somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি প্যারাময় ঈদের জার্নি

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইহাকে মনে হয় প্যারা বলে...

আগেরদিন পানির অভাবে গুসল করবার পারিনাই। রাইতে ট্যাপের ভেতরে ফিস্‌ ফিস্‌ কইরা একটু পানি আইছিলো। বাসায় আমরা ছাড়া আরো একজন উপস্থিত ছিল। সেই পানি সে খরচ করিয়া ফেলিবে এই ভয়ে বাথরুমে তালা মারিয়া রাখিলাম। :-0 :-0

বিকালে একটা ট্রাস্ট ক্যাব ঠিক করে রাখছিলাম। মিটারের থেকে দুইশত টাকা বেশী দিব এই কন্ট্রাক্টে সে এত সকালে আসার জন্য রাজি হইছিল। সকালে টেনেটুনে প্রত্যাহিক কর্ম সম্পাদন করিয়া(পানির অভাবে) ক্যাবের ড্রাইভারকে ঘুম থেকে উঠাইয়া বাহির হইলাম। যাত্রা পথে অশুভ কিছু থাকলে মানুষ হোঁচট খায়। আমিও খাইলাম। কোন বদ পুলা লিফটের মধ্যে হিসু করিয়া রাখিয়াছে। X( এতপরে হোঁচট খাইলাম ট্যাক্সিতে উইঠ্যা। দেহি মিটারে দেড়শ টাকা বিল উঠে আছে। বুঝলাম ড্রাইভার গ্যারেজ থেকে গাড়ি স্টার্ট দিয়েই মিটার চালু করেছে। কি আর কমু।

ঈদের গাড়ি যথাসময়ে ছাড়িবে এই আশা ছিল না। তবু আমরা যথা সময়েই কাউন্টারে পৌছালাম। কিন্তু মনে মনে দুই তিন ঘন্টা কাউন্টারে বসে থাকার ইচ্ছা(প্রস্তুতি) থাকলে গাড়ি কর্তৃপক্ষ আমাকে হতাশ করিল। ঠিক সকাল সাড়ে ছয়টায় আমাদেরকে শ্যামলী থেকে গাড়িতে ওঠার জন্য ডাকা হল। আমিতো খুশি হইয়া গেলাম। কিন্তু পরক্ষনেই বুঝলাম এত আনন্দের কিছু নাই, আমাদেরকে গাড়িতে নয় উঠতে বলা হল একটা কোষ্টার বাসে। ভাবলাম গাবতলী থেকে বড় গাড়িতে উঠাবে। কিন্তু কোষ্টারটি গাবতলীর গরুর হাটের মধ্যে দিয়া জ্যাম ছাড়াইতে ছাড়াইতে এগুতে থাকলো। শুনলাম আমাদের সাভার পর্যন্ত যাইতে হবে। বড় গাড়ি আসিতেছে।

সেই রুপকথার গল্পের মতো আমাদের কোষ্টার গাড়ি যাইতে যাইতে যাইতেই থাকিল। কোষ্টারের মধ্যে একটা বাচ্চার হাসফাস দেখিয়া খুবই খারাপ লাগছিল। গাড়ির এসির কথা চিন্তা কইরা এই গরমের মধ্যে সে বেচারাকে মোটা কাপড় পরাইয়া আনছে। এখন সে না পারছে জামা খুলে ফেলতে না পারছে গরম সহ্য করতে।

এই গাড়ী নিয়া আমরা অনেক আশাবাদী ছিলাম। ঢাকা যশোর লাইনে এই প্রথম হুন্দাই সিরিজের বিজনেস ক্লাস গাড়ী ছাড়ছে। আমি সহজ ডট কম থেকে দুইটা টিকেট সাইত্রিশো দুই টাকা দিয়া কাটছিলাম আরাম কইরা বাড়ি আসুম দেইখ্যা। কিন্তু আরামের খেতা পুড়ে আমরা আমরা মানিকগঞ্জ পর্যন্ত ননএসি কোষ্টার বাসে আইস্যা বড় গাড়ি পাইলাম।

ইয়েলো লাইনের হুন্দাই সিরিজের গাড়ির টিকিট কইরা কোষ্টারে করে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত আসলে পড়ে কত করে? :((

দ্বিতীয় প্যারা অপেক্ষা করছিল আমার জন্য। গাড়িতে উইঠ্যা দেহি এসি নষ্ট। মনে হইত্যাছে হুন্দাই রে *ন্দাই। X(

গাড়ির ড্রাইভার, হেল্পার, সুপারভাইজার আর প্যাসেঞ্জাররা মিইল্যা গুতাগুতি কইরা গাড়ীর এসি ঠিক করে গাড়ি চলতে শুরু করিল। কোষ্টারে থাকা কালিন সময়ে গাড়ীর সব প্যাসেঞ্জার গাড়ি ব্যবস্থাপনার গুষ্টি উদ্ধার করছিল। কিন্তু এসি গাড়িতে উঠে সবাই যেন আহ্লাদে আটখানা হইয়া চুপ মারিয়া গেল। কিন্তু আমি স্বভাবজাত কারনে চুপ থাকতে পারলাম না। এহেন ভোগান্তির জন্য আমি কর্তৃপক্ষকে একটু নাড়া দেবার উদ্দেশ্যে আমার টিকিটের কপি সুপারভাইজারের কাছে জমা দিলাম না। ইচ্ছে মতো পানি ঘোলালাম। সুপারভাইজার, চেকার আমার পাশে আইস্যা গাইগুই কইরা ডুপ্লি চায়। আমি কই তোমাদের জিএম কে আমার কাছে ফোন কইরা মাফ চাইতে বলো।

কিন্তু জিএম আমার কাছে মাফ চাইলো না। তবুও আমি শেষমেষ ডুপ্লি দিলাম না। হয়তো আমার একার প্রতিবাদে তাদের কিছু আসলো গেলো না তবে আমার মতো একই কাজ যদি গাড়ির সব প্যাসেঞ্জার করতো তবে মনে হয় তারা সোজা হতো।

ফেরী পার হলাম কোন জ্যাম ছাড়াই। ভাবছিলাম প্যারা বুঝি শেষ হইলো। কিন্তু আল্লাহ যারে দেয় তারে ছাপ্পর মাইরা দেয়। যশোর পৌছানোর পনের কিলোমিটার বাকী থাকতেই গাড়ি আবার নষ্ট হইয়া গেল। কিসের একটা বেল্ট নাকি ছিড়ে গেছে। এই বেল্ট যশোর থেকে কিনে নিয়ে গিয়ে গাড়ীতে লাগালে গাড়ি চলবে। সুপারভাইজার জানালো সব মিলিয়ে ঘন্টা দুয়েক লাগবে।

বাড়ির কাছে এসে দুই ঘন্টা বসে থাকার মতো ধৈর্য্য পেলাম না। একটা সিজারিয়ান ইজি বাইক ঠিক করে আমরা উঠে পড়লাম। ইজি বাইক হল ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা। আর সিজারিয়ান ইজি বাইক হলো সেই রিক্সার ব্যাটারি অকেজো হয়ে যাবার পরে তাতে স্যালো মেশিনের ইঞ্জিন লাগানো।

আমরা হুন্দাই সিরিজের বিজনেস ক্লাস থেকে নেমে ভটভট করতে করতে হাইওয়ে দিয়ে ঝাকি খাইতে খাইতে বাড়ির দিকে আসছিলাম। মেজাজ খুব বেশী খিচড়ে থাকায় একটা সেলফি তুললাম না। তবে এই ভটভটিতে করেও যদি বাড়ী ফিরতে পারতাম তবু হত। কিন্তু হল না। ভটভটি শহরে ঢোকার মুখে হঠাৎ একটা সতের আঠার বছরের ছেলে এসে আমাদের ভটভটির ড্রাইভারের নাকে ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিল। শহরের বাইরের গাড়ি শহরে ঢোকার কি সব নীতিমালা নিয়ে তাদের পূর্ব গোলযোগ ছিল।

শোকরিয়া আদায় করলাম ভাগ্যিস একটা ঘুষি আমার নাকে লাগেনি। তাড়াতাড়ি আমরা নিজের নাক বাঁচাবার তাগিদে সেই ভটভটি থেকে নেমে অন্য একটা ইজি বাইকে করে অবশেষে বাসায় আসলাম।

এই গেল বাড়ি ফেরার প্যারা। আর যাবার প্যারা শুরু হইলো টিকিট কাটা দিয়েই। আসার সময় বাস জার্নির এহেন দূর্দশায় পতিত হইয়া প্লান করিলাম আর নয়। এবার ট্রেনে করিয়া ফিরিবো। আমার বাড়ী থেকে আবার স্টেশনের দূরত্ব খুব বেশী না। আমি স্টেশনে গিয়ে শুনে আসলাম ৯ তারিখের টিকিট ৫ তারিখে দেয়া হবে। আমি ৪ তারিখ বিকালে স্টেশনে গেলাম অভিজ্ঞতা অর্জন করতে। টিকিট কাউন্টারে জিজ্ঞেস করলাম, আমাকে টিকিট পেতে হলে ঠিক কখন স্টেশনে আসতে হবে। সে আমাকে টিকেট কাটার লাইনের মুখে একটা চেয়ার দেখিয়ে বললো, একজন অলরেডী লাইনে দাড়িয়ে গেছে। আমি কোন মানুষ দেখলাম না, দেখলাম খালি একটা চেয়ার রেলিংয়ের সাথে তালা মারে রাখা আছে। জিজ্ঞেস করলাম, এই রকম হয় নাকি? সে জানালো হয়। শুনে আমি ছুটলাম বাড়ির দিকে। চেয়ার নিয়ে আমি যতক্ষন স্টেশেন ততক্ষনে আরো চারটি চেয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে গেছে। :-P

চেয়ারের ওপর পুরোটা ভরসা না করে ভোর বেলা গিয়ে নিজের চেয়ারের জায়গা দখল করলাম। ততক্ষণে চেয়ারের পেছেন জনা পনের লোক লাইনে দাড়িয়ে গেছে। সকাল নয়টায় টিকিট দেয়া শুরু হলে লাইনের পাঁচ নম্বর পজিশনে থেকে আমি যখন শেষের দুইটা এসি টিকিট পাইলাম মনে হল সোনার হরিণ হাতে পাইলাম।

আজ রাত নয়টায় আমার ফিরতি যাত্রা শুরু হওয়ার কথা। তবে জানিনা নয়টার ট্রেন কয়টায় আসবে। সেদিন শুনলাম রেলমন্ত্রী বলছেন, ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ের জন্য বিরোধী দল দায়ী। এখন দেখা যাক বিরোধী দল আমার জন্য কতোটা প্যারা রেখেছে।

---------------------------------------------------------

এই গেল আমার প্যারা। ঈদ উপলক্ষে সবার প্যারার কাহিনী শুনতে চাই। আমার এক শ্রদ্ধাভাজন বড় ভাই বলেছেন তিনি প্যারাকে পেয়ারা মনে করে গাড়ীতে উঠেছেন। তিনি ঢাকা থেকে ২৫ ঘণ্টায় নীলফামারী পৌছিয়েছিলেন। জানিনা ২৫ ঘণ্টায় তার পেয়ারা তাজা ছিল কিনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:৪০
২৯টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×