somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বি কে দাস রোড, ফরাশগঞ্জ- অবহেলিত ঐতিহ্য

১৭ ই আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৫:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বি কে দাস রোড, যার দুই পাশে রয়েছে অনন্য সব স্থাপত্যকীর্তি

কিছু দিন আগে তাও প্রায় বছরখানেক হলো বেলজিয়ান কিছু বন্ধুকে সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম পুরান ঢাকায়, বাংলাদেশের ঐতিহ্য তারা ধারণ করে নিয়ে যেতে চায় তাদের ক্যামেরায়। কিন্তু সেই ঐতিহ্য সংরক্ষণে যে আমরা মোটেও সচেতন নই, তারই লজ্জায় আমরা কুঁকড়ে থাকলাম ওদের কাছে। পৃথিবীর অনেক দেশ শুধু পর্যটনের মাধ্যমে উপার্জন করে বাৎসরিক আয়ের বিরাট অংশ। আর বাংলাদেশ প্রভূত ঐশ্বর্যের অধিকারী হয়েও পর্যটকদের জন্য সুবিধা তৈরীতে বিশেষ অপারগ। কিন্তু ঐতিহ্যের সংরক্ষণ তো শুধু পর্যটনের জন্যেই দরকার নয়, এসব স্থাপত্য আমাদের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের অংশই নয় শুধু; বিভিন্ন সময়ে আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতি কেমন ছিল তারই স্বাক্ষর।

ফরাসীদের পত্তন করা ফরাশগঞ্জের বি কে দাস রোড ধরে হাঁটলে দুপাশের অনন্য স্থাপতিক নকশামন্ডিত বাড়ীগুলো যেন আমাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই সময়ে। ফরাশগঞ্জ এর স্থাপনা হয় ফ্রেঞ্চ মার্কেটের পাশে যা স্থাপিত হয় নায়েব নওয়াজীশ মোহাম্মদ খান এর অনুমতিতে ১৭৮০ সালে। ফ্রেঞ্চ ব্যবসায়ীরা নানান মশলার পাইকারী ব্যবসা করে- আদা, হলুদ, রসুন, মরিচ ইত্যাদি। ফরাসীরা চলে গেলেও ফরাশগঞ্জ বিকাশ লাভ করে, এখনো এই জায়গা নানান মশলার আড়ৎ এ সমৃদ্ধ।

ফরাশগঞ্জের অন্যতম স্থাপত্যকীর্তির মধ্যে রয়েছে রূপলাল হাউস (যা এখন জামান হাউস আর নূরজাহান হাউসে বিভক্ত এবং যার একটি অংশে রয়েছে মশলার আড়ৎ) আর বড় বাড়ী যে দুইটি বাড়ী খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাদের space, scale এবং stylistic order এর কারণে। কিন্তু পুরো বি কে দাস রোডেরই conservation প্রয়োজন কারণ সম্পূর্ণ রাস্তার urban fabric একটি সম্মিলিত স্থাপতিক স্বত্তা। অথচ এখনো পর্যন্ত পুরনো ঢাকার এই ঐতিহ্য সংরক্ষণে কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয় নি সরকারের পক্ষ থেকে। কিছুদিন আগে ঢাকার ১০০ টি হেরিটেজ সাইটের (আরো হাজারখানেক সাইট এই লিস্টের অন্তর্ভুক্তির দাবী রাখে ) একটি লিস্ট করা ব্যতীত, বি কে দাস লেন যে লিস্টের অন্তর্ভুক্ত। এমনকি নতুন গড়ে উঠা ভবনগুলো ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করছে না, এই বিধিমালা অনুযায়ী নথিভুক্ত ভবনগুলোর ২৫০ মি ব্যাসার্ধের (ভিতর এবং বাইরের) মধ্যে যে কোন ধরনের পরিবর্তন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত করা যাবে না। অথচ এই ভবনগুলোর মধ্যে যা খুশীভাবে পরিবর্তন আনা হচ্ছে, পরিবর্ধন করা হচ্ছে, এই কর্মকান্ডগুলো আরো বেশী ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের ঐতিহ্যেমন্ডিত এইসব ভবনগুলোকে।

কিছুদিন আগে করা এক সার্ভে থেকে দেখা যায় বি কে দাস রোডের প্রায় শতকরা চল্লিশ ভাগ ভবন সরকারী মালিকানার। সরকার খুব সহজেই রূপলাল হাউসকে প্রাইভেট সেক্টরের সহযোগীতায় পুনর্বাসন করতে পারে নতুন ধরনের ব্যবহার দিয়ে যেমন- জাদুঘর, ক্যাফে, লাইব্রেরী, প্রদর্শনীর জায়গা ইত্যাদিসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠান পালনের স্থান দিয়ে। ছোট প্লটগুলোতে কিছু ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের দোকান দেওয়া যায় যা আমাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরবে বিদেশীদের কাছে। বি কে দাস লেনের সাথে বুড়িগঙ্গা নদীর পাশের বাঁধের একটা লিঙ্ক রোড করা যেতে পারে যা নদী তীরে মুক্ত বায়ু সেবনের একটা যোগাযোগ তৈরী করে দেবে। সরকারের উদ্যোগের কারণে যদি এই এলাকার পরিবর্তন সাধিত হয় তাহলে ব্যক্তিগত মালিকানার বাড়ীগুলোর মালিকরাও সচেতন হয়ে তাদের বাড়ীগুলোর সংরক্ষণের জন্য তৎপর হবে। এখানেই হয় তো তৈরী হতে পারে ট্যুরিস্টদের জন্য থাকার জায়গা। এ সব কিছুর মাধ্যমে সম্ভব পুরনো ঢাকার এই ঐতিহ্যমন্ডিত এলাকাকে রক্ষা করা, যা শুধু এই এলাকার নয় পুরো ঢাকা শহরের মানুষজনের জন্য একটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচার জায়গা হতে পারে।


রূপলাল হাউস




এবং রূপলাল হাউসের বাহির ও ভিতর


রূপলাল হাউসের ছাদ থেকে বুড়ীগঙ্গা


বড় বাড়ী






৭, ৮ এবং বড় বাড়ীর ভিতরের অংশে




১০ এবং ১১ বান্দরের জ্বালায় টেকা দায়!


১২ একটুখানি আকাশ!!!



১৩ ফরাশগঞ্জের কাছেই রয়েছে আরেক স্থাপত্য কীর্তি আহসান মঞ্জিল


১৪ বুড়ীগঙ্গার ধারে


১৫ আমার ঐতিহ্যের মলিনতাকে ধারণ করছে বিদেশী বন্ধু! :(
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১:৩০
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×