(সুত্রঃ সম্পাদকীয়। দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম। সোমবার। ৫ ডিসেম্বর ২০১৬। )
দেখতে তাঁরা তিনজনই সুস্থ্য-স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যবান। তিনজনই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থী। মোহাম্মদ শাজাহান আন্তর্জাতিক বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সহায়ক সংগঠন ‘ডিসকু’র (Disabled Students’ Society of Chittagong University - DISSCU) জেনারেল সেক্রেটারি। পলিটেকনিক্যাল সাইন্সের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র আব্দুল্লাহ আল মামুন ভাইস প্রেসিডেন্স আর আন্তর্জাতিক বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র তানজিল হলেন সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনজনই তাঁরা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। কোন কর্পোরেট থেকে সম্পূর্ণ বা আংশিক আর্থিক সহায়তার তদবিরের জন্য আমার সাথে সাক্ষাতে এসেছেন তারা ।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করণে সহায়তা প্রদান, তাদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং অধিকার আদায় ও সার্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যে ২০০৭ সালের ৪ই এপ্রিল এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার সময় আধাঘন্টা বৃদ্ধি, তাদের হলে আবাসিকভাবে থাকার সুযোগ নিশ্চিত করা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে স্টাডি কর্ণার, কম্পিউটার কর্ণার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্রেইল বই নিশ্চিত করণসহ নানাবিধ কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে ‘ডিসকু’ অবদান রেখে যাচ্ছে।
এ বছর ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে ‘ডিসকু’ আগামী ১১ - ১২ ডিসেম্বর দুই দিন ব্যাপী কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। উক্ত কর্মসূচীতে ১ম দিন র্যা লী, ব্লাইন্ড ক্রিকেট প্রীতি ম্যাচ, দাবা ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে যাচ্ছে। সুত্রমতে, (১৯৯০ সালে মাত্র ১ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর ভর্তির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী ব্যাক্তির শিক্ষা যাত্রা শুরু হয়। প্রাক্তন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩০ জন যাদের সবাই আজ স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। ৩৫তম বিসিএস এ প্রশাসন ও শিক্ষা বিভাগে রয়েছেন ২ জন প্রতিবন্ধী ক্যাডার এবং ১ জন নন্ ক্যাডার। ) বর্তমানে ৮২ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছেন। এই কর্মসূচীতে আর্থিক সহযোগিতার জন্যই বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি ও রেজিষ্ট্রার কর্তৃক সুপারিশকৃত আবেদন নিয়ে কর্পোরেটগুলোর কাছে তাদের সাহায্য প্রার্থণা।
প্রতি বছর ৩রা ডিসেম্বরকে বিশ্ব ব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে জাতিসংঘের তত্বাবধানে। শারীরিকভাবে অসম্পূর্ণ মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগিতা প্রদর্শন ও তাদের কর্মকান্ডের প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে এই দিবসটির সূচনা। ৯মে ২০০৭ সালে প্রতিবন্ধীব্যাক্তিদের অধিকার রক্ষায় ইউএন কনভেনশনে স্বাক্ষরতার মধ্যে দিয়ে প্রতিবন্ধীব্যাক্তিদের জন্য ইউএন কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ততা প্রকাশ করে বাংলাদেশ। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধীব্যাক্তিদের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষায় ‘‘Persons With Disabilities’ Rights And Protection Act 2013” নামে বিল পাস করে। উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ্য প্রতিবন্ধী রয়েছে যা মোট জনসংখ্যার ১০ ভাগ। আরো নির্দিষ্ট করে বললে প্রতিবন্ধীদের মধ্যে ১৮ বছরের নিচে এই হার ৬% এবং ১৮ উর্ধো ব্যাক্তির বেলায় তা ১৪%। ইউএন তথ্যমতে সমগ্র বিশ্ব ব্যাপী প্রায় ১ বিলিয়ন প্রতিবন্ধী রয়েছে যারা সমাজে নানাবিধ প্রতিবন্ধীতার স্বীকার।
বরাবরের মতো এবারো ইউএন এই আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসের থীম (মূলভাব) ঘোষণা করেছে। এবারের থীম হচ্ছেঃ ‘‘Achieving 17 Goals for the Future We Want”। সেপ্টেম্বর ২০১৫ ইউএন জেনারেল এসেম্বলিতে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব ব্যাপী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (Sustainable Development Goals – SDGs) নামে ১৭টি লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিবন্ধীব্যাক্তিদের জন্যে এই ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত ও অর্জনে ২০১৬ সালের আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবেসের থীম বা মূলভাব। ২০১৫ সালের থীম ছিল একমাত্রার। যাতে বলাছিল – ‘‘Inclusion matters: Access and Empowerment for People of all abilities”। অর্থ্যাৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, চাকুরী, সমাজ ও রাজনীতি সকল ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী-অপ্রতিবন্ধী সকলের সমান অন্তর্ভূক্তি। প্রতিবন্ধীব্যাক্তিদের অধিকার রক্ষায় ইউএন কনভেনশনের (Convention on the Rights of Persons with Disabilities – CRPD) ১০ বছর পূর্তিতে এর কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণও এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়। দিবসটির সফল উদযাপনে নিউ ইর্য়ক ভিত্তিক ইউএন হেডকোর্য়াটারে নেওয়া হয়েছে বিশেষ কর্ম পরিকল্পনা। ইউএন Department of Economic and Social Affairs (DESA) এর উদ্যোগে সকল সদস্য রাষ্ট্রসমূহের প্রতিনিধি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, সিভিল সোসাইটি, প্রতিবন্ধীব্যাক্তিদের স্বসংগঠন ও সহায়ক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং ব্যাক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের যৌথ উপস্থিতিতে ৩রা ডিসেম্বর পালিত হতে যাচ্ছে এবারের ‘‘আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ২০১৬”।
লেখকঃ কলামিষ্ট
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৫