'আরও একটু না, আমি তো অনন্তকাল বেঁচে থাকতে চাই। কিন্তু তা তো সম্ভব না। তবে মানুষের জীবনযাপনে অদ্ভুত কিছু ভাবনা আসে। মহাভারতে ধর্ম যুধিষ্ঠিরকে জিজ্ঞেস করেছিল, পৃথিবীতে সবচেয়ে আশ্চর্য জিনিস কী? যুধিষ্ঠির বলেছিলেন, মৃত্যু অবধারিত জেনেও মানুষ এমনভাবে জীবন যাপন করে যেন সে মৃত্যুহীন। কিন্তু এই অমরত্ব তো লাভ করা সম্ভব না, এর জন্য আমার আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে, কিন্তু এই প্রত্যাশা কখনো পূরণ হবে না, কখনোই না। 'আচ্ছা মানুষ কি সত্যি সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব? ---হুমায়ুন ফরীদি.
"আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আছে যে আমরা হচ্ছি সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। কিন্তু কোথায়, কোথায় আমরা শ্রেষ্ঠ? আমরাতো শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করতে পারি না। আমাদের দেশের যিনি নোবেল পুরস্কার পেলেন তাকে আমরা অপমান করি। কল্পনা করা যায়?"
Click This Link
তার একটা সামপ্রতিক লেখা থেকে উপরের উদ্ধৃতি টি দিলাম । মেধাবি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি [জন্ম : ১৯৫২ সালের ২৯ মে, ভোর ৫টা ৩০ মিনিট মৃত্যু ; ১৩ ফেব্রু ২০১২] তার অসামান্য অবদান রেখে গেলেন । বৈচিত্রময় বিভিন্ন চরিত্রতে তিনি ছিলেন অপ্রতিদন্দী অভিনেতা । কান কাটা রমজান ... আহ ... । পড়াশুনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে।
বড় আক্ষেপ নিয়ে চলে গেলেন কি তিনি ????
" আমার এক বন্ধু চলে গেছে বিদেশে। আমি তাকে বললাম, মুক্তিযোদ্ধা হয়ে তুই দেশ ছেড়ে চলে গেলি! ও আমাকে অদ্ভুদ একটা কথা বলেছিলো। ও বললো, এই দেশটার জন্য যুদ্ধ করি নাই, বন্ধু। যেই দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম সেটা এই দেশ না। এই দেশটা কুৎসিত হয়ে গেছে, এই দেশটা বেঁচে থাকার জন্য অমানবিক এবং বিশ্রী। এরকম অসভ্য একটা পরিবেশে আমি কেন থাকবো? আমি তো সভ্য মানুষ।"
কান কাটা রমজান কে মনে পরে । কি দুর্দান্ত অভিনেতা ছিলেন । যোগ্য সম্মান এই জাতি কাওকেই কোন দিন দিতে পারে নি জীবিত অবস্থায় । জীবনের ৫৯টি বসন্ত পেরিয়ে এলেও তিনি যেন চিরতরুণ। টিভি নাটকে তিনি প্রথম অভিনয় করেন আতিকুল হক চৌধুরীর প্রযোজনায় ‘নিখোঁজ সংবাদ’-এ। তিনি হেমন্ত নামের একটি ধারাবাহিক নাটকে নির্দেশনা দেন ।
ফরীদির অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে:
নাটক ঃ
*নীল নকশাল সন্ধানে (১৯৮২),
* দূরবীন দিয়ে দেখুন (১৯৮২),
*ভাঙ্গনের শব্দ শুনি (১৯৮৩),
* ভবের হাট (২০০৭),
*শৃঙ্খল (২০১০)
* হঠাৎ একদিন (১৯৮৬)
* পাথর সময় (১৯৮৯ )
* সংশপ্তক (১৯৮৭-৮৮)
* সমূদ্রে গাংচিল (১৯৯৩ )
* কাছের মানুষ (২০০৬ )
* মোহনা (২০০৬ )
* বকুল পুর কতদুর (১৯৮৫)
* মহুয়ার মন (১৯৮৬)
* সাত আসমানের শিড়ি (১৯৮৬)
* চান্ মিয়ার নেগেটিভ পজেটিভ (১৯৮৬)
* দুই ভাই (১৯৯১)
* শীতের পাখি (১৯৯১)
* কোথাও কেও নেই (১৯৯০)
* তিনি একজন (২০০৫ )
* ভবের হাট (২০০৭ )
* শৃংখল (২০১০ )
সিনেমা তো বলে শেষ করতে পারব না । জাতীয় পুরস্কার সহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছিলেন ।
সিনেমা ঃ
* হুলিয়া
* দহন
* সন্ত্রাস
* ব্যাচেলর
* জয়যাত্রা
* শ্যামলছায়া
* বহুব্রীহি
* একাত্তরের যিশু
* মায়ের মর্যাদা
* আহা
* মাতৃত্ব, ভণ্ড
* বিশ্বপ্রেমিক
* পালাবি কোথায়
মঞ্চ নাটক ;
* মুনতাসির ফ্যান্টাসি
* কির্তনখোলা
* কেরামত মঙ্গল
একটা তার সাক্ষাতকার এর লিঙ্ক দিলাম, আমার আমি তে আসছিলেন ।।
Click This Link
আমার একটা কবিতার কয়েকটা লাইন তার জন্য যা বেশী সত্য
শত পংকিলতার মাঝে তুমি
জ্বালিয়েছিলে যে আগুন,
তার জন্য সারারাত আমি শুকনো
পাতা কুড়িয়েছি , তার শিখা গুলোকে
আরো উজ্জ্বল করার জন্যে ।
“ এখন প্রস্থান নয়, এখন জাগার
সময়, জাগানোর সময় “
এরকম-ই তুমি বলতে ।
যেখানে তোমাকে সমাহিত করা হবে
সেখানে কোন ফুলের গাছ ফুল ফুটাবে কিনা
আমার জানা নেই ।
ফুটালেও সৌরভ ছড়াবে কিনা জানা নেই।
কিন্তু দেশের মানুষকে তুমি সুরোভিত করেছিলে
দেশের মানুষ তাকে ভালবেসেছিলো...
দেশের মানুষ সেদিন কেদেঁছিলো।।
ফুল সৌরভ ছড়াক বা নাই ছড়াক কিন্তু
তিনি সুরোভিত ছিলেন।
মেঘ যায় , মেঘ আসে
আমি বিমর্ষ তাকিয়ে রই
নতুন কোন হুমায়ুন ফরীদি জন্যে ।।
১৩ ফেব্রুয়ারী , ২০১২
পতেঙ্গা , চট্রগ্রাম
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:০১