কয়েক বছর আগে সিলেটে বেড়াতে গিয়েছিলাম, রাস্তার দু পাশের বিশাল পাহাড় আর ঝর্না গুলো দেখে জিজ্ঞেস করেছিলাম এগুলো তে যাওয়া যায় না? যে আন্টি আংকেল সহ গিয়েছিলাম , তারা বলেছেন এগুলো সব ভারতের। দেশ ভাগ করার সময় ওরা এমন করে ভালো সবকিছু ওদের দিকে রেখে দিয়েছে। জাফলং তামাবিল যাবার পথে মেঘ ছুই ছুই এই পাহাড় আর পরিবেশ দেখলে, এতে আমাদের কোন অধিকার নেই ভাবলেই ভেতরে এক ধরনের শুন্যতা গ্রাস করে।
এরপর আসি বংগোপসাগর আর সমুদ্রসীমা নিয়ে। আমরা পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের মালিক এই অনুভুতি সব বাংলাদেশিকেই এক ধরনের আনন্দ দেয়।
যেখানে সিঙ্গাপুর শুধু তাদের বন্দর দিয়ে উন্নতির এমন পর্যায়ে উঠে গেছে , সেখানে আমরা যেন আমাদের চট্টগ্রাম, মংলা বন্দর গুলোকে রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যম আর আবর্জনা বানানোর চেষ্টায় আছি। আমরা পারলাম না চট্টগ্রামকে আধুনিক করে, কয়েক ঘন্টায় জাহাজ লোডিং আনলোডিং কাজ সম্পন্ন হয় এমন সুশৃংখল করে আশে পাশের দেশ থেকে নিজেদের উপরে নিয়ে যেতে। কিভাবে পারবো? আমরা তো ভাবি নিজের ভালো থাকা , নিজের পকেট ভর্তি করা নিয়ে। দেশ নিয়ে ভাবার সময় কোথায়?
আমরা সমুদ্র বিজয় নিয়ে আনন্দ করতে করতে আত্মহারা হয়ে গেলাম। খুজেও দেখলাম না দেশের সীমানা অনুযায়ী রেখাটা সমান্তরাল না হয়ে ত্রিভুজ আকৃতির সীমানা দিয়ে আমাদের সমুদ্র সীমাও অর্ধেকের বেশী ছোট করে দেয়া হল। হারালাম ব্লকের গ্যাস, সমুদ্রের ভেতরকার অপার ঐশ্বর্যের অধিকার।
তবু আমরা আনন্দ করেছি, সংবর্ধনা দিয়েছি, যারা সমুদ্র বিজয়( ??!! ) এনেছেন আমাদের জন্য।নেট ঘেটে নীচের লিংক গুলো পেলাম। এই বিষয়ে জ্ঞান রাখেন এমন কেউ যদি যা লিখেছে তা খন্ডন করেন, বা নতুন ব্যাখ্যা দেন তাহলে বাংলাদেশী হিসেবে মনে শান্তি পাই।
Click This Link
http://www.shaptahik-2000.com/?p=1401
খুলনা গিয়েছিলাম সুন্দরবন দেখতে। এলাকার মানুষ বললো “ আমাদের দিকে বাঘ তেমন নেই। সব বাঘ ভারতের দিকে চলে গেছে।“ --- আফসোস ! আমরা আমাদের জাতীয় পশুকেও রক্ষা করতে পারলাম না। আয়তন হিসেবে সুন্দরবনের বড় অংশ বাংলাদেশের সীমানায়। অথচ আমরাই যেন তার সব টুকু ফল অন্যদের হাতে তুলে দিয়ে আসতে চাই। সুন্দরবন, গাছ-গাছালী, পরিবেশ, পশু-পাখি সবকিছুই আমাদের সম্পদ, আমাদের অহংকারের বিষয়।
খুলনায় বেশ উল্লেখযোগ্য হারে চিংড়ির আবাদ হয় ।সুন্দর বন যাবার পথে দেখেছি বিশাল খন্ডের জমি চিংড়ির ঘের করা। যা থেকে আমাদের রপ্তানি আয় নিতান্ত কম হয় না।
এবার আমরা দেশপ্রেমিকরা সেই সুন্দরবনের পাশেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র করবো। বাহ। সুন্দরবন ধবংস হয়ে যাক, আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধে ভারত যে সাহায্য করে ঋনী করছে তার ঋণ শোধ হবে না তবু। হাইকোর্ট রায় দেবার পরও পরিবেশবিদ দের কথা অগ্রাহ্য করে কার স্বার্থে এই চুক্তি হয়? রাশিয়ার সাথে পারমানবিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন যদি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েই থাকে তবে এই মাত্র ৫০০ মেগাওয়াটের জন্য আমাদের এত বড় সম্পদ ধ্বংশ করা কেন? গুগুল করে পাওয়া এই লিংকটির পোস্টটি পড়ে শুধু কস্ট আর হতাশায় ডুবে গেলাম যেন।
http://www.greenmagz.info/rampal/
এই লিংকটিও তথ্যবহুল।
http://dhakajournal.com/?p=3760
সুন্দরবন শেষ করে আমরা বিদ্যুত চাই না!!!!!
জানি বলে লাভ নেই। অভাগা দেশ এভাবেই শেষ হবে একদিন। আমরা দামী গাড়ির বদলে গ্যাস দিয়ে দেই, আমরা ট্রাংকে ভরে টাকা পাচার করি মধ্যপ্রাচ্যে, আমরা সমুদ্রসম্পদ মুক্ত হস্তে দান করে এসে বলি আমাদের জয় হয়েছে, আমরা দক্ষিনাঞ্চলের মানুষ কে এখনো ফেরী দিয়ে পদ্মা পার করাই। আবার সেই আমরাই না খেয়ে অনশন করি, মরতে বসি ৪১ বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার গ্লানি থেকে দেশকে বাচাতে। আমরা চোখ মেলে দেখিনা বর্তমানের বিলীন হয়ে যাওয়া । আমাদের চোখ আসলে অন্ধ। আমরা হয়ত জাতি হিসেবেই অন্ধ ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:১৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




