somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাই ফেলতে ভাঙ্গা কূলা

১১ ই অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ক্লাসের শেষ ঘন্টা বাজতেই বই খাতা বন্ধ করতে করতে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও দাপুটে ম্যাডাম জানতে চাইলেন-
আপনাদের মধ্যে ভালো ছবি আঁকতে পারেন কে ?

ম্যাডামের প্রশ্নটা করতে দেরী হয়েছে, কিন্তু আমাদের সাড়া দিতে মুহুর্ত দেরী হলোনা। দাঁড়িয়ে গেলেন দুইজন। আমার বাঁ পাশের একজন জিলান স্যার আর কয়েক বেঞ্চ পিছনে বাম পাশ থেকে একজন ম্যাডাম কেকা মনি শিকদার স্বপ্রতিভ দাঁড়িয়ে রইলেন। ম্যাডাম শুধু বললেন
ছুটির পর আমার সাথে দেখা করে যাবেন।

আমি ইচ্ছে করেই দাঁড়াইনি। চুপটি মেরে বসেই রইলাম। যারা দাঁড়িয়েছেন তাদের অনেক প্রত্যাশা ম্যাডামের কাছে। একটু পরিচিত হবে, ম্যাডাম চিনবে, অনেক অনেক কাজে ইনভলব করবে, সর্বোপরি ম্যাডামের হাতে অনেক প্র্যাক্টিক্যাল নম্বর আছে না ! আমার হয়তো ওগুলোর দরকার নাই, তাই চুপ করে বসেই আছি।

ছুটির পর। বিকেল ৫:১০ মিঃ। লাইব্রেরীর ৩ তলা থেকে নেমে আসছি। গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে আছেন ঐ দু’জন স্যার-ম্যাডাম। আমাকে দেখেই জিজ্ঞেস করলেন
কই যান ?
বললাম লাইব্রেরী থেকে আসলাম। তা আপনারা এখনও এখানে কেন ?
উত্তর দিলেন ঐ যে ম্যাডাম ডেকেছিলেন !
বললাম ম্যাডাম কেন ডেকেছিলেন ?
হতাশার সুরে বিরক্তি ভরে জানালেন তার অন্য ক্লাশের জন্য কিছু ব্যক্তিগত কাজ করে দে’য়ার জন্য।
ভালো করে করে দেন নম্বর বেশী পাবেন, বলেই চলে আসলাম।

পরেরদিন। কেকা মনি জিজ্ঞেস করলেন-
আপনি কাল ম্যাডামের সাথে দেখা করলেন না কেন ? আপনি যা সুন্দর ছবি আঁকেন তাতে ম্যাডামের সাথে দেখা করা উচিত ছিলো, ম্যাডাম খুশীই হতেন।
বললাম ছবি আঁকতে পারি কিন্তু ভালোতো পারিনা।
বললেন ইইইস্।
বললাম হুমম ক’দিন যাক আমার এই কথার প্রমান পাবেন হাতে-নাতে।

৮/১০ দিন পর। নোটিস এল বিভিন্ন পর্ষদের সদস্য আহ্বান করে। জিলান, কেকা মনির পীড়াপিড়ীতে লাস্ট ডেট-এ দরখাস্ত জমা দিলাম। জমা দে’য়ার সময় কেকা মনি স্যারকে যথাসম্ভব আন্তরিক অনুরোধ করলেন স্যারকে। বললেন তাকে নে’য়া সম্ভব না হলেও জুলহাস স্যারকে যেন নে’য়া হয়, তাতে নাকী পর্ষদের লাভই হবে। শুনে ভালো লাগলো।

বার্ষিকী পর্ষদ। যথা সময়ে সাক্ষাতকার পর্ব। আমাকে দেখেই এক ম্যাডাম ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন
আপনি না-কি চারুকলার শিক্ষক ? জোর করেই বললেন আপনি আমার পর্ষদে যোগ দেন। আমি আপনাকে নেব।
বললাম না ম্যাডাম আমি ওখানে স্বতস্ফুর্ত হতে পারবোনা।
মুচকী হেসে বললেন আমার নম্বরও পাবেননা।
একমাত্র আমিই শর্ত মোতাবেক কাগজপত্র, সিডি, সহ পূর্বের কাজের এক গাদা অভিজ্ঞতা বগলদাবা করে হাজির হলাম। সবগুলো স্যার-ম্যাডামই আমার কাণ্ড দেখে টাস্কী। ওখানেই নিশ্চিত করলেন- আমি মনোনীত।

বাইরে বেরুতেই সবাই ধরলেন।
কী কী কাজের কথা জিজ্ঞেস করলেন ?
কোন কথা না বলে শুধু কেকা মনিকে বললাম স্যাররা আমাকে নিবেননা।
রুমে চলে এলাম। দু’দিন আর ও মুখো হইনা। জানা আশংকা। এখানেও স্বজন প্রীতি চলছে। সুতরাং আমার ধারে কাটবেনা। হালকা একটু লজ্জিত হলাম, সাথে কেকা মনির উপর রাগও। কেন যে দরখাস্তটা জমা দিতে গেলাম !

ক’দিন পর। যাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসলাম, যার সাথে এত প্রেম তাকে পেলামনা। মেয়ের বাবা ডাকলেন ভালোবাসার মানুষটির গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে- তার হাতে মেহেদী পড়াতে হবে, গেইট সাজাতে হবে। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হলো। পর্ষদ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে অথচ আমাকে ডাকা হলো পর্ষদ পরিচিতি অনুষ্ঠানের গেইট সাজাতে স্টেজ সাজাতে, পর্ষদ সদস্যদের পোশাক পরিকল্পনা করতে। আমি রাজী হলামনা। জেদ চাপলো মনে। প্রিন্সিপাল স্যার ডেকে বললেন
৩ দিন বন্ধ আছে এই ক’দিনে আপনাকে কাজ করতেই হবে।
স্যার আমি দুঃখিত। এই ছুটিতে আমি বাড়ী যাবো। এটা যে পর্ষদের কাজ তাদেরকে দেন ওরা করবে। এটা আমার কাজ না।
পরদিন চলে এলাম ঢাকা।



২ দিন পর। বার্ষিকী আহ্বায়ক স্যার জানালেন
দেখুন এটা ট্রেইনিং ইনস্টিটিউট এখানে টিচারদের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। আপনি কাজটা করে দিন। নইলে আপনার উপর খড়ক নেমে আসতে পারে। আমরাও পারিনি প্রিন্সিপালের কথার উপর কথা বলতে। তার নির্দেশেই আপনাকে পর্ষদ থেকে বাদ দে’য়া হয়েছে। আপনার জায়গায় নে’য়া হয়েছে তার ভাতিজাকে।
গোপন কথাটা আজ জানলাম। আজ জানলাম এখানেও গ্রুপিং লবিং আছে।

বললাম স্যার আমি কাজ করে দেব। একটা শর্তে।
তিনি বললেন আমরা আপনার সব শর্ত মানবো।
কাজটা আমি একা করবো। অন্য কেউ নাক গলাতে পারবেনা।
বললেন করুন।

মাত্র ৬০/৬২ ঘন্টা বাকী আছে অনুষ্ঠান শুরু হতে। প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে। এরই মধ্যে একজনকে নিয়ে ছুটলাম কাঠ বাঁশ কাপড় ইত্যাদি সংগ্রহ করতে। শহরটা আমার কাছে নতুন। কিচ্ছু চিনিনা। বৃষ্টিতে ভিজে বহু কষ্টে সূঁই-সূতা থেকে শুরু করে করাত-হাতুড়ী যন্ত্রপাতী উপকরণ সংগ্রহ করে সারা রাত অমানসিক পরিশ্রম করে কাজ শেষ করলাম। ভোরে এসে ঘুম দিলাম।

কখন যে অনুষ্ঠান প্রায় শেষের পথে টেরই পাইনি। দুইজন সহপাঠী এসে ঘুম থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন অনুষ্ঠানস্থলে। আমাকে কোলে করে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলেন স্টেজে। দেখেই আমার মনটা ভরে উঠলো। পরিচয় করিয়ে দিলেন। কিছু বলতে বললেন।

কী বলবো। ভেবে পাচ্ছিনা। সামনে ৬০০ চেয়ার। লোকে ভর্তি। ভয়ে আমার পা কাঁপছে।
শুকনো গলায় শুধু বললাম আমি কি সাকসেস ?
সবাই সমস্বরে জবাব দিলেন।
ধন্যবাদ সবাইকে আমাকে স্টেজে উঠানোর জন্য।
বললাম ভালোবাসার বস্তুটাকে না পেলাম অন্ততঃ তার সেবাতো করতে পারলাম !
ছাই ফেলতে ভাঙ্গা কূলা. . .।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৫:০৯
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×