somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এম আর তালুকদার
আমি বেদুঈন, আমি চেঙ্গিস, আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্নিশ। আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনা চিৎকার, বুকের ব্যাথা বুকে চাপিয়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার। এক মুঠো সুখের সন্ধানে ঘুরে বেড়াই অবিরত…

ইতিহাসে বঙ্গদেশ, বাংলায় তুর্কী শাসন (পর্ব ০৭)

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইতিহাসে বঙ্গদেশ, বাংলায় তুর্কী শাসন (পর্ব ০৬)

ইওজ খলজির মৃত্যুর পর থেকে ১২৮৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত- ষাট বছর বাংলা দিল্লীর মুসলমান শাসকদের একটি প্রদেশে পরিগণিত হয়। এ সময় পনের জন শাসনকর্তা বাংলা শাসন করেন। এঁদের দশ জন ছিলেন দাস। দাসদের ‘মামলুক’ বলা হয়। এ কারণে ষাট বছরের বাংলার শাসনকে অনেকে দাস শাসন বা মামলুক শাসন বলে অভিহিত করে। কিন্তু এ যুগের পনের জন শাসকের সকলেই তুর্কী বংশের ছিলেন। এ কারণে এ সময়কালকে তুর্কী যুগ বলা সবচেয়ে যথার্থ হতে পারে। তুর্কী শাসকদের সময়ে দিল্লীতে অভ্যন-রীণ গোলযোগ চলছিল। সুতরাং, বাংলার মতো দূরবর্তী প্রদেশেরী দিকে সুলতানদের মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ ছিলনা। পরিণামে বাংলার তুর্কী শাসকরা অনেকটা স্বাধীনভাবে দেশ পরিচালনা করতেন।বাংলার প্রথম তুর্কী শাসনকর্তা ছিলেন নাসিরউদ্দীন মাহমুদ। তিনি ছিলেন দিল্লীর সুলতান ইলতুৎমিশেরী পুত্র। ১২২৯ খ্রিস্টাব্দে নাসিরউদ্দীন মাহমুদ মৃত্যুবরণ করলে অল্প সময়ের জন্য বাংলায় ক্ষমতায় আসেন দওলত শাহ- বিন-মওদুদ। ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দে সুলতান ইলতুৎমিশের মৃত্যু হলে দিল্লীতে গোলযোগ দেখা যায়। এ সুযোগে আওর খানী আইবক লখনৌতির ক্ষমতা দখল করে নেন। কিন্তু অল্পকাল পরেই বিহারের শাসনকর্তা তুঘরল তুঘান খানের হাতে তাঁর পরাজয় ঘটে। তুঘান খান ১২৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন- ৯ বছর বাংলার শাসনকর্তা ছিলেন। এরপর মাত্র ২ বছর লখনৌতির ক্ষমতায় ছিলেন ওমর খান।

১২৪৭ থেকে ১২৫১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন- বাংলা শাসন করেন জালালউদ্দিন মাসুদ জানি। তিনি লখনৌতিতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন। পরবর্তী শাসক ছিলেন অযোধ্যার শাসনকর্তা মালিক ইখতিয়ার উদ্দিন ইউজবক। সীমান- অঞ্চলে তিনি রাজ্যসীমার বিস্তার ঘটান। যথেষ্ট শক্তি সঞ্চয় করার পর মাসুদ জানি ১২৫৫ খিস্টাব্দে ‘মুঘিসউদ্দিন’ উপাধি ধারণ করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তিনি ১২৫৭ খ্রিস্টাব্দে নিহত হন। পরবর্তী দুই বছর লখনৌতি স্বাধীনভাবে শাসন করেন মালিক উজ্জউদ্দিন ইউজবক। পরে ১২৬৯ খ্রিস্টাব্দে কারা প্রদেশের শাসনকর্তা তাজউদ্দিন আরসালান খান লখনৌতির সিংহাসনে বসেন। আরসালান খানের পর বাংলার শাসনকর্তা হন তাতার খান। তিনি দিল্লীর প্রতি আনুগত্যী প্রকাশ করলেও কয়েক বছরের মধ্যে দিল্লীর সাথে বাংলার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। তাতার খানের পর অল্পদিনের জন্যী বাংলার ক্ষমতার বসেছিলেন শের খান।

পরবর্তী শাসনকর্তা তুঘরিল ছিলেন মামলুক তুর্কীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। উত্তর এবং পশ্চিম বাংলা ছাড়াও ঢাকা এবং ফরিদপুরের বেশ কিছু অঞ্চল তিনি অধিকারে আনেন। সোনারগাঁওয়ের নিকট তিনি নারকিল- নামে এক দুর্গ তৈরিা করেছিলেন। সাধারণ মানুষের কাছে দুর্গটি তুঘরিলের কিল্লা নামে পরিচিত ছিল। তুঘরিল ‘মুঘিসউদ্দিন’ উপাধি নিয়ো স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ফলে দিল্লীর সুলতান বলবন প্রচণ্ড আক্রমণ হানেন তুঘরিলের উপর। ১২৮১ খ্রিস্টাব্দেী বলবনের হাতে পরাজিত ও নিহত হন তুঘরিল। বাংলার শাসনকর্তারা বিদ্রোহ করে বলে এবার বলবন তাঁর ছেলে বুঘরা খানকে বাংলার গভর্নর হিসাবে নিয়োগ করেন। পরবর্তী ছয় বছর বাংলা দিল্লীর অধীনে ছিল। ১২৮৭ খ্রিস্টাব্দেী বলবনের মৃত্যুর পর বুঘরা খান ‘নাসিরউদ্দীন মাহমুদ শাহ’ নাম নিয়ে স্বাধীন সুলতান হিসাবে বাংলা শাসন করতে থাকেন। এ সময় দিল্লীর সুলতান ছিলেন বুঘরা খানের ছেলে কায়কোবাদ।

কায়কোবাদের মৃত্যু সংবাদে বুঘরা খানের মন ভেঙ্গে যায়। তিনি তাঁর অন্য পুত্র রুকনউদ্দিন কায়কাউসকে বাংলার সিংহাসনে বসিয়ে নিজে সরে যান। কায়কাউস (১২৯১-১৩০০ খ্রিঃ) দশ বছর বাংলার শাসক ছিলেন। তাঁর কোনো ছেলে না থাকায় পরবর্তী শাসনকর্তা হন মালিক ফিরুজ ইতগীন। তিনি সুলতান হিসেবে নতুন নাম ধারণ করেন ‘সুলতান শামসুদ্দিন ফিরুজ শাহ’। ফিরুজ শাহের মৃত্যু হলে পুত্র গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহ বাংলার সিংহাসনে বসেন। অল্পকাল পরেই দিল্লীর সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের হাতে তিনি পরাজিত ও বন্দী হন। পরে ১৩২৫ খ্রিস্টাব্দে বাহাদুর শাহকে মুক্তি দিয়ে সোনারগাঁওয়ে পাঠান হয়। সেখানে তিনি বাহরাম খানের সাথে যুগ্মভাবে শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। লখনৌতির গভর্নর হন নাসিরউদ্দিন ইব্রাহিম ও কদর খান। ইজ্জউদ্দিনকে নিয়োগ করা হয় সাতগাঁওয়ের গভর্নরের পদে। ১৩২৮ খ্রিষ্টাব্দে গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর বিদ্রোহ করলে তিনি বাহরাম খানের হাতে নিহত হন। এরপর থেকে ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন- বাংলা দিল্লীর অধীনে ছিল।




ইতিহাসে বঙ্গদেশ (পর্ব ০১)
ইতিহাসে বঙ্গদেশ, মৌর্য্য সাম্রাজ্য (পর্ব ০২)
ইতিহাসে বঙ্গদেশ, পাল সাম্রাজ্য (পর্ব ০৩)
ইতিহাসে বঙ্গদেশ, সেন সাম্রাজ্য (পর্ব ০৪)
ইতিহাসে বঙ্গদেশ, বাংলায় মধ্যযুগের শুরু (পর্ব ০৫)
ইতিহাসে বঙ্গদেশ, বাংলায় তুর্কী শাসন (পর্ব ০৬)





চলবে.....




(তথ্য সূত্রঃ Click This Link)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৪৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×