somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিয়ের প্রতীক্ষায় সৌদি নারীরা

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুসলিম সমাজে বিয়ে শাদী সহজ হলেও সৌদি সহ বেশ কিছু আরব দেশে বিয়ে শাদী অনেকটা কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। সৌদি সমাজ ব্যবস্থা এক কঠিন বলয় সৃষ্টি করে রেখেছে এই বিয়ে শাদীকে ঘিরে। বিশেষ করে অনারবদের কাছে নারীদের বিয়ের ব্যাপারে রয়েছে বিভিন্ন বিধি নিষেধ। একটি স্থানীয় দৈনিকের তথ্য অনুযায়ী, কোনো সৌদি নারী তার বয়স ২৫ না হলে কোনো বিদেশিকে ম্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন না। তবে পাত্রটি ওই নারীর নিকট কোনো আত্মীয় হলে এই বয়সসীমা ২১ বছরে নামিয়ে আনা সম্ভব। তদরূপ কোনো সৌদি পুরুষ যদি ভিনদেশি কোনো নারীকে বিয়ে করতে চায় তাহলে তার বয়স হতে হবে অন্তত ৩০ বছর। পাত্রী নিকট আত্মীয় হলে ২৫ বছর বয়স মেনে নেওয়া যাবে। তবে বয়সের পাশাপাশি ওই পুরুষকে তার পর্যাপ্ত আয় রয়েছে এর প্রমাণও নিশ্চিত করতে হবে।
কেন তৈরী হল এই আইন? রাষ্ট্রীয়ভাবে বলা হয়ে থাকে যে, নাগরিকের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই ভিনদেশীদের সাথে বিবাহে এত আইন। তবে এক্ষেত্রে পাত্র বা পাত্রীকে হারাতে হবে তার সরকারী চাকুরী। আর এই বিবাহের জন্য তাদেরকে আবেদন করতে হয় বিবাহ লাইসেন্স এর। যা সংগ্রহ করতে ছয় মাসেরও বেশি সময় লাগে।
আর এ ক্ষেত্রেও রয়েছে চরম বৈষম্য। যদি কোন সৌদি পুরুষ কোন ভিনদেশী নারীকে বিয়ে করে তবে কিছুদিন পরে ঐ নারীকে নাগরিকত্ব দেয়া হয় কিন্তু কোন সৌদি নারী কোন ভিনদেশী পুরুষকে বিয়ে করে তবে তাকে নাগরিকত্ব দেয়া হয় না। এছাড়া অর্থনৈতিক সংকট ও বিয়ের জন্য পুরুষদেরকে বিপুল অর্থ-সমপদ যৌতুক হিসেবে দেয়ার ব্যয়বহুল প্রথা সৌদি মেয়েদের অবিবাহিত থাকার অন্যতম কারণ। সূত্র: আইআরআইবি।
যার ফলে সৌদি আরবে মেয়েদের চিরকুমারী থাকার সমস্যা দিনকে দিন বাড়ছে। দেশটিতে এ ধরণের নারীর সংখ্যা ২০১২ সালে ৪০ লাখে (৪ মিলিয়ন) উন্নীত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এদের অনেকেরই স্বাভাবিক বিয়ের বয়স পার হয়েছে অনেক আগে। এসব মেয়েদের মধ্যে ডাক্তার, শিক্ষক, সরকারী কর্মকর্তার মত উচ্চশিক্ষিত নারীও রয়েছেন।
সৌদি আরবের অর্থনীতি ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জরিপে দেখা গেছে, দেশটিতে ২০১১ সালে ৩০ বছর বা তার চেয়ে বেশী বয়সী অবিবাহিত নারীর সংখ্যাই ছিল ১৫ লাখ ২৯ হাজার ৪১৮ জন। সেই অর্থে সে দেশে ত্রিশ বছরের কম বয়সী বিবাহযোগ্য মেয়ে যাদের বিয়ে আগেই হয়ে যাওয়া উচিৎ ছিল তাদের সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ। বাস্তবতা হল সে দেশে প্রায় পরিবারেই চল্লিশোর্ধ কুমারী মেয়ে দেখা যায়।
ইদানিং অনেকেই তাদের এই সামাজিক বলয় ভেঙ্গে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। অনেকে আদালতে মামলাও করছে। কিন্তু এই ধরণের মামলায় জেতা খুবই কঠিন, কারণ এ ক্ষেত্রে কী কী বিষয় প্রমাণ করতে হবে সে বিষয়ে আইনে কোন পরিস্কার বা সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। এই ধরণের মামলা গুলোর সিদ্ধান্ত বা রায়ের ক্ষেত্রে বিচারকদের একচ্ছত্র ক্ষমতা। ফলে পুরো বিষয়টা নির্ভর করে কোন বিচারকের আদালতে মামলাটির বিচার হবে এবং কোন বিচারক মামলাটির রায় দেবেন। কিন্তু এ ব্যাপারে জনমতের কথা ভাবলে দেখা যায় এই ধরণের মেয়েদের প্রতি, তাদের সমস্যার প্রতি এবং ইদানিং তাদের মামলার প্রতি সাধারণ মানুষের ব্যাপক সহানুভূতি রয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, পরিবারও এর জন্য বিশেষ ভাবে দায়ী। কর্মজীবী নারীদের আয় ভোগ করা, উদাসীনতা এক্ষেত্রে প্রধান ভাবে দায়ী। যার ফলে কর্মজীবী নারীরা অনেক ক্ষেত্রেই ভিনদেশী পুরুষদের বিয়ে করার ব্যাপারে সাহসী পদক্ষেপ নিচ্ছে।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে সৌদী নারী-পুরুষের বিয়ের ঘটনা দিনকে দিন বাড়ছে। সৌদি আরবের বিচার বিভাগের বরাত দিয়ে একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গত বছরে ৩৪ জন সৌদি নারী এমন বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। এদের মধ্যে ১৭ জন বাংলাদেশি পুরুষকে ও ১৭ জন আফগান পুরুষকে বেছে নিয়েছেন তাদের জীবনসঙ্গী হিসেবে। আর পুরুষদের মধ্যে ৫৫ জন আফগান নারীকে এবং ২৭ জন বাংলাদেশি নারীকে বিয়ে করেছেন। বিয়ের এই হার বেড়ে যাওয়াকে অস্বাভাবিক হিসেবেই দেখা হচ্ছে। সৌদি নারী-পুরুষের মধ্যে ভিনদেশিদের বিয়ে করার এই প্রবণতাকে স্বাগত জানিয়েছেন সৌদি আরবের সমাজ বিশ্লেষকরা।
বিয়ের ক্ষেত্রে সৌদিআরবে প্রথমেই পারিবারিক সদস্য এরপর নিকট প্রতিবেশিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। র্তমানে সৌদি কিংডমের বাইরেও বিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে এটি একটি ইতিবাচক দিক। সৗদি নারীরা কাজে যোগ দেওয়ার কারণেই তাদের মধ্যে ভিনদেশি স্বামী গ্রহণের এই প্রবণতা বাড়ছে বলে মত সমাজ বিশ্লেষকদের।
ইসলাম এ ধরনের বৈষম্য কখনোই সমর্থন করে না। রাসূল সা: এর যুগে এ ধরনের ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে। হাবসী সাহবীদের সাথে আরবের মেয়েদের বিয়ে কিংবা সৌদি আরবের বাইরের দেশ যেমন: ইরান, ইরাক এসব দেশের সাহাবীদের সাথে আরবের মেয়েদের বিয়ে হয়েছিল। এছাড়াও সৌদী পুরুষ সাহাবীরা বাইরের দেশে গিয়েও বিয়ে করেছেন এরকম সংখ্যাও কম নয়।
যাহোক ইদানিং সৌদি সরকার এ ব্যাপারে কিছুটা উদারতা প্রদর্শন শুরু করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে সমপ্রতি বিদেশী অভিবাসীদের জন্য এমনই সুখবর জানিয়েছে দেশটি। কোনো প্রবাসী যদি সৌদি নারীদের বিয়ে করেন, তবে তিনি পেনশনসহ বেতন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
সৌদির ইনস্যুরেন্সভিত্তিক একটি সংস্থার বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদিতে কোনো বিদেশী অভিবাসী যদি দেশটির কোনো নারীকে বিয়ে করেন তবে তিনি মাসিক বেতনসহ পেনশন পাবেন। তবে তাদের বেতন সৌদি তিন হাজার রিয়াল কিংবা তার চেয়ে কম হতে হবে। আর স্বতন্ত্রভাবে যাদের বেতন এর ওপরে তারা এই সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না। তবে তারা বেতন সুবিধা পাবেন ঠিকমতো। সংস্থাটির এক মুখপাত্র আমাল আল-ঘামলাস জানান, এজন্য “সেপশাল এক্সপ্যাক্ট” সিস্টেমে তাদেরকে আগে থেকেই নিবন্ধন করতে হবে।
আমরাও আশা করি এরকম বিভেদ সৃষ্টি না করে সৌদি সরকার প্রকৃত ইসলামের ছায়াতলে এসে নিদেনপক্ষে সৌদী নারীদের বিয়ের পথ সুগম করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৩
১৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×