর পরে আর সেই কক্ষপথে রাখা যাবে না; বর্তমান প্রযুক্তি অনুসারে সেই সকল Geostationary satellites গুলোকে প্রায় ৩৬০০০ কিলোমিটার উপর থেকে আবারও বায়ুমণ্ডলে ফেরত আনা প্রায় অসম্ভব। ফলে কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহের অবশিষ্ট ২০ থেকে ২৫ ভাগ জ্বালানী ব্যবহার করে সেগুলোকে নিজেদের কক্ষপথ থেকে ৩৭০০০ কিলোমিটার এর বেশি দূরত্বে পাঠানো হয় যেখানে কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ গুলো অনন্তকাল ধরে অবস্থান করবে বা বিকিরণের কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত হবে বা মহাশূন্যে ভাসমান বিভিন্ন উল্কা পাথর এর সাথে সংঘর্ষের কারণে ধ্বংস হয়ে যাবে। যদি বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহটি তার প্রস্তাবিত ১৫ বছরের জীবন পুরো সম্পন্ন করতে পারে তবে উপরোক্ত নিয়মের কারণে ১৫ বছর পরে বঙ্গবন্ধু-১ কে মহাশূন্যে অবস্থিত কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহের কবরস্থানে সমাহিত করা হবে।

বিভিন্ন পত্রিকা পড়ে জানার চেষ্টা করলাম বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহের উৎক্ষেপণ চূড়ান্ত মুহূর্তে স্থগিত করার কারণ। কিন্তু কোন পত্রিকায় কিছু খুঁজে পেলাম না। গত ৫ বছরে প্রায় ২০ টির বেশি কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ উৎক্ষেপণ পর্যবেক্ষণ করার অভিজ্ঞতায় সম্ভব্য যে কারণ গুলোর জন্য কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহের উৎক্ষেপণ চূড়ান্ত মুহূর্তে স্থগিত করা হয় তা নিম্নরূপ:

১) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো জ্বালানি ট্যাংকের শেষ মুহূর্তে ত্রুটি ধারা পড়া
২) Geostationary satellites গুলোকে কক্ষপথে স্হানপন করার জন্য খুবই শক্তিশালী রকেট ব্যব হার করা হয়ে থাকে। যেমন ফ্যালকন-৯ রকেট যা দিয়ে বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহের উৎক্ষেপণ করা হবে তা ৯ টি মারলিন ইঞ্জিনের সমন্বয়ে গঠিত। উৎক্ষেপণ চূড়ান্ত মুহূর্তে দেখা যায় ঐ ৯ টি ইঞ্জিন যে চাপ তৈরিকরার কথা তার মধ্যে তারতম্য দেখা যাওয়া।
৩) রকেট উড়ে যাওয়ার জন্য নির্ধারিত আকাশের বিভিন্ন উচ্চতায় নির্দিষ্ট গতিবেগের চেয়ে বেশি গতিবেগে বায়ু প্রবাহিত হওয়া। বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উচ্চতায় বায়ু বিভিন্ন দিকে ও বিভিন্ন গতিবেগে প্রবাহিত হয়। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে (ট্রপোষ্ফেয়ার স্তরে) বায়ুর গতিবেগ প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে বায়ুচাপ ক্রমাগত কমতে থাকার কারণে।
৪) রকেট উড়ে যাওয়ার জন্য নির্ধারিত নিরাপদ আকাশের সীমানার মধ্যে কোন সৌখিন বিমান ঢুকে পড়া;
৫) রকেট উড়ে যাওয়ার জন্য নির্ধারিত নিরাপদ সমুদ্র সীমানার মধ্যে কোন জাহাজ ঢুকে পড়া
৬) স্পেস-এক্স কোম্পানি যে রকেট দিয়ে বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করবে সেই রকেটের প্রথম স্টেজ আবারও ফেরত নিয়ে এসে সমুদ্রে অবস্থিত প্রায় ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি খোলা ফেরিতে ল্যান্ডিং করাবে ও পরবর্তীতে সেই স্টেজ আবারও ব্যবহার করা হবে। গতকাল বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহের উৎক্ষেপণ করার চূড়ান্ত মুহূর্তে একটা ছবি দেখা গেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে সমুদ্রের যে স্থানে খোলা ফেরিটি অপেক্ষা করতেছিলো রকেটের প্রথম স্টেজের ল্যান্ডিং করার জন্য সেই স্থানে বৃষ্টি হচ্ছিলো। এই ধরনের আবহাওয়ায় রকেটের প্রথম স্টেজের ল্যান্ডিং ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯৯%। স্পেস-এক্স এর তথ্য মতে এই প্রথম স্টেজটি বানানোর খরচ ১০ মিলিয়ন ডলার; ও সময় লাগে প্রায় ৪ মাস। রকেট উৎক্ষেপণ করলে যেখানে প্রথম স্টেজ ল্যান্ডিং ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯% সেখানে কেন তারা রিস্ক নিবে ১০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতির? আমার কাছে মনে হয়েছে গতকাল বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহের উৎক্ষেপণ চূড়ান্ত মুহূর্তে স্থগিত করার এটি অন্যতম কারণ বলে মনে হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহের উৎক্ষেপণ চূড়ান্ত মুহূর্তে স্থগিতের কারণে যাদের মন খারাপ তাদেরকে বিনোদন দিয়ে মন ভালো করার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন গোলাম সরওয়ারের সমকাল পত্রিকা।

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৮ সকাল ১১:৫৭
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×