somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সীমানা পেরিয়ে

১১ ই জুন, ২০১০ দুপুর ১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্বসূচনা:
হঠাৎ একদিন ঊষা বললো, আপনাকে একটা ছেলে দেখাবো। মাত্র ক’দিন ধরে ওর সঙ্গে আমার পরিচয়। প্রায় প্রতিদিনই সে এখানে আসে, সামনে বসে কথাবার্তা বলে। প্রথমদিন অন্যান্য রোগিদের মতো এসে চিকিৎসার ব্যাপারে আলাপ করে গেলো। তারপর থেকে সে প্রায়ই আসে। যখন কেউ না থাকে তখন সে আমার সামনের চেয়ারে বসে টুকটাক কথা বলে চলে যায়। এখন দেখছি ছেলেটির উদ্দেশ্য ভিন্ন রকমের। বলে, চলেন না একটু বাইরে যাই, অন্যকোথাও গিয়ে বসি, কথা বলি, গল্প করি। আপনার সঙ্গে কথা বলতে আমার ভালো লাগে ... এই সব আরকি।

পরবর্তী অধ্যায়:

ঊষা আমাকে ওর মনের কথা, নিজের অনুভূতি আর ভালো লাগা না লাগার কথা একটু একটু করে বলে যায়। অনেক গোপন আর নিতান্ত ব্যক্তিগত কথাও সে বলে। ঊষা জানায়, রাত হলেই শারিরীক রিপুগুলো একসাথে ঘিরে ধরে ওকে। রাত যত গভীর হয় ততই ঊষা বুঝতে পারে এজীবন যেন একটা ধূসর পান্ডুলিপি ছাড়া আর কিছুই নয়। সবকিছু না পাওয়ার অতৃপ্তিতে ঝলসে যায় ভেতরটা বারবার। এক গোপন অনুরণনে আন্দোলিত হতে চায় তাবৎ সত্তা। ঊষার ভাবনাগুলো এখন বড়ই নিস্তেজ।

হাতে মেলে ধরা খবরের কাগজটা টেবিলে নামিয়ে রাখতে রাখতে আমি জিজ্ঞেস করি, ছেলেটা যে প্রায়ই তোমার কাছে আসে, কথা বলার চেষ্টা করে বা তোমার সামনে বসে, তাতে মনে হচ্ছে এখন পর্যন্ত সে একজন আগন্তক বৈ কিছু নয়। সেসব ব্যাপারে তুমি তাকে কী বলেছো?
ঊষা মাথা নিচু করে বলে, আমি কিছু বলিনি।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে আবারও প্রশ্ন করি, ওর পরিচয় কি তা জানতে পেরেছো?
-না, তাও নয়। ও বলেছে, গুলবাগে নাকি সে থাকে। একটা চাকরি করে।
-দেশের বাড়ি কোথায় তা জানো?
সে আমার দিকে চোখ তুলে তাকায়, তা জানি না।
আমি আবারও পত্রিকার পাতা খুলে কোনওকিছু খুঁজতে খুঁজতে বলি, আগে ওর সম্পর্কে জানতে হবে। না জেনে না বুঝে ওপথে পা দিও না। সুযোগ মতো আমাকে দেখাবে তো ছেলেটাকে।

এরপর একদিন আমি পায়চারি করছি, ঊষা বললো, স্যর, রিসিপশনেই বসুন। ছেলেটা এদিকেই আছে, আপনাকে দেখাবো।
আমি চেয়ার টেনে বসতেই ঊষা বললো, ছেলেটা ফ্যাক্সের দোকানে গেছে এবং এক্ষনি সে আবার ফিরে আসবে।

ঠিক তাই হলো। ঊষার কথা শেষ হতে না হতেই একটা লম্বা-চওড়া পাতলা গড়নের ত্রিশের মতো বয়স্ক একটা ছেলেকে দেখলাম সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে। কালো রঙের প্যান্টের সঙ্গে সাদা ফুলশার্ট এবং নেকটাই পরেছে ছেলেটি। যাবার সময় মুহূর্তের জন্য সে একপলক আমার দিকে আরেকবার ঊষার দিকে চাইলো। আমার সঙ্গে চোখাচোখিও হলো। ঊষা নিচের দিকে মাথা নামিয়ে আস্তেকরে বললো, এই সেই ছেলেটা।
আমি বললাম, হ্যাঁ, দেখলাম। এখন বল, ওর সম্পর্কে কি কি জানতে পেরেছো?
ঊষা বললো, আজ কয়েকদিন হলো ছেলেটা প্রায়ই আমার কাছে আসে। সামনে কিছুক্ষণের জন্য বসে। বলে যে, আমাকে নাকি তার খুব ভালো লেগেছে। সে আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চায়। আমি তাকে বলেছি, আপনাকে চিনি না জানি না, আগে আপনার পরিচয়টা দরকার।ওসব নিয়ে ভাববার সময় এখন নয়। এর বেশি কিছু আমি বলিনি, সেও তেমন কিছু বলেনি। ...
মৃদু হাসলাম আমি। বললাম, এবার এলে একটা পুর্ণাঙ্গ বায়োডাটা দিতে বলবে ওকে। সে যেটুকু বলেছে তা যে ঠিক-ঠিক বলেছে সেটা যাচাই করে দেখবো।

কিন্তু ঊষা ওর কাছ থেকে কোনও বায়োডাটা জোগাড় করতে পারলো না। ছেলেটা নাকি দেবে বলেও দেয়নি।
ঊষা বললো, একদিন ছুটির পর নিচে নেমে দেখি সেও মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এরকম সে প্রায় প্রতিদিনই সিঁড়ির কাছের পত্রিকার স্টলটার কাছে, রিকসা স্ট্যান্ডে কিংবা মার্কেটের লিফটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকে। আমাকে দেখে এগিয়ে আসে, কথা বলতে চায়। সেদিনও সে আমাকে দেখামাত্র এগিয়ে এলো। তারপর বললো, চলুন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, মানে? কোথায় যাব আমি? সে কোনও কথা না বলে রিকসা ডাকতে লাগলো। ওর ব্যস্ততা দেখে আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। তার আগে আমি নিজেও একটা রিকসা ঠিক করেছিলাম বাসায় যাওয়ার জন্য, কালবিলম্ব না করে সেটায় আমি উঠে বসলাম। কিন্তু সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম যখন সে একটা রিকসা থামিয়ে কাছে এসে আমার একটা হাত ধরে বললো, চলুন না, চলুন। ‘আমি যাব না’ বলে ওখান থেকে দ্রুত সরে পড়লাম ভয়ে। এর পরও তাকে প্রায়ই নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখেছি।
আমি যারপর নাই অবাক হয়ে বললাম, ঢাকা শহরে মানুষ চেনা দায়। তার সম্পর্কে না জেনে না শুনে ওপথে পা বাড়ালে বিরাট ভুল হয়ে যেতে পারে।
ঊষা ব্যাপারটা বুঝতে পারলো বোধহয়। এসব নিয়ে আর তাকে ভাবতে দেখিনি।


আমরা একটা আলো-আঁধারীর মধ্যে ধীরপায়ে রেল লাইন ধরে হাঁটছিলাম। পিয়াসী বারের দারোয়ান দুজনের কথা মনে পড়লো। ওই দু’ব্যাটা আজ কয়েক দিন ধরে আমাকে একটু বিশেষভাবে খেয়াল করে, দেখে, সালাম দেয়। আজও দেখেছে - আমি একটা প্লাস্টিকের পানির বোতল নিয়ে ওদের পাশ দিয়ে দ্রুত পায়ে উপরে উঠে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আবার নিচে নেমে এলাম, বোতালটা সরিষার তেল রঙের পানীয় ভর্তি করে। যাবার সময় এবং আসবার সময় দুবারই ওরা সালাম দিয়েছে কিন্তু আমি ওদের সালামের কোনও উত্তর দিই নি। বরং ওদের জন্য দশ টাকা বক্‌শিসও দিই নি। ঊষাকে পাশের একটা দোকানের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে গিয়েছিলাম, ব্যাপারটা ওরা বুঝতে পেরেছিল কি-না তা আমি জানি না, জানার চেষ্টাও করিনি। হঠাৎ একটা বিষয় মনে পড়তেই আমি বললাম, খাবার জন্য ঝাল-মিষ্টি কিছু একটা আনতে হতো, কিন্তু একদম মনে পড়েনি আমার।
-কি সেটা?
-এই ধরো, কাবাব, পটেটো চিপস্‌ বা আপেল - এমন কিছু একটা। কারণ, তুমি তো একেবারেই এম্প্‌টি স্টমাকে রয়েছ, এসব ভালো লাগবে কি?
ঊষা আমার কথার কোনও উত্তর দিল না। আমরা হাঁটছিলাম। রেল লাইনের দু’ধারে অসংখ্য ওয়েলডিং শপ, সেখান থেকে ক্ষণে-ক্ষণে আলোর ঝলকানী আসছিল। সেই ঝলকানীতে আলোকিত হয়ে উঠছিল সমগ্র এলাকা। আমাদের আশপাশ দিয়ে দু’একজন পথচারী হেঁটে পার হয়ে যাচিছল। কিন্তু ওরা ছিল নিজ-নিজ খেয়ালে। আমাদের ব্যাপারে কারো কোনও জিজ্ঞাস্য ছিল না। আমি সতর্ক ছিলাম, কেউ আমাদের দিকে তাকিয়ে দেখছে কি-না। না! দেখছে না। আমরা হাঁটতে-হাঁটতে রেলক্রসিং-এর কাছাকাছি একটা বন্ধ-ওয়ার্কশপের সন্মুখে আব্‌ছা অন্ধকার ফাঁকা জায়গাটায় এসে দাঁড়ালাম। ঊষা বললো, এবার ওটা বের করুন।
একটা প্লাস্টিকের কোকের বোতলে পানিতে মেশানো ছিল রেডওয়াইন। বেশি সময় না-নিয়ে তাড়াতাড়ি সবটুকু হুইস্কি সাবাড় করে ফেললো ঊষা একাই। কোকের বোতলটা ছুঁড়ে ফেলে দিল পাশে। সে বললো, আপেল খেতে ইচ্ছে করছে।
বললাম, এ-সময় আপেল খাবার ইচ্ছে? ঠিক আছে চল, কিনছি।
আরেকটু এগিয়ে আমরা মেইন রোডে উঠে পড়লাম। হাঁটছি তো হাঁটছি। আমার প্রায় গা ঘেঁসে পাশে-পাশে হাঁটছে ঊষা। একটা ছোট্ট মুদি দোকানের সামনে এলাম আমরা। দোকানিকে বলে একটা পটেটো চিপস্‌ এবং দু'টো আপেল কিনলাম। অতঃপর আবার হাঁটতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর পর ঊষা আমার হাতে গুঁজে দিচ্ছিল পটেটো চিপস্‌। হাঁটতে-হাঁটতে কয়েকটা রিকসা থামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কেউ সামনের দিকে যাবে কি-না। কিন্তু কেউ রাজি হলো না, কারণ ওরা সবাই আসছিল পথের বিপরীত দিক থেকে। তবু একটা রিকসাওয়ালাকে রাজি করিয়ে উঠে পড়লাম দুজনে। অল্প সময়েই হুইস্কির নেশা ধরেছে ঊষাকে, তাই মনে হলো। মদের নেশায় ঊষার কথাবার্তা এলোমেলো হচ্ছিল। সে বললো, আই এ্যাম ভেরি হট নাউ! আমি আর পারছি না! কি করবো?
-আমিও ভাবছি তোমার ব্যাপারটা নিয়ে। একই কষ্ট তো আমাকেও সইতে হয়।
-আমি সে সব কিছু জানি না। আমি খুবই কষ্ট পাচ্ছি!
-কিন্তু কোনও উপায় দেখছি না।
-না, আমি জানি না!
-তুমি তো রাত দশটার বেশি সময় দিতে পারবে না, যদি পারতে তা হলে এখনি ব্যবস্থা করতে পারতাম। কিন্তু তা হবার নয়।
-ওহ্‌ শিট্‌! আমি প্রতিদিন দেরি করে বাড়ি ফিরি, সেজন্য প্রব্লেম হয়। বিভিন্ন প্রশ্নের সন্মুখীন হতে হয়।
আমার কথায় ঊষা বেশি সন্তুষ্ট হতে পারলো না। সে আমার বামপাশে বসা ছিল। ডান হাতখানা বাড়িয়ে দিয়ে আমার উরুর উপর খামছাতে লাগলো। ও এখন পুরোপুরি মাতাল। সে সত্যিকার নেশাগ্রস্তের মতো টেনে-টেনে বললো, এসব খেলে কেন আমি খুব সেক্সি হয়ে যাই?
-এসব অল্প খেলে সেক্স বাড়িয়ে দেয়, আবার বেশি খেলে ঘটে বিপরীতটা ।
-ওহ্! আমি সহ্য করতে পারছি না!
-কিন্তু কিছু তো করার নেই। তুমি কি পারবে আজ বাড়ি গিয়ে আমাকে নিয়ে তোমার রুমের দরজা বন্ধ করে দিতে? যদি পারো তা হলে চল - আমি আজ আর বাড়ি যাচ্ছি না, তোমার সঙ্গেই যাব। সারা-রাত ধরে তোমার কাছে থাকবো।
আবার আমার ঊরু চিমটে ধরলো ঊষা। একটু ধাক্কা দিয়ে বললো, ওটা হবে না। তবে কি করবেন জানি না। কিছু করেন আমার জন্য।
-আহ্!
-কি করবেন?
-কি করবো?
-জানি না।
-তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
-আমি জানি না।
-আচ্ছা, দেখি, কি করা যায়!
-আমি আর সহ্য করতে পারছি না। উহ্‌, আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি...!
-বললাম না - এসব খেলে সেক্স বেড়ে যায়।
-আমি অনেক কষ্ট সহ্য করেছি, আর পারবো না। আমাকে আপনি মুক্তি দিন।
-ঠিক আছে, যত ব্যস্তই থাকিনা কেন, সময় বের করে নেব।
-কথা দিচ্ছেন তো?
-হ্যাঁ, কথা দিলাম। এখন একটু চুপ কর।
ভাবলাম, রিকসাওয়ালাটা আবার কিছু বুঝতে পারছে কিনা আমাদের কথাবার্তা।
ঊষা বললো, আপনার তো বিকল্প ব্যবস্থা আছে, আমার তো তাও নেই।
-আমার আবার কি বিকল্প ব্যবস্থা? সেটা তো থেকেও নেই; আর ওসব দিয়ে চলেও না?
-যা-ই হোক না কেন, ঠেকা কাজ তো চলে।
ওর কথার আর কোনও উত্তর আমি দিলাম না। রিকসা এগিয়ে যেতে লাগলো সামনে। একটা পরিচিত এলাকার মধ্যে ঢুকে পড়লাম আমরা। রিকসাওয়ালাকে বললাম বাঁ দিকের চিপাগলি দিয়ে যেতে; যাতে করে আমাদের এ-অবস্থায় কেউ দেখে বা চিনে ফেলতে না পারে।
আমি ঊষাকে বললাম, আচ্ছা! ধরো, তোমার আঙ্কেল বা অন্য কেউ এখন আমাদের এ অবস্থায় দেখে ফেললো, পরিস্থিতি যদি এমন হয় তবে কি রকম হবে?
ঊষার আঙ্কেল, মানে - আমার অফিসের ম্যানেজার শাহিন মাহমুদ। যতদূর জানি উনি এদিকেই কোনও এক বাড়িতে থাকেন। এক সময় অফিসে একজন রিসিপশনিষ্টের প্রয়োজন দেখা দিলে এই মাহমুদ সাহেবই তার প্রতিবেশি ঊষাকে একদিন আমার অফিসে নিয়ে আসে; আর আমিও সেদিন অনেকটা কাকতালিয়ভাবে ঊষার চাকরিটা দিয়ে দিলাম। অবশ্য ঊষা-ই যে এখানে অদ্যাবধি একমাত্র মেয়ে-রিসিপশনিষ্ট তা নয়, এর আগে আরও জনা-চারেক মেয়েকে নিয়োগ দিয়েছিলাম, আবার তাদেরকে বিদেয় করেও দিতে হয়েছে। বিদায় করেছি তাদের অদক্ষতা আর আনাড়িপনার জন্য। মোশারফের জ্বালাতনও ছিল ওদের প্রতি যা তাদেরকে এই প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছিল। মোশারফ চাইতো চেম্বারে ডেকে নিয়ে তাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হতে, কিন্তু তাতে কেউ সাড়া দেয় নি।
ঊষা লাফিয়ে উঠে হাসতে হাসতে বললো, মাই গড, তা যদি হয় ... তবে আমি বলতে পারবো না!
-আমিও বলতে পারবো না। তাই তো রিকসা ঘুরিয়ে যেতে বললাম।
রিকসাওয়ালা আমাদের গলিপথের আঁকাবাঁকা পথ ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। গলির দু’পাশে সারিসারি দালানকোঠা, উপরে চাইলে আকাশ ব্যতীত কিছুই দেখা যায় না। গিজগিজ বাড়িঘর। রিকসাওয়ালাকে নির্দেশ দিচ্ছিল ঊষা, ডানে যাও, বামে যাও।
একবার ঊষা বললো, অনেক আগে আমরা এই এলাকায় থাকতাম। বলতে গেলে আমার ছোটবেলা কেটেছে এই এলাকাতে। তাই এখানকার সব মানুষই আমার পরিচিত।
-কতদিন আগের কথা বলছো?
-যখন প্রাইমারী স্কুলে পড়ি তখনকার কথা বলছি।
-শৈশবকালের কথা বাদ দাও। অতদিন আগের কথা কেউ মনে রেখেছে বলে মনে হয় না। এতদিনে তোমাকে হয়তো ভুলে গেছে সবাই। কারণ তুমি এখন আর আগের সেই খুঁকিটি নেই, এখন অনেক বড় হয়েছ।
ঊষা কোনও কথা বলে না। সে হয়তো ভাবলো, অতীতের সবকথা হয় তো ভুলে যাওয়া যায় না, অনেক কথাই স্মৃতির পাতায় অম্লান রয়ে যায়। আমি রিকসাওয়ালাকে বললাম, একটু রাখো তো, সিগারেট কিনবো, একটা দোকানের পাশে রাখো।
ঊষা বললো, এখানে না, আরও সামনে এগিয়ে আমরা থামব, তখন সিগারেট কিনবেন।
-আচ্ছা, চল।
কিছুদুর এগুতেই ঊষা বলে উঠলো, আমরা কিন্তু খুব নিকটে এসে পড়েছি। আর অগ্রসর হওয়া ঠিক হবে না।

আমরা যে গলিপথটা দিয়ে যাচ্ছিলাম, এ পথেরই একটু বামে এগুলেই ঊষাদের বাড়ি। এই এলাকায় আমি এর আগেও দু’একবার এসেছি। তাই সবকিছু যেন চিনি-চিনি মনে হতে লাগলো। রিকসা আরও এগিয়ে মেইনরোডে উঠে পড়লো। কিছু দূর অগ্রসর হয়ে আমরা একটা মাঠের কাছে এসে নেমে পড়লাম। রিকসা ছেড়ে দিয়ে পথের ধারের একটা দোকান থেকে আমি সিগারেট কিনে একটাতে অগ্নিসংযোগ করে ঊষার একটা হাত বগলদাবা করে বললাম, চল, একটু মাঠের দিকে যাই। কথা বলি।
আমি হাত ঘড়ির দিকে তাকালাম, রাত পৌনে দশটা।
বললাম, বেশিক্ষণ হয়তো কথা বলা যাবে না, সময় খুবই কম। আমার তেমন সমস্যা না হলেও তোমার হবে।
ঊষা বললো, হ্যাঁ, আমি হয়তো ফিরে দেখব যে, আম্মা বাসার সদর দরজায় দাঁড়িয়ে অপক্ষা করছে আমার জন্য। আমার ফিরতে দেরি হলে এরকম ঘটনাই ঘটে সাধারণত।
-ইটস্‌ এ্যা ভেরি নর্মাল থিং! আমি বললাম।

এ মাঠটা বেশ বড়সড় একটা মাঠ বলে মনে হয়। আমরা ধীর পায়ে সামনে এগিয়ে গেলাম। অন্ধকার মাঠে চারপাশের দোকানপাট আর বাসাবাড়ি থেকে বিচ্ছুরিত আলোর ধাঁধাঁ সৃষ্টি করেছে। সেই আলোতে এদিকটায় একটু-আধটু ফর্সা হয়ে উঠেছে। আমরা মানুষের সীমানা পেরিয়ে অপেক্ষাকৃত একটু অন্ধকারে গিয়ে দাঁড়ালাম। এখান থেকে দূরের মানুষকে চেনার কোনও উপায় নেই। মাঠের এদিক-সেদিক দিয়ে দুএকজন লোকও হেঁটে নির্দিষ্ট গন্তব্যে চলে যাচ্ছে, কেউ কিছু ভাবছে কিনা বা দেখছে কিনা তাও আন্দাজ করা কঠিন। এটা একটা ফাঁকা মাঠ না হয়ে যদি কোনও পার্ক হতো, আর যদি এখানে বসবার কোনও জায়গা থাকতো, তবে বসতে পারতাম। কিন্তু এটা পার্ক নয়। আমরা পাশাপাশি কাছাকাছি দাঁড়ালাম। ঊষাকে একটুখানি কাছে টেনে নিলাম।
-কি ভাবছো?
-কিছু না। আপনি কি ভাবছেন?
-আমার সব ভাবনা তো তোমাকে ঘিরে।
-সত্যিই বলছেন?
-আমি তো মিথ্যে বলি নি! আই টোলড হোয়াট আই থিংক এগজ্যাক্টলি।
-আপনার বয়স যে বেশি।
-আমার বয়স কত?
-ফোরটি এ্যাবভ।
-হোয়াটস দ্য ডিফারেন্স বিটুইন টুয়েন্টি সিক্স এন্ড ফোরটি ... ?
-জানি না!
-তোমার বয়স কত, ছাব্বিশ?
-হ্যাঁ।
-চল্লিশ পুরণে আর কত বাকি থাকে, চৌদ্দ ?
-জানি না!
-বয়স কি আসলেই কোনও ফ্যাক্টর?
-সেটাও জানি না!
এ-কথা বলে ঊষা ভেংচি কেটে হাসলো। সেই হাসিতে কি বুঝাতে চাইলো কিছুই অনুমান করতে পরলাম না। ক্ষণিক নীরবতার পর ঊষা আবার সেই আহ্লাদি স্বরে বলতে লাগলো, ওহ্! আমি আবার হট্‌ হয়ে যাচ্ছি, কিন্তু।
-তুমি কি একাই, নাকি আমারও মন বলে একটা জিনিস আছে? কিন্তু কীভাবে কী করবো ভেবে পাচ্ছি না।
এভাবে কতোক্ষণ কাটলো তা আর মনে করতে পারছি না। এক সময় ঊষা বললো, আমি তো এতদিন অনেক উল্টাপাল্টা ভেবে এসেছি, আজ আমার সেই ধারণা পাল্টে গেল। এখন আমি একটা সত্যিকার ভাবনা ভাবতে পারবো। কিন্তু ব্লিডিং এর ব্যাপারটা নিয়ে আমার ভয়!
-ব্লিডিং মানে? তুমি তো আর সে অবস্থায় এখন নেই বলেই মনে হয়।
-কিভাবে?
-সেদিনের সেই মেডিকেল চেক-আপ করতে গিয়ে বুঝতে পেরেছি।

ঊষার মেডিকেল চেক-আপের ব্যাপারটা ছিল বড় অদ্ভূত ধরনের! একদিন ঊষা জানালো যে, তার গোপন জায়গাটার একপার্শ্বে ব্রণের মতো একটা গোটা উঠেছে। আর জায়গাটায় কেমন যেন কালো রঙের ছোপ ছোপ দাগ পড়েছে যেগুলো আগে কখনো ছিল না। এ-নিয়ে সে ভীষণ চিন্তিত। লক্ষণটা আদৌ ক্ষতিকর কিনা জানার জন্য আমি জায়গাটা দেখার প্রয়োজন বুঝিয়ে বলতেই ঊষা রাজি হয়ে গেল। চেম্বারে গিয়ে ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় ধরে পরখ করে ক্ষতিকর কোনও লক্ষণ পেলাম না যা চিকিৎসার দরকার হতে পারে। ব্যাপারটা অতি সামান্যই! কিন্তু তা সত্ত্বেও ঊষার মতন একটি অবিবাহিতা মেয়ে কী করে নিজের শারিরীক গোপনীয়তা স্বেচ্ছায় একজন পুরুষের কাছে উন্মুক্ত করে দিল তা আমার কাছে আজও দুর্বোধ্য একটা বিষয় হয়ে আছে। ওই সামান্য কারণে কোনও শিক্ষিতা, কুমারী মেয়েই হয়তো এভাবে নিজের গোপনীয়তা কোনো ডাক্তারের কাছে উন্মুক্ত করবে না যা ঊষা করলো। তবে কি ঊষা ইচ্ছাকৃতভাবেই ঘটনাটা ঘটিয়েছিল? শুধুই কি আমাকে কুপোকাত করার জন্য? যাহোক, ঘটনা যা-ই ঘটুক - সেদিন আমি বাস্তবিকই একটি কুমারী মেয়ে সম্পর্কে জানতে পারলাম! কেবল চোখের দেখাই ছিল না - আমি স্পর্শও করেছিলাম। সেই স্মৃতি মনে হলে আজও আমি বর্ণনাতীত এক রোমান্স অনুভব করি। এজন্যই রোমান্স অনুভব করি যে, যে ছবি পুর্ণিমার চাঁদের মতো আজও যেন আমার চোখে স্পষ্ট হয়ে ভাসে।
হয়তো ঘটনাটা মনে পড়তেই ঊষা বললো, আচ্ছা।
আমার মধ্যে টান-টান উত্তেজনা। আমার কণ্ঠস্বরটা আটকে যাচ্ছিল অদ্ভুত এক উত্তেজনায়।
দু’জনের কারো মুখেই কোনও কথা নেই। নির্বাক কেটে যেতে লাগলো সময়। একটু পর সে প্রসঙ্গ পাল্টে বললো, মোশারফ আজ কি বলেছে, তা জানেন?
-তুমি বললেই জানতে পারবো। না বললে কিভাবে জানবো?
-সে আমাকে বলে, তোমার ছোট বোনটাকে আমার খুব পছন্দ, তুমি তাকে একদিনের জন্য আমি যেখানে বলবো সেখানে নিয়ে আসবে। এটা এমন কিছু নয়, স্রেফ বন্ধুত্ব ...আমরা একদিন একটু কথা-বার্তা বলবো, ঘুরবো এবং খাওয়া-দাওয়া করবো, এর বেশি কিছু না। দ্যাখেন, সে আমাকে সামান্য অর্থনৈতিক সাহায্য করেছে বলে মনে করছে আমাকে যেন কিনে ফেলেছে, এখন সে যা বলবে তাই আমাকে করতে হবে। কি আশ্চর্য! আমি ধারণাই করতে পারিনি যে, সে আমাকে এমন একটা নোংরা প্রস্তাব দিতে পারে!

ঊষার কথায় আমিও বেশ অবাক হলাম। কিন্তু এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে সে ব্যাপারে আমি ঊষাকে আগেই কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছিলাম। আজ আবার নতুন করে বললাম, সে কথা তো তোমাকে আগেই বলেছিলাম, সাবধান করে দিয়েছিলাম। কিন্তু, কী উত্তর দিয়েছো তুমি?
ঊষা বললো, আমি বলেছি, সেটা কোনওদিন সম্ভব হবে না। কারণ শিল্পী আমার আপন ছোট বোন। আমি তার জন্য রক্ত বিক্রি করতে রাজি আছি, আমি তার জন্য দেহ বিক্রি করতেও রাজি আছি; তবু আমি চাই না যে, ওর কোনও ক্ষতি হোক, ওর গায়ে কোনও কালির আঁচড় পড়ুক। কারণ, আমি ওকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি। শিল্পী আমার পরম আদরের ছোট বোন, ওর জন্য আমি যেকোনও ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছি।
আমি বললাম, ঊষা, জীবনে কিছু কিছু সম্পর্ক আছে জন্মগত, আর কিছু আছে যেগুলো পরে তৈরি হয়। যেমন, এখন তুমি আমার সঙ্গে সম্পর্কিত। তোমার বোন তো আমারও বোন। তোমাকে এটুকু অন্তত বলতে পারি, আমি বেঁচে থাকতে তোমার কোনও ক্ষতি হতে দেবো না। তোমার বোনেরও না।
ঊষা হঠাৎ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, আমি আপনাকে আরও আগেই বলতাম এসব কথা, কিন্তু তখন সময় পাইনি।
-বলেছো, সেজন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, ঊষা।
একটু নীরবতার পর ঊষা বললো, এ পৃথিবীতে আপনি ছাড়া আমার কিন্তু আর কেউ নেই। আমি বড়ই অভাগী। জানি না ভাগ্যে কী আছে আমার! এমন কোনও আত্মীয়-স্বজনও নেই, যে আমাকে একটু সাহায্য করতে পারে।
ঊষাকে আশ্বস্ত করে বললাম, শিল্পীকে নিয়ে ভাবার কোনও প্রয়োজন নেই, কারণ ও তো এখন বিবাহিতা। ওর স্বামী আছে। ওর এখন সবই আছে; কিছু নেই কেবল তোমার। তবে তোমার জন্য আমি আছি। আমি তোমার কেউ নই, বন্ধুও নই, আত্মীয়ও নই; তবে তুমি আমাকে একজন শুভাকাঙ্খী হিসাবে ভাবতে পারো। তাতেই আমি খুশি হব। যদি আমি তোমার কাজে আসতে পারি তবে নিজেকে কৃতার্থ মনে করবো।
কিন্তু ঊষা আমার কথার কোনও উত্তর না দিয়ে বললো, আজ তা হলে চলি। আবার কাল দেখা হবে?
মনে মনে চাচ্ছিলাম, আরও কিছুটা সময় এখানে থাকি আর কথা বলি। একটা সিগারেট ধরিয়ে বললাম, এই তো, আর কিছুক্ষণ; এই সিগারেটটা শেষ হলেই চলে যাব’ক্ষণ। আজ যে খুব একটা দেরি হয়ে যাবে তা মনে হয় না। গতকালও তুমি সাড়ে দশটায় ঘরে ফিরেছো, মনে নেই?
কিছু বললো না ঊষা। একটু ভেবে পরে বললো, আপনি যে আমার কত বড় ভরশা তা আপনাকে আমি বলে বুঝাতে পারবো না।
বললাম, আমি কী এমন ভরশা হয়ে গেলাম তোমার, বুঝতে পারলাম না।
-আপনি বুঝবেন না।
-একটু বুঝালেই বুঝবো। আমি তো আর অবুঝ শিশু নই।

এই কথাটা ঊষা মাঝে-মাঝেই আমাকে বলে। আমিও জানি এমুহূর্তে আমি ছাড়া ঊষার জীবনে আর কেউ নেই। যা ছিল তা আজ সবই অতীতের মাঝে বিলীন হয়ে গেছে। মনে হতে লাগলো, ঊষা সত্যিই এক অসহায় নারী। আমাকে নিয়ে কি সে কোনও স্বপ্ন দেখছে? কোনও ভবিষ্যতের স্বপ্ন - যেখানে কেবল সে আর আমি? নাকি সে আমাকে মানসিকভাবে দুর্বল করতে চাইছে? এটাও বিশ্বাস করা যায় না, কারণ আমি তো বিবাহিত পুরুষ। একজন উচ্ছল যৌবনা তরুনী আমার মতো একজন মধ্যবয়সী লোককে নিয়ে স্বপ্ন দেখবে কেন!

আমার মধ্যে আবারও ভেতরে এক দানবীয় উত্তেজনায় অস্থির হয়ে উঠছিলাম। অনেক বড় আর অন্ধকার মাঠটার ঠিক মধ্যিখানে আমরা দু’জন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই কথা বলছিলাম। আমার ভেতরের মানুষটা উত্তেজনায় তড়পাচ্ছিল। তা সত্ত্বেও সংযমের পরীক্ষায় আমাকে উত্তীর্ণ হতে হয়। আজ কীভাবে যেন ঊষাকে নিয়ে আমি এমন এক অন্ধকার দেশে এসে পড়েছি যেখানে হাতড়ে পথ চলতে হয়, চোখ খুলে তাকালেও কোনওকিছু ভালভাবে দেখা যায় না। সবই কুসংস্কার আর আদিম এক অন্ধকারে নিমজ্জিত। এখানে কোনওকিছু কল্পনা করাও যেন অনুচিত কাজের মধ্যে গণ্য।
ঊষা আমার খুব কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়। আর হঠাৎ কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে যায়, কেউ বিদ্যুৎপিস্ট হলে যেরকম হয়। মুখে রা শব্দটি পর্যন্ত নেই। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
তারপর হঠাৎ সে একটুখানি সরে গিয়ে বলে, আজ থাক, মা বোধ হয় এতোক্ষণে আমার জন্য বাড়ির বাইরের গেটে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। এমনিতেই সেদিন দেরি হওয়াতে বাড়িতে আমাকে নিয়ে অনেক কথা হয়ে গেছে। সবাই বলাবলি করেছে, ঊষা আজকাল দেরি করে বাড়ি ফেরে, কারণ কি? সে প্রতিদিন যায় কোথায়?

বাড়ি ফেরার জন্য ঊষার ব্যস্ততা লক্ষ্য করি। ওর এই ছট্‌ফটানি দেখে আমি হাতের সিগারেটটা ফেলে দিয়ে বললাম, চল যাওয়া যাক।
আমরা আবার আস্তে-আস্তে হাঁটতে-হাঁটতে মেইন রোডে এসে রিকসার জন্য দাঁড়াই। ওর জন্যে একটা রিকসা থামিয়ে বললাম, ওঠো। ঊষা রিকাসায় উঠে হাত নেড়ে টানা গলায়, আসক্তি জড়িয়ে বললো, বাই, কাল আবার দেখা হবে...।
আমি বললাম, ডোন্ট টক টু মাচ টু-নাইট। বেশি কথাবার্তা বললে বমি হওয়ার টেন্‌ডেন্সি বাড়বে! তাতে তোমার বাড়িতে ফের কোনও গ্যাঞ্জাম সৃষ্টি হবে। সুতরাং, বি কেয়ারফুল! সি ইউ এগেইন টুমরো মর্নিং।
ঊষার সঙ্গে আমার এই ধরনের সাক্ষাত হলো এ-নিয়ে চতুর্থ বার। ঠিক ডেটিং নয়, বলা চলে টাইমিং। আগামীতে ডেটিং হতে পারে এমন সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে বলে মনে হয় আমার।

এর আগে আমরা চেম্বার থেকে বেরিয়ে রিকসা নিয়ে সোজা মগবাজার মোড়ে এসে নেমেছি, ঊষাকে চৌরাস্তার এককোণে দাঁড় করিয়ে রেখে আমি ত্বড়িৎগতিতে এক লিটার পানি আর সঙ্গে কিছু পটেটো চিপস্‌ কিংবা দুটো আপেল কিনেছি, বারে গিয়ে সেই পানির খানিকটা ফেলে দিয়ে কয়েক পেগ হুইস্কি যোগ করে আবার ঊষার কাছে ফিরে এসেছি। আবার আমরা একটা রিকসায় চেপে বসেছি বাংলামটর যাব বলে, পথিমধ্যে চলন্ত রিকসায় আমরা প্রকাশ্যেই মদপান করেছি পানির বোতল থেকে। বাংলামটরে গিয়ে আমরা আবার রিকসা বদল করে অন্য রিকসা ধরে ফিরে এসেছি। প্রত্যেকবারই আমি মধুবাগ পর্যন্ত গিয়েছি ঊষাকে নামিয়ে দিতে। একবার বাংলামটর থেকে ফিরে আসবার সময় মগবাজার মোড়ের একটা সাইবার ক্যাফেতে কিছুক্ষণ কাটিয়েছি। সেদিন নেশায় বিভোর ঊষা কম্পিউটারের উলঙ্গ নরনারীর ছবি দেখে বারবার আমার গা খামছে দিয়েছে আর অনুনয়-বিনয় করেছে। আমি ঊষাকে কিছু বলিনি, শুধু সান্ত্বনার বাণী শুনিয়েছি আর ওর ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েছি। আমার চরিত্রটা এই রকমই দুর্ভাগ্যমন্ডিত; তার জন্য আমার শিক্ষাদীক্ষা দায়ী কি বিধাতা, যিনি আমাকে এধরনের সৃষ্টি করেছেন, সেকথা আমি জানিনা। আমি শুধু এটুকুই জানি যে কারও মনে দুঃখ দিলে আমি নিজেও কম দুঃখ পাইনা। জানি এব্যাপারে তারা কেউই সান্ত্বনা পাবেনা, কিন্তু তবুও ব্যাপারটা এই। যৌবনের প্রথমে সেই সময় থেকে, বাবা-মার আওতা থেকে বেরিয়ে টাকা দিয়ে যতসব আনন্দ কেনা যায়, তারমধ্যে আমি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, আর স্বাভাবিকভাবেই এইসব আনন্দে একসময় আমার বিতৃষ্ণা জন্মে গেল। তারপর আমি অভিজাত সমাজে মিশলাম। দেখতে দেখতে সেখানেও ক্লান্তি ধরে গেল। আর এভাবেই একসময় আমি শুন্যে ভাসতে লাগলাম যেখানে আশা-ভরশা বলে কিছু নেই, আনন্দেরও কিছু নেই।

আমরা বিদায় নিলাম। পথের লোকজন আর যানবাহনের আড়ালে যতক্ষণ না তার হাতপায়ের নড়াচড়া অদৃশ্য হলো ততক্ষণ আমি সেখানে দাঁড়িয়ে দৃষ্টি দিয়ে তাকে অনুসরণ করলাম। আমার হৃদয় মুচড়ে উঠলো, ঠিক প্রথম প্রেমের বিচ্ছেদের সময় যেমন হয়।

(ক্রমশ)

আগের সংযুক্তিগুলি:
-কাঁকন বাজে রিনিঝিনি
-সব নষ্টের মূল
-বউ বললো: তোমার হাড়-মাংস খেয়ে তারপর যাব
-ঊষা বললোঃ মদ খাবো
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০১০ রাত ১২:১২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×