somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাদক ও চলমান মাদক বিরোধী অভিযান

২৭ শে মে, ২০১৮ দুপুর ২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত ১৫ মে সরকার মাদকের নিয়ন্ত্রণে নতুন এক অভিযান শুরু করেছে। মাননীয় মন্ত্রীবর্গ এবং পুলিস ও র‌্যাবের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একে মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের "জিরো টোলারেন্স" নীতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মাদকের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি এরপূর্বে এহেন কঠোর অভিযান প্রত্যক্ষ করে নি। এ অভিযান আসলেই নজিরবিহীন। গত ১২ দিনে, আজ পর্যন্ত র‌্যাব-পুলিসের মাদক বিরোধী অভিযানে মোট ৭৪ জন নিহত হয়েছে (সূত্রঃ দৈনিক পত্রিকা)।

ছোটবেলায় আমরা শুনতাম বিড়ি-সিগারেটের সাথে মদ, গাঁজা, ডাইল (ফেন্সিডিল), হেরোইন এসব মাদকের নাম। এরপর বিভিন্ন ঘুমের ওষুধ ও কিছু ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মাদকের তীব্রতা। বেশ কয়েক বছর আগে আমার এলাকার এক ভাই, যিনি কিনা মাদকের সাথে জড়িয়ে গিয়েছিলেন, তাকে দেখেছিলাম গঞ্জিকা কিনে নিচ্ছে এক বস্তির পাশে এক অতি শুকনো (সেও নেশা করে শেষ হয়ে গিয়েছে আরকি!) ব্যক্তির কাছ থেকে। কিনে আবার তার সাথেই এক সাথে খাচ্ছে !! এতটাই দিলদড়িয়া এরা।

অল্পপুঁজিতে শুধু একটু রিস্ক নিয়ে সহজেই এ পেশায় জড়ানো যায় এবং লাভ কয়েকশো গুহন। আমার এক আত্মীয়ের বাড়ির পাশে এক লোক সম্পর্কে শুনেছিলাম। লোকটি এমন গাঁজা-হেরোইন বিক্রি করে খুব ফুলে-ফেঁপে উঠেছিল। কিন্তু সেও নেশায় জড়িয়ে যেয়ে অকালে পঙ্গু। এরপর তার স্ত্রী তার ব্যবসা হাতে তুলে নেয়। মহিলা তার স্বামীর মতন নেশায় পড়ে নি কিন্তু। সে আরও সফল ব্যবসায়ী হয়ে ওঠে !!

কিন্তু ইদানিং যেটা সবচেয়ে দৃষ্যমান বাবা (ইয়াবা)। আমি আমার চোখের সামনে এইদ্রব্য বিকিকিনি হতে দেখেছি। এতটাই প্রকাশ্যে এর কেনাবেঁচা চলে। তাও বিক্রেতা এক অতিকায় (অ)ভদ্রমহিলা! তিনি তার ভাড়া বাড়িতে বসেই বিক্রি করতেন। আবার রাস্তায়ও উনি প্রকাশ্য দিবালোকে ইয়াবা বড়ি বেঁচতেন। আর কিনছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে থেকে মাঝবয়েসী অনেকে। সবাই জানে কিন্তু কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। কারণ মহিলার পেছনে এলাকার গুন্ডা-বদমাশরা জড়িত।

বেশ কয়েকবার পুলিসের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচলেও মাসখানেক ধরে ঐ মহিলা কারাবন্দী অবশেষে। কিন্তু একজন গেলো, ঐদিকে আরেকজন হাল ধরবে। ইয়াবা/মাদক বিক্রী বন্ধ হয় না। আর নতুন নতুন কাস্টোমারও জুটে যায়।

মাদকের নেশায় দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষিত ছেলে-মেয়ে থেকে, একেবারে মূর্খও জড়িয়ে যাচ্ছে। গুলশানের শতকোটি টাকার বাড়িতেও মাদকে, বস্তির ভাঙা বেড়ার ফাঁকেও মাদক। এতটাই বিস্তার এর। ধর্ম ও সামাজিকতার কোথায় মাদকের স্থান নেই আমাদের। তারপরও এর বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না।

গাঁজা-হেরোইন-ফেন্সিডিলের চেয়ে ইয়াবা নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সোজা। কেননা এর আমদানি পথ একটি- মিয়ানমার বিমুখী। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা বা অনীহায় এটা হয় নি। সরকারের উচ্চস্তর ইদানিং এতটা সোচ্চার হওয়ায় আমরা সাধারণ জনগণ যারপণাই খুশি। যখন দেখবেন আপনার বাড়ির সামনের রাস্তায় দাড়িয়েই মাদক কেনেবেঁচা চলছে, আপনার পরিজন আপনার অযান্তই যে তাতে জড়িয়ে পড়বে না, সে নিশ্চয়তা কোথায়?

আমি আমার কাছ থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অভিযানে সম্পূর্ণ সমর্থণ জানাচ্ছি। পুলিসের ভাষায় ক্রস-ফায়ারে হাজার কয়েক মাদক ব্যবসায়ী মরে যেয়ে যদি কোটি মানুষের সমাজে শান্তি আসে তো সমস্যা কোথায়? সব মাদক ব্যবসায়ীই পুলিসের হাতে ধরা খেয়ে জেলে খেটে ঠিকই কয়েক মাস পর আদালতের আইনের ফাঁক গলে বের হয়ে এসে আবার পুরনো পেশায় জড়িয়ে যায়। এরচেয়ে চিরতরে মরে যাওয়াই ভালো। এত করে শখের ও ছোট ব্যবসায়ীরা সাহস পাবে না নতুন করে এ পেশায় জড়াতে। যতক্ষণ ক্রস-ফায়ার নামক নাটক কোন ভালো মানুষের উপর প্রয়োগ না করা হয়, ততক্ষণ এর বিরুদ্ধে জনগণের কোনো অনীহা থাকার কথা ন। শুনতে খারাপ শোনালেও এটাই এখন সর্বোত্তম পন্থা। স্বাভাবিক নিয়মে তো অনেক বছর দেখা হলো।

এখন দেখতে হবে সরকার যাতে ছোট ছোট মাদকবিক্রেতার সাথে যতগুলো বড় নাম আসে, সবার ক্ষেত্রেই সমান ব্যবস্থা নেন। গডফাদার মুক্ত করতে না পারলে তৃণমূল গজাতেই থাকবে। মাথাগুলো ধ্বংস করতে হবে। মাদকের সাথে জড়িত ব্যবসায়ী, সুবিধাভোগী সরকারী লোক সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এবারের অভিযানেই সব করতে হবে। নইলে পরেরবার এরা নতুনরূপে তৈরি হয়ে নেবে। অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স কম্প্লিট করতে হয়।

বর্তমানে কিছু সুশীল ও মানবাধিকার সংগঠনের কথা শুনে আমি ভেবে পাই না- এদের কি খেয়েদেয়ে কোন কাজ নেই। এসব নাকি বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নাকি ঠিক না! প্রথমে অবাক হয়েছিলাম। পরে মনে পড়লো এরাও তো মাদকের বড় ক্রেতা। গুলশান-বনানীর সুশীল সমাজ। এদের বাড়িতে পুরোপরিবার নিয়ে আখড়া বসে বিদেসী স্টাইলে।

সুশীলদের কথায় একটা জিনিসই মাথায় আসলো, এদের হয় গাঁজার নেশায় বুঁদ থাকেন, নয়তো এদের বাবা খেয়ে হুশ থাকে না। শুধু শুধু লাফানোই এদের কাজ। আসল জিনিসে চুপ থেকে এসব জায়গায় অযথাই লাফায়।

আশা করি জঙ্গী দমনের মতোই সরকার মাদক দমনেও সাফল্য পাবে এবার।


সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৮ দুপুর ২:০৪
১৫টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×