নায়াগ্রা টু নিউইয়র্ক : একটি অসুখী,অঘুমো ভ্রমণ ব্লগ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
নিউইয়র্ক থেকে যাত্রার সময়ই আমি গাড়ীর পিছনে বসা চতুর্থ যাত্রী ।
খুব একটা কিছু করার কিংবা দেখার ও নেই কারণ আশে পাশে শুধু হালকা তুষার পড়তেছে ।
সেই থেকে আমার ঘুমের শুরু । ঘন্টায় ঘন্টায় আমি ঘুমিয়ে নিচ্ছিলাম।ঘুমের ব্যাপারে আমার ব্যাখ্যা হলো । 'ঘুমের দরকার' এই কথাটা আমি নিজেকে বলেই ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়ি।বাকি তিনজন আমার উপর মহা বিরক্ত ।কেন বিরক্ত সেটা আমিও জানি না ।দীর্ঘ শীতযাত্রা খুব মনোমুগ্ধকর কিছু ছিলোনা ,বাফেলো ষ্টেট থেকেই ফেরার সময়ও আমরা সেই তুষারপাত সঙ্গে করেই ফিরছিলাম।
মধ্য রাতে পেন্সিলভ্যানিয়ার কাছাকাছি এসে ভ্রমণ আর নিরাপদ মনে হলো না । আমি ঘুম থেকে উঠেই দেখি গ্যাস ষ্টেশনের সাথে এক ম্যাকডোনাল্ডের সামনে গাড়ী পার্ক করে আছে ।জানা গেলো ইপ্সিত কোন হোটেল আশে পাশে নেই ।তাই এই ম্যাকেই রাত কাটাতে হবে। ঢূকে আমরা দেখলাম আমাদের মতোন আরো দুয়েক পার্টি রাত কাবারের জন্য বসে আছে । এই ম্যাক ২৪ ঘন্টা না , রাত ১১টায় কাউন্টার বন্ধ হয়ে গেছে । সাথের কিওস্ক থেকে কিছু কিনে খেয়ে নিয়ে গাড়ীতেই রাত কাটানোর জন্য সবাই ঢুকলাম ( কারণ কেনো জানি বন্ধ ম্যাকের সামনের খোলা চেয়ার গুলোতে ঠান্ডা আরো বেশী লাগছিলো) ।চার পাশের গ্লাস হালকা খুলে দিয়ে হিটার অন করে সবাই ঘুমের প্রস্তুতি নিতে লাগলো আর আমি ঘুমিয়ে পড়লাম ।
আমার আবার ভুতের ভয় খুব বেশী , কি জানি স্বপ্ন দেখে হঠাত ঘুম ভেঙ্গে গেলো । আশে পাশে চোখ মেলে দেখি বাকি তিনজন নেই ! এলিয়েনের দেশ আমেরিকাতে এটা ঘটতেই পারে ভেবে , গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো । গ্লাস পুরো নামিয়ে গলা উচুঁ করে ভাষ্কর কে ডাকতে লাগলাম , কিন্তু ভয়ে আমার গলা থেকে চিঁহিঁ চিঁহিঁ ছাড়া কিছু বের হলো না ।
ভয়াবহ অবস্থা! আমি কোনোমতে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে ম্যাকের ভিতরে ঢূকে দেখি বাকি তিন আদম সন্তান বিরস বদনে তিন দিকে চেয়ে বসে আছে ।
' কি ব্যাপার আপ্নারা ঘুমাচ্ছেন না কেনো ' - জিজ্ঞাসা করলাম । সবাই দেখি কেমন একটা হতাশজনক দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে রইলো ।কিছুই বলে না ।
মেজাজ টা খাপ্পা করে আমি ও তাদের পাশে বসে পড়লাম, আর প্রায় সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়লাম ।ভালো ঘুম হলো , কিন্তু ভোরের দিকে ঘুম ভেঙ্গে দেখি পাশে তিনজন নেই ।
প্রথমেই খুব ভয়ে ভয়ে আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম কোন এলিয়েন কিংবা সিরিয়াল কিলার দেখা যায় কিনা । কাউকে দেখলাম না ।আবার তাড়াতাড়ি গাড়িতে গিয়ে দেখি , ইনসমোনিয়ার রোগী এই তিনজন কি সব আলাপ আলোচনা করতেছে ।
আমাকে একা রেখে চলে আসার জন্য আমি তাদের অভিযুক্ত করতেই , সারা দিন ড্রাইভ করা ভাষ্করের ভায়রা ভাই বললেন ,
'' মিয়া আপ্নে একটা মানুষ !!! এম্নে কেউ নাক ডাকে ??''
আমি নাক ডাকি এই জিনিশ টা আমি কখনোই চোখে দেখি নাই , ইহা ডাহা মিথ্যা কথা । গাড়ীতে বসতে বসতে ভাবতে লাগলাম , এই সব ইনসমোনিয়ার রোগীদের নিয়ে আর জীবনে লং ড্রাইভে বের হবোনা ।আর তাছাড়া তিন জন একই মাত্রার মিথ্যাবাদী এবং হৃদয়হীন ও বটে । নায়াগ্রা ফলসের হোটেলে এরা আমাকে এক রুমে দিয়ে , বাকী তিনজন পাশের রুমে কিভাবে ঘুমাতে পারলো ?
হাউ প্যাথেটিক!!!
(সারা রাতের ভুতের ভয়ের অঘুমো আমি , আরেকটা কথা , উত্তর আমেরিকার ঠান্ডা একটা অভিশাপ , এই রকম অভিশপ্ত দেশে মানুষ কতো কষ্ট করে থাকে ---ভেবেও পরের দুই রাত্রি আমার ঠিক মতোন ঘুম হয় নাই )
৫১টি মন্তব্য ৪৪টি উত্তর
পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন
আলোচিত ব্লগ
সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?
যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।
নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন
আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত
বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!
কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে
সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে
আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন
অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?
এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন