somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নবীনের আগমণ; সামুর নিয়মিত ব্লগাররা কেন স্বাগত জানাবে না?

১৯ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময় অনেক বদলেছে। এখন নবীন লেখকদের সাহিত্যচর্চা হয়ে গেছে অনলাইন নির্ভর। কিন্তু আমাদের সময়টা ছিল অন্যরকম। আমি লেখালেখি শুরু করেছিলাম কলেজ লাইফে। বাংলা স্যারের পারমিশন নিয়ে নিজের সম্পাদনায় প্রথম দেয়ালিকা প্রকাশের মাধ্যমে নিজের লেখা অন্যের সামনে তুলে ধরা শুরু করি। নাম ছিল 'বর্নালী'। গুনিজনের বাহবা পেয়ে যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা গুলোর সাহিত্য সাময়িকিতে লেখা পাঠানো শুরু করি। পুরো ছয় মাস ধরে কয়েকটা পত্রিকাতে খালি লেখা পাঠাতেই থাকি। একটাও প্রকাশ হয়না। হালছেড়ে দেবদেব করছি এমন সময় একটা পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় আমার একটা গল্প ছাপা হয়। আমি সেদিন যে আনন্দ পেয়েছিলাম রবীন্দ্রনাথ নোবেল পেয়েও অতো আনন্দ পেয়েছিল কিনা জানিনা।

এরপরে ঐ পত্রিকার শুক্রবারের সাময়িকিতে আমার লেখা আসতে থাকে নিয়মিত। লেখালেখি জগতের মোড় ঘুরে যায় আমার। যশোরের অনান্য পত্রিকা সহ ঢাকার পত্রিকাতে লেখালেখি শুরু করি। প্রথম আলোর বন্ধুসভা আমাকে সাদরে গ্রহণ করে। লিখি ছুটিরদিনের ঘরমন জানালা'য়। এইজগতে আরো একধাপ এগিয়ে যাবার জন্য যুক্ত হই ব্যক্তিগত প্রকাশনায়। অনুপ্রাশ জাতীয় কবি সংগঠনের সাথে জড়িয়ে ছিলাম আরো আগে। ওখান থেকে প্রকাশিত "রক্তপলাশ" লিটল ম্যাগের একুশে ফেব্রুয়ারী সংখ্যার সহসম্পাদকের কাজ করি।

তারপর সম্পূর্ন নিজে কিছু করার জন্য এলাকার বিভিন্ন স্কুল কলেজ ঘুরে ঘুরে নতুন লেখিয়ে কাছ থেকে লেখা সংগ্রহ করে বের করি "প্রিয়তা"। প্রিয়তার প্রথম সংখ্যা মাত্র বিশ কপি বের করতে পেরেছিলাম। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হয়ে সম্পূর্ন নিজের খরচে এর বেশী করার ক্ষমতা ছিল না। এইভাবেই কয়েকটা সংখ্যা বের করার পরে হঠাৎ প্রিয়তার গায়ে রং লাগে। আমার এক দুঃসম্পর্কের দুলাভাই ছিল একটা এনজিওর চেয়ারম্যান। অনেকদিন ধরে তার পিছে ঘুরে ঘুরে তাকে পটিয়ে আমার পত্রিকা স্পন্সর করাতে রাজি করিয়ে ফেলি। বন্ধুসভায় বন্ধুদের কাছে লেখা চেয়ে বিজ্ঞাপন দিই। সারা দেশ থেকে হাজার হাজার লেখা এসে জমা হয় আমার পোষ্ট অফিসে। আমার দিন রাতের ঘুম হারাম হারাম হয়ে যায়। সামনেই এইচএসসি পরিক্ষা কিন্তু পড়াশুনা সিকেই ওঠে।

এরপরে যেদিন প্রেস থেকে চার কালারের মলাটে বত্রিশ পৃষ্ঠার প্রিয়তার ছয়শ কপি বের হয় সেদিন আমি আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছিলাম। সদ্য প্রেস থেকে বের হওয়া ম্যাগাজিন গুলোর মধ্যে নাক ডুবিয়ে কয়েক ঘন্টা পার করে দিয়েছিলাম আমি। নতুন বইয়ের সে গন্ধ্য ছিল আমার কাছে মাতাল করার মতো।

এইসমস্ত নষ্টালজিক ব্যপার স্যপার ইদানিং বারবার সামনে চলে আসে। কারণ এখন চর্তুদিকে তাকালে দেখি লেখালেখির স্টাইল পাল্টেছে। প্রিন্টিং মিড়িয়া চাপা পড়ে গেছে ইলেক্ট্রনিক মিড়িয়ার কাছে। প্রিন্টিং মিড়িয়ার সুবিধা হল লেখা প্রকাশের জন্য অতো বেশী স্ট্রাগল করতে হয় না। তবে প্রকাশের পরে কতোটুকু বাহবা পেলেন সেটা দেখার বিষয়।

এখনকার জেনারেশনের মধ্যে ফেসবুকের যে একটা ক্রেজ তৈরি হয়েছে সেটা এর আগে কোন কিছু নিয়ে এরকম হয় নি। ফেসবুক যেন হয়ে উঠেছে তাদের জীবন চলার পথে দিন রাতের সঙ্গী। রাতে ঘুমেতে যাবার আগ পর্যন্ত আর ঘুম থেকে উঠেই বাসি বিছানায় ফেসবুকের নিউজফিড নটিফিকেশন চেক করা নিত্য রুটিন। শুধু আউলা ঝাউলা পোলাপান না সাহিত্য চর্চা করা অনেক ছেলেকেও দেখি ফেসবুক নির্ভর হয়ে পড়েছে।

তবে প্রথমেই যেটা বললাম, ইলেকট্রনিক মিড়িয়াতে লেখা প্রকাশ হওয়া যত সহজ সমাদর হওয়া ততো কঠিন। ফেসবুকের কবিতার অপেন গ্রুপ গুলাতে গ্রুপ মেম্বাররাই অন্যের লেখায় মন্তব্য করে না।

বর্তমানে আমাদের দেশে সাহিত্য চর্চা বা লেখালেখির জন্য ফেসবুকের বাইরে সামহয়ারইনব্লগ ও চর্তুমাত্রিক বেশ জনপ্রিয়। তবে এখানেও নতুনরা খুব সহজে জায়গা পাচ্ছে না। যারা পুরানো ব্লগার আছেন এবং যারা নিয়মিত ব্লগে থাকেন আমার দৃষ্টিকোন থেকে তারা খুবই স্বার্থপর টাইপের ব্লগার। বর্তমান সময়ের ফেসবুকের আগ্রাসণ থেকে মুক্তি নিয়ে অনেকে আসেন সামুতে। ভালোভালো লেখা দেন। কিন্তু সেই সমস্ত লেখাগুলো কেউ পড়েও না। নতুন নতুন ব্লগারের অনেক ভালো ভালো লেখা দেখি মাত্র বিশ ত্রিশ বার পঠিত হয়। কমেন্ট হয়তো দু একটা। এতে করে নতুন ব্লগাররা সামুতে লেখালেখি করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আই মিন সামু তাদেরকে গ্রহন করেনা। সবাই খালি সামুতে লিখতে চায়। অন্যের লেখা পড়ে কমেন্ট করতে খুব যেন সন্মানে লাগে।

এটা কি স্বার্থপরতা কিংবা আত্ম অহংকার নয়? নতুন কেউ যদি ভালো লেখে তবে সে কি বাহবা পাবার অধিকার রাখে না?
১৭টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন-হাদিস অনুযায়ী তারা পাকিস্তান এবং অন্যরা অন্যদেশ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২১



সূরাঃ ৮ আনফাল, ৬০ নং আয়াতের অনুবাদ-
৬০। তোমরা তাদের মোকাবেলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী প্রস্তত রাখবে। এর দ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত রাখবে আল্লাহর শত্রুকে, তোমাদের শত্রুকে, এছাড়া অন্যদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×