somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুদ্র দ্য গংরিড: বন পুরাণের ভবিষ্যৎবাণী

২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শুদ্র দ্য গংরিডের দ্বিতীয় অধ্যায় এটি। আশা করছি তৃতীয় অধ্যায় এক-দু'দিনের ভিতর শেষ করতে পারবো।

-লেখক, মোস্তাফিজ ফরাজেয়ী জেরী

-----------------------------------


রাজা আজাকার প্রস্তাব নিয়ে বনে বড় সভা ডাকে বাঘ। শিয়াল পন্ডিত জঙ্গলের প্রধানদের সে সভায় আমন্ত্রণ জানায়। হাতি, হরিণ, কুমির, বানর, খরগোশ, মহিষ সবাই সেই সভায় আসে। বাঘ একটা উঁচু জায়গায় বসে। তার বামপাশে বসে শিয়াল পন্ডিত। সব সভার আগে বাঘ শিয়াল পন্ডিতের সাথে পরামর্শ করে নেয়। আজকের সভা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সভা।

বাঘ বলে, ‘আমরা যে বিষয় নিয়ে বসেছি সেটা হচ্ছে, রাজা আজাকার একটি প্রস্তাব আমাদের কাছে পাঠিয়েছে। তার মতে মানুষ এবং বনের প্রাণীদের ভিতর যুগ যুগ ধরে যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে তা দূর করা উচিৎ।’

জলের মোড়ল কুমির বলে, ‘এটা কি করে সম্ভব। এটা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এটা সম্ভব নয়। মানুষেরা আমাদের উপর আক্রমণ করবেই।’

হরিণ বলে, ‘আমরা অনেক আগে থেকে দেখে আসছি, মানুষেরা আমাদের উপর আগে আক্রমণ করে। ওরা আমাদের উপর আক্রমণ থামাবে বলে মনে হয় না।’

হাতি-বানর সহ প্রায় সবাই একই মত দেয়। সবার একি কথা, মানুষদের সাথে কোন চুক্তি নয়।

বাঘ এই বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারছিল না। শিয়াল পন্ডিত বলে, ‘রাজা আজাকার কিন্তু সব মানুষের মত নয়। তিনি বন্য প্রাণীদের প্রতি দয়াশীল। এমনকি তার নিজের কোন শিকারী বাহিনী নেই। সুতরাং ব্যাপারটা আমরা ভেবে দেখতে পারি।’

সকলে সমস্বরে ‘না’ বলে দেয়। হাতি বলে, ‘এটা এক দুই বছরের ব্যাপার নয়। ওরা আমাদের দাঁত উপড়ে নেওয়ার জন্য আসবেই। রাজা আজাকা ক’জনকে ঠেকাতে পারবে?’

শিয়াল পণ্ডিত বুঝতে পারে তার নিজের কথাগুলো অমূলক, কেননা সে নিজেও মানুষদের বিশ্বাস করতে পারে না।

এমন সময় খক খক করে বুড়ো কচ্ছপ এসে হাজির হলো। এই কচ্ছপের কাছেই বাঘের তিনপুরুষ ছবক নিয়ে বন রাজ্য চালিয়েছে। কচ্ছপরা শত শত বছর বাঁচে। বুড়ো কচ্ছপ এসে বাঘের ডানপাশে বসে সব কথা শুনতে থাকে চুপি চুপি। তারপর সভা ভেঙে যাবে ভেঙে যাবে ভাব, ঠিক তখন কচ্ছপ হাত উঁচু করে বলে, ‘তোমরা সব চুপ করো বাছারা, আমি কিছু বলবো।’

কেউ কচ্ছপের কথা শুনছে না, বরং নিজেদের ভিতর আলাপ আলোচনায় ব্যস্ত। শিয়াল পন্ডিত এ ব্যাপারটা লক্ষ করে চিৎকার করে বলে, ‘সবাই চুপ! আমাদের শ্রদ্ধেয় কচ্ছপ কিছু একটা বলবে।’

সবাই চুপ হয়ে যায়। বাঘের অনুমতি নিয়ে কচ্ছপ বলা শুরু করে, ‘দেখো বাছারা। তোমাদের একটা কাহিনী বলি। আমার দাদার কথাতো শুনেছ, প্রায় দুইশ বছর হলো আমার প্রাণের দাদা মারা গেছে।’ বলতে বলতে কচ্ছপ আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে, ‘আমার দাদা ছিল অসম্ভব সাহসী। কাহিনীর কিছুটা বাঘ মহারাজা জানলেও পুরোটা জানে না। তাই সবার জন্য আমাকে বলতে হচ্ছে। আমি যখন ছোট ছিলাম সেসময় একদিন আমি আর আমার দাদা সমুদ্রে সাতার কাটছিলাম। এমন সময় একটা অক্টোপাস আমাকে ধরে নিয়ে যায়। আমার দাদাতো আমাকে হন্য হয়ে খুঁজতে থাকে। খুঁজতে খুঁজতে সে অক্টোপাসের বাড়িতে পৌছে যায়। অক্টোপাস তখন শিকারে গিয়েছিল। দাদা আমাকে উদ্ধার করে বাইরে নিয়ে যেতে থাকে। হঠাত দাদা দেখে উজ্জ্বল একটি আলো। দাদা আমাকে ছেড়ে আলোর কাছে যায়। যেয়ে দেখে, একটা পুরাণ। সেই পুরাণে লেখা ছিল এই বনের ভবিষ্যত। দাদা আমাকে চলে যেতে বলে আর নিজে সেই পুরাণ পড়ার জন্য থেকে যায়। ত্রিশ দিন ধরে আক্টোপাসের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সেই পুরাণ শেষ করে দাদা। আমিতো মনে করেছিলাম দাদাকে বুঝি অক্টোপাস মেরেই ফেলেছে। তবে ত্রিশ দিন পর ঠিকই দাদা ফিরে আসলো। এই পুরাণের কথা অনেকেই তোমরা জানো। দাদা একমাত্র আমাকেই সেই পুরাণের সব কথা বলে গেছে। আর আমি আমার স্মৃতিতে রেখে দিয়েছি।’

কেউ কেউ বলে, ‘এ কাহিনী আমরা আগেই শুনেছি, নতুন কিছু থাকলে বলো।’

কচ্ছপ বলতে থাকে, ‘রাজা আজাকার সাথে আমাদের চুক্তি করতে হবে। তা না হলে, আমার বন রাজ্য গভীর সংকটে পড়বে।’

সবাই অবাক হয়ে কচ্ছপকে জিজ্ঞাসা করে, ‘কেন? কেন?’

বাঘ নিজেও কচ্ছপকে বলে, ‘এরা আপনার কথা শুনবে বলে মনে হয়ে না।’

কচ্ছপ বলে, ‘রাজা আজাকার সাথে চুক্তি না করলে আমাদের জীবন বিপন্ন হবে। এই বন ধ্বংস হয়ে যাবে। কেননা, সেই পুরাণ মতে, এই বনের পাশের রাজ্যে এমন এক রাজা আসবেন যার থাকবে একটা বাহিনী যারা আমাদের কথা বুঝতে পারবে। আমরা জানি রাজা আজাকার সন্না বাহিনী আছে। আবার তাদের থাকবে শক্তিশালী সেনাবাহিনী যা রাজা আজাকার আছে। এই রাজা হবেন আমাদের প্রতি দয়াশীল। এবং আমাদের কাছে একটা চুক্তির প্রস্তাব পাঠাবে। আমরা যদি এই চুক্তি না মানি তাহলে সেটা হবে ভুল, কেননা, চুক্তি না মানলে আজাকার রাজ্য এমন নিষ্ঠুর এক রাজার হাতে চলে যাবে, যে হবে বন ধ্বংসকারী। সেই নিষ্ঠুর রাজা বনের গাছপালা কেটে একাকার করে ফেলবে। তার থাকবে ২২৯ জনের এক শিকারী বাহিনী। তাদের কাজ হবে বন্য প্রাণীদের মেরে ফেলা আর আটক করা। এরা জলের কুমীরের চামড়া নেবার জন্য কুমীর শিকার করবে।’
কচ্ছপের কথা মন দিয়ে সবাই এতক্ষণ শুনছিল। কথা শেষ হলেও কারো মুখে কথা সড়ে না। ভয়ে আর আশঙ্কায় আড়ষ্ট হয়ে যায় সবাই।

কচ্ছপ আরো বলে, ‘ব্যাপারটা আমি আগে বলিনি কেননা, আমার দাদা বলেছিল, যতদিন না সেই রাজা প্রস্তাব দেবে ততদিন কাউকে বলো না। ব্যাপারটা জানাজানি হলে হিতে বিপরীত হবে, বনের প্রাণীদের জীবনে দুর্দশা নেমে আসতে পারে।’
বাঘ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘আমার মনে হয়, আমরা সবাই কচ্ছপকে শ্রদ্ধা করি। তার মত প্রবীণ এখানে আর কেউ নেই। এছাড়া আমরা আগেও দেখেছি কচ্ছপের পুরাণের সব ঘটনা বাস্তবতার সাথে মিলে যায়। তাই আশা করছি ব্যাপারটা নিয়ে এখন আমরা নতুনভাবে আলোচনা করতে পারি।’

কুমির বলে, ‘এটা ভয়ঙ্কর! পুরাণে যদি লেখা থাকে তবেতো ভয়ের ব্যাপারই। আমাদের অবশ্যই নতুন করে ভাবতে হবে।’
শিয়াল পন্ডিত বলে, ‘কচ্ছপের কথার পর আসলে আমরা কোন কিছু বলতে পারি না। কেননা, পুরাণের কথার উপর কোন কথা থাকতে পারে না। পুরাণ আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করে।’

বাঘ বলে, ‘শিয়াল ভাগ্নে ঠিক কথাই বলেছে। আমরা জানি পুরাণ কতটা পবিত্র। আমরা কতবছর আগে আমাদের পুরাণ হারিয়েছি জানি না। কিন্তু কচ্ছপ যে একজন জ্যান্ত পুরাণ হিসেবে আমাদের মাঝে আছে সেটা আমাদের সৌভাগ্য। তাই সিদ্ধান্ত এই যে, রাজা আজাকার সাথে আমাদের চুক্তিসভা হতে যাচ্ছে।’

সবাই পুরাণের ভবিষ্যৎবাণীর কথা স্মরণ করতে করতে চলে গেল। বাঘ মামা আর শিয়াল শুধু থাকলো।
বাঘ বলে, ‘ভাগ্নে, ব্যাপারটা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করো। চুক্তির শর্তাদি যাতে আমাদের পক্ষে থাকে এটা নিয়ে ভাবো। মানুষেরা যেন আমাদের না ঠকাতে পারে।’

শিয়াল পন্ডিত বলে, ‘সেটা আবার বলতে! আমিতো এখনো ভাবছি। মামা, আমিতো আনন্দে কাঁপছি। এমন একটা ইতিহাস তাহলে হতে চলেছে। আর আমরা হতে যাচ্ছি এই ইতিহাসের সাক্ষী।’
বাঘ বলে, ‘দেখ ভাগ্নে, রাজা আজাকা আসলেই বুদ্ধিমান। তার পরিকল্পনার তারিফ করতে হয়। আমার মাথায় এসব আসে না কেন ভাগ্নে?’

শিয়াল পন্ডিত হাসতে হাসতে বলে, ‘তুমি তো মহারাজা সেজন্য। তোমার এত বড় রাজত্ব কি রাজা আজাকার আছে। তোমারতো জঙ্গলের চিন্তা করতে করতেই দিন যায়, তার উপর আবার হরিণ তাড়া করার চিন্তা। এতকিছুর পর অন্য কিছু করার সময় আছে নাকি তোমার?’

বাঘ বলে, ‘ঠিকই বলেছিস রে ভাগ্নে। রাজা আজাকাকে তো খাবারের চিন্তা করতে হয় না, প্লেট প্লেট নামি-দামি খাবার তার সামনে উপস্থিত যে কোন সময়। তুই যা তাহলে ভাগ্নে, পেটটা খিদেয় চু চু করছে।’
এই সভার পর কয়েকদিন বন স্তব্ধ থাকে। পুরাণের ভবিষ্যৎবাণী নিয়ে সব প্রাণীরা শঙ্কায় কাঁপতে থাকে। এক বাক্যে বনের সব প্রাণীরা রাজা আজাকার সাথে চুক্তি করার পক্ষে মত দেয়।

******************************
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×