somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আনন্দযজ্ঞ মঙ্গলালোকে-১

০৭ ই জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ৯:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ লেখাটি পুরোটাই কাল্পনিক।

রাত- ২.৩০ টা।
দূরে কোথাও রেডিও-তে গান বাজছে। “ভালোবাসবো বাসবো রে বন্ধু.............”
মেজাজ এমনিই খারাপ। তার উপর আবার গান, খালি ভালোবাসা-বাসি। বন্ধুত্ব নাই। কেবল-ই প্রেম!
শাওনের মেজাজ আরো খারাপ হতে থাকে। প্রাইভেট হাসপাতাল। চারদিকে সুনসান নীরবতা। শুধু দূরে কোথাও থেকে গান ভেসে আসছে। বিকেল থেকে ছুটোছুটি। ভাইয়া প্রাইভেট প্র্যাকটিসে চট্টগ্রাম। ভাবির ব্যাথা উঠেছে। বাসায় কেউ নেই। বাড়ির দারোয়ানটা-ও ঈদের ছুটি নিয়ে গ্রামে। একলা বাসায় ভাবিকে নিয়ে বিপদেই পড়া গেল। ভাইয়ার ফোন এনগেজ্‌ড। মনে মনে এক প্রস্থ গালি দেয় শাওন। মুখে শুধু বলে “শালা! এমন অবস্থায় কেউ বউকে একলা ফেলে রেখে যায়! শুধু টাকা!”

ভাবির ফর্সা মুখ লাল হয়ে উঠেছে কষ্টে। প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে বোঝাই যাচ্ছে। তবুও স্বামীর পক্ষ নেয় নাবিলা। মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে, “শাওন, তুমি তো বুঝ। ডাক্তার মানুষ। তুমি আবার একটা ফোন কর না?”
পঞ্চম বারের বার ভাইয়াকে ফোনে পাওয়া যায়। ততক্ষণে বাসায় তালা দিয়ে শাওন ভাবিকে নিয়ে পি.জি.-এর দিকে গাড়িতে।
নাবিলার স্বামী ডা: মাসুম। কার্ডিওলজির নামকরা চিকিৎসক। সারাদিন ব্যস্ত। এখানে সেমিনার, ওখানে মিটিং। আর হাসপাতাল, প্রাইভেট প্র্যাকটিস তো আছেই। সব শুনে সাথে সাথে বলেন,“পি.জি. না, স্কয়ার!!” গাড়ি ঘুরিয়ে সায়েন্স ল্যাবের দিকে রওনা দেয়।
আরো অনেক কথা বলতে থাকে মাসুম। আব্বা-আম্মাকে বলবে, আপুকে আসতে বলবে.... কোন কথা কানে ঢোকে না শাওনের। শুধু একটাই চিন্তা মাথায় এলোমেলো উকি দিয়ে যায়। তাই হু হু করে যেতে থাকে ভাইয়ার কথায়। তার মাঝে একবার শুধু বলে, “হাসপাতালে যেন বলে দেয়, ওরা আসছে।”
ঈদের ছুটির বিরক্তিকর দিনগুলো এই প্রথমবারের মত ভালো লাগে শাওনের। সায়েন্স ল্যাবের মোড়ে কোন জ্যাম নেই। পনের মিনিটের মাথায় স্কয়ার। আধঘন্টার মাথায় ভাবি ও.টি.তে। এক ঘন্টার মধ্যে আব্বা-আম্মা-আপু-দুলাভাই হাসপাতালে।

কেবিনের দরজা খুলে আপু বের হয়ে আসেন। শাওনের দিকে তাকিয়ে মাথার এলোমেলো চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেন, “আজ অনেক ছোটাছুটি করেছিস সারাদিন। এখন ঘুমুতে যা।” শাওনের সারা শরীর ভেঙে পড়ে। মেজাজ খারাপ ভাবটা কখন যে মন খারাপ হয়ে কান্নায় পরিণত হয়েছে, নিজেই জানে না। আপুকে জড়িয়ে ধরে ঝরঝর কাঁদতে থাকে সে।


ছয় বছর আগের কথা।
- শাওন শোন। আজ ভার্সিটি থেকে আসার সময় ডা: জামিলের কাছ থেকে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে এসো তো ভাই।
: এখন-ও জ্বর কমেনি, না?
- উহু। আজ পাঁচদিন হয়ে যাচ্ছে। জ্বর কমার কোন লক্ষণ-ই নেই।
মাসুম- নাবিলার প্রথম সন্তান স্মিতা। পরিবারের একমাত্র বাচ্চা মুখ। সবার আদরের।আর মেয়েও হয়েছে এমন, যেন সব সৌন্দর্যের আধার। সবসময় হাসিমুখ। শাওন নাম দিয়েছে “হাসিকন্যা”। মাসুম স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে। রোজ ফোন করে মেয়ের সাথে কথা বলা চাই-ই চাই।
পরদিন স্মিতাকে নিয়ে জামিলের চেম্বারের আসে শাওন। জামিল মাসুমের ছোটবেলার বন্ধু। মাসুমদের পরিবারেরই একজন হয়ে গেছে এখন সে।
- জ্বর কয়দিন?
: এই তো ১ সপ্তাহ। ক’দিন আগে ভাবির সাথে গ্রামের বাড়ি যায়। সেখান থেকে ফিরেই তো জ্বরে পড়ল।
- হুম ।
: ভয়ংকর জ্বর। ১০৫- ১০৬। ১- ২ দিন থাকে। তারপর একদিন হয়তো ঠিক থাকে। আর পরদিন আবার এমন জ্বর।
- কিছু ঔষুধ লিখে দিচ্ছি। এগুলো খাওয়াও আর ১ সপ্তাহ পর দেখা কর।

ঔষধ খুঁজতে গিয়ে শাওন হতভম্ব। একটা ঔষধ-ও পাওয়া যাচ্ছেনা। সব নতুন এসেছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তিনটা পায়। একটা খুঁজে-ই পায় না। আবার ডাক্তারের সাথে কথা বলে ঔষধ বদলিয়ে নেয় সে। বাসায় এসে টিভি দেখতে বসে।
“ভেজাল ঔষুধে বাজার সয়লাব। মানুষের ব্যবহৃত ঔষধে মেশানো হচ্ছে ভেজাল। অধিক লাভের আশায় বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো নিম্নমানের উপাদান মিশিয়ে তৈরি করছে জীবনরক্ষাকারী গুরুত্বপূর্ণ সব ঔষধ। কিছু অসাধু ডাক্তারদের যোগসাজশে তারা নতুন নতুন এসব ঔষধ বাজারজাত করছে, আর মানুষদের ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যুমুখে। আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি ......”
- দেখেছ ভাবি, কি অবস্থ? মানুষকে তো মেরে ফেলবে এরা।
: হুম। অসুখে যতটুকু মরবে, সুস্থ হতে গিয়ে তো তার চেয়েও বেশি মারা যাবে।
আর কথা এগোয় না। নিঃশব্দে ভাত খেয়ে উঠে যায় শাওন। পরশু থেকে পরীক্ষা। ভীষণ চাপ। এক সপ্তাহ কখন যে পার হয়ে যায় মনে-ও থাকে না। কিন্তু, স্মিতার জ্বর কমছেই না। সাথে যুক্ত হয়েছে কাশি আর বুকে ব্যাথা।

মা-মেয়েতে মিলে জামিলের কাছে যায় নাবিলা। সব শুনে কিছু টেস্ট দেয় জামিল।
তখনই চেম্বার থেকে বের হয়ে সবগুলো টেস্ট করায় সে। সারাদিন ছোটাছুটি। অসুস্থ শরীরে সহ্য হয় না স্মিতার। সিএনজিতে আসার পথে নাবিলার কোলে ঢলে পড়ে সে।
বাসায় এসে প্রচন্ড কাশি। থামছেই না। সাথে শ্বাসকষ্ট।
কাশতে কাশতে প্রথমবারের মত রক্তবমি করে স্মিতা।

স্মিতাকে নিয়ে শুরু হয় ছুটোছুটি। দ্রুত ঢাকা মেডিকেল নিয়ে যায় তাকে শাওন। অনেক ঘোরাঘুরির পরও একটা কেবিনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়না। শেষে জামিলের পরিচয় দিয়ে একটা সিটের ব্যবস্থা হয়। সাধারণ বেড। এত খারাপ অবস্থা। তার উপর কোন ডাক্তারের দেখা নেই। নার্স এসে নাবিলাকে সান্ত্বনা দিয়ে কিছুটা সুস্থির হতে বলে আর স্মিতাকে একটা স্যালাইন লাগিয়ে দেয় ।

(বাকিটুকু পরের অংশে। )
ধন্যবাদ সবাইকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১০:২৮
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×