somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাল্পনিক_ভালোবাসা
বহুদিন আগে কোন এক বারান্দায় শেষ বিকেলের আলোয় আলোকিত উড়ন্ত খোলা চুলের এক তীক্ষ্ণ হৃদয়হরনকারী দৃষ্টি সম্পন্ন তরুনীকে দেখে ভেবেছিলাম, আমি যাদুকর হব। মানুষ বশীকরণের যাদু শিখে, তাকে বশ করে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিব সারাটি জীবন।

গল্পঃ আজ তুমি কোথাও যাবে না।

১২ ই মে, ২০১৩ রাত ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক্ষন থেকেই বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। দুই তিনটা বাস এলো, চেষ্টা করেও উঠতে পারলাম না। ইদানিং হরতালের আগের দিন বিকেল থেকেই বাস চলাচল সীমিত হয়ে যায় এবং প্রতিটি হরতালের আগের দিন হয়ে উঠে সিএনজি ড্রাইভারদের জন্য আনন্দময় ঈদের দিন। ফলে আমার মত সাধারন মানুষের জন্য সেদিন সিএনজি নিষিদ্ধ এবং যাতায়াতের একমাত্র উপায় লোকাল বাস।

যাই হোক, একটা বাস আসল, মোটামুটি খালিই বলতে গেলে। সবাই ভেতরে ঢুকে যাওয়ার পর দরজার সামনেই দাঁড়ালাম। হেলপার প্রথমে রাজি হলো না। কিন্তু দুইটাকা ভাড়া বেশি দিব বলায় কোন সমস্যা হলো না। ভিতরে দাঁড়িয়ে সেদ্ধ হবার চাইতে, দরজায় দাঁড়ানো অনেক আরামের। মুফতে কিছুটা হাওয়া খাওয়া যায়। যারা লোকাল বাসে নিয়মিত উঠেন বিশেষ করে ৩ নাম্বার বাসে তারা জানেন, ব্যাপারটার শানে নজুল কি। বাস চলতে শুরু করায়, আরো খানিকটা বাতাসের লোভে মাথা বের করে দাঁড়ালাম। হঠাৎ দেখি, সামনের সংরক্ষিত লেডিস সীটের পাশের জানালা দিয়ে এক গোছা চুল বের হয়ে বাতাসে উড়ছে। আমি তো খুবই অবাক। খুব ইচ্ছে হলো, দেখি তো চেয়ে, কে এই কেশবতী ললনা?

মাথা ভেতরে নিয়ে সীটের দিকে তাকাতেই মেয়েটির সাথে চোখাচোখি হল। কিছুটা চমকে উঠলাম। এমন তীব্র চোখের চাহুনী বহুকাল আমি দেখিনি। কেমন যেন একটা অদ্ভুত আর্কষন আছে চোখ দুটোর। শুধু চেয়েই থাকতে ইচ্ছে করে। চোখের ভূলে পরনারীর দিকে একনজরে তাকানো হয়ত অনেকটাই সিদ্ধ, কিন্তু আমি কোন মতের তোয়াক্কা না করে, পূর্ন নজরেই বার বার মেয়েটিকে দেখছি। মেয়েটির চোখের সাথে আমার এক মাত্র দূরত্ব হলো, বাসের সেই শীর্ন, মোচড়ানো, ট্যাব খাওয়া ক্ষীন দরজা। আমার মনে হচ্ছিল, পৃথিবীর যাবতীয় সৌন্দর্য এই শীর্ন, মোচড়ানো, ট্যাব খাওয়া ক্ষীন দরজার ওপাশে লুকিয়ে আছে। চারিদিক হঠাৎ করে কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগল। ইমেজ এডিটিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে যেমন করে, একটি নির্দিষ্ট মুখের বাইরে বাকি সব কিছুকে গ্লসিয়ান ব্লার করে ফেলা যায়, তেমনি মনে হলো, মেয়েটির মুখ ছাড়া বাকি বাসের সবাই ব্লার হয়ে গিয়েছে। আমি টের পাচ্ছি প্রবল গতিতে বাস ছুটছে। গ্লসিয়ান ব্লার ক্রমশ হয়ে যাচ্ছে মোশন ব্লারে। নাহ! মানতেই হল দীর্ঘদিন এত সৌন্দর্যের মুখোমুখি আমি হইনি।

হঠাৎ ড্রাইভারের খিস্তি খেউড়ে আমি সম্বিত ফিরে পেলাম। এক রিকশাওয়ালা সাইড দিচ্ছিল না। ড্রাইভার জানালা দিয়ে মাথা বের করে ঐ রিকশাওলার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করছিল। প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হলো। একটা মেয়ের সামনে কি কেউ এইভাবে গালিগালাজ করে? আবারও দরজার আড়াল থেকে মেয়েটির দিকে তাকালাম। মেয়েটি নির্বিকার। বুঝাই যাচ্ছে, এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে সে অভ্যস্ত। এই প্রথম ভালো করে আবার তাকালাম মেয়েটির দিকে। বাসের অল্প পাওয়ারের বাতির মিটমিটে আলো এসে পড়ছে মেয়েটার মুখে। বেশ সাধারন একটা মেয়ে। হতে পরে কোন সরকারী অফিসে টাইপিস্টের কাজ করে কিংবা কোন ফ্যাশন হাউজের সেলস গার্ল। বয়স তেইস কি চব্বিশ, হাল্কা পাতলা গড়ন। সাদা রং এর একটা কামিজ পড়া। কলেজের মেয়েরা যেভাবে ওড়না পড়ে, অনেকটা সেইভাবে ওড়না পড়েছে। নাকের ডগায় হালকা ঘামের চিহ্ন। বুঝাই যাচ্ছে, কর্মক্ষেত্র থেকে বাসায় ফিরে যাচ্ছে।

প্রায় প্রসাধনবিহীন শ্যামলা রঙ্গের এই মেয়েটিকে দেখে মনে হলো, মেয়েদের আসল সৌন্দর্য তাদের শ্যামলা বর্ণে, গৌর বর্ণে নয়। প্রসাধন বলতে দুচোখের কাজল। উফ! কি অসহ্য একটি ব্যাপার। সব কিছু বলে, ব্যখ্যা করে বুঝাতে নেই। এতে কল্পনা শক্তির মৃত্যু হয়। আমি ব্যাখ্যা করে বুঝাতে চাই না। হ্যাঁ, আমি স্বীকার করে নিচ্ছি, আমি হয়ত ব্যাখ্যা করে বুঝাতে অপারগ।

আমি আবার দরজা দিয়ে বাইরে তাকালাম। বাস ছুটে চলেছে তীব্র গতিতে। হু হু করে বাতাস আসছে। আমি অজানা কোন কারনে ঘামছি।মাথায় যে অল্প কিছু চুল অবশিষ্ট আছে, তাও প্রবল বাতাসে এলোমেলো।
আমি হাত দিয়ে দরজার হাতল ধরে দাঁড়িয়ে আছি। যেখানে হাত বাড়ালেই অমোঘ সুন্দরের ছোঁয়া, সেখানে নিজের হাত দিয়ে বাসের দরজার নোংরা হাতল আঁকড়ে ধরে থাকাটা একটা নির্মম বাস্তবতাও বটে।

ক্ষনে ক্ষনে বিজলী চমকাচ্ছে। মাঝে মাঝেই চলতি বাসে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা বাতাসের ছোঁয়া। খুব ইচ্ছে করছিল, হাত বাড়িয়ে বাতাসে উড়ন্ত চুলের খানিকটা স্পর্শ পাই কিংবা স্পর্শ করি তার দুটি হাত কিংবা নিই তার চুলের গন্ধ। মাঝে মাঝে অবাস্তব কিছু চিন্তা করার মাঝেও আনন্দ আছে।

-মামা, নামেন নামেন ফার্মগেট আইসা গেল তো।

হেলপারের তাড়ায় বাস্তবে ফিরে আসি। বাস থেকে নেমে পড়ি আমি। অনেক যাত্রী নেমে যাচ্ছে, খালি হয়ে যাচ্ছে বাস। আবার নতুন যাত্রী উঠছে, ভর্তি হয়ে যাচ্ছে বাস। আচ্ছা মেয়েটা কি এখানে নামবে না??

'মতিঝিল, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ি, যাত্রাবাড়ি,'- হেলপারের তীব্র ডাকাডাকি চরম শব্দ দূষনের প্রতিরুপ।

চলতে শুরু করেছে বাসটি। এক্ষুনি চলে যাবে শহরের অন্য কোন মাথায়। হঠাৎ প্রচন্ড ঝড়ো বাতাশ শুরু হল, চারিদিকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য মানুষের ছোটাছুটি।


আমি নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাসটিকেই বেছে নিলাম। আবারও দৌড়ে উঠলাম বাসে। এবার সামনের দিকে সীটেই বসেছি। আবার তাকালাম মেয়েটির দিকে। আমার দিকে চোখ পড়ল মেয়েটির, মুখে ফুটে উঠল হালকা হাসির রেখা। হ্যাঁ, দীর্ঘ দিন পর, আমি প্রেমে পড়তে বাধ্য হয়েছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৪ ভোর ৬:৩৫
৭৬টি মন্তব্য ৭১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×