somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদমচরিত 01

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৬ বিকাল ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(আদমচরিত শব্দটির ওপর আমি পোস্টের শিরোনাম হিসেবে মৌরসী পাট্টা নিলাম। এখন থেকে আদম ব্যাটার কান্ড কারখানা ধারাবাহিকভাবে ফাঁস করা হবে।)

আদম একটু দুষ্টু, নিয়মকানুন মানতে চায় না। কিন্তু স্বর্গের নন্দনকাননের কানুন বড় কঠিন, পান থেকে চুন খসলে স্বর্গ থেকে খেদিয়ে দেয়া হয়। আদম সেটা জানে, কিন্তু পরোয়া করে না। বড় ব্যাদড়া।

ঈভ আগের রাতে কচুসেদ্ধ আর ভাত রান্না করেছিলো। পেটপুরে খেয়েছিলো আদম। ঈভ মাগী তরকারিতে সবসময় লবণের নয়ছয় করে, কিন্তু গতরাতে একেবারে টিপটপ লবণ ছিলো সালুনে। শানকি চেটে ফর্সা করে দিয়েছিলো আদম। ঈভ ঠাট্টা করে বলেছিলো, ভুলো কুত্তাটার জন্যেও কিছু রাখলে না? আদম মনে মনে এক দুষ্টু স্বর্গদূতের কাছে শেখা কয়েকটা বাজে গাল দিয়েছিলো ঈভকে। আরে, কুত্তা কচু খায়? কচু তো খায়, শুয়োর! ঈশ্বর তো সেদিন বলেছিলেন, রতনে রতন চেনে শুয়োরে চেনে কচু!

কিন্তু অমন পেটপুরে খেয়েই আদমের কাল হয়েছে। স্বর্গের উদ্যানের একটু দূরে চরতে বেরিয়েছিলো সে বিকেলে, সন্ধ্যে হবো হবো করছে, কুটির বহুদূর, এর মধ্যে প্রবল টাট্টি চেপেছে আদম বাবাজীর। বাধ্য হয়ে এক ঝোপের আড়ালে বসে পড়েছে সে।

স্বর্গে যেখানে সেখানে হাগু করা কঠোর দন্ডনীয় অপরাধ। কত গরুছাগল এই অপরাধে স্বর্গচু্যত হয়ে পৃথিবীর এখানে ওখানে ছিটকে পড়েছে। কিন্তু আদম বড় ব্যাদড়া। তাছাড়া কাপড় নষ্ট করাও স্বর্গে নিষিদ্ধ। কী করবে বেচারা? পড়েছে শাঁখের করাতের মুখে।

গুনগুন গান গাইতে গাইতে একেবারে মন খুলে হেগে যাচ্ছে আদম, এমন সময় তার মনে হলো, ঝোপের বাইরে দাঁড়িয়ে কে যেন তাকে দেখছে। আদমের একটু ভয় লাগলো, শিয়াল না তো? শিয়ালে কামড়ে দিলে জলাতঙ্ক হবে তো!

কাঁপাকাঁপা গলায় আদম বলে, "ক্যাঠা রে? ক্যাঠা ঐখানে? ঐ কথা কছ না ক্যা?"

এবার কে যেন ছুটে পালায় সশব্দে।

আদম একটু নিশ্চিন্ত হয়। খাটাস হবে কোন। শালা, হাগুর সময় দিষ্টোরাপ!

কয়েকটা বড় বড় পাতা প্রয়োগে একটু সাফ সুতরো হয়ে আদম আবারও নিজের আপেলপাতাটা কোমরে পরে নেয়।


পরদিন সকালে একেবারে কুরুক্ষেত্র বেধে যায়।
স্বর্গের পত্রিকা দৈনিক স্বর্গবার্তা খুলে আদম হতবাক! একেবারে প্রথম পৃষ্ঠায় তার ছবি ছাপা হয়েছে, ঝোপে বসে হাসিমুখে মলত্যাগ করছে সে। বড় বড় লাল শিরোনাম, "আদমের কান্ড!"

পত্রিকা পড়ে আদম শিউরে ওঠে, একেবারে পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা, আদম কী কী গান গাইছিলো, কোন দিকে মুখ করে এই কর্মটি করছিলো, কী কী পাতা দিয়ে পরিষ্কৃত হলো তার বুকভাঙা বিবরণ। আর এহেন কুকর্মের কুফল সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ স্বর্গদূতদের সাক্ষাৎকারও আছে। পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে আদম, এ ব্যাপারে কারও কোন সন্দেহ নাই।

ঈভ তো পত্রিকা পড়ে হেসে খুন। আদম বার কয়েখ চোখ রাঙিয়েছে, ঈভ বারণ শোনে না, সে বড় অবাধ্য। আদম মনে মনে শপথ উচ্চারণ করে, ঈভকে সে একদিন রীতিমতো ইয়ে করে ছাড়বে!
আদমের পত্রিকা পড়া শেষ হতে না হতেই এক লেঠেল স্বর্গদূত এসে মোচে তা দিয়ে বলে, "আদম, চলো হামার সাথে! কতর্া তোমাকে বুলাইতেছে!"

আদমের হাঁটু কেঁপে ওঠে। সর্বনাশ, স্বর্গবাসের পালা চুকলো নাকি?

আদম ঈশ্বরের কাছে গিয়ে একেবারে পায়ের ওপর উপুড় হয়ে পড়ে কান্না জুড়ে দেয়। লজ্জা পেয়েছে সে। ঈশ্বর ভ্রুকুটি করেন। আদম ইনিয়ে বিনিয়ে সব খুলে বলে, কিভাবে ঈভ কচুসেদ্ধ রান্না করেছিলো, লবণ ঠিক হওয়ায় লোভে পড়ে বেশি খেয়ে ফেলেছিলো সে, পরে বেগ সামলাতে না পেরে ঝোপেঝাড়ে কাজ সারতে হয়েছিলো। সে বড় লজ্জিত, এমনটা সে আর করবে না।

ঈশ্বর একটু নরম হয়ে আসেন। বেচারা, ছেলেমানুষ। না হয় একটু বেজায়গায় হেগে ফেলেছে, জ্ঞানবৃক্ষের ফল তো আর খায় নি! থাক। তিনি এবারের মতো আদমকে ক্ষমা করে দ্যান।

আদম চোখ মুছতে মুছতে আবার ঘরের দিকে হাঁটা শুরু করে। হাঁটতে হাঁটতে সে ঈশ্বরের অলক্ষ্যে এক কঠিন শপথ নেয়। এক দিন আসবে, আজ হোক কাল হোক দশ বছর পর হোক, এই মিডিয়ার মস্তানি সে নিকেশ করে ছাড়বে। সে না পারলে তার পুত্র, পুত্র না পারলে পৌত্র, পৌত্র না পারলে প্রপৌত্র ... পুরুষানুক্রমে মিডিয়ার টুঁটি চেপে ধরবে আদম। ব্যাটারা সব ফাঁস করে দেয়!

(আচ্ছা, আমাদের মন্ত্রীরাও তো সব আদমসন্তান, নাকি?)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৬ বিকাল ৩:২০
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×