somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাল্পনিক_ভালোবাসা
বহুদিন আগে কোন এক বারান্দায় শেষ বিকেলের আলোয় আলোকিত উড়ন্ত খোলা চুলের এক তীক্ষ্ণ হৃদয়হরনকারী দৃষ্টি সম্পন্ন তরুনীকে দেখে ভেবেছিলাম, আমি যাদুকর হব। মানুষ বশীকরণের যাদু শিখে, তাকে বশ করে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিব সারাটি জীবন।

লুঙ্গি বিড়ম্বনা এবং আমাদের তালগাছ দর্শন। :|X(:-/B-)

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় পাঠক, এই লেখাটি শুরু করার আগে আমাকে অনিচ্ছাকৃতভাবে কিছু প্রারম্ভিকা টানতে হচ্ছে। যদিও লেখার আগে কোন ট্যাগ দিয়ে অহেতুক দৃষ্টি আকর্ষন করাটাকে আমি ঠিক পছন্দ করি না তথাপি ব্লগার মন যে কোন সময় সুশীলতায় আক্রান্ত হতে পারে, তাই এই কিঞ্চিত সতর্কতা। এই পোষ্ট এর বিষয়বস্তু লুঙ্গি- যা কিনা "অনেকের" ক্ষেত্রেই হয়ত একটি প্রাত্যহিক বিব্রতকর বিড়ম্বনা। আরো বিব্রতকর ব্যাপার হচ্ছে অন্য কারো এই প্রাত্যহিক বিড়ম্বনা স্বচক্ষে অবলোকন করা। দৈনন্দিন জীবনে কারো সাথে হয়ত সেই সকল বিড়ম্বনা খুব রসিয়ে রসিয়ে আলাপ করা গেলেও ব্লগে ঠিক ততটা রস সংগত কারনেই আনা সম্ভব নয়। তারপরও আমি চেষ্টা করেছি যথাসম্ভব ভদ্রভাবে রস আনয়ন করে ঘটনাটি শেয়ার করতে। তাই সকল প্রকার সুশীল এবং অনুভূতি প্রবন ব্যক্তিবর্গের কাছে সবিনয় অনুরোধ রইল, এই প্রাপ্ত রসায়িত পোষ্টটি তারা যেন নিজ দায়িত্বে পড়েন। কারো আঠারো প্লাস অনুভূতিতে আঘাত লাগলে আমি দায়ী নই।


২০০৩ সালের কথা। খুব সম্ভবত আমি তখন ভার্সিটির থার্ড সেমিস্টারে পড়ি। পড়াশুনার প্রচন্ড চাপ। বাংলা মিডিয়াম থেকে ইংলিশ মিডিয়ামে এসে জীবনটা প্রায় তামা তামা হয়ে গিয়েছিল। ভর্তির সময় ভার্সিটি কর্তৃপক্ষের শর্ত ছিল, নির্দিষ্ট জিপিএ বজায় না রাখতে পারলে, এসএসসি ও এইচএসসি রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে পাওয়া ফিনান্সিয়াল ওয়েভার থাকবে না। তাই চিন্তাটা একটু বেশিই ছিল। সারাদিন ক্লাস, লাইব্রেরী, এসাইমেন্টের কাজ শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় রাতের ৯টা বেজে যেত। ফিরে এসে আর পড়াশুনার তেমন এনার্জি থাকত না। যে সময়ের কথা বলছি, সেই সময়ে মহাখালী ফ্লাই ওভার ব্রীজের কাজ চলছিল। ফলে ধানমন্ডি থেকে বনানী আসতে যেতে খবর হয়ে যেত। তাই অনেক দিক বিবেচনা করে বাসায় কথা বলে ভার্সিটির পাশেই একটা বাসা ভাড়া করলাম। এই বাসার সুবিধা ছিল দুইটা। পুরানো দিনের বাসা হওয়ার কারনে ভাড়া ছিল তুলনামূলক অনেক কম এবং মালিক বিদেশে থাকায় পুরো বাসায় কেয়ারটেকার ছাড়া আর কেউ ছিল না। ফলে আমরা বেশ স্বাধীনতা ভোগ করতাম। শুরুতে আমরা চারজন ছিলাম। আমি বেশি ভাড়া শেয়ার করতাম দেখে আমি একাই একটা রুমে থাকতাম।

ভার্সিটিতে অনেক ছেলেই ঢাকার বাইরে থেকে পড়তে আসত। তাদের অনেকেরই থাকার একটা সমস্যা ছিল। ভার্সিটির কাছাকাছি হওয়াতে পরিচিত মহলে আমার বাসাটার বেশ চাহিদা ছিল। ফলে দেখা গিয়েছিল, আমার রুম ও ড্রইং রুম বাদে বাকি সব রুমেই দুইজন বা তিন জন করে থাকত। আমার এক বন্ধুর কাজিন ঢাকায় পড়তে এসেছিল। কিন্তু বেচারা কোথাও থাকার জায়গা পাচ্ছিল না। পরে আমি বন্ধুর অনুরোধে ছেলেটিকে ড্রইং রুমে থাকতে দিয়েছিলাম। আর মূল ঘটনার সূত্রপাত এখান থেকেই।

একদিন সকাল বেলা আমার ক্লাস ছিল। সবাই তখনও ঘুমাচ্ছে। রেডি হয়ে ড্রইং রুমে আসতেই আমার চক্ষু চড়ক গাছ! দেখলাম, জনাব মহাশয়ের লুঙ্গিখানা কোমরের নিচ থেকে উঠে গিয়ে মাথায় অবস্থান করছে এবং "তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে" টাইপের একটি পরিস্থিতি। আমি কিছুক্ষন পাগলের মত এদিক সেদিক তাকালাম। কি করব ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। সাত সকাল বেলা এই ধরনের একটা দৃশ্য দেখা অত্যন্ত ভয়াবহ ব্যাপার। থতমত খেয়ে তাড়াতাড়ি করে ছেলেটাকে ডেকে লুঙ্গি ঠিক করতে বললাম। এই ধরনের সিচুয়েশনে পড়লে মানুষের মধ্যে যে স্বভাবজাত তাড়াহুড়া থাকে তার মধ্যে তেমন কিছুই ছিল না। বরং মনে হলো, "কি যন্ত্রনা! একটু আরাম করে যে খোলা মেলা হয়ে ঘুমাব, তারও কোন উপায় নেই" - টাইপের একটি অভিব্যক্তি দিয়ে সে লুঙ্গি ঠিক করে আবার শুয়ে পড়ল।

কিছুটা মেজাজ খারাপ করে আমি ভার্সিটি চলে এলাম। বন্ধুদের সাথে ব্যাপারটা নিয়ে কিছুক্ষন হাসাহাসি করে ক্লাসে গেলাম। ম্যাডাম ক্লাসে একাউন্টিং এর কিছু টার্ম নিয়ে পড়াচ্ছেন। বেশ গুরুত্বপূর্ন ক্লাস। কিন্তু আমি কিছুতেই ক্লাসে মনযোগ দিতে পারছি না। আমার শুধু বার বার সকালের সেই ভয়াবহ দৃশ্যের কথাই মনে পড়ে যাচ্ছে। পাশে থাকা এক সহপাঠিনী স্লাইডের একটা টার্ম দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল, এ্যাই এই টার্মটার পুরো মানে কি?
আনমনে বলে উঠলাম, "তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে....."
সহপাঠিনী ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল মানে??
প্রচন্ড বিব্রত হয়ে হয়ে সাথে সাথে মাথা নেড়ে বললাম, স্যরি, মনে পড়ছে না।

মেজাজ খারাপ করেই বাকি ক্লাস পার করলাম। ক্লাস শেষে একবন্ধুর সাথে লাইব্রেরীতে বসলাম ক্লাসের লেকচারটা আবার ঝালাই করে নেয়ার জন্য। পড়াশুনার হোক কিংবা সুন্দরী সহপাঠিনী, উভয়ের চাপে কিছুক্ষনের মধ্যে ঐ ব্যাপারটি মাথা থেকে চলে গেল।

ঐ সাপ্তাহে আমার আমার আর কোন ক্লাস ছিল না। তাই আমি ধানমন্ডির বাসায় চলে গিয়েছিলাম। কয়েকদিন পরে যখন বনানীর বাসায় ফিরলাম, বাসার বাসিন্দারা বেশ কিছু গুরতর অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে এলো। বলাবাহুল্য সকলেরই সেই তালগাছ দর্শন সংক্রান্ত অভিযোগ। জনৈক বাসিন্দা হতাস হয়ে বলল, দোস্ত, সবাই সকাল বেলা কত সুন্দর সুন্দর জিনিস দেখে, পাখি দেখে, আকাশ দেখে, সূর্য দেখে, পাশের বাড়ির মেয়েও দেখে আর আমরা!!! আমরা শুধু সেই ভয়াবহ তালগাছ দেখেই যাচ্ছি। সকাল বেলা যাত্রা করে এই জিনিস দেখার কারনে আমাদের সারাদিন অনেক খারাপ যাচ্ছে। অনেক হওয়া কাজও হচ্ছে না। এর একটা বিহিত চাই।

তবে সব বড় অভিযোগ হিসেবে যা শুনলাম তা হলো, এক রুমমেটের চাচা ঢাকায় এসেছিল। রাতে বাসেই তাঁর চট্রগ্রাম চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোন একটা কারনে তিনি যেতে পারেন নি। রাতে তিনি এখানেই ছিলেন। তাকে ড্রইং রুমে ঐ ছেলেটির পাশে বিছানা করে ঘুমাতে দেয়া হয়েছিল। ভোর রাতের দিকে বেশ হইচই এ সবার ঘুম ভেঙ্গে গেল। ড্রইং রুমে এসে দেখা গেল, রুমমেটের চাচা বেশ উত্তেজিত। তিনি চট্রগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বেশ বকাবকি করছেন। আর ঐ মহাশয় কাঁচুমাচু মুখ করে বসে আছে। ঘটনা কি হইছে তা জানতে চাইলে তিনি চট্রগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় নাকি বলেছিলেন, ইতে বদ ফুয়া। ইতে অ্যাঁরার দিকে বাজে ইংগিত গইরছে, রাইতর বেলা ইতে লুঙ্গি উল্টাই অ্যাঁর দিকে হিরি হুইছে। কত্ত বড় বেয়াদ্দপ! অ্যাঁরে ছাই কি ফুয়া খাইন্না মনে হয়। অ্যাঁরা ভালা বংশের ফুয়া!
(এ খারাপ ছেলে। এ আমার দিকে বাজে ইংগিত করেছে। রাতের বেলা এ লুঙ্গি খুলে আমার দিকে ফিরে শুয়েছে। কত বড় বেয়াদপ। আমাকে দেখে কি সমকামী মনে হয়? আমরা ভালো বংশের ছেলে )
রুমমেট হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, কি বলেন এই গুলো?
কি অ্যাঁর বলিব? থুমি খোন পরিবেশে পড়ালেখা কইত্তেছ? কি শিখবা থুমি? থুমি চিটাংগের ছেলে, মনে রাখবা, এই সব কালো, শুকনা পাতলা ছেলেদের সাথে মিশবা না। আমাদের চিটাংগের ছেলেরা আরো কত ফাইন যে।

আমার নিজের কল্পনা শক্তির উপর নিজের বেশ আস্থা ছিল। কিন্তু এমন ঘটনায় আমি সেই আস্থা হারিয়ে ফেললাম। ব্যাপারটা কল্পনা করতে চাচ্ছিলাম না। উপরুন্ত শুনলাম, আমার ঐ রুমমেটকে তার বাবা নাকি এই বাসা ছেড়ে দিতে বলেছেন।

যাই হোক, এর একটা চরম বিহিত করার জন্য রুদ্রমূর্তি ধারন করে ঐ ছেলেটিকে ডাকলাম। তাকে বললাম, এখানে থাকতে হলে তোমার লুঙ্গি পড়া চলবে না, প্যান্ট বা হাফ প্যান্ট পড়ে ঘুমাতে হবে। আমরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর না যে, তালগাছ দেখে কবিতা লিখে ফেলব। আমরা সাধারন মানুষ।

ছেলেটা মিন মিন করে বলল, ভাইয়া, লুঙ্গি ছাড়া তো ঘুমাতে আরাম পাই না। আমার একটু সমস্যা আছে।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কিসের সমস্যা ?
না ইয়ে মানে ভাইয়া, আমার আসলে একটু গরম বেশি, প্যান্ট পড়ে ঘুমাইতে পারি না। সারা গা এ "তালাঝালা" লাগে।
তালাঝালা জিনিসটা কি?
ভাই, আপনি কি কখনও বডি স্প্রে ভূল করে "সব জায়গায় ব্যবহার করেছেন?" তাহলে বুঝতেন হঠাৎ তালাঝালা কাকে বলে?

আমি মোটামুটি রক্তচক্ষু করে তাকালাম। কত বড় ফাজিল! আমার চোখ এমনিতেই বড় বড়। তারউপর ভয় দেখাতে গিয়ে আরো বড় বড় করে ফেলায় চোখ টনটন করতে লাগল। আমাদেরকে চরম ধৈর্য পরীক্ষা নিয়ে ছেলেটি বলল, আমাকে লুঙ্গি পরার অনুমুতি দেন ভাইয়া। আমি এখন থেকে ঠিকঠাক করে থাকব। প্লীজ, আমি লুঙ্গি ছাড়া ঘুমাতে পারি না।
না হবে না। নো লুঙ্গি।
প্লীজ ভাইয়া, একটু কনসিডার করেন।
সবার দিকে তাকালাম। দেখলাম প্রায় সবাই হাসি চেপে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। হাসান নামে আমার এক ফ্রেন্ড ছিল। সে বলল, তাইলে এখন থেকে তুমি উপরে নিচে ভালো করে গিট্টু মাইরা তারপর ঘুমাইবা ঠিক আছে? যদি উল্টা পাল্টা হয়, তাহলে সারাজীবন কিন্তু কইলাম জিনিস ছাড়া থাকতে হইব।
ছেলেটা দ্রুত মাথা নেড়ে বলল, ঠিক আছে ভাইয়া, ঠিক আছে।

তার কয়েকদিন পর আমাদের মিডটার্ম শুরু হল। সবাই পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত। এর মধ্যে নতুন করে লুঙ্গি সংক্রান্ত কোন অভিযোগ শুনি নি। আমাদের মনে হল যাক এই সমস্যার বুঝি সমাধান হয়েছে। কিন্তু আমাদের চিন্তা যে ভূল ছিল তা অতিদ্রুত প্রমানিত হল। শেষ পরীক্ষার আগের রাতে আমার বাসায় কিছু ফ্রেন্ড চলে আসলো, একসাথে থেকে পড়াশুনা করব তারপর সকালে পরীক্ষা দিতে যাব। সকাল বেলা পরীক্ষার জন্য বিসমিল্লাহ পড়ে যেই ঘর থেকে বেরুতে যাব, ওমনি সেই পুরানো দৃশ্যের অবতারনা, আবারও সেই ভয়াবহ তালগাছ দর্শন। ছেলেটি ঘুমাত ঠিক দরজার পাশেই। ফলে আমরা যে চোখ বন্ধ করে চলে যাব সেই উপায় আমাদের ছিল না। আমার বন্ধুরা যারা রাতে আমার সাথে থেকেছিল, তারা এই জিনিসের সাথে পরিচিত ছিল না। তারা টাস্কিত! আমার আর হাসানের বিব্রতকর চেহারা দেখে তারা হেসে ফেলল। একজন বলল, মামা চল এখানে মরিচ দিয়া দিই। আর একজন বলল, না না সুপারগ্লু দিয়া দেই, শালা শিক্ষা পাবে।
আমার যে কি ইচ্ছা করছিল তা আসলে ভাষায় প্রকাশ করা ভীষন কষ্টের। যারা গ্রামে বেড়াতে গিয়েছেন তারা নিশ্চয়ই দেখেছেন, রাখালরা গরুর খুটি কিভাবে মাটিতে ঢুকান। খুটি মাটিতে রেখে পা দিয়ে জোরে লাথি মেরে তা ভিতরে ঢুকান হয়। আমার খুব ইচ্ছা করছিল, আমি রাখাল হই, লাথি মেরে "খুটা" ভিতরে ঢুকাই।

প্রচন্ড মেজাজ খারাপ করে পরীক্ষা দিতে গেলাম। পরীক্ষা খুব একটা ভালো হলো না। এমনকি ফেল করারও একটা চান্স ছিল । সমস্ত রাগ এবং ক্ষোভ গিয়ে পড়ল ঐ ধৈঞ্চা ছেলের উপর। সকাল বেলা যারা হাসছিল, তারাও এখন বিরক্ত। আমাদের বদ্ধমূল ধারনা হল, সকাল বেলা যাত্রা করে অশুভ জিনিস দেখে বের হবার কারনেই আমাদের এই অবস্থা।

মাথা ঠান্ডা করার জন্য ভার্সিটির ক্যাফেটেরিয়ার বসলাম। সেখানে টিভিতে একটা এ্যাড দেখাচ্ছিল। একজন ওয়েস্টার্ন কাউবয় দড়ির মাধ্যমে একটা ড্রিংসের ক্যান উদ্ধার করে। এটা দেখে সাথে সাথে মাথায় একটা প্ল্যান চলে আসল। উচিত শিক্ষার জন্য এর চেয়ে সুন্দর প্ল্যান আর হতেই পারে না। ভূক্তভোগীদের সাথে পরিকল্পনার কথা শেয়ার করলাম। সবাই এক কথায় রাজি। দেরী না করে কাজে নেমে পড়লাম। বনানী বাজার থেকে আমরা থ্রেডবল জাতীয় এক বিশেষ প্রকার বই সেলাই করার সুতা কিনলাম। তারপর বাসায় ফিরে এলাম। তারপর কার কি দায়িত্ব সেটা বুঝিয়ে বলে দিলাম।

ঠিক হলো, আজকে বাসায় বেশ খানা পিনার আয়োজন হবে। ঐ ছেলেটিকে বেশি করে পানি জাতীয় জিনিস খাওয়ানো হবে। কেননা পানির অভাব হলে প্ল্যান বাস্তবায়নে কিছুটা সমস্যা দেখা দিতে পারে। রাহি এবং সুমন মিলে বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে এবং দড়ির অপর অংশ প্রধান দরজার সাথে টান টান করে লাগানো থাকবে। এই কাজে সাহায্য করবে হাসান এবং তুহিন। উল্লেখ্য এই বাসার নির্মান জনিত একটা ত্রুটির কারনে প্রধান ফটকটা বাইরের দিকেই খুলত। আমি নতুন একজন বুয়া রেখেছিলাম যিনি সকাল ১০ দিকে এসে রুম ঝাড়ু দিতেন এবং রান্না করে দিতেন। তার বিরুদ্ধেও বেশ অভিযোগ ছিল, তিনি কাজে ফাঁকি দিতেন এবং রান্নাঘর থেকে আলু, পেয়াজ, ডিম ইত্যাদি নিয়মিত সরিরে ফেলতেন। এই প্ল্যানে তার অন্যতম ভূমিকা থাকবে এবং যদি আমরা সফল হই তাহলে তিনিও একটা উচিত শিক্ষা পাবে।

যাইহোক, সব কিছু প্ল্যান মোতাবেকই হলো। ঐ ছেলেটিকে ঘুমাতে পাঠিয়ে আমরা অপেক্ষা করছি কখন সেই ভয়াবহ দৃশ্য শুরু হবে এবং আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করব। কিন্তু আমাদেরকে অত্যন্ত হতাশ করে দিয়ে সে দিন কিছুই হল না। তালগাছ না দেখার কারনে যে আমরা কখনও হতাশ হব সে কথা দুঃস্বপ্নেও ভাবি নি। মন খারাপ করেই যে যার মত ঘুমাতে গেলাম।

তারপ্রায় দুই দিন পর, মুভি দেখে সকাল বেলা ঘুমাতে গিয়েছি। মাত্র চোখটা লেগে এসেছে, হঠাৎ হাসান এসে ধাক্কা ধাক্কি শুরু করল। অনেকটা কমান্ডোদের মত মাটিতে বসে আমার কানের পাশে ফিস ফিস করে আমাকে ডাকছে। ঐ বেটা জলদি উট!! আইজকা তালগাছ উঠছে রে!!!
আমি লাফ দিয়ে উঠলাম। তুহিনকে ডাকলাম। থ্রেড বল নিয়ে ড্রইং রুমে গেলাম। একটা লুপ বা ফাঁসির দড়ির মত একটা গিঁট বানালাম। তুহিনকে বললাম, যা গাছে দড়ি বেঁধে আয়! বেটা নখরা শুরু করল। বলল, সে পারবে না, তার কেমন যেন লাগছে। সাফল্যের এত কাছাকাছি এসে এই ধরনের বাহানা অত্যন্ত অমার্জনীয় অপরাধ। হাসান চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, তুই যদি এখন কোন বাহানা বানাস তাইলে সত্যি কইলাম তোরে আমি তাল গাছের তাল খাওয়ানোর ব্যবস্থা করুম। জলদি কাম শুরু কর।

এই ধরনের হুমকির পর আর কারো কিছু বলার থাকে না। ফলে তুহিন দুই আংগুল দিয়ে খুবই হাস্যকর ভাবে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বেঁধে দিল। আমি রশির অপর প্রান্ত দরজার হুকের সাথে হিসাব করে টান টান করে বেঁধে দিলাম। যেন বুয়া যখন ভিতরে ঢুকার জন্য দরজা খুলবে তখন যেন "সেখানেও" টান পড়ে। ঘড়িতে দেখলাম ৯:৪৫ বাজে। কিছুক্ষনের মধ্যেই বুয়া চলে আসবে। আমরা মেইন গেটটা একটু খুলে রাখলাম, যেন বুয়া এসে বুঝতে পারে দরজা খোলা। তারপর সবাই মিলে আমার রুমে ঢুকে বসে থাকলাম। বুকের ভেতর টিপ টিপ করছে, বুয়া ঠিক সময় আসবে তো? সব ঠিক মত হবে তো। একটু পর পর দরজা ফাঁক করে দেখছি যে সব ঠিক আছে কিনা।

হঠাৎ মনে হল নিচে বুয়ার কন্ঠ শুনলাম। কেয়ারটেকারের সাথে কথা বলছে। আমরা চরম উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করছি আর মনে মনে সময় গুনছি। খালি আমাদের নিশ্বাসের শব্দই শুনতে পাচ্ছি। হঠাৎ গেট খোলার সাথে সাথে বুয়ার তীব্র চিৎকার!!! ও আল্লাহ গো!!!!!!!!!!! এইটা আমি কি দেখলাম!
সাথে সাথে মহাশয়েরও চিৎকার। আআঊঊঊফফফফফ। আসলে শব্দ কিভাবে লিখে প্রকাশ করতে হয় আমি জানি না। তবে আপনি ভেবে নিন শব্দটা এসেছে বুকের গভীর থেকে এবং যা কিনা মুখের কাছে এসে আটকে গিয়েছে- এমন টাইপের শব্দ।

আমরা দৌড় দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। দেখলাম আমাদের তালগাছ বাবা বিছানায় দুই পা মেলে বসে রয়েছেন।কোন তালগাছ দেখতে পাচ্ছি না। ডাবল পাক দেয়া থ্রেডবল সুতা ছিড়ে পড়ে আছে। তার চোখে হতভম্ব দৃষ্টি। সিড়িতে গেলাম, দেখলাম বুয়া মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। তার মাথায় পানি দিচ্ছে আমাদের কেয়ারটেকার। কেয়ারটেকার বলল, ভাইয়া আপনারা নাকি কোন ভাইয়ার সুন্নতে খাৎনা করছেন? এ তাই দেইখা ভয় পাইছে।

আরো অনেক কিছুই বলার ছিল। ছেলেটার বর্ননা আর দেয়ার দরকার নেই। আপনারা নিজেদের কল্পনা শক্তি দিয়ে তা বুঝে নেন। এমন বেহায়া ছেলে আমি আমার জীবনে দেখি নাই। কিছুক্ষনের মধ্যেই সে লুঙ্গি ঠিক করে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। আমরাও হাসাহাসি করে ঘুমিয়ে পড়লাম। বিকেলের দিকে ঘুম থেকে উঠে দেখি, তুহিন শুকনো মুখে সারা ঘর মুছছে। জিজ্ঞেস করলাম কি হইছে ঘর মুছস কেন?
হাসান গম্ভীর মুখে বলল, ঐ শালা চইলা গেছে। যাওনের আগে আমার আর তুহিনের রুমের সামনে মুইতা গেছে গা!। আমি ওরে খাইছি! ও শেষ! ও নাই! তুই ধইরা রাখ!।

আমি প্রথমে ভাবলাম মিথ্যা বলছে। পরে তাদের অবস্থা দেখে সেটাকে মিথ্যা বলে মনে হল না। ড্রইং রুমে কোন তোষক বালিশ দেখতে পেলাম না। আমার পেট ফেটে হাসি আসতে লাগল। আমি অনেক চেষ্টা করলাম হাসি চেপে রাখতে। কিন্তু পারলাম না। শুরু হল আমার অট্রহাসি। আমার হাসি দেখে অন্য সবাইও হাসা শুরু করল। হাসতে হাসতে দম বন্ধ হয়ে যাওয়াটা সত্যি অনেক কষ্টের।

যাই হোক, দীর্ঘ ৪ বছর পরে কক্সবাজারে যাওয়ার সময় বাসে তার সন্ধান পেয়েছিলাম।। সাথে ছিল এক তরুনী। হাসানের কাছে খবরটা পৌছা মাত্র সে কক্সবাজার চলে এল। বাকি ঘটনা এখানে ভদ্র ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৪ ভোর ৬:৩১
১০২টি মন্তব্য ৯৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×