একটুখানি তোমার পাশে বসার অনুমতি কি পেতে পারি?
আমার শরীরে কোন উষ্ণতা নেই- তুমি নিশ্চিন্ত থেক-
গতরাতেও আমি অপর্যাপ্ত কম্বলের নীচে সমস্ত লোম খাড়া করে
ঘুম ঘুম করেই সারাটা রাত কাটিয়েছি।
খুব ভোরেই বেরিয়েছি বাড়ি থেকে-আদুরে রোদ বেরুবার আগেই
অবশ্য ইতিমধ্যে হিজলের তলে যে জলাটায় রোজ যোগীনাথের বউ
শাড়ির আচল ভাসিয়ে দিয়ে থপ থপ সাঁতার কাটে-
সেখানে টুপ করে স্নান সেরে নিয়েছি-যদিও
তার কোন প্রয়োজনই ছিল না-নিছক অভ্যেস- দূরপাল্লার যাত্রাতো-
বিশ্বাস করো আমার আজকের এই শরীরে বিন্দুমাত্র কালি নেই
নিঃশ্বাসে আমি বাতাস ছাড়া আর কিছুরই ঘ্রাণ পাচ্ছি না
আমার সমস্ত রক্ত হিম হয়ে আছে- তোমার কোন ভয় নেই।
ধন্যবাদ
ওদিকে দেখ- বিশাল নলখাগড়ার বন
তাকাও- নইলে সাই করে ফুরিয়ে যাবে-
ঠিক এরকম একটা বন ছিল আমাদের গায়ের পাশ ঘেষে
মেঠো পথ বেয়ে রোজ বিকেলে আমরা ওখানে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতে যেতাম
সুবিমল, বিশু, সত্যজিৎ, রবীন্দ্র, আশোক, আরো কয়েকজন-
কলাগাছের ছাল আর শুকনো কচার ডাল ছিল আমাদের আগ্নেয়াস্ত্র
বারুদ হয়তো পেটের মধ্যেই থাকতো- কেননা
বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসতো মুখ থেকেই।
এরকম কতো সন্ধ্যা ধুলিমাখা গায়ে মায়ের বকুনি খেয়েছি
ও তুমি ঠিক বুঝবে না- ঠান্ডা জলে স্নান করে
পরিচ্ছন্ন হয়ে তবেই ঘরে উঠতে হতো।
কি সব আবোল তাবোল বকছি না?
এখনো তোমার নামটাই জানা হলো না যেখানে
না না আমি তোমার নাম জানতে চাইছি না
ভেবোনা আমি বসতে দিলে শুতে চাইবার মতো লোক
পাশের সিটের অপরিচিত মেয়েদের সাথে আলাপের ভণিতা
আমি দুচোক্ষে দেখতে পারিনা, তবে দুরপাল্লার যাত্রাতো
এতটা পথ হয়তো তুমি ট্রেনের এই একঘেয়ে শব্দে বোর হবে তাই
তবে আমার শৈশবের কথাগুলো তোমাকে
চমৎকৃত করতে পারবে না জানি।
আচ্ছা আসো আমরা সুন্দরের কথা বলি
নদীর কথা। ভালবাসার কথা।
নদীর সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক কিভাবে এল?
সে আর এক ইতিহাস। আমি জানি যাত্রা যত দীর্ঘই হোক
আমার একঘেয়ে ইতিহাস শোনার মতো ধৈর্য তোমার হবে না
তবে শুধু এটুকু জানো- আমার একটা নদী ছিল
একেবারে আমার।
রোজ সকালে আমি সেই নদীর বুকে টিল ফেলে
তার সাথে কথা বলতাম- ঠিক টরেটক্কার মতো।
জানিনা তখন সাগরে বাণ ডেকেছিল কিনা তবে আমার নদীতে
একেদিন হঠাৎ তুফান উঠলো- হয়তো তুফান না
সেটা অন্যকিছু ছিল-কারণ আমার নদীটা বেমালুম শুকিয়ে গেল।
আর আমি ভালোবাসাহীন হলাম।
আচ্ছা তুমি কি কখনো ভালোবাসাহীন হয়েছে?
কি অবান্তর প্রশ্ন করে বসলাম -
মাত্র কয়েকটা মূহুর্তের পরিচয় আমদের- না ঠিক পরিচয়ও নয়
আমি সেই কখন থেকে এলোমেলো বকে যাচ্ছি; অথচ
তোমার দুচোখে এখনো রাজ্যের বিস্ময় জেগে ওঠেনি
হয়তো আমি এমন গুরুত্বপূর্ণ কিছুনা যার জন্য বিস্ময়বোধ হতে পারে
তবে আমি জানি আমি ঠিক চিনেছি
যেদিন আমি নদীহারা হয়েছিলাম, সেদিন তুমি হেসেছিলে
তোমার সে হাস্যোজ্জল চোখের অহংকার
আমি এখনো স্পষ্ট দেখতে পারছি
ট্রেনের ঝিক ঝিক শব্দের তালে হয়তো তোমার মাথা কিছুটা দুলছে
কিন্তু আমি গতরাতে যোগীনাথের আড্ডা থেকে এসে ঘুমোইনি
আমি ঠিক চিনেছি তোমায়।
যেখানে সাগরের জল বেচাকেনা হয়- ভালোবাসার মেলা বসে
আমি জানি সেটাই গন্তব্য তোমার
আমার ক্লান্ত চোখের অজুজাতে আরো কতো নদীতে
বাণ উঠবে তুমি জানো ঠিক মতো-কিন্তু আমি জানি না
কিন্তু জেনে যাবো- দূর পাল্লার যাত্রা
অনেকটা সময় এটাই-তোমাকে ঠিকমতো বুঝে নেবার।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:০৭