somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস : একজন অভিভাবক বলছি

০২ রা এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ, ২ এপ্রিল, অষ্টম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস।
শিশুদের যে সমস্যাগুলোর ব্যাপারে মানুষ কম জানেন, তার মধ্যে অটিজম অন্যতম। শব্দটি নিয়ে মানুষের একধরনের ভুল ধারনা প্রচলিত আছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই বিষয়ে অধিকাংশ মানুষেরই সঠিক ধারণা প্রায় নেই। অথচ শিশুদের কল্যানের জন্য আমাদের এই বিষয়ে সঠিক ধারনা থাকা দরকার। আর তাই এই লক্ষ্যে অটিজম বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতনতার জন্য ২০০৮ সাল থেকে ‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’ পালিত হয়ে আসছে। এবার দিবসটি তার অষ্টম বছরে পা রাখল। এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘অটিজম সচেতনতা থেকে সক্রিয়তা, একীভূত সমাজ গঠনে বারতা।’



একজন অটিজম আক্রান্ত সন্তানের পিতা হিসাবে , নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলার চেষ্টা করবো এই শব্দটির অর্থ এবং আমাদের সমাজে অটিজম আক্রান্তদের পক্ষ থেকে কিছু কথা । আজকের দিবসের মূল প্রতিপাদ্যের সাথে মিলিয়ে যদি খুব সহজ ভাবে বলি, তাহলে বলা যায়, অটিজম আক্রান্ত শিশু/ব্যক্তিবর্গকে সমাজের মূল স্রোতে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে সমাজ গঠনের আহ্ববান করা হয়েছে ।


আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ পাওয়া যাবে , যারা আট দশ মানুষ থেকে কিছুটা আলাদা মনে হয় ।তারা নিঃসংগ মানুষ , তাদের চারপাশের জগত এবং মানুষ সম্পর্কে উদাসীন এবং অন্যের সাথে কোন সামাজিক বা আবেগিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তারা বেশ খানিকটা অপারগ থাকে । এমনকি তারা পরিবারের সদস্যদের সাথেও দু একটি বিষয় ছাড়া কোন আন্তঃযোগাযোগ বা মনোভাবের আদান প্রদানে ব্যর্থ থাকে , কখনো কখনো পুনরাবৃত্তিক আচরণ করে, যা সবার দৃষ্টিতে শোভনীয় নয় ।এরা অন্য মানুষের চাহিদা , চিন্তা এবং অনুভূতি বুঝতে সক্ষম নয় এবং অনেক ক্ষেত্রে নিজেকেও বুঝাতে পারে না ।সর্বপ্রথম পল ইউজেন ব্লু নামের একজন চিকিতসক ১৯১২ সালে এই সমস্যার নামকরণ করেন অটিজম , যার বাংলা করলে দাঁড়ায় 'আত্ম-মগ্ন ব্যক্তি' ।


অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তির বিকাশ প্রকৃতির স্বাভাবিক ধারা অনুযায়ী হয় না , অনেকের ভাষা এবং বৃদ্ধিবৃত্তির অপরিপুর্ণতা থেকে যায় ফলে তাদের পক্ষে অন্য মানুষের সাথে যোগাযোগ এবং সামাজিক সম্পর্ক রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে । অনেক অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো না ভাবে পুনরাবৃত্তিক আচরণ করে থাকে এবং তাদের বুদ্ধি বৃত্তি এক কেন্দ্রিক থাকার ফলে তাদের আচরণে কিছুটা অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় ,যেমন অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তি খুব সহজেই রেগে যায় এবং তাদের আচরিত প্রাত্যহিক কাজগুলা একই ধরনের হয়ে থাকে এবং তাতে কোন ব্যতয় ঘটলে এরা হাইপার এক্টিভ হয়ে উঠে । আবার কিছু অটিজম আক্রান্ত ব্যাক্তি বা শিশু কোন বিশেষ শব্দ , গন্ধ , স্পর্শ , দৃশ্য বা নিজের যে কোন জেদের প্রতি তীব্র সংবেদনশীল হয়, যার ফলে তাদের কাছেই তাদের জীবন এবং আশে পাশের মানুষের মানুষের কাছে তাদের জীবন দূর্বিষহ হয়ে উঠে । এই অস্বাভাবিক আচরণ হঠাত করেই দেখা দেয় না বরং এট অতি শৈশব কাল থেকেই বিশেষ করে দুই তিন বছরের মধ্যেই দেখা দেয় এবং এটা আজীবন কাল চলতে থাকে ।




তবে আশার কথা হলো ব্যক্তি/শিশুর এই আচরণ নিয়মিত প্রশিক্ষণ , শিক্ষা , খাদ্যাভাসে নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন ধরনের থেরাপী এবং শারিরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে নেওয়া যায় ।
তবে এর জন্য চাই প্রথমত পরিবারের থেকে সাহায্য এবং সহযোগিতা , তারপর সমাজের অন্যান্য মানুষের বাড়িয়ে দেওয়া হাত ।অনেক পিতা মাতাই আছেন , তারা জানেন তাদের সন্তানটি অটিষ্টিক কিন্ত তারা শিশুটিকে সমাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন , কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে সন্তানটিকে নিয়ে যান না , সন্তানটিকে লোক চক্ষুর আড়ালে রেখে দেন অথবা অকারনে মারধর করেন । বাবা মাদের খেয়ালে রাখতে হবে তাদের সাজান বাগানে , ঈশর হয়তো একটি স্নায়ুবিক রোগাক্রান্ত সন্তান দিয়েছেন কিন্ত এই সন্তানটি বাগানের সেই দুস্থ গোলাপ , যার ও গন্ধ আছে , সৌন্দর্য্য আছে কিন্ত দরকার শুধু সামান্য পরিচর্য্যা । খেয়ালে রাখতে হবে , এই নশ্বর পৃথিবীতে আমরা কেউ ই সারা জীবন বেঁচে থাকব না , কিন্ত জীবনের পূণ্য অর্জনের অনেক কাজের মতোন এই শিশুদের সুন্দরভাবে ভাবে লালন পালন ও ঈশ্বরের দেয় একটি কাজ। মহান আল্লাহ পাক কোনভাবেই আপনাকে বঞ্চিত করবেন না কোন সোয়াব অর্জন থেকে, যদি আমরা বাবা মা'রা নিজেদের অটিষ্টিক বেবীদের সবচেয়ে বেশী সহযোগিতা প্রদান করি।
আর , আমরা যারা নিজেদের সমাজের বুদ্ধিমান এবং বিবেকবান মানুষ যারা আছি , তাদের সামান্য সহানুভুতিতে এই শিশুদের সমাজে পুনর্বাসন সম্ভব । জেনেটিক্যালি অটিষ্টিক শিশু/ব্যক্তি বর্গ অনেক মেধাবী । এরা কেউ ভালো ছবি আঁকে, কেউ ভালো গান গায় , কেউ ভাল বেকারীর কাজ জানে , অনেকের হাতের কাজ খুব ভালো , অনেকেই ভালো ক্রিয়েটিভ । শুধু এদের দরকার যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং সহযোগিতা ।
অনেক আগ থেকেই আইন এদের স্বপক্ষে ছিলোনা , এদের অধিকার সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলো না , কিন্ত বাংলাদেশে বর্ত্মানে এই সরকারের আমলে ট্রাষ্ট এক্ট হয়েছে , যাতে বাবা মায়ের সম্পত্তির উপরে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী /অটিষ্টিক ব্যক্তি/ শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে ।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে অটিজম একাডেমী হচ্ছে , যেখানে অটিষ্টিক বাচ্চাদের বিভিন্ন দৈনন্দিন কার্যাবলী শেখানোর পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনের জন্য অনেক ভোকেশনাল কাজে শেখানর ব্যবস্থা রয়েছে । বাংলাদেশের প্রার সব জেলায় সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে , যেখানে একটি অটিষ্টিক বাচ্চাদের সকল সেবা পাওয়া যাবে । এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে বেসরকারী পর্যায়ে অনেক স্কুল এবং ইনষ্টিটিউট রয়েছে যেখানে অটিষ্টিক দের সব সময়ে সেবা প্রদান করা হচ্ছে ।

যারা নিজেরা এই ধরনের একটা সন্তানের পিতা/মা , আপনারা অনুগ্রহ করে নিজেদেরকে অসহায় ভাববেন না , আল্লাহ পাক সবাইকে পরীক্ষা করেন না , তিনি শুধুমাত্র তাদের প্রিয় বান্দাদের ই পরীক্ষা করেন এবং এই সন্তান আপনাদের কাছে তার একটি বিশেষ নিয়ামত , অটিষ্টিক দের নিজের অন্য সুস্থ বাচ্চার চেয়ে বরং বেশী সুবিধা প্রদান করুন, Because they are gift of the God.
সমাজের সচেতন নাগরিকরা সবাই অটিষ্টিক দের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে , এরা এক সময় সমাজের অংশ হয়ে উঠবে এবং মূল ধারায় সমাজের সবার সাথে অংশীদার হতে পারবে । আসুন আজকের বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসে আমাদের এই কামনা হোক, আমরা অটিষ্টিক দের সমাজে পুনর্বাসনে সহযোগিতা করে ,একটা সাম্যের সমাজ গড়ে তুলি ।



পোষ্ট উৎসর্গ : মাহিন সাবা হোসেন ,যাকে ভালোবেসে এই পৃথিবীকে ভালোবাসতে শিখেছি ।

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:১৮
৫১টি মন্তব্য ৪৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×