(খুব সাধারণ কিছু ভাবনা, আমার মতো অনেকেই হয় তো ভাবে। ভাবনাগুলো সবার সাথে শেয়ার করলাম শুধু।)
ছোটবেলায় পড়তাম- ঋতুবৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু বড় হতে হতে আবিষ্কার করলাম অদ্ভুতভাবে ঋতু বদলের সাথে সাথে প্রকৃতির সাথে বাংলাদেশী জাতির কর্মকান্ডও বদলায় আমুলভাবে। বাঙ্গালী ফেব্রুয়ারীতে ভাষাপ্রেমিক, মার্চ আর ডিসেম্বরে দেশপ্রেমিক, রমযান মাসে ধার্মিক হয়ে যায়। আর কিছু বিশেষ দিন তো সাথে আছেই- ১৪ ফেব্রুয়ারীতে প্রেমের প্রেমিক এমন কি বাবা-মায়ের জন্যে ভালবাসাটাও আজকাল একটি বিশেষ দিনে এসে ঠেকেছে।
এহেন বৈচিত্র্যের অধিকারী জাতির নিত্য নতুন বৈচিত্র্যে আমি দিন দিন তাজ্জব থেকে তাজ্জবতর হয়ে যাই। ফেব্রুয়ারীতে ভাষা নিয়ে যারা ভাষণ দেন, তাদের যে আসলে ভাষার প্রতি কতটা দরদ তা মনে হয় বোঝা যায় ইংরেজী মাধ্যমে পড়াশনা করা তাদের ছেলেমেয়েদের বাংরেজী কথার বাহারে। বাঙ্গালী আজ বাংলায় কথা বলাকে ক্ষেতামী মনে করে, যে কয়টা বাংলা শব্দ মুখে চলে আসে সেগুলোকেও ইংরেজী উচ্চারণে বলে যেন বাংলাকে জাতে উঠায়। আর স্মার্টনেস হলো শুধুমাত্র প্রভাতফেরীতে কালো পোষাকে শামিল হয়ে ইংরেজীতে বুলি ছড়িয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে আসা। আমার মনে বড় প্রশ্নঃ শহীদ মিনারে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার এর স্মৃতিকে সম্মানিত করতে আমরা যে ফুল দেই, তাই কী চেয়েছিলেন তারা? তারা তো চেয়েছিলেন সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার, শুধু সরকারী অফিসে চিঠি চালাচালির ভাষা হিসেবে তো চান নি। প্রতিটি কথায় সালাম-রফিক-বরকত-জব্বারকে পায়ে পিষে আবার ফুল দিয়ে তাদেরকে উপরে উঠানোর চেষ্টা করছি। ভাষার প্রেম বলতে কেন যে বাঙ্গালী শুধু ভাষা দিবসে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া বোঝে! কেন যে তার সত্যিকার মর্মার্থ অনুভব করতে পারে না!
ইদানীংকালে দেখি বাবা-মায়েরা চান তাদের সন্তান সব দেশের বাইরে চলে যাক। দেশ না কি বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে। হুমম, ঘর থেকে বের হলেই প্রতিদিন আমরা তা বুঝি- এমন কিছু খুঁজে হয় তো পাওয়া যাবে না যা দেখে কেই আশায় বুক বাঁধতে পারে যে এই দেশই আমার সুস্থ-সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার সমস্ত নিশ্চয়তা দেবে। অথচ আমরা বড় দেশপ্রেমিক!! দূর্নীতি, অসততা, কালোবাজারী, ছাত্র রাজনীতির নামে নোংরা কর্মকান্ড আরো যা যা খারাপ আছে তাতে দেশকে নিমগ্ন রেখে মার্চ আর ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধের (এক এক সরকারের আমলে এক এক রকম) ইতিহাসে সব কিছু ভাসিয়ে দিয়ে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে আমরা দেশপ্রেমিক সাজি! কী ভয়ানক ভন্ড আমরা! মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছিল শুধু দু'টি মাসে আমাদের ফুলের তোড়া পাওয়ার জন্যে!
গত কয়েকদিন দেখছি সামুতে মানুষজন বেশ লেখালেখি করছে- রমযান মাসে কী কী ব্যাপারে সংযম সাধন করতে হবে। রমজান মাসে মিথ্যা বলা যাবে না, অশালীন ছবি দেখা যাবে না বা অশালীন কথা বলা যাবে না, গীবত করা যাবে না, অশালীন পোষাক পরা যাবে না, পানাহারের ব্যাপারেও সংযম সাধন করতে হবে। আমার কাছে আজিব লাগে- এই কাজগুলো কী অন্য মাসগুলোতে করা উচিত? আমার এক কলিগকে দেখি রোজা আসলেই প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন, রোজা গেলেই সব শেষ। কেন রে ভাই! হতে পারে রমজান মাস ফযীলতের মাস, কিন্তু আল্লাহ মাবুদ কী বলেছে নাকি যে এই মাসে ধর্ম-কর্ম করলে বাকী সব মাসেরটা মাফ? ধর্ম বলতে আমি তো শুধু কিছু আচার-অনুষ্ঠান পালন করাকেই বুঝি না (আমি নিশ্চিত কোন ধর্মই তা বলে না), অধর্ম (যে কোন অন্যায় কাজ, যেহেতু কোন ধর্মই ন্যায়ের বাইরে যেতে বলে না) থেকে বিরত থাকাকেও বুঝি।কী আজিব বাঙ্গালী জাতি! যার ধর্ম-কর্মও ভয়ানকভাবে সিজনাল!
এতদিনে একটা জিনিসই বুঝেছি- অধর্মটাই হলো বাঙ্গালীর ধর্ম, যা কোন সিজ়ন মেনে চলে না, সারা বছরই চলে স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:২৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



