সালটা সম্ভবত ২০০৮; একটি মুভি দেখেছিলাম তখন; মুভিটা অসাধারণ কিছু ছিলনা কিন্তু মুভিতে দেখানো কিছু দৃশ্য কিছুটা দৃষ্টিকটু লেগেছিল আমার কাছে। মুভির নাম ছিল The Last Temptation of Christ। যীশুর জীবনী নিয়ে করা একটি মুভি; কিন্তু যেভাবে মগ্দলিনী মরিয়মের সাথে যীশুর একান্ত গোপন যৌনক্রিয়ার দৃশ্য দেখানো হয়েছিলো তাতে যতটা বিশৃঙ্খলা হওয়ার কথা ছিল তার কিছুই হয়নি শুনে বেশ অবাক হয়েছিলাম তখন। মুভিটিতে খৃস্ট অনুসারীদের অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার মতন অনেক কিছুই ছিল; কিন্তু কেউ মুভিটিকে তেমন আমলে নিয়েছিলো বলে মনে হয়না।
কিন্তু ইসলামের নবীর যৌনজীবন নিয়ে এমন একটা দৃশ্য কেউ তৈরি করলে তার কি হত চিন্তা করুন।
চিন্তা না করাই ভালো; সহ্য করতে পারবেন না সেই কল্পনা।
কেবল প্রশ্ন করেই রায়হান রাহী এবং উল্লাস দাস এখন হাজতে।
একই মূল অর্থাৎ মগ্দলিনী মরিয়মের সাথে যীশুর প্রেম বিবাহ নিয়ে আমার সবচাইতে প্রিয় থ্রিলার উপন্যাস "দি ডা ভিঞ্ছি কোড" লেখা হয়েছিলো।
খৃস্ট অনুসারীদের প্রচলিত বিশ্বাসের পরিপন্থী হলেও বইটি নিজ গুনেই বেস্ট সেলার হয়েছিলো বারবার; অনেক গুলো দেশে অনেক গুলো ভাষায়। কেউ কোনদিন বইটি নিষিদ্ধ করার দাবী করেছিল বলে শুনিনি।
আরেকটি মুভির কথা মনে আসছে; নাম । যীশুকে পচিয়ে এর চাইতে মজার মুভি আমি আর আগে দেখিনি কোন। মেকিং যতই খারাপ হোক অন্তত "ইনোসেন্স অব মুসলিমস" এর মেকিং থেকে হাজার গুণ উন্নত ছিল মুভিটি; IDM রেটিং দেখুন ৮.২। কিন্তু মুভিটি নিয়ে তেমন হইচই হয়নি; ১৯৭৯ সালে বানানো মুভিটির মূল চরিত্র যদি "ইনোসেন্স অব মুসলিমস" এর মূল চরিত্র নিয়ে হত তবে কত হাজার হাজার প্রান যেত ভেবেই ভয় লাগে।
এত ভূমিকা কেন বলছি তার কারন এখন বলি।
আমি মনে করি ধর্ম অনুভূতি আর সাহিত্য, শিল্পকে আলাদা করে দেখার যে নজির উপরে উল্লেখিত সাহিত্য এবং চলচিত্রে আমরা দেখেছি সেটাই সব ধর্মের অনুসারীদের কাছে কাম্য।
কিন্তু আর যেখানে যা হোক মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোতে দৃশ্যটি ভিন্ন।
বাংলাদেশে ধর্মানুভুতি ৫৭ ধারার বাতাসে পেয়াছে এক নতুন মাত্রা।
এবার আসুন ফারাবিদের ধর্মানুভুতির মুলা নিয়ে একটু আলোচনা করি।
কি এই ধর্ম অবমাননা???
মূলত “অন্য ধর্মের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত লাগে এমন কিছু বলা বা করাই হল ধর্ম অবমাননা”।
অন্তত বাংলাদেশে ধর্ম অবমাননা বলতে যে শুধু ইসলাম ধর্ম অবমাননাই বোঝায় তা বুঝতে কেমব্রিজে যাওয়া লাগেনা। তখন মনে প্রশ্ন জাগে, তবে মুসলিমদের হাতে মন্দির, গির্জা ও বুদ্ধ মন্দিরে হামলা আর মূর্তি ও পবিত্র গ্রন্থে অগ্নিসংযোগ ও পদদলিত করা কি হিন্দু, বুদ্ধ ও খ্রিস্টানদের ধর্ম অবমাননা নয়???
ওই চ্যাপটার বাদ দেই, কেননা ওই কথা বললে অনেকেই বলবে “উহা ইসলাম নহে, বিপদগামী নাফরমানদের আপনি মুসলিমদের স্ট্যান্ডার্ড ধরতে পারেন না”। ওকে, তবে প্রতি বছর উৎসব করে হিন্দুদের পূজার প্রাণী, যাকে তারা মা বলে ডাকে সেই গরুকে রাস্তায় জবাই দেয়া কি হিন্দুদের ধর্মানুভুতিতে আঘাত নয়???
এখন কল্পনা করুন, বাংলার হিন্দুরা যদি এখন রাস্তায় শূয়র জবাই দিয়ে অনুষ্ঠান পালন শুরু করে তবে কি বাংলার মুসলিমরা সেটাকে গরু জবাইয়ের উৎসবের মতন সাধারণ ভাবে নেবে ??? কিন্তু তুলনা করলে মুসলিমদের কাছে শুয়োরের মাংস যতটা ঘৃণার ততটাই হিন্দুদের কাছে গরুর মাংস ঘৃণার। ধর্মে আঘাত কি তবে শুধু মুসলিমদের একার লাগে ???
কিছুদিন আগে আমার ফেসবুকের এক পোষ্টে আমি বলেছিলাম “হিন্দুদের কাছে গঙ্গার পানি যতটা পবিত্র, জমজম কূপের পানি মুসলিমদের কাছে ঠিক ততটাই পবিত্র”। সেই পোষ্টে কিছু ইসলাম প্রেমী আমার এই কথার বিরোধিতা করেছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন পিএইচডি স্টুডেন্ট তমা। সেই পোষ্টে তিনি পারলে আমাকে খুন করতেন। তার কথা হল “আপনি পবিত্র জমজমের পানির সাথে গঙ্গার গুয়ের পানির তুলনা করে জমজম, ইসলাম ও মুসলিমদের অপমান করেছেন”। আমি অনেক ভাবে বুঝিয়েও তাকে এটা বোঝাতে পারিনি যে আমি যা বললাম তা অপেক্ষা আপনি যা বললেন তাতে ধর্ম অবমাননা ও বিশ্বাসে আঘাত বেশী দেয়া হয়েছে। আমি জমজম আর গঙ্গার পানির ধর্মীয় বিশ্বাসের দৃষ্টিতে সমতুল্য তুলনা করেছি মাত্র, আর আপনি হিন্দুদের পবিত্র গঙ্গাকে গুয়ের পানি বলেছেন।
সেদিন বেশ ভালভাবেই বুঝেছিলাম ধর্মানুভুতি নামক মূলো কেবল মুসলিমদের নাকের সামনেই ঝোলে। তাদের কাছে ইসলামের অপমানই শুধু অপমান, কিন্তু তারা টিনের চশমা পড়ে প্রতিনিয়ত অন্য ধর্মকে হেও করে যাচ্ছেন।
তাহলে ধর্ম অবমাননা আসলে কি???
আমার নিজস্ব বক্তব্য হল “ধর্ম অবমাননার শিক্ষা আস্তিকরা জন্ম সুত্রেই পায় আর সে সারাজীবন নিজ ধর্ম পালনের সাথে সাথে অন্য ধর্ম গুলোকে প্রতিনিয়ত অবমাননা করে যায়। ধর্ম অবমাননা না করে নাস্তিক হওয়া যায় কিন্তু আস্তিক হওয়া যায় না। একটি ধর্মতে বিশ্বাস স্থাপন মানে অন্য সকল ধর্মকে মিথ্যা ও বানোয়াট হিসেবে বিশ্বাস করা। এটাই মূলত ধর্ম অবমাননার বীজ। কিন্তু ধর্মের কু শিক্ষা তাদের অন্ধ করে রাখে। বিবেককে করে রাখে স্তব্ধ। তাই তারা নিজ ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মের অসম্মানকে অসম্মান হিসেবেই গণ্য করেন না”।
নিজ ধর্মকে শ্রেষ্ঠ প্রমান করতে অন্য ধর্মগুলোকে ভুয়া প্রমান করতে হবে এটাই স্বাভাবিক। তাইতো খ্রিস্টানরা বলে মুহাম্মদ ভণ্ড নবী আর কোরআন তার নিজের লেখা, মুসলিমরা বলে বাইবেল বিকৃত হয়ে গিয়েছে। এটা তাদের তার মত প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই বলতে হবে। এটা কি তবে ধর্ম অবমাননা হবে না? এখন তবে প্রশ্ন হল, উপরের কথা দুটো যদি ধর্ম অবমাননা না হয় তবে নাস্তিকরা তাদের মত প্রকাশ করলে অর্থাৎ “ঈশ্বর মানব সৃষ্টি করেননি, ঈশ্বরকে মানুষ সৃষ্টি করেছে এবং তাই সকল ধর্মই মানব সৃষ্ট” ধর্ম অবমাননা হবে কেন ???
সব তালগাছ আস্তিকদের কেন ???
আমাকে মাসে শতবার যে কথাটি শুনতে হয় তা হল “তুমি খ্রিস্টান, তুমি নিজ ধর্ম নিয়া থাকো। ইসলামের পিছে লাগো কেন???” তারা যদিও জানে আমি জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই মুক্তমনা, কিন্তু যুক্তি প্রমানে না পারলেই কেবল শেষে এই কথাটি বলে। তখন এমন একটা ভাব যেন যে যেই পরিবারে জন্মায় সে সেই ধর্মের বাইরে যেতে পারবে না। তখন আমি প্রশ্ন করি “তবে তো যীশু ইহুদী আর মুহাম্মদ হিন্দু, তারা কিভাবে খ্রিস্টান বা মুসলিম হলেন ??? তখন তারা বলে “মুহাম্মদ কোনদিন হিন্দু রীতি নীতি পালন করেন নাই, তাই হিন্দু ঘরে জন্মাইলেও সে হিন্দু ছিলেন না”। কিন্তু যখন আমি বলি, “আমিও কোনদিন খ্রিস্টান রীতি নীতি পালন করিনি; তবে আমাকে কেন খ্রিস্টান বলো”??? তখন উত্তর “এতো বাইড়ো না, নিজেকে নবীদের সাথে তুলনা করো না”।
শেষমেষ যা বুঝলাম তা হল, আস্তিক হয়ে অন্য আস্তিকের বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন করলে সেটা ধর্ম অবমাননা হয় না। নাস্তিক হয়ে প্রশ্ন করলেই কেবল ধর্ম অবমাননা ও ধর্মানুভুতিতে আঘাত দেয়া হয়। কেননা নয়তো জাকির নায়েক অন্য ধর্মকে খোঁচানোর দায়ে উপমহাদেশের সবচাইতে বড় ধর্ম অবমাননাকারী সাব্যস্ত হতেন। এখন আস্তিকদের প্রশ্ন তাই আস্তিক হয়ে করাই ভালো।
ধরি; আজ এই পোস্টে আমি একজন খ্রিস্টান, এবং এই লেখায় খ্রিস্টানদের প্রতিনিধি। আমার ধর্মকে অবমাননার জন্য আমি এখানে ফারাবিদের কাছে প্রশ্ন করতে এসেছি।
আগে খ্রিস্টান ধর্মের মূল কিছু বিশ্বাস সম্পর্কে জেনে নেই যা ইসলাম সরাসরি বিরোধিতা করে।
# খ্রিস্টানরা বলে বাইবেল ঈশ্বরের বানী (২ তীমথিও ৩:১৬-১৭), যা পরিবর্তন কোনদিন হবেনা। ঈশ্বর এর রক্ষক (দানিয়েল ১২:৯)। আর ইসলাম বলে বাইবেল বিকৃত হয়ে গিয়েছে, উহা সাধারণ মানুষের লেখা (সূরা বাকারা-৭৫ ও ৭৯, সূরা মায়িদা-৪১)।
= কথাটা ততটাই খ্রিস্টানদের ধর্মানুভুতিতে আঘাত দেয় যতটা এই কথা বললে লাগবে “কোরআন মুহাম্মদ নিজে লিখেছেন”।
# খ্রিস্টানরা বলে যীশু ঈশ্বর পুত্র (যোহন ৩:১৬) ও ৩ ঈশ্বরের ১ ঈশ্বর যা মুসলিমরা শুনলেই নাউজুবিল্লাহ বলে ওঠেন (কোরআন ৪:১৭১)।
=মুসলিমদের যীশুকে ঈশ্বর পুত্র নয় বরং সাধারণ মানুষ বলা খ্রিস্টানদের ধর্মানুভুতিতে আঘাত।
# খ্রিস্টানদের প্রধার ধর্মীয় বিশ্বাস হল “খ্রিস্ট যদি উত্থাপিত না হইয়া থাকেন , তাহা হইলে তো আমাদের প্রচারও বৃথা, তোমাদের বিশ্বাসও বৃথা (১ করিন্থীয় ১৫:১৪)”। বাইবেলের ১ করিন্থীয় ১৫ তম অধ্যায় পড়লেই আপনি খ্রিস্ট ধর্মের মূল নীতি সম্পর্কে জানতে পারবেন। খ্রিস্টের মৃত্যু ও পুনুরুত্থানে বিশ্বাস এনে সকল পাপ হতে মুক্তিই হল মূলত খ্রিস্টধর্মের কলেমা।
=কিন্তু মুসলিমরা এই কথায় অবিশ্বাস করে (আন নেসা ১৫৭)। খ্রিস্টের মৃত্যু ও পুনুরুত্থানকে মিথ্যা বলা মানে হল সম্পূর্ণ খ্রিস্ট ধর্মকে মিথ্যা বলা। কথাটা ততটাই খারাপ যতটা খারাপ এই কথাটা বলা যে “মুহাম্মদ ভণ্ড নবী অর্থাৎ ইসলাম ভুয়া”।
এখন খ্রিস্টানরা যদি দিনে ৫ বার বলে “মুহাম্মদ ভণ্ড নবী, কোরআন মুহাম্মদ নিজে লিখেছেন” সেটা কি ইসলাম ধর্ম অবমাননা হবে ??? কেন হবে ??? মুসলিমরা বললে যদি খ্রিস্টানদের ধর্ম অবমাননা না হয় তবে খ্রিস্টানরা বললে কেন মুসলিমদের ধর্ম অবমাননা হবে ???
প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ নামাজ পড়ে। আর নামাজে উপরে উল্লেখিত আয়াত গুলো কোরআন থেকে পাঠ করে খ্রিস্টানদের ধর্মকে ভুয়া বলে গালি দেয় । ব্লগে যত মানুষ ধর্মকে (পড়ুন মুসলিমদের) নিয়ে কথা বলে ধর্ম অবমাননা (!!!) করে; তার থেকে শুধু আমাদের এই ঢাকাতেই হাজার গুন বেশী মুসলমান অন্য ধর্ম অবমাননা করে। তাহলে চিন্তা করুন সারা পৃথিবীতে খ্রিস্টান ধর্ম অবমাননাকারী মুসলিমের সংখ্যা কত হবে??? ধর্ম অবমাননার জন্য যদি কোন ব্লগকে নিষিদ্ধ করা হয় তবে হাজার বছর আগেই কোরআন নিষিদ্ধ করার দরকার ছিল। ব্লগারদের যদি ফাঁসি দাবী করা হয় তবে কোরআন যারা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়েছে তাদের কি করা উচিৎ ছিল ???
এতো কথার পরে যেটা আমার শেষ কথা সেটা হল “নাস্তিক ব্লগারদের সসম্মানে মুক্তি চাই"। সকলের নিজ মতামত অন্যকে জানানোর অধিকার আছে। আপনার ভালো না লাগলে পড়বেন না। নাস্তিকরা কোন বিশ্বাসে নয় বরং বিজ্ঞান ও যুক্তিতে আস্থাশীল। তাই আস্তিকদের অপেক্ষা নাস্তিকেরা উন্নত শ্রেণীর প্রানিদের মধ্যে গণ্য। ব্লগ ও ব্লগার নিষিদ্ধ করার আগে ধর্মগ্রন্থ নিষিদ্ধ বেশী জরুরী, কেননা ধর্ম অবমাননার বীজ ধর্মগ্রন্থেই নিহিত”। হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন “অন্যকে নিজের ধর্মের প্রতি সম্মান করতে বলার আগে ভেবে দেখা উচিৎ আসলে আপনার ধর্ম কতটা সম্মান পাওয়ার যোগ্য”।
শুধু নিজের বিশ্বাসকেই হেফাজত নয় বরং সকল বিশ্বাসকে হেফাজত করুন।
কাল নামাজে সূরা পাঠের সময় খেয়াল রাখবেন “কোন ধর্ম অবমাননা করছেন না তো???”।
############################################################
ফারাবিরা এবার যে কথাটি বলবে সেটা হলঃ ৯০% মুসলমানের দেশে বসবাস করে ইসলাম অবমাননা করার সাহস আপনারা পান কই-
জি খুব ভালো একটা যুক্তি দিয়েছেন। মুসলিমরা যেহেতু বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ তাই ইসলাম নিয়ে কিছু বলা অবশ্যই অপরাধ।
আমি আপনাদের সাথে সম্পূর্ণ একমত।
কিন্তু! কিন্তু!! কিন্তু!!!
কিছু কথা থেকে যায়
বাংলাদেশে না হয় মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ তাই তারা মাতুব্বুরি ফলাচ্ছে; কিন্তু সাড়া বিশ্বে কিন্তু মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়।
এমনকি একক ভাবে শুধু রোমান ক্যাথলিক থেকেও মুসলমানদের সংখ্যা কম। তবে ফারাবিদের এত লাফালাফি কিসের???
তাদের মতন করে বলতে হয়; "পৃথিবীতে সংখ্যালঘু হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ খৃষ্টানদের ধর্ম এবং বাইবেল নিয়ে কটূক্তি করার সাহস তারা পায় কোথায়???
সংখ্যালগু হলে যদি সংখ্যাগরিষ্ঠদের ধর্ম নিয়ে কথা বলা অন্যায় হয় তবে আজকেই পৃথিবী থেকে কোরআন নিষিদ্ধ করা হোক!!!
খৃষ্টানদের বাইবেল এবং বিশ্বাসকে নিয়ে কটূক্তি করে খৃষ্টানদের ধর্মানুভুতিতে আঘাত দেয়ার অপরাধে জোকার নালায়েক সহ সকল ফারাবিদের ৫৭ ধারায় বিচার চাই এবং পৃথিবী থেকে কোরআন নিষিদ্ধ চাই!!!
ফারাবিদের যুক্তির বাইরে কিছু বললাম কি???
############################################################
যেহেতু আজকের এই পোস্টে আমি খৃষ্টানদের প্রতিনিধি তাই বাইবেল থেকে ফারাবিদের বংশপরিচয়টা দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছি।
বাইবেলে মুসলমানদের সম্পর্কে মুহাম্মদ জন্মের ৩-৪ হাজার বছর আগেই মুসলমানদের স্বভাব সম্পর্কে নিখুঁত বর্ণনা দেয়া হয়েছে।
আসুন দেখি, বাইবেলে কী লেখা আছে:
আদিপুস্তক ১৬, অধ্যায় ১২ পদ-
"ইসমাইল স্বাধীন এবং উদ্দাম হবে যেমন উদ্দাম হয় বন্য গাধা। সে সবার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে এবং সবাই হবে তার প্রতিপক্ষ। সে স্থান থেকে স্থানান্তরে ঘুরে বেড়াবে এবং ভাইদের বসতির কাছে তাঁবু গাড়বে"।
মোহাম্মদ যে ইসমাইলের বংশধর ছিলেন এবং মুসলমানদের যে ইসমাইলের বংশধর বলা হয়, সেটা, সম্ভবত, কারো অজানা নয়। মানে বাইবেল অনুযায়ী মুসলমানেরা বন্য গাধার স্বভাবের ইসমাইলের বংশধর - মানে আরও উৎকৃষ্ট (!!!) স্বভাবের বন্য গাধা বলা হয়েছে। আর ফারাবি গং সেই বন্য গাধাদের মধ্যে সম্ভবত বাংলাদেশের সবচাইতে উৎকৃষ্ট মানের বন্য গাধার পাল।
এখন আসুন দেখি বন্য গাধারা স্বভাবে কেমন হয়; এবং তাদের সঙ্গে ফারাবিদের সত্যিই মিল আছে কি নাঃ
# বন্য গাধা হয় অবাধ্য; যেখানে যায়, সেখানেই গ্যাঞ্জাম লাগায়।
# বন্য গাধা অযথা কর্কশ কণ্ঠে ডাকাডাকি করে।
# অকারণে আক্রমন করে; অল্পতেই রেগে উঠে লাথি ঝাড়ে।
# অন্য প্রাণীরা এদের তাড়িয়ে দেয় অযথা উৎপাত করে বলে।
# সারাদিন যাবর কাটে তসবি গোনার ধাঁচে।
# বন্য গাধা অন্য গাধার সঙ্গীকে ধর্ষণ করে।
আরও কোন বৈশিষ্ট্য আছে কি?...
আপনাদের কী মনে হয়, বাইবেলের ভবিষ্যৎবাণী কি সঠিক প্রমাণিত হয়েছে?
ফারাবিদের বন্য গাধা বলায় তাদের অনুভূতিতে লাগলো কি??? কিন্তু লাগার তো কথা না :/
১) “নিশ্চয়ই সমস্ত প্রাণীর মাঝে আল্লাহ তায়ালার নিকট কাফিরেরাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যারা ঈমান আনেনি।” (সূরা আনফাল- ৫৫)
২) নিশ্চয়ই মুশরিকরা নাপাক বা অপবিত্র। (সূরা-তাওবাহ, আয়াত : ২৮)
৩) নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফিরদের শত্রু (সূরা বাকারার : ৯৮)
৪) ‘তোমরা (মুসলমানরা) তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে প্রথমতঃ ইহুদীদেরকে অতঃপর মুশরিকদেরকে।’ (সূরা মায়িদা: ৮২)
৫) “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করোনা। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” (সূরা মায়িদা-৫১)
৬) “মু’মিনগণ যেন মু’মিনগণ ব্যতীত কাফেরদিগকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যে কেউ এরূপ করবে তার সাথে আল্লাহ’র কোন সম্পর্ক থাকবে না ”(সূরা আল ইমরান: ২৮)
৭) হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার শত্রু এবং তোমাদের শত্রুকে ভক্তি বা শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে গ্রহণ করোনা।” (সূরা মুমতাহিনা-১)
এগুলো তো পরধর্ম বিদ্বেষ নয় তাইনা??? কোরআন পাঠ করে এবং তাতে বিশ্বাস করে ইহুদী-খৃস্টানরা নাপাক-নরকের কীট-অমুক-তমুক গালি এবং সম্বোধন দিলে সেটা যদি ধর্ম বিদ্বেষ না হয়; তাদের বিশ্বাসকে এবং ধর্ম গ্রন্থকে ভুয়া, বিকৃত হয়ে গিয়েছে বলা যদি ধর্মামানুভুতিতে আঘাত না হয়ে থাকে তবে আমি বাইবেল থেকে পড়ে বাইবেলে বিশ্বাস করে ফারাবিদের বা মুসলমানদের যদি বন্য গাধার বংশধর বলি তবে আমি দোষী হবে কেন???
আইন সবার জন্য সমান হওয়ার কথা।
তাই কোরআন পড়ে ইহুদী নাসারাদের অনুভূতিতে আঘাত দেয়া যদি ৫৭ ধারা অনুযায়ী অপরাধ না হয়ে থাকে তবে বাইবেল পড়ে মুসলমানদের বন্য গাধার বংশধর বলাও অপরাধ হওয়ার কথা নয়।
কোরআন পড়ে ইসলাম ছাড়া অন্য সকল ধর্মকে ভুয়া বলা যদি ৫৭ ধারা অনুযায়ী অপরাধ না হয়ে থাকে তবে একজন নাস্তিক সাথে ধর্মে বিশ্বাসী হিসেবে সকল ধর্মকে ভুয়া বলা কোন অপরাধ হতে পারেনা। কারন “পাস্তাফারিয়ানিজম” ধর্মের ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী যে কোন ধর্মকে নিয়া অবাধ আলোচনার সাথে প্যারোডি করার অধিকার আমার আছে ।
মুক্তমনা ব্লগে আমার “পাস্তাফারিয়ানিজম” নিয়ে লেখাটিতে ধর্মটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আশা করি।
লেখাটির লিঙ্কঃ http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=40525
এই ব্লগে এইটাই সম্ভবত আমার শেষ লেখা।
মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অপরাধে বারবার আমি ব্যান খাচ্ছি।
সামু অথরিটির কাছেও উপরের প্রশ্ন গুলো রাখলাম।
ইসলামকে নিয়ে লিখে যদি আমরা ব্যান খাই তাহলে এই ব্লগে পরধর্মবিদ্বেষী এবং পরধর্মনিন্দা করে যেসব মুমিন (!!!) সমানে অন্য ধর্মের লোকদের অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে (নাস্তিকদের নাস্তিকানুভুতি তে আঘাত সহ) লিখে যাচ্ছে তাদের জন্যও সামুর আইন সমান হওয়া উচিৎ।
ভেবে দেখবেন।
বিদায় সবাইকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:২৪