somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাল্পনিক_ভালোবাসা
বহুদিন আগে কোন এক বারান্দায় শেষ বিকেলের আলোয় আলোকিত উড়ন্ত খোলা চুলের এক তীক্ষ্ণ হৃদয়হরনকারী দৃষ্টি সম্পন্ন তরুনীকে দেখে ভেবেছিলাম, আমি যাদুকর হব। মানুষ বশীকরণের যাদু শিখে, তাকে বশ করে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিব সারাটি জীবন।

মধ্যবিত্তের ঈদ বাজার।

১৭ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মধ্যবিত্তের সংজ্ঞা কি আমি আসলে তা জানি না। তবে আমার কাছে মধ্যবিত্তের সংজ্ঞা অনেকটা রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের সংজ্ঞার মত। তিনি বলেছিলেন, যে গল্প শেষ হইয়াও হয় না শেষ, তাহাই ছোট গল্প। তেমনি মধ্যবিত্তের সব ইচ্ছা আহলাদ পূরন হয়েও পূরন হয় না। এটা কিনলে ওটা হয় না। কিছু পেলাম তো কিছু ছাড় দিলাম। সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে মধ্যবিত্তের সংসারে কাউকে না কাউকে অনেক কিছুই ছাড় দিতে হয়। মধ্যবিত্ত জীবন আসলে অনেকটা শাখের করাত। দু'দিকেই কাটে। সব কিছু রক্ষা করে বা নিয়ম মেনে চলার একমাত্র দায়িত্ব শুধু এই মধ্যবিত্তদের। সামাজিক প্রতিবন্ধকতা গুলো হাসিমুখে মেনে নেয়াই হয়ত মধ্যবিত্ত জীবনের সংজ্ঞা।

একজন মধ্যবিত্ত ব্যক্তির মাসিক আয় কত কিংবা মাসিক আয় কত টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে কাউকে মধ্যবিত্তের কাতারে ফেলা যাবে আমি সঠিক জানি না। এই ভাবে বিবেচনা করলে আমার ধারনা মধ্যবিত্তের ব্যপারটা আপেক্ষিক। একজন লোক মনে করুন মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা আয় করে। পঞ্চাশ হাজার টাকার কথা শুনে অনেকেই বলবেন এটা তো কম না, অনেক টাকা। কথা সত্যি, পঞ্চাশ হাজার টাকা অনেক টাকা। কিন্তু এমন যদি হয় পরিবারের লোকসংখ্যা ৬ জন, স্বামী স্ত্রী আর দুই সন্তান এবং বাবা মা। এবং যখন এই পঞ্চাশ হাজার টাকার উপরেই পরিবারের সবাই নির্ভরশীল, তখন কি অনেক টাকা বলে মনে হবে? মনে হবার কথা নয়। এই দুমূল্যের বাজারে তখন পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে সংসার পরিচালনা করা কঠিন ব্যাপার। ঢাকা শহরে আপনি যদি মোটামুটি মানের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তাহলে আপনার প্রতিমাসে নূন্যতম বিশ থেকে পঁচিশ হাজার টাকা শুধু বাড়ি ভাড়ায় যাবে। এরপর থাকে খাওয়া খরচ, যাতায়াত, ছেলে মেয়ের পড়াশুনার খরচ, চিকিৎসা খরচ, ইত্যদি আরো নানা রকম খরচ। সব খরচ মিটিয়ে কত টাকাই বা থাকে। তাই মাস শেষে একজন অর্ধ লক্ষ টাকা আয়কারী যদি নিজেকে মধ্যবিত্ত ভাবেন তাহলে খুব বেশি কি অবাক হবার আছে? । আমার ধারনা নেই।

মধ্যবিত্তের জীবনে আনন্দের উপলক্ষ্য খুব বেশি একটা আসে না । তাই তো মধ্যবিত্ত জীবনে ধর্মীয় এবং সামাজিক উৎসবগুলোই আনন্দের প্রধান উৎস। যেকোন আনন্দ উৎসবে সাথে নতুন পোষাকের বা কেনাকাটার একটা সর্ম্পক আছে। উৎসবের এই কেনাকাটা মধ্যবিত্তের জন্য অনেকটা বজ্রা আটুনির ফস্কা গেরোর মত হয়ে দাঁড়ায়।

পারিবারিক দায়িত্ববোধ থেকেই হোক কিংবা সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই হোক ঈদ আসলে মধ্যবিত্ত মানুষরা মার্কেটে ভীড় জমায়। তাই তো বছরের এই সময়টাতেই মার্কেটে সবচেয়ে বেশী ভীড় থাকে। অন্যান্য সময়ের মার্কেটে ঘুরাঘুরি সেটাও ঈদ কেন্দ্রিক। দোকানের বাইরে থেকে ঘুরে ঘুরে জিনিসপত্র দেখা, নিজেকে নিজে বুঝানো, 'নিশ্চয়ই ঈদে আরো ভালো কালেকশন আসবে, আরো ভালো জিনিস আসবে, তখন এই দোকানে আসব'। হয়ত পছন্দের জিনিসে একটু হাত বোলান, একটু স্পর্শ করা সবই ঈদকে সামনে রেখে কিছু সুন্দর কল্পনা। বাস্তবতার তাগিদে হয়ত অনেকের এই কল্পনাটুকু বাস্তবে রুপ নেয় না। ঘুরে ফিরে কিছুটা আহাজারি এবং সেই পুরানো স্বপ্নে ফিরে যাওয়া, 'এই বার হয়নি, আগামি বার হবে' সন্তানের কান্না ভেজা চোখ, স্ত্রীর অভিমানী হাসি, একজন বাবার পরাজিত চেহারা, একজন স্বামীর হতাশার দৃষ্টি ইত্যাদিই হয়ত মধ্যবিত্তের ঈদ আনন্দ, মধ্যবিত্তের ঈদ বাজার।

বর্তমান বাজারে আপনি সীমিত টাকায় পরিবারের সবার জন্য হয়ত কিনতে পারবেন না। যারা ভবিষ্যতের কথা ভেবে কিছু কিছু টাকা জমিয়েছেন, তারা চেষ্টা করেন বোনাসের টাকার সাথে মিলেয়ে সবার জন্য কিছু কেনার। মোটামুটি আয় যারা করেন, তাদের অনেকের ইচ্ছে থাকে কোন ভালো শপিং মল থেকে কিছু কেনার। কিন্তু যারা সারা বছরের ব্যবসা একমাসেই করতে চায় তাদের কি কোন দায় আছে এই মধ্যবিত্ত মানুষের নাগালের মধ্যে কোন কিছু বিক্রি করার? না, তাদের কোন দায় নেই। একজন মধ্যবিত্তের ঈদ বাজেট কত? পনের থেকে বিশ হাজার টাকা? যে মার্কেটেই যাওয়া হোক না কেন, পাঁচ হাজারের নিচে তেমন ভালো শাড়ি পাওয়া যায় না। সাথে স্যান্ডেল যদি কেউ কিনে সেখানেও নূন্যতম দেড় থেকে দুই হাজার টাকা নিচে সারা বছর পড়ার উপযোগী স্যান্ডেল পাওয়া যাবে না। ছেলে মেয়ের জন্য কেনাকাটা, সেটাও পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার নিচে সম্ভব নয়। বাবা মা এর জন্য কেনাকাটা করবেন, সেটাও নূন্যতম ছয় বা সাত হাজারের নিচে সম্ভব নয়। তারপর থাকে হয়ত নিজের জন্য কিছু কেনা পালা।

অনেকের হয়ত আরো সীমিত বাজেট থাকে। তখন হয়ত শুধু ছেলে মেয়ে আর বাবা মা এর জন্যই কেনা হয়। কাকে বাদ দিয়ে কার জন্য কেনা হবে এটা নিয়ে হয়ত স্ত্রীর সাথে কিছুটা মনোমালিন্যও দেখা দেয়। তাই তো দেখা যায় শুধু হয়ত বাবা মা বা সন্তানদের জন্যই কিছু কিনে বাড়ি ফেরা। বাড়ি ফিরে বলা, 'আমার আগের ঈদের পাঞ্জাবিটা তো নতুনই, পড়াই হয়নি তাই আমি কিছু কিনব না, শুধু শুধু টাকা নষ্ট।' কিংবা স্ত্রীও হয়ত কোন কম ব্যবহার করা শাড়ী বের করে ইস্ত্রী করে রাখেন ঈদের দিন পড়ার জন্য। পাশের বাসার কোন ভাবি যখন প্রশ্ন করেন, 'ভাবি ঈদে নতুন কি নিলেন? তখন গুছিয়ে সুন্দর করে একটা মিথ্যে বলা, ভাবি, গত ঈদে আমার এই শাড়ীটা একে বারেই পড়া হয় নি। আমি এইটা এইবার ঈদে পড়ব, ও তো ভীষন রাগ করেছে। পাগলকে যদি বুঝাতে না পারি তাহলে হয় গিয়ে কিছু একটা কিনব।' সকল ধর্মেই বলা আছে, মিথ্যে বলা মহা পাপ। আমার ভীষন জানতে ইচ্ছে করে, পরম করুনাময় আল্লাহপাক মধ্যবিত্তের লজ্জা নিবারনের এই মিথ্যের শাস্তি কি দিবেন।


আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা আরও কম টাকা আয় করে সংসার চালাচ্ছেন, বাবা, মা ,স্ত্রী , পুত্র সবাইকে নিয়ে এই ব্যস্ত শহরে দিন কাটাচ্ছেন। যে যার সামর্থ অনুযায়ী ভালো থাকার চেষ্টা করছেন। কোন মধ্যবিত্ত ব্যক্তিকে যদি জিজ্ঞেস করেন, 'ভাই কেমন আছেন?' তিনি হেসে জবাব দেন, 'আলহামদুল্লিলাহ ভাই, ভালোই আছি'। সত্যি হোক মিথ্যে হোক ভালো থাকতেই হবে। কারন ভালো থাকাই নিয়ম। শহরের জীবন হচ্ছে অনেক গতিময়। এইখানে পিছিয়ে পড়াদের কিংবা খারাপ থাকাদের কোন স্থান নেই।

ঈদ আসে ঈদ চলে যায়। মধ্যবিত্তের সুখ, দুঃখের খবর কেউ রাখে না।আমরা অনেকেই হয়ত ঈদে অনেকগুলো পোষাক কিনি। যা হয়ত আমাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত। আমাদের আশে পাশে অনেক পরিবার আছে, যাদের কথা হয়ত আমারা স্মরন করি না। ঈদ একটি সার্বজনীন উৎসব। আমাদের একটু খেয়াল, আমাদের একটু অপচয় রোধ দিয়ে আমরা আরো একটি পরিবারের ঈদের আনন্দ কি কিছুটা বাড়িতে তুলতে পারি না? হয়ত পারি। চেষ্টা করতে ক্ষতি নেই। কারন কথায় বলে, আনন্দ ভাগ করলে তা বাড়ে, আর কষ্ট ভাগ করলে তা কমে।

সবাই ভালো থাকুক, ঈদের অগ্রিম শুভেচ্চা সবাইকে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৩
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×