somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা ভাষার ক্রমস্থান সংকট

১২ ই নভেম্বর, ২০০৭ রাত ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নতুন দিগন্ত সাময়িকীর জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০০৪ সংখ্যায় একটি আশাব্যঞ্জক প্রবন্ধ পড়লাম। প্রবন্ধটির লেখক ম ইনামুল হক, জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস করার আবেদন জানিয়েছিলেন যে দুজন তাদের একজন। এতে বাংলা ভাষাকে ভাষাভাষী জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের চতুর্থ ভাষা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর জন্য প্রথমত বিদ্যাসাগর সোসাইটির গবেষক মুহাম্মদ আবদুল হাইয়ের একটি পরিসংখ্যানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যাতে বাংলাকে ৭ম বলা হয়েছিল। ১৯৯১-এর আগে তেমনটিই ছিল হয়তো। এর জন্য হিন্দি ও উর্দু ভাষার উৎপত্তি, রুশ ভাষার বিভাজন এবং আরবি ভাষার পিছিয়ে পড়ার ইতিহাস জানা আবশ্যক। মধ্যযুগে মোঘল রাজাদের সুবাদে ভারতবর্ষে ফারসি ভাষার প্রচলন হয় যা থেকে পরবর্তীতে বিবর্তিত হয় উর্দু ভাষা। মোগল শাসনের অবসানের পর উর্দুকে হিন্দুস্থানী ভাষা বলা হত। এই হিন্দুস্থানী থেকে ফারসি শব্দ বাদ দিয়ে তার স্থানে সংস্কৃত শব্দ যোগ করে দেবনগরী লিপির মাধ্যমে প্রথম হিন্দি গদ্য রচিত হয়। এভাবেই জন্ম হিন্দি ভাষার। হিন্দি ও উর্দু একসাথে হিন্দুস্থানী নামে পৃথিবীর তৃতীয় ভাষা ছিল। কিন্তু ৪৭-এর পর হিন্দি পুরোপুরি আলাদা হয়ে যায়। নিচে নেমে যায় দুটি ভাষাই। অর্থাৎ হিন্দি একটি নির্মিত ভাষা বা কনল্যাং আর উর্দুর জন্ম লিংগুয়া ফ্রাঙ্কা হিসেবে। একমাত্র বাংলাই এ অঞ্চলের স্বাভাবিক ভাষা। যাই হোক ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেছে এবং তারও আগে ষাটের দশকে ফ্রান্স তার উপনিবেশগুলো হারিয়েছে। সোভিয়েত ভেঙে সৃষ্টি হওয়া আলাদা রাষ্ট্রগুলোতে যেমন পৃথক ভাষার স্বীকৃতি মিলেছে তেমনই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ভাষা হয়ে গেছে স্বাধীন। এভাবেই হিন্দি এবং রুশ ভাষা বাংলার নিচে নেমে গেছে। আর বাংলাদেশে জনসংখ্যার বিস্ফোরণের কারণেই হয়তো আরবির পতন হয়েছে। এই তিনটি ভাষাই বাংলার আগে ছিল। এদের ছাড়িয়ে বাংলা তাই এখন ৪র্থ। এর আগে রয়েছে কেবল চীনা, মান্দারিন, ইংরেজি ও স্পেনীয়। এতক্ষণ সবই ইনামুল হকের প্রবন্ধের কথা হচ্ছিল। এর পিছনে তিনি যথেষ্ট তথ্যসূত্র উল্লেখ করেছেন যার সংখ্যা মোট ৯টি। ঠিক কোন সূত্র ধরে আমরা এর অন্যথা ভাবতে পারি?

কিন্তু আধুনিক এথ্‌নোলগ আমাদেরকে সেই অন্যথাই ভাবতে বাধ্য করছে। এথ্‌নোলগ হচ্ছে বিশ্বের ভাষার পরিসংখ্যান সংক্রান্ত একটি আকর গ্রন্থ। বিশ্বের সেরা ২০টি ভাষা নিয়ে সেখানে ভাষাভাষী জনসংখ্যার একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক তথ্য ধরে নিলে কিন্তু সেখানে একেবারে অন্যরকম কথা বলা হয়েছে। প্রথম ১০টি ভাষার নাম আমি উল্লেখ করছি: চীনা, স্পেনীয়, ইংরেজি, আরবি, হিন্দি, পর্তুগীজ, বাংলা, রুশ, জাপানি এবং প্রমিত জার্মান। পড়ে বেশ অবাক হতে হল। ইনামুল হকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আমি যে তালিকাটি পেয়েছিলাম তা হল: চীনা, ইংরেজি, স্পেনীয়, বাংলা, আরবি, হিন্দি এবং রুশ। নির্দিষ্ট কোন সিদ্ধান্ত নিতে হলে আমাদেরকে তথ্য উৎসের নির্ভরযোগ্যতা লক্ষ্য করতে হবে। ইনামুল হকের তথ্যসূত্র ছিল দেশ পত্রিকার সম্পাদকীয়, বিদ্যাসাগর সোসাইটির ক্রোড়পত্র, রাজশেখর বসুর প্রবন্ধাবলী এবং তারা চাঁদ ও পি হার্ডি রচিত গ্রন্থ। আর এখানে এথ্‌নোলগ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত গ্রন্থ যা সকলের কাছ থেকে তথ্য নিয়েই আপডেট করা হয়। বিশ্বের প্রায় সবাই একে মেনে নেন।

তাহলে আমরা কোনটি ধরে নেব? বাংলা উইকিপিডিয়াতে এথ্‌নোলগের তালিকায় এটি দেখিয়ে দেয়া আছে। আবার উইকিপিডিয়ার উৎসাহী সম্পাদক সবাই বাংলাকে স্বাভাবিকের মত উইকিপিডিয়াতেও ৪র্থ স্থানে নিয়ে আসার কথা বলেছেন। এটি অনেকাংশে সম্ভব না হলেও প্রেরণা যোগায়। তাহলে প্রেরণা প্রাপ্তির জন্য আংশিক সূত্র আর বাস্তবতার জন্য সামগ্রিক সূত্র ধরে নেব? আমি জানি এর সঠিক উত্তর না জানলেও চলে। কারণ ভাষা কততম তা মূখ্য নয়, মূখ্য হচ্ছে ভাষার প্রসার ও নির্দিষ্ট ভাষায় জ্ঞানের সংকলন। তথাপি, আমাদেরকে একটি শিক্ষা অন্তত নিতে হবে। আমি এ ধরণের একটি সিদ্ধান্তে আসতে আগ্রহী: বাংলাদেশ পৃথিবীর একটি ছোট উন্নয়নশীল দেশ হওয়া সত্ত্বেও মানবসম্পদের পাশাপাশি আমরা ভাষা সম্পদের সৌকর্য পেয়েছি। এই সম্পদ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায় অনায়াসেই। সেই তুলনায় আমরা অনেক পিছনে। বিশ্বের অন্তত ৩০টি ভাষা জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রসার ও সম্পদ সংগ্রহের দিক দিয়ে আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে পিছিয়ে থাকার কারণে আমরা হয়ত প্রতিযোগিতায় আসতে পারছিনা। তাই ভাষাকে রক্ষা করতে হলে আমাদেরকে এগিয়ে যেতেই হবে, কারণ তা-ই যুগের চাহিদা। আর স্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমরা সরকারিভাবে দেশে একটি ঘোষণাপত্রের আশা করতে পারি। রাষ্ট্রীয় সরকার বা উভয় বাংলার সমন্বিত প্রচারপত্রে যদি বাংলার স্থান সম্বন্ধে নির্দিষ্ট করে বলা হয় তাহলে এর সমাধান হবেই। আর এর চেয়েও আবশ্যক হয়ে উঠেছে আমাদের অগ্রযাত্রা। ভবিষ্যতে হয়তো ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডারই হবে ভাষা রক্ষা ও প্রসারের চাবিকাঠি।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×