somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাল্পনিক_ভালোবাসা
বহুদিন আগে কোন এক বারান্দায় শেষ বিকেলের আলোয় আলোকিত উড়ন্ত খোলা চুলের এক তীক্ষ্ণ হৃদয়হরনকারী দৃষ্টি সম্পন্ন তরুনীকে দেখে ভেবেছিলাম, আমি যাদুকর হব। মানুষ বশীকরণের যাদু শিখে, তাকে বশ করে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিব সারাটি জীবন।

গল্পঃ পুতুল খেলা ও একজন ভার্চুয়াল স্রষ্টা।

২৩ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার নাম আহমেদ রবিন। আমি একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। অপরিচিত কেউ যখন জিজ্ঞেস করে, আপনি কি করেন? আমি তখন এক গাল হেসে বলি, ভাই তেমন কিছু না, ছোট একটা চাকরী করি।

তবে এর পাশাপাশি আমার আরো একটা পরিচয় আছে। আমি একজন ফেসবুকার। ইদানিং এটাও একটা পরিচয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলতে আপত্তি নেই, চাকরি করি বলার চাইতে আমি একজন ফেসবুকার- এটা বলতেই বেশি আনন্দ পাই। তাই ইদানিং আমি কি করি জানতে চাইলে আমি মুখে রহস্যময় একটা হাসি দিয়ে বলি, হ্যাঁ আমি একজন ফেসবুকার।

জানিনা আদৌ এখানে গর্ব করে বলার কিছু আছে কি না, তবে যুগের হাওয়ার মাঝে মাঝে গা ভাসিয়ে দিতে ভালোই লাগে। হ্যাঁ, এই ফেসবুক আমাকে অনেক কিছুই দিয়েছে। আমার অপূর্ন ইচ্ছেগুলো, অখাদ্য লেখালেখি, মানুষের প্রসংশা ইত্যাদি পূর্ন হয়েছে এই ভার্চুয়াল জগৎ এ এসে। নিজেকে পূর্ন করার ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছি। এটা এমন এক জগৎ যেখানে আমি মাঝে মাঝে সৃষ্টির আনন্দ পাই। এই জগৎ এ আমিই রাজা। আমি হও বললেই হয়ে যায়। আমি না বললেই না। এভাবে যখন ভাবি তখন আমার দেহের প্রতিটি কোনায় কোনায় উত্তেজনা টগবগ করে, দারুন শিহরনে শিহরিত হই আমি। হ্যাঁ, আমি এক ভার্চুয়াল স্রষ্টা, আমি আমার সৃষ্ট এক ভার্চুয়াল ক্যারেক্টার।

আজ সারাদিন প্রচন্ড ব্যস্ত ছিলাম। একবারও অনলাইনে আসতে পারি নি। কেমন যেন অস্থির লাগছে। কোনমতে নাকে মুখে চারটা গুজে দিয়ে আমি ছুটে এসে বসলাম পিসির সামনে। কাঁপা কাঁপা হাতে পিসিতে মডেমটিকে প্লাগ ইন করলাম। মডেমের বাতিটি সংযোগ পাওয়ার জন্য টিপ টিপ করে জ্বলছে। এক একটা সেকেন্ড আমার সুদীর্ঘ বছর বলে মনে হচ্ছে। আমার বুকের ভেতর কেমন যেন টিপ টিপ করছে। মনে মনে ভাবছি, আচ্ছা যদি লাইন এক্টিভ না থাকে? নাহ! ঐ তো সবুজ বাতি জ্বলে উঠল। লাইন কানেক্টেড। মাঝে মাঝে এই মডেমকে আমার বাস্তব পৃথিবী ও অপারবাস্তব পৃথিবীর ইমিগ্রেশন বলে মনে হয়। সবুজ বাতি জ্বলেছে! আমি ইমিগ্রেশন পার করেছি। এখনই প্রবেশ করব এক অপার বাস্তব জগতে।

ফেসবুকে ঢুকতেই এক গাদা ম্যাসেজ আর নোটিফিকেশনের স্তুপ। এত গুলো মানুষ আমাকে মিস করেছে, আমার কথা ভেবেছে, ভাবতেই আমার বড় ভালো লাগে। আমার বাস্তব পৃথিবীতে এত গুলো মানুষ নেই। অল্প যারা আছে, তারা আমাকে কোন উৎসব বা দরকার ছাড়া মনে করে না। অথচ এই ভার্চুয়াল মানুষগুলো আমাকে কি পছন্দই না করে। একজন লিখেছে, ‘হাই আমি কি আপনার বন্ধু হতে পারি?
হাহাহা! কি দারুন ব্যাপার। মানুষ এখানে আমার যেচে পড়ে বন্ধু হতে চায়!! অথচ আমার বাস্তব পৃথিবীতে এই ধরনের বন্ধুত্বের আহবান খুব একটা পাই নি আবার আমার পাঠানো বন্ধুত্বের আহবানে তেমন কাউকে সাড়া দিতেও দেখি নি। আমার দারুন হাসি পায়। আমি খুব সহজেই বন্ধুত্ব গ্রহন করি।

সম্প্রতি আমি একটা মেয়ের ক্যারেক্টার সৃষ্টি করেছি। নাম দিয়েছি, সিল্কি নোভা । ক্যারেক্টার ডিটেইলসে লিখেছি, আমি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ূয়া এক ছাত্রী। রাজনীতি আর ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি অপছন্দ করি। আমি বর্ষা দিনে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে রিকশায় করে ঘুরতে ভালোবাসি, খেতে ভালোবাসি ফুচকা। গান ছাড়া আমার একমুহূর্ত চলেই না। ও হ্যাঁ, বয়স লিখেছি বাইশ বছর আর ঠিকানা গুলশান।

আমি লক্ষ্য করেছিলাম, আমার বন্ধুদের মাঝে প্রাইভেট ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েদের ব্যাপারে একটা আলাদা ফ্যান্টাসি কাজ করত। প্রাইভেট ভার্সিটির মেয়েদের নাম শুনতেই তাদের চোখগুলো কেমন যেন লোভাতুর হয়ে যেত। একজন মানুষের চোখ যখন লোভের সাথে সাথে কামাতুরও হয়ে যায়, তখন কেমন লাগে আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। আমি কাছ থেকে দেখেছি এমন কিছু মানুষকে। তাই নিজের সৃষ্টি চরিত্রকে আমি প্রাইভেট ভার্সিটি পড়ূয়া এক ছাত্রীই বানিয়েছিলাম। আর এই শ্রেনীর মানুষরাই আমার টার্গেট। এরাই আমার শিকার। এদের পরিনতির কথা ভাবতেই আমি খিক খিক করে হাসি, মাঝে মাঝে সেটা পরিনত হয় অট্রহাসি হাসি। সে দারুন এক উত্তেজনা, বলে বুঝাতে পারব না।

আমি খুব সতর্ক ভাবে আমার এই ক্যারেক্টারকে পরিচালনা করছি। এই ক্যারেক্টার পরিচালনা করার জন্য আমাকে বেশ কিছু প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। অফিস শেষ করে প্রায় সময় বনানীর প্রাইভেট ভার্সিটি পাড়াতে দাঁড়িয়ে থাকতাম। সেখানকার মেয়েদের পোষাক, আচরন, কথাবার্তা সবই খেয়াল করতাম। স্বীকার করছি, প্রথম প্রথম মেয়েলী আচরন আত্মস্থ করা বেশ কঠিনই ছিল। মেয়ে হিসেবে ছেলেদের সাথে গল্প করতে খুব একটা ভালো লাগত না। হাসি পেত। কিন্ত এখন আমি দারুন অভিনয় করতে পারি। মাঝে মাঝে আমি নিজেই বুঝতে পারি না, আমাকে না দেখা মানুষগুলো কিভাবে বুঝবে।

প্রোফাইল ছবি কি দিব, তা নিয়ে প্রথম দিকে বেশ ঝামেলায় ছিলাম। ছবি ছাড়া এখনকার জগৎ অচল। একটা সুন্দর মুখের ছবি দিতে পারলে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট, লাইক, কমেন্ট ইত্যাদির অভাব হয় না। একেবারে প্রথম দিন থেকেই হীট। প্রথমে ভেবেছিলাম অন্য কোন এক মেয়ের ছবি দিব। কিন্তু ইদানিং গুগলে নতুন সুবিধা যোগ হয়েছে। ছবি সার্চ করা যায়। সেইক্ষেত্রে ধরা পড়ার সম্ভবনা বেশি। তারচেয়ে কোন ফুল, পুতুল, কিংবা হাতের কোন ছবি দিয়ে দেই। ধরা খাবার কোন সম্ভবনা নেই। এটা এখন ভার্চুয়াল মেয়েদের জনপ্রিয় স্টাইল। ফুল, লতা পাতা, বাচ্চা ইত্যাদির আড়ালে নিজেকে গোপন করার দারুন কার্যকর পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে সুন্দর অসুন্দরের কোন প্রতিযোগিতা নেই। ফুলের আড়ালে গেলে মেয়ে পরিচয়ই বড় পরিচয় হয়ে যায়। আমি সেই সুযোগটাই কাজে লাগালাম। আমি একটা বাচ্চা মেয়ের ছবি দিলাম।

আজ প্রায় মাস তিনেক হলো, এক জনের সাথে চ্যাট করছি। ছেলেটার নাম সজীব। দারুন একটা ছেলে। এই ভার্চুয়াল জগতে যে কেউ কাউকে না দেখে ভালোবাসতে পারে, তা এই ছেলেকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। প্রতিদিনই আমার জন্য কয়েকটা করে কবিতা লিখে ইনবক্স করে। আমি কবিতা পড়ি আর মুগ্ধ হই। এত চমৎকার কবিতা মানুষ লিখতে পারে আমার জানা ছিল না। আমি সত্যিকারের মেয়ে হলে নির্ঘাত প্রেমে পড়ে যেতাম।

আমার সৃষ্ট এই ভার্চুয়াল ক্যারেক্টারের প্রেমে পড়া আমি নিষিদ্ধ করেছি।নোভা চরিত্রকে এমন ভাবে প্রগ্রাম করেছি, যেন ও একজনের সাথে প্রেম করার চাইতে অনেকের সাথে প্রেম প্রেম ভাব করতে পারে। প্রেম হলে আর্কষন থাকে না বরং প্রেম প্রেম ভাবের সময়টাই তীব্র আকর্ষণীয়। আমার নিজ জীবনে অভিজ্ঞতা অন্তত তাই বলে। একটা মেয়েকে যেদিন ভালোবাসি বলেছি, আমার প্রতি তার সকল আকর্ষন সেদিনই শেষ। সিরিয়াস সম্পর্কে মেয়েটা জড়াতে চায় না। তার আরো সময় চাই। জীবনের এক ক্রান্তিকালে এসে যখন আপনি কাউকে অনেক ভালোবাসবেন আর যখন সে আপনাকে বলবে, আমার আরো সময় চাই, আমি নিশ্চিত আপনি তাকে আজীবন সময়ই দিবেন। আমিও দিয়েছিলাম। ফলে হাজার নকেও তার কোন সাড়া পেতাম না, হাজার চেষ্টাতেও তাকে ফোনে পাওয়া যেত না। সে আমাকে আজীবন ভালোবাসা না দিক, আজীবন অপেক্ষা আর অবজ্ঞার কষ্ট খুব সুন্দর ভাবে দিয়েছিল। অবশ্য আমার মত একটা সাধারন ছেলেকে কোন মেয়ে সহজেই ভালোবাসবে এটা ভাবাও ঠিক লজিকের বিষয় না। আজীবন যাকে ভালোবাসার স্বপ্ন দেখেছিলাম তাকে এই একজীবনেই ভুলতে বেশ কষ্ট পেতে হয়েছিল।

ইদানিং ছেলেপেলে গুলো মূর্খ হতে চলেছে। দুই দিনের পরিচয়, জানা নেই শোনা নেই, খালি ভালোবাসাবাসি আর নষ্ট প্রেমের কষ্ট মাখা কবিতা। আমার বড্ড শরীর জ্বালা করে। এদের একটা শিক্ষা দরকার। আর এটাই সিল্কি নোভার সৃষ্টির মূল রহস্য। বাস্তবমুখী শিক্ষার কল্যানে আমার সৃষ্ট চরিত্র নোভা আজকে ভার্চুয়ালী বড়ই আকর্ষনীয়া। সবাই তাকে বাস্তবে টেনে আনতে চায়। আমি হাসি, আমার প্রচন্ড হাসি পায়। এই সময়টা আমি নিজেকে আয়নায় দেখি না, আমার সাহসে কুলায় না।

আজকে প্রায় অনেকদিন হলো, সজীব আমার সাথে দেখা করতে চাইছে। কাটানোর চেষ্টা করছি। পারছি না। গতকাল রাতে তার সাথে চ্যাট স্টোরিটা আবার দেখলাম।

ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি, হ্যাঁ, শুধু তোমাকে, শুধুই তোমাকে ভালোবাসি।
-এত অস্থির হচ্ছ কেন সজীব। তুমি অস্থির হলে আমারও অনেক অস্থির লাগে। তুমি কেন বুঝতে চাইছ না, আমাদের মাত্র অল্প দিন হলো পরিচয় হয়েছে? তুমি কতটুকুই বা আমাকে চিন?
আমি কিছু জানতে চাই না, বুঝতে চাই না, কোন কিছু বুঝার অবস্থায় নেই আমি।
-উফ! তোমাকে নিয়ে কি করব আমি! বলতো?
ভালোবাসো, আর অন্য কিছু করতে হবে না। বাকি যা করার আমিই করব।
-হাহাহা। ফাজিল ছেলে! চান্স পেলে খালি ইংগিতপূর্ন কথা না :P
কি করব বল? আমার তো তোমার কথা ভাবলেই কেমন যেন লাগে।
কেমন লাগে?
না। বলা যাবে না। তুমি আবার সারা রাত ধরে অস্থির থাকবে। আগে আমি আসি, তারপর সরাসরিই করে দেখাব। :D
হাহাহ! কচু! যাও তোমার সাথে দেখাই করব না আমি। আমার তো ভয়ই লাগছে। আল্লাহই জানে তুমি কি না কি করে বস।
কি? তুমি আমাকে বিশ্বাস কর না? বললাম না, আমাদের প্রথম দেখা হবে বসুন্ধরা সিটিতে। এক সাথে সিনেমা দেখব। শুধু তোমার হাত ধরে থাকব, আর বেশি কিছু না। প্রথমদিনে আমিও বেশি কিছু চাই না। প্রমিজ!
-খুব ভালো। যাও এখন গিয়ে তুমি একা একা মুভি দেখ। আমি আসব না।
প্লীজ নোভা! প্লীজ। একবার আসো, শুধু একবার তোমাকে একবার দেখি। আচ্ছা যাও, আমাকে না হয় তোমার ভালোবাসতে হবে না। শুধু একবার দেখা কর। যে মানুষকে আমি ভালোবাসি তাকে কি একবার দেখতেও পারব না?
-আচ্ছা আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। আমি আসব। দেখা হবে আমাদের।
সত্যি!!!!! তুমি সত্যি বলছ আসবে??? মাই গড আমি বিলিভ করতে পারছি না।
-টাইম এন্ড প্লেস প্লীজ?
আগামী শুক্রবার, দুপুর বারটা, বসুন্ধরা সিটি।
-তারমানে পরশুদিন?
হ্যাঁ, তোমার না কালকে পরীক্ষা আছে?
-ওহ হ্যাঁ। তুমি আমাকে এত কেয়ার কর!
না! আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি। আচ্ছা তুমি কি পড়ে আসবে?
-এখনও জানি না, পরে জানাব তোমাকে।
............

হঠাৎ ম্যাসেঞ্জারে নোভার ম্যাসেজ পেয়ে আমি বাস্তবে ফিরে আসি। কিছুদিন হল মেয়েটার সাথে নেটে পরিচয়। বেশ লাস্যময়ী মেয়েটা। কদিন হলো, দেখা করতে চাইছে, আমাকে নাকি তার ভালো লেগেছে। আমিও বলেছি হ্যাঁ, আমারও তাকে পছন্দ। ভার্চুয়াল প্রেমে কোন আপত্তি নেই আমার। আমি এখানে একজন মহান প্রেমিক। হাজার হাজার প্রেমের কবিতা আমার লেখা আছে। শুধু যখন যাকে দরকার তাকেই বলি, শুধু তোমাকে ভেবে লেখা।

এখানেও এমন হয়েছে। কবিতা পড়েই তো নোভা পাগল হয়েছে। ওহ! বলে রাখা ভালো, এই সবই সজীবের কবিতা। সবই সিল্কি নোভাকে ভেবে লেখা। আমি ভাবছি মানুষকে কিভাবে পাগল করা যায় তার উপর শেষ জীবনে একটা বই লিখব । বই এর নাম দিব, ' পাগলও হয়ে বন্ধু পাগল বানাইলে আমায়" ইদানিং ভালোই জ্ঞান অর্জিত হয়েছে। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিছু করে যেতে ইচ্ছা করে।

যাইহোক আমি নোভাকে হ্যাঁ বলে দিলাম। নোভা অনেক খুশি। আমাকে বলল, বসুন্ধরা সিটিতে ও আমার সাথে দেখা করতে আসবে। কিভাবে তাকে চিনব প্রশ্ন করতেই জানাল- ও সবুজ রঙের সেলোয়ার কামিজ পরে আসবে। আমাকে কিভাবে চিনবে জানতে চাইল বললাম, পরে জানাব।

সাইন অফ করে ভাবলাম, যাই দেখা করেই আসি। কি আর হবে। কিন্তু মেয়ে যদি প্রেমে পড়ে তাহলে আমি নাই। ভালোবাসার কচকচানি ভাল লাগে না আর। এই ভালোবেসে কিবা হবে, যেখানে ভালোবাসাবিহীন সবই হচ্ছে। সেখানে এই সব অহেতুক ব্যাপারে যাওয়ার কোন মানেই নেই। তারচেয়ে চেষ্টা করতে হবে ভুজংভাজং নানা কিছু বুঝিয়ে মেয়েটিকে এই ফ্লাটে নিয়ে আসতে পারি কিনা। আমি নিশ্চিত ও আসবে। কারন ভালোবাসা মানুষের বিবেচনা বোধ নষ্ট করে। ভালোমন্দ বোধ নষ্ট করে। এই ধরনের মানুষদের কিছুটা শিক্ষা হওয়ার দরকার আছে। কেন যেন মেজাজ খারাপ হলো। একটা সিগারেট ধরালাম। এক রাশ ধোঁয়া ছেড়ে কিছুটা শান্তি পেলাম।


শুক্রবার দিন দুপুর ১২ টা।

বসুন্ধরা সিটির লেভেল এইটে দাঁড়িয়ে আছি আমি। নোভা সবুজ রং এর কামিজ পড়ে আসবে। আমাকে বলেছে সাদা রঙের শার্ট পড়ে আসতে, হাতে যেন একটা গিফট কার্ড থাকে। আমি কাচের রেলিং এ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার গায়ে নীল রঙের শার্ট। চোখে সানগ্লাস। আয়নায় দেখলাম নিজেকে, নাহ! মন্দ লাগছে না।

আমি সজীবকে ফেসবুকে ম্যাসেজ পাঠিয়েছি, বলেছি তুমি সাদা শার্ট পড়ে এসো আর হাতে যেন থাকে একটা গিফট কার্ড আর আমি সবুজ রঙের কামিজ পরে আসব।

আমার খানিকটা দূরেই এক সুদর্শন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। গায়ে সাদা শার্ট। হাতে আর্চিজ এর গিফট কার্ড। কিছুটা অস্থির। বার বার ঘড়িতে সময় দেখছে।


হঠাৎ এসকেলেটরের দিকে চোখ পড়ল। সবুজ রঙের কামিজ পরা সুন্দরী একটা মেয়ে উঠে আসছে। মুখে কিছুটা সলজ্জ হাসি। হ্যাঁ এটাই নোভা। এদিক ওদিক কি যেন খুঁজছে। সজীবের উপর দৃষ্টি পড়তেই থেমে গেল। মুখে মিষ্টি হাসির একটা রেখা ফুটে উঠল। এতক্ষনে সজীব দেখেছে নোভাকে। তারা আস্তে আস্তে একে অপরের দিকে এগুচ্ছে। নোভাই আগে কথা বলল, হ্যালো! আমি নোভা।


আমি দুর থেকে দেখে মুচকি হেসে পিছন ফিরলাম। আমার ভার্চুয়াল পুতুল দুটোর আজকে মিলনের দিন। চাইলেই এদেরকে কষ্টের প্রবল জগতে আমি নিয়ে যেতে পারতাম। করতে পারতাম চরম প্রতারিত। ভালোবাসার উপর জন্মে যেত এদের প্রবল ধিক্কার, ঘৃনা। ভার্চুয়াল জগতের উপর সৃষ্টি হতো ভয়ংকয় ঘৃনা। কিন্তু ঘৃনার খেলা অনেকদিন খেলেছি। এখন কিছুদিন ভালোবাসার খেলাই খেলি। জগৎ এ ভালোবাসা আর ভালোবাসা পাওয়াই বড় সত্য। এটা আমার চেয়ে ভালো কে জানে? আজকে থেকে তারা নিজেরা নিজেদের সাথে কথা বলবে, নিজেদের ভুমিকায় নিজেরাই অভিনয় করবে। ভাবতেই আমার আনন্দ লাগছে। সিনেমার সফল প্রযোজক হয়ত এইভাবেই আনন্দ পায়।

আমার হাতে অবশ্য একটা সিনেমার টিকেট আছে। লাইফ অফ এ পাই। হ্যাঁ, আজকে এই সিনেমাটা দেখা যেতে পারে। অনেকদিন কোন সিনেমা দেখি না। পর্পকর্নের প্যাকেট হাতে নিয়ে আমি ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করছি। মোবাইল দিয়ে ঢুকেছি ফেসবুকে। আমার দুটো একাউন্ট আজকে ডিএক্টিভেট করতে হবে। এই চরিত্রগুলোর ভার্চুয়াল জগতে তার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে। এরাই এখন বাস্তবের চরিত্র। বাস্তবের কাছে চিরকালই অপারবাস্তব পরাজিত হয়েছে। মাঝে মাঝে পরাজিত হওয়ার মাঝেই প্রকৃত বিজয় লুকিয়ে থাকে। কেন যেন আজকে পরাজিত হতে আমার খারাপ লাগছে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৪ ভোর ৬:৩৪
৭৯টি মন্তব্য ৭৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×