somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে লোকটি পৃথিবীকে বাঁচিয়েছিলেন (পর্ব ২)

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব
Click This Link


পারমানবিক বোমা এক্টিভেটরের চবি পাওয়ার পর থেকে ভেসিলি আর একটিবারও এ বিষয়ে তার সিনিয়র অফিসার সভোলনেস্কি বা মাসানুকভের সাথে কথা বলেননি।প্রায় প্রত্যেক অফিসারই জানে যে ভেসিলির জীবনে বিরাট একটি দূর্ঘটনা হয়ে গিয়েছিল এই পারমানবিক বোমার কারনেই।১ বছর আগের কথা।ভেসিলি তথন সাব K19 এর সামরিক অফিসারের দায়িত্বে।তার অসাধারন কর্মদক্ষতায় পুরো কম্পানির উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা খুশি ।সাব K19 রাশিয়ার পারমানবিক বোমা উত্ক্ষেপনযোগ্য নতুন সাবমেরিন।সব ঠিকঠাক চলছিল ।কিন্তু একদিন রাশিয়ান সামরিক মহড়ার সময় হঠ্যা করেই নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর কলাপ্স করে ।ঘটনাস্থলেই ৮ জন ক্রু নিউক্লিয়ার রেড়িয়েশনে মারা যান ।ভেসিলি তার ক্রুদের বাঁচাতে গিয়ে রেড়িয়েশন পয়জনিংএ আক্রান্ত হয়ে পড়েন।পরে অবশ্য তিনি সুস্থ হয়ে যান।অনেকের মত মাসানুকভো ভেবেছিলেন এই যাত্রায় বেঁচে গেলেও ওই দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারবেননা।ভেসিলকে দেখে এখন মাসানুকভের তাই মনে হচ্ছে।যাত্রা শুরুর ২ সপ্তাহ হতে চললো।রাশিয়ান চারটি সাব সফল ভাবেই পূর্ন গোপনীয়তার সাথে আটলান্টিকের ভেতর প্রবেশ করলো।রেডিও অফিসার ভ্লাদিমিক আতংকিত চেহারা নিয়ে ক্যাপ্টেন সভোলনেস্কির অপারেশন রুমে প্রবেশ করলেন।স্যার একটা খারাপ খবর আছে।সামনে বিশাল একটি হ্যারিকেন আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে পশ্চিম আটলান্টিকের দিক থেকে।সভোলনেস্কি সাথে সাথে বেতারের মাধ্যমে বাকি ৩ সাবের ক্যাপ্টেনদের মতামত জানতে চাইলেন।মিনিট বিশ পরেই জানানো হলো এই হ্যারিকেন পার হয়েই আমরা কিউবাতে যাব।ক্যাপ্টেন এই প্রথমবারের মত কিউবাতে যাত্রার কথা প্রকাশ করলেন এবং সকলকে জানিয়ে দিতে বললেন।মাসানুকভ এই ২ সপ্তাহ ব্যস্ত ছিলেন কার্গোতে অবস্থিত পারমানবিক বোমার ব্যবস্থাপনাতে।নিয়ম করে প্রতি ২ ঘন্টা অন্তর অন্তর রাউন্ড ভিজিট এবং ম্যানুয়াল চেকিং।তিনি বেশ চিন্তিত তার ক্রুদের নিয়ে।কারন এর আগে তিনি কখনো হ্যারিকেনের ভেতর দিয়ে যাননি।অক্টোবর ১৪।মধ্য আটলান্টিকের বুকে চারটি রাশিয়ান সাব যুদ্ধ করে চলছে প্রলয়ংকারী হ্যারিকেনের সাথে।মাসানুকভ দাড়িয়ে আছেন রেডিও সেন্টার অফিসার ভ্লাদিমিকের সাথে।স্যার কি মনে হচ্ছে ?আমরা কি সফল হতে পারবো ?চিন্তা করবেননা ভ্লাদিমিক।এই বিপর্যয় সাময়িক।ক্যাপ্টেন খুব সাবধানেই চালাচ্ছেন।আর ২৪ ঘন্টা পরই আমরা সারগোসা সাগরে প্রবেশ করতে যাচ্ছি।কমান্ডারের আস্বস্তি শুনে অনেকটাই দুঃচিন্তা মুক্ত হলেন ভ্লাদিমিক।মাইকে ক্যাপ্টেনের আওয়াজ শোনা গেল ।কমান্ডার মাসানুকভ রির্পোট করুন।মাসানুকভ অপারেশন রুমে প্রবেশ করে দেখলেন কমান্ডার ভেসিলি ক্যাপ্টেনকে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করছেন।মাসানুকভকে দেখেই ক্যাপ্টেন সভোলনেস্কি এগিয়ে আসলেন।কমান্ডার মাসানুকভ আমরা একটা বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে যাচ্ছি।মাসানুকভ দেয়ালের সাধে নিজেকে চেপে রাখলেন প্রচন্ঠ ঝাঁকি থেকে শরীর বাঁচাতে।ভেসিলি এবং ক্যাপ্টেন একই ভাবে দাড়িয়ে থাকলেন।আমরা গত ২দিন হল মস্কোর সাথে যোগাযোগ করতে পারছিনা এখন আমরা নিশ্চিত হতে পারছিনা কি পদক্ষেপ নেয়া যায়।প্রত্যেক সাব তাদের প্রধান ৩ সামরিক অফিসারের সম্মতিতে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে সেটাই হবে চুড়ান্ত।রুমের সবই হঠ্যাৎ করে নিরব হয়ে গেলেন।সবার মনে একটাই আশংকা এই বুঝি পারমানবিক যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল।কয়েক ঘন্টা এভাবেই কেটে গেল।হঠ্যা ভ্লাদিমিক দরজায় টোকা দিলেন।ক্যাপ্টেন এই মাএ মস্কোর সাথে যোগাযোগে আমরা সক্ষম হয়েছি।আপনি হেডকোর্য়াটারে যোগাযোগ করতে পারেন।হেডকোর্য়াটারে অন্যান্য সাবের ক্যাপ্টেনদের থেকে সভোলনেস্কির গ্রহনযোগ্যতা অনেক বেশি।কারন তিনি সবচেয়ে সিনিয়র এবং সবচেয়ে বেশি যুদ্ধে অংশগ্রহনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন।ক্যাপ্টেন আর দেরি না করে হেডকোর্য়াটারে যোগাযোগ শুরু করলেন।অপারেশন রুমে দাড়িয়ে রইলেন ভেসিলি ও মাসানুকভ।কি মনে হচ্ছে কমান্ডার কি সিদ্ধান্ত হতে পারে?মাসানুকভ প্রশ্ন করলেন।এখন বলাটা খুবই মুশকিল।তবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি যুদ্ধে যেন রাশিয়ার কিছু না হয়।কিছুক্ষন দুজনের ভেতর আলাপ আলোচনা চলতে লাগলো।হ্যারিকেনের তীব্রতাও কমতে শুরু করছে।সাবটি রির্চাজের জন্য ভেসে উঠলো।এই সাবটির বিশেষ বৈশিষ্ঠ হল এটির ইন্জিন ডিজেল চালিত এবং ব্যাটারি রির্চাজের জন্য এটিকে ভেসে উঠতে হয়।প্রায় ৩ ঘন্টা পর ক্যাপ্টেন মলিন মুখ নিয়ে অপারেশন রুমে প্রবেশ করলেন।রুমে ঠুকেই মস্কোর নতুন সীদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন।অপারেশন আপাতত স্থগিত।শুধুমাএ আমরা সারগোসা সমুদ্র প্রবেশ করবো।বাকি তিনটি সাব আটলান্টিকে থাকবে।কিউবা উপকূলে আমরা আপাতত প্রবেশ করতে যাচ্ছিনা।কমান্ডারদের চোখে মুখে হতাশা ছেয়ে পড়লো।হাজার মাইল পাড়ি দেয়ার পর এমন সীদ্ধান্তে ভেতরে ভেতরে অনেকেই আহত হলেন।প্রকৃতপক্ষে বাকি তিনটি সাব এই হ্যারিকেনের হাত থেকে বাঁচার জন্য কয়েকদিন সমুদ্রের অনেক গভীরে চলাতে প্রচুর জ্বালানি শেষ করে ফেলেছি।এখন বাকি জ্বালানি দিয়ে কিউবা যাত্রাটা তাদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

এর ঠিক ৩দিন পর সাবটি সাফল্যের সাথে সারগাসো সমুদ্রে প্রবেশ করলো।আমেরিকার ভূখন্ড আর মাএ ৫০ মাইল দুরে!!অনেকদিন পর সাবের প্রত্যেক অফিসার এবং ক্রু তাদের অসামান্য কাজের সাফল্য দেখতে পেলেন।কিন্তু রেডিও অফিসার ভ্লাদিমিকের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে কারন তারা মস্কো থেকে যোগাযোগে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন ।মজার ব্যপার হল তারা আমেরিকার এত সন্নিকটে যে বেতরে মায়ামী রেডিও শুনতে পাচ্ছে। সারগাসো সমুদ্রের বুকে একটি পারমানবিক সাবমেরিন।যার ভাগ্য নির্ভর করছে তিনজন অফিসারের উপর ।ক্যাপ্টেন সভোলনেস্কি,কমান্ডার মাসানুকভ এবং কমান্ডার ভেসিলি।মানব জাতির ইতিহাস হয়তো বদলে দিতে পারতেন এই ৩ ব্যক্তি।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৩
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×