somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাল্পনিক_ভালোবাসা
বহুদিন আগে কোন এক বারান্দায় শেষ বিকেলের আলোয় আলোকিত উড়ন্ত খোলা চুলের এক তীক্ষ্ণ হৃদয়হরনকারী দৃষ্টি সম্পন্ন তরুনীকে দেখে ভেবেছিলাম, আমি যাদুকর হব। মানুষ বশীকরণের যাদু শিখে, তাকে বশ করে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিব সারাটি জীবন।

জন্মদিন উপলক্ষে ধর্ষন 'ট্রেন্ড'।

০৬ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি যখন উচ্চমাধ্যমিকে পড়ি, তখন পারিবারিক নিয়ম ছিলো - মাগরিবের আজানের সাথে সাথে বাসায় প্রবেশ করতে হবে। নামাজ পড়ে বিকেলের হালকা খাওয়া শেষ করে পড়ার টেবিলে বসতে হবে। কোন কারনে যদি বাসায় ফিরতে দেরী হতো, হাজারটা প্রশ্নবাণে জর্জরিত হবার পাশাপাশি তীব্র ভৎসনা কপালে জুটত। সময়সীমা 'মাগরিব' থেকে মুক্তি পেলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অল্প কিছুদিন পরেই। ব্যাপারটা এত দ্রুত ঘটেছিলো, যে বাসায় ফেরার স্বাধীনতায় অভ্যস্ত হতে আমার আরো মাস লেগেছিলো।

ফলে এই আমি যখন পত্রিকায় পড়ি যে, উচ্চমাধ্যমিকে পড়া কোন ছেলে বা মেয়ে রাত দশটায় কারো জন্মদিনের দাওয়াতে যাচ্ছে, আমার পক্ষে সেটার স্বাভাবিকতা মানতে কষ্ট হয়। বিষয়টা আমার কাছে অস্বাভাবিক এবং পারিবারিক অনুশাসনের অভাব বলেই মনে হয়। যখন আরো শুনি এই জন্মদিনের দাওয়াতে গিয়েই সেই মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে, নিজেকে আবিষ্কার করি এক অদ্ভুত বিভাজনের কেন্দ্রস্থলে।

যদি মোটাদাগে বলি, তাহলে কে কখন বাইরে যাবে, কতক্ষণ বাইরে থাকবে, কি করবে না করবে, যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু যখন আমরা এমন কোন সমাজে বাস করি, যেখানে স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ সেখানে এই ধরনের ঘটনার দায় কিছুটা হলেও নিজেদের কাঁধে নিতে হবে। এটাই কঠিন বাস্তব, যার স্বাদ খুবই তিতা।

সাম্প্রতিক সময়ে 'জন্মদিন' কেন্দ্রিক যে কয়টি ধর্ষণ-ঘটনা ঘটেছে, সেখানে আমরা ভিকটিমের পরিচয় প্রাথমিকভাবে ভাবে গোপন রাখতে সক্ষম হলেও পরবর্তীতে তদন্তের খাতিরে তাদের পরিচয় কিছুটা হলেও প্রকাশিত হয়েছে। এই পরিচয়ের প্রেক্ষাপট থেকে বলা যায়, যাদের সাথে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে তারা প্রত্যেকেই তুলনামুলকভাবে পারিবারিক অনুশাসনের কিছুটা দুরে ছিলেন। আমাদের মেয়েরা এখন আগের চাইতে অনেক স্বাবলম্বী এবং স্বাধীনচেতা। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট এবং ভারতীয় উপমহাদেশে নারীর অধিক ক্ষমতায়নের সংস্কৃতি বর্তমানে আগের চাইতে অনেক বেশি প্রতিষ্ঠিত। পাশাপাশি, বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা প্রচণ্ড রক্ষণশীল। আমাদের নারীরা অনেকেই চেষ্টা করছেন এই রক্ষণশীলতার গণ্ডি থেকে বের হয়ে আসতে। সমাজের তথাকথিত রক্ষাকর্তা, কাঠমোল্লা (যারা ধর্মকে না বুঝে, ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের খাতিরে নেতিবাচকভাবে প্রয়োগ করছেন) ইত্যাদির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নারীদের এই অর্জন একেবারেই ফেলনা নয়।)

ফলে, এখানে অল্প কয়েকজনের আবেগ তাড়িত ভুল আমাদের নারীদের এই অগ্রযাত্রায় বিশাল নেতিবাচক ভূমিকা ফেলছে এবং প্রশ্ন বিদ্ধ হচ্ছে তাদের স্বাবলম্বন এবং স্বাধীনতা।

অতি সত্য কথনের একটা সমস্যা হলো- তা অতি তিতা এবং শৈত্যপ্রবাহের মতই তীব্র যা মাঝে মাঝে সহ্য করা বেশ কঠিন। যেমন এই সকল জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে যারাই বিপদে পড়েছেন, দেখা গেছে তারা কোন না কোন ভাবে 'মিডিয়া' সংশ্লিষ্ট। যেহেতু বাংলাদেশের মিডিয়ায় তৃণমূল পর্যায়ে 'আদান প্রদান' এবং প্রভাবশালীদের 'রেফারেন্স' এর সংস্কৃতি এখনও বিদ্যমান, সেখানে যারা এই মাধ্যমে অভিজ্ঞতা এবং যথাযথ যোগ্যতা ছাড়া প্রতিষ্ঠিত হতে চায়, তারা অনেক সময়ই জেনে শুনে বিপদে পা বাড়ায়। অন্যান্য মরণ নেশার মত বিখ্যাত হবার নেশাও একটি মরণ নেশা- অন্তত আমাদের দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে। আর এই সুযোগটি লুফে নেয় কিছু তথাকথিত শিল্পপতির বখাটে ছেলেরা। যেমন আপন জুয়েলার্সের বিজ্ঞাপনে সুযোগ দেয়ার নাম করে অনেক অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ পাওয়া যায় এই প্রতিষ্ঠাটির মালিকের ছেলের বিরুদ্ধে।

আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, এদের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকলে তা কেন আগে প্রকাশিত হয় নি?
এর জবাব হচ্ছে, যারা প্রভাবশালীদের রেফারেন্স ব্যবহার করে 'উপকৃত' হয়েছেন, তারা এই ব্যাপারে অভিযোগ করতে যাবেন কোন দুঃখে? আধুনিক যুগে 'কমিউনিকেশন' বা 'লিংক' হচ্ছে অন্যতম ব্যবসায়িক পুঁজি। আর যারা কিছু পান নি, তারা অনেকেই ক্ষোভে, দুঃখে নিজেরাই প্রতারিত হয়ে সরে গেছেন, কেউ বা নিজের 'ক্ষতিপূরণ' বুঝে নিয়েছেন অথবা কাউকে বেঘোরে প্রাণ হারাতে হয়েছে। উদহারন মডেল তিন্নী। ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর খুন হন তখনকার উঠতি মডেল তিন্নি। এই খুনের ব্যাপারে যাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তিনি হলেন - জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভি। এই ঘটনা ঘটিয়েই তিনি কানাডায় পালিয়ে চলে যান এবং বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন। আজকে যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এত সক্রিয় না থাকতো, শক্তিশালী না হতো, তাহলে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলেও হয়ত এতদিনে বিদেশে পাড়ি জমাতো।

আমার লেখা পড়ে যদি মিডিয়ায় কাজ করা সকলের প্রতি বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হয়,তাহলে আমি দুঃখিত। কেননা, আমি বিশ্বাস করি, আমাদের মিডিয়াতে এখনও দৃষ্টান্ত হবার মত অনেক শিল্পী আছেন, যারা শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব যোগ্যতায় এবং গুনে এই জগতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।

ইদানীং আমি আরো একটি অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করেছি। আমাদের তরুণ তরুণীরা তাদের জীবনসঙ্গী বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে খুব ভুল কিছু 'প্যারামিটার' সেট করেছেন। এই ধরনের ঘটনাগুলো বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। যেমন, আমি অনেককেই দেখেছি, যারা শুধু মাত্র আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য 'বড়লোক' বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ড বেছে নিচ্ছে। যারা সুযোগসন্ধানী আছেন, তারা এদের মনোভাব বুঝতে পেরে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে। এই সকল অনৈতিক মনোভাব থেকে পারিবারিক অথবা শিক্ষার আলোকেই সরে আসতে হবে। নতুন খবরের শিরোনাম হওয়া অল্প কিছুদিন বাকি। কারন, একদল ক্ষুধার্ত হায়েনার মাঝে আপনি চলাফেরার স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে হেটে যেতে পারেন না। অন্তত লজিক সেটা বলে না।

যাইহোক, চলুন আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত একটি ধর্ষণ ঘটনা সম্পর্কে জানা যাক। ঘটনাটি নিম্নরুপঃ
সম্প্রতি বনানীতে জন্মদিনের ঘটনায় আরো একটি মেয়ে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে এক শিল্পপতির ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পত্রিকা এবং অন্যান্য সোর্স মারফত যা জানা গেলো তা হচ্ছে - ভিকটিম রাত সাড়ে ১০ টায় ঐ শিল্পপতির বাড়িতে যায়। সেখানে গিয়ে ভিকটিম জন্মদিন অনুষ্ঠানের কোন আয়োজন না দেখে ফিরে যাওয়ার সময় তাকে নেশা জাতীয় জিনিস খাইয়ে ছেলেটি ধর্ষণ করে এবং রাত তিনটার সময় তাকে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়।

ভাগ্যভালো,এখানে ভিকটিম দেরী করেন নি, তিনি মঙ্গলবারের ঘটনায় বুধবারে গিয়েই মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে অবশ্য উল্লেখ্য করা হয়েছে যে, ছেলেটি ইতিপুর্বের বিবাহের কথা বলে তাকে ধর্ষণ করেছে। জানা গেছে, ভিকটিম একজন অভিনয় শিল্পী।

এখানে নিচের বিষয়গুলো লক্ষ্য করুনঃ
১। মেয়েটি কোন ক্লাসে পড়ে?
- ইন্টারমিডিয়েট।
২। রাত কয়টায় সেখানে গিয়েছিলো?
-সাড়ে ১০টা।
৩। মেয়েটি প্রফেশন কি?
- ছাত্রী, অভিনেত্রী।
৪। অভিযুক্তের সাথে কিভাবে পরিচয়?
- ফেসবুকের মাধ্যমে।
৫। অভিযুক্তের কত দিনের পরিচয়?
-১১ মাস
৬। ঘটনার দিনই কি প্রথম দেখা?
- না।
৭। অভিযুক্তের সাথে কি আগে দেখা হয়েছিলো?
- হ্যাঁ।

এজহারে ভিকটিম দাবি করেছেন, ছেলেটি মেয়েটিকে বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছেন। বাংলাদেশের আইনে এই বিষয়টি ধর্ষণের ক্রাইটেরিয়াতে উল্লেখ্য থাকলেও আইনত কোর্টে এই ধরনের অভিযোগ প্রমাণ করা বেশ কঠিন। ফলে এই মুহূর্তে আমাদের করনীয় কি?

গৎ বাঁধা ভাবে বলতে হবে, আমরা ন্যায় বিচার চাই, আমরা দৃষ্টান্তমুলক বিচার চাই।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিচারের আওতামুক্ত থেকে যাচ্ছে পরিবারগুলো। এটাই চিন্তার বিষয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:০৭
৫৩টি মন্তব্য ৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×