গত ১৫ মে সরকার মাদকের নিয়ন্ত্রণে নতুন এক অভিযান শুরু করেছে। মাননীয় মন্ত্রীবর্গ এবং পুলিস ও র্যাবের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একে মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের "জিরো টোলারেন্স" নীতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মাদকের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি এরপূর্বে এহেন কঠোর অভিযান প্রত্যক্ষ করে নি। এ অভিযান আসলেই নজিরবিহীন। গত ১২ দিনে, আজ পর্যন্ত র্যাব-পুলিসের মাদক বিরোধী অভিযানে মোট ৭৪ জন নিহত হয়েছে (সূত্রঃ দৈনিক পত্রিকা)।
ছোটবেলায় আমরা শুনতাম বিড়ি-সিগারেটের সাথে মদ, গাঁজা, ডাইল (ফেন্সিডিল), হেরোইন এসব মাদকের নাম। এরপর বিভিন্ন ঘুমের ওষুধ ও কিছু ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মাদকের তীব্রতা। বেশ কয়েক বছর আগে আমার এলাকার এক ভাই, যিনি কিনা মাদকের সাথে জড়িয়ে গিয়েছিলেন, তাকে দেখেছিলাম গঞ্জিকা কিনে নিচ্ছে এক বস্তির পাশে এক অতি শুকনো (সেও নেশা করে শেষ হয়ে গিয়েছে আরকি!) ব্যক্তির কাছ থেকে। কিনে আবার তার সাথেই এক সাথে খাচ্ছে !! এতটাই দিলদড়িয়া এরা।
অল্পপুঁজিতে শুধু একটু রিস্ক নিয়ে সহজেই এ পেশায় জড়ানো যায় এবং লাভ কয়েকশো গুহন। আমার এক আত্মীয়ের বাড়ির পাশে এক লোক সম্পর্কে শুনেছিলাম। লোকটি এমন গাঁজা-হেরোইন বিক্রি করে খুব ফুলে-ফেঁপে উঠেছিল। কিন্তু সেও নেশায় জড়িয়ে যেয়ে অকালে পঙ্গু। এরপর তার স্ত্রী তার ব্যবসা হাতে তুলে নেয়। মহিলা তার স্বামীর মতন নেশায় পড়ে নি কিন্তু। সে আরও সফল ব্যবসায়ী হয়ে ওঠে !!
কিন্তু ইদানিং যেটা সবচেয়ে দৃষ্যমান বাবা (ইয়াবা)। আমি আমার চোখের সামনে এইদ্রব্য বিকিকিনি হতে দেখেছি। এতটাই প্রকাশ্যে এর কেনাবেঁচা চলে। তাও বিক্রেতা এক অতিকায় (অ)ভদ্রমহিলা! তিনি তার ভাড়া বাড়িতে বসেই বিক্রি করতেন। আবার রাস্তায়ও উনি প্রকাশ্য দিবালোকে ইয়াবা বড়ি বেঁচতেন। আর কিনছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে থেকে মাঝবয়েসী অনেকে। সবাই জানে কিন্তু কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। কারণ মহিলার পেছনে এলাকার গুন্ডা-বদমাশরা জড়িত।
বেশ কয়েকবার পুলিসের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচলেও মাসখানেক ধরে ঐ মহিলা কারাবন্দী অবশেষে। কিন্তু একজন গেলো, ঐদিকে আরেকজন হাল ধরবে। ইয়াবা/মাদক বিক্রী বন্ধ হয় না। আর নতুন নতুন কাস্টোমারও জুটে যায়।
মাদকের নেশায় দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষিত ছেলে-মেয়ে থেকে, একেবারে মূর্খও জড়িয়ে যাচ্ছে। গুলশানের শতকোটি টাকার বাড়িতেও মাদকে, বস্তির ভাঙা বেড়ার ফাঁকেও মাদক। এতটাই বিস্তার এর। ধর্ম ও সামাজিকতার কোথায় মাদকের স্থান নেই আমাদের। তারপরও এর বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না।
গাঁজা-হেরোইন-ফেন্সিডিলের চেয়ে ইয়াবা নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সোজা। কেননা এর আমদানি পথ একটি- মিয়ানমার বিমুখী। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা বা অনীহায় এটা হয় নি। সরকারের উচ্চস্তর ইদানিং এতটা সোচ্চার হওয়ায় আমরা সাধারণ জনগণ যারপণাই খুশি। যখন দেখবেন আপনার বাড়ির সামনের রাস্তায় দাড়িয়েই মাদক কেনেবেঁচা চলছে, আপনার পরিজন আপনার অযান্তই যে তাতে জড়িয়ে পড়বে না, সে নিশ্চয়তা কোথায়?
আমি আমার কাছ থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অভিযানে সম্পূর্ণ সমর্থণ জানাচ্ছি। পুলিসের ভাষায় ক্রস-ফায়ারে হাজার কয়েক মাদক ব্যবসায়ী মরে যেয়ে যদি কোটি মানুষের সমাজে শান্তি আসে তো সমস্যা কোথায়? সব মাদক ব্যবসায়ীই পুলিসের হাতে ধরা খেয়ে জেলে খেটে ঠিকই কয়েক মাস পর আদালতের আইনের ফাঁক গলে বের হয়ে এসে আবার পুরনো পেশায় জড়িয়ে যায়। এরচেয়ে চিরতরে মরে যাওয়াই ভালো। এত করে শখের ও ছোট ব্যবসায়ীরা সাহস পাবে না নতুন করে এ পেশায় জড়াতে। যতক্ষণ ক্রস-ফায়ার নামক নাটক কোন ভালো মানুষের উপর প্রয়োগ না করা হয়, ততক্ষণ এর বিরুদ্ধে জনগণের কোনো অনীহা থাকার কথা ন। শুনতে খারাপ শোনালেও এটাই এখন সর্বোত্তম পন্থা। স্বাভাবিক নিয়মে তো অনেক বছর দেখা হলো।
এখন দেখতে হবে সরকার যাতে ছোট ছোট মাদকবিক্রেতার সাথে যতগুলো বড় নাম আসে, সবার ক্ষেত্রেই সমান ব্যবস্থা নেন। গডফাদার মুক্ত করতে না পারলে তৃণমূল গজাতেই থাকবে। মাথাগুলো ধ্বংস করতে হবে। মাদকের সাথে জড়িত ব্যবসায়ী, সুবিধাভোগী সরকারী লোক সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এবারের অভিযানেই সব করতে হবে। নইলে পরেরবার এরা নতুনরূপে তৈরি হয়ে নেবে। অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স কম্প্লিট করতে হয়।
বর্তমানে কিছু সুশীল ও মানবাধিকার সংগঠনের কথা শুনে আমি ভেবে পাই না- এদের কি খেয়েদেয়ে কোন কাজ নেই। এসব নাকি বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নাকি ঠিক না! প্রথমে অবাক হয়েছিলাম। পরে মনে পড়লো এরাও তো মাদকের বড় ক্রেতা। গুলশান-বনানীর সুশীল সমাজ। এদের বাড়িতে পুরোপরিবার নিয়ে আখড়া বসে বিদেসী স্টাইলে।
সুশীলদের কথায় একটা জিনিসই মাথায় আসলো, এদের হয় গাঁজার নেশায় বুঁদ থাকেন, নয়তো এদের বাবা খেয়ে হুশ থাকে না। শুধু শুধু লাফানোই এদের কাজ। আসল জিনিসে চুপ থেকে এসব জায়গায় অযথাই লাফায়।
আশা করি জঙ্গী দমনের মতোই সরকার মাদক দমনেও সাফল্য পাবে এবার।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৮ দুপুর ২:০৪