somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাতাইয়া বিচঃ বিলিভ ইট অর নট

০৯ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




জাহাজ এ্যংকর করার কয়েক ঘন্টা পরেই একটা বোর্ট এসে থামলো আমাদের গ্যাংওয়ের পাশে। আমারা ভাগ হয়ে গেলাম দু গ্রুপে। তারপর যে যেখানে ছিলাম পড়িমড়ি করে কেবিনে গিয়ে ফ্রেশ হতে সময় নিলাম ম্যাক্সিমান পনের মিনিট। তারপর গ্যাংওয়ে রেজিষ্টারে নাম লিখিয়ে সোজা নেমে গেলাম বোর্টটাতে। একে এক বারোজন। তারপর জাহাজটিকে পেছনে ফেলে বোর্টটি ছুটতে শুরু করলো এইভাবে।



ছবিটিতে সাগরের জলে যে উন্মাদনা বা স্পাশ দেখা যাচ্ছে তা আসলে আমাদের হৃদয়ের প্রতিচ্ছবি। কয়েক দিন পরে পোর্টে এসে বাইরে যাবার সু্যোগ পেয়ে আমরা উল্লাসিত ছিলাম। এবং আমি জানি এই দৃশ্যটা ম্যাক্সিমাম মেরিনারের জন্যই আনন্দের। খাঁচায় বন্দি পাখিরা যেমন মুক্তির আনন্দে ডানা ঝাপটাতে থাকে আমরাও তেমনি ডানা ঝাপটাই। দূরে জাহাজটা আসতে আস্তে বিন্দু হতে থাকে আর আমাদের মনের বিন্দু বিন্দু আনন্দ জাহাজসমান হতে থাকে।



বোর্ট স্টেশনে নামার পরে ইঞ্জিন ক্যাডেট বললো, স্যার পাতাইয়া যাবেন?
শ্রীরাচাতে আমরা বাইরে যেয়ে সাধারনত রবিনসন মার্কেটেই যেতাম। বোর্ট স্টেশনের কাছে এই মার্কেটে তুলনামূলক জিনিসের দাম বেশ মানানসই। আমরা জাহাজীরা বাইরে যেয়ে মূলত কেনাকাটা করেই বেশী মজা পাই। ঔ শীপ ঘুরে ঘুরে বারবার চিটাগাং আসতো। তাই যত খুশি কেনাকাটা করো কোন প্রবেলম নেই। এবং দেখা যেত কারো কেনাকাটা যেন শেষই হতে চাইত না। এইবার LED TV তো পরের বার এয়ার কন্ডিশন।
এখান থেকে ব্যাংকক যেতে দুই ঘন্টার কিছুটা বেশী সময় লাগত। আর পাতাইয়া যেতে ঘণ্টা দেড়েক। ব্যাংককের রাস্তা আর পাতাইয়ার রাস্তা পুরো উল্টা। আমরা পাতাইয়ার খুব কাছাকাছি গিয়েও ওখানে যেতে কেমন যেন একটু সঙ্কোচ বোধ করতাম। বিশেষত আমারা একই বোর্টে দশ বারোজন একসাথে বাইরে যেতাম। এর মধ্যে যদি কেউ পাতাইয়া যায় তাহলে অন্যরা তার সম্পর্কে আন্য কিছু ভাবতে শুরু করতো। আমারা মিডলক্লাসের ছেলেরা এই কমপ্লেক্সের কারনে নিজেকে অনেক কিছু ত্থেকে বঞ্চিত করে থাকি। তো আমাদের জাহাজের ইঞ্জিন ক্যাডেট মিল্টন সে এরকম কোন কমপ্লেক্সের ধার ধারতো। বাইরে গেলে সে পাতাইয়া যাবেই। তাই তার সম্পর্কে জাহাজের লোকের ধারানা বেশী ভালো ছিল না। আমি ভাবতাম একজন ক্যাডেট হয়ে সে বাইরে গিয়ে কতটা ভালো টাইম স্পেন্ড করতে পারে? কারন এখানে টাকাটা অনেক বড় ব্যাপার।



এইবার আমি আর ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার জিয়া ভাই এবার তার সঙ্গী হলাম। আমরা প্রথমে সবাই মিলে একটা ভ্যান গাড়িতে করে গেলাম রবিনসন মার্কেট। সেখান থেকে রাস্তা পার হয়ে উল্টা দিকের বাস ধরলাম। এক এক জন ভাড়া চল্লিশ বাথ।
এটা আমার প্রথম পাতাইয়া ভ্রমণ। কিন্তু জিয়া ভাই আর মিল্টন এর আগে এসেছে। তাই বাস থেকে যথা যায়গায় নেমে আমরা আবার একটা ভ্যানগাড়িতে উঠলাম। থাইল্যান্ডে এই ভ্যান গাড়িত খুব প্রচলন। অনেকটা আমাদের দেশের নসিমন গাড়ির মতো। তবে এদের ভ্যাবের ইঞ্জিন কোন ভটভটি ইঞ্জিন না। কারের ইঞ্জিন এবং ভেতরটা বেশ খোলামেলা। ভ্যানের ভাড়া জন প্রতি দশ বাথ।



বিচ যেখানে শুরু আমরা তার একটু আগে নামলাম। তারপর হেটে হেটে চলে এলাম সাগরের ধারে। সুন্দর ফার্স্ট ব্রাকেটের মতো একটা বিচ। তবে খুব বেশী বড় না। সর্বমোট দৈর্ঘ্য এক থেকে দেড় কিলোমিটার হবে। বিচের বালিয়াড়িটা খুব বেশী প্রশস্ত না। বালির মধ্যে রঙিন ছাতার নীচে অসংখ্য খাট পাতা। আর একটু ওপরে পাড় বাধিয়ে হাটার ও বসার জায়গা করা হয়েছে। তার পাশ দিয়ে পিচের রাস্তা। রাস্তার অপর পাশে সারি সারি দোকান। বাংলাদেশি কয়েকটা খাবারের দোকানও চোখে পড়ল। আর একটু সামনের দিকে এই রাস্তার পাশেই বেশ কিছু হোটেল এবং শপিং কমপ্লেক্সও আছে।
আমার আর জিয়া ভাইয়ের কোন বিশেষ কাজ ছিল না। ঘুরে দেখা ছাড়া। আমরা মিল্টনের সাথে বীচের ধার ঘেষে হাটছিলাম। বেশ কিছুক্ষন হাটার পরে সে একটা মার্কেটের সামনে এসে থামল। একটি বহুতল শপিং কমপ্লেক্স। রয়্যাল গার্ডেন সিটি।



মার্কেটের ভেতরে এরকম একটা ব্রোঞ্জের মূর্তি বসাইয়া রাখছে কেন? সৌন্দর্য বর্ধণের এই খেতুস চিন্তা যে কোন ইঞ্জিনিয়ারে মাথা থেকে আসছে আল্লা মালুম। রয়্যাল গার্ডেন সিটিতে ঢুকে আমি এমনটাই ভাবছিলাম প্রথমে। কিন্তু আমি বোকা বনলাম কাছে গিয়ে। এটা কোন ব্রোঞ্জের মুর্তি না। খাড়া খাম্বা একটা মানুষ। সে নাকি সকাল দশটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত এমনেই বসে থাকে। আমি বেশ স্মার্ট পোলা। বুঝে গেলাম লোকটা ভিক্ষুক। খেয়াল করে একটা থালাও দেখলাম। তবে আমাদের দেশের ভিক্ষুকের মতো ফুটা না।
ভাবলাম আজ দিনটা মনে হয় মন্দ যাবে না। জাহাজের এ্যংকর কোন মতে ফালাইয়াই বাইরে আসছি। আর বাইরে এসেই বেশ স্মার্ট একটা ভিক্ষুকের দেখা পাইলাম। দিনটা শুভ না হয়ে যায় না! ভাবতে ভাবতে আমারা পালা করে ভিক্ষুকের পাশে পোজ দিয়া ফটাফট কয়েকটা ফটো খিচলাম। তারপর পকেট থেকে বাংলা পাঁচ টাকার একটা নোট বাহির করে তার থালায় ফেললাম। বাংলাদেশী পুরান একটা পাঁচ টাকার নোটকে আর যাইহোক ডলার মনে হওয়ার কোন কারন নেই। যদিও লোকটা পাথর কিন্তু অন্ধ না। সে হয়তো আমাদের কান্ড-কারখানায় বিরক্ত হচ্ছিল কিন্তু আমরা বুঝে গিয়েছিলাম তার কিছুই করার নেই। মূর্তির ভুমিকায় অভিনয় করায় লোকটা তার অভিব্যক্তি প্রকাশের স্বাধীনতা থেকে বঞ্ছিত।



মিল্টন আমাদের মার্কেট ঘুরে দেখতে দিল না। সোজা নিয়ে আসলো পাঁচতলায়। পাঁচতলায় আসার পরে মিল্টনের পাতাইয়া আসার রহস্য ক্লিয়ার হলো। জাহাজে তাকে দেখতাম সবার কাছ থেকে হরর মুভি কালেক্ট করে করে দেখতো। এই মার্কেটের পাচতলা থেকে শুরু হয়ছে অন্য এক জগত। এখানে না আসলে বাইরে থেক বোঝা যাবে না ভেতরে আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে। মনে হচ্ছিল আমি যেন এক ভ্যাম্পায়ারের জগতে চলে এসেছি। চারটা থিয়েটারে ফোরডি হরর মুভি চলছে। আর এই ফ্লোরের সব স্টাফই যেন হরর যুগের বাসিন্দা। কারো চোখ দিয়ে রক্ত গড়াচ্ছে, কারো হয়তো মুখের অর্ধেকটা নেই। তাদের পোষাক আশাক বেশ ভূষা পিলে চমকে দেবার মতো। এরা যেন সব মুভির জগত থেক বেরিয়ে আমাদের স্বাগত জানানোর জন্য দাড়িয়ে আছে। কিন্তু তাদের স্বাগত জানানোর ভাষাও ভয়ংকর। মিল্টন আমাদের ইন্সিস্ট করছিল কোন একটা হলে ঢুকে যাবার জন্য। কিন্তু আমি নিজে হরর মুভি খুব বেশী পছন্দ করি না তার উপর ফোরডি। আগ্রহি হলাম না।



এরপর আমরা চলে এলাম ট্রান্সফর্মারের দুনিয়ায়।




রোবটগুলো ছিল অচল ছিল তবে স্থির ছিল না। নানা রকম অঙ্গভঙ্গি করে দর্শকের মনোরঞ্জনের জন্য তার চেষ্টা করে যাচ্ছিল।

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:১১
১৭টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×