পূর্বের অংশটুকু পড়ুন।
এরপরের ঘটনাগুলো দ্রুত ঘটতে থাকে। টেস্টের রিপোর্ট হাতে আসে। রিপোর্ট নিয়ে জামিলের কাছে নিজেই যায় নাবিলা। সব দেখে কিছুক্ষণ থমকে যায় জামিল।
: ভাবি, এই টেস্টটা আপনি আবার করান।
- কেন? কি হয়েছে? কি হয়েছে আমার মেয়ের?
: না, তেমন কিছু না। তবুও একটু সিওর হওয়ার জন্য আপনাকে আবার টেস্ট করাতে বললাম।
- খারাপ কিছু হয়নি তো?
: না না, কি যে বলেন? আপনি শান্ত হন। আর টেস্টটা করান। আমি মাসুমের সাথে কথা বলি। কিছু ঔষধ পাল্টে দেয় জামিল।
দুই দিন কেটে যায়। স্মিতার অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। মাসুমকে ফোন করে দেশে আসতে বলে নাবিলা। মাসুমের অসহায় আত্মসমর্পণ, ‘সবকিছু গুছিয়ে আসতে অন্ততঃ ১০-১২ দিন।’ চারিদিকে অন্ধকার দেখে নাবিলা। এমন অবস্থায় পড়ালেখা লাটে ওঠে শাওনের-ও। বাড়িতে খবর দেওয়া হয়। আম্মাকে আসতে বলে সে।
জামিলকে ফোন করে মাসুম।
- কিরে, কি হয়েছে স্মিতার?
: ভাবির সাথে কথা হয়েছে তোর?
- হুম্। বলল তোর সাথে কথা বলতে, কি হয়েছে?
: এখানে তো অত ভালো ব্যবস্থা নেই। তা-ও যা বুঝছি, মনে হয় হার্ট-এ সমস্যা।
- কি হয়েছে?
: ওর হার্টে কয়েকটা ছিদ্র ধরা পড়েছে।
- কী?
মাসুম আর কথা বলতে পারে না। সমস্ত শরীর কাঁপতে থাকে।
: তুই দেশে আসিস না। আমি এখানে সব ব্যবস্থা করছি। তুই ওখানে হাসপাতালের সাথে কথা বল।
পরদিন জামিল নিজেই যায় হাসপাতালে। অবস্থার কোন উন্নতি নেই। ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে মেয়েটা। ভাবি আর শাওনকে অবস্থাটা বুঝিয়ে বলে জামিল।
শাওনের ব্যস্ততা বাড়ে। পাসপোর্ট, ভিসা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি। এর মাঝে একদিন শাওন বাড়ি যায়। আব্বার সাথে কথা বলে টাকার ব্যাপারে। বিশাল অঙ্ক। তখন-ও আপার বিয়ে হয়নি। আপার বিয়ের জন্য রাখা টাকা, শাওনের নিজের টাকা, মাসুম- নাবিলার টাকা, কিছু ধার-দেনা করেও সবটা জোগাড় হয় না। “যেভাবে পারো, টাকার ব্যবস্থা করো”, বলে ঢাকায় রওনা দেয় শাওন।
হাসপাতালই তখন নাবিলা ঘর-বাড়ি। তাই শাওন সরাসরি সেখানেই চলে আসে। বারান্দায় ভাবির সাথে দেখা হয়ে যায়। ভাবির মুখ দেখেই সে বুঝতে পারে, কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। তবুও সে বলতে থাকে,
: টাকার ব্যবস্থা প্রায় হয়ে গেছে। কালকের মধ্যেই কাগজপত্র সব এসে যাবে। জামিল ভাইয়াকে খবর দিব। এসে ডাক্তারদের সাথে কথা বলবেন।
: যাই, ভাইয়াকে ফোন করে আসি। দেখি ওখানে কি অবস্থা?
শাওন উঠতে যায়। হাত ধরে টেনে ধরেন ভাবি।
- আমি ফোন করেছি তোমার ভাইয়াকে। ও আসছে।
: মানে?
- তুমি অনেক কষ্ট করেছ। আর একটু কষ্ট করবে?
অবাক হয়ে ভাবির দিকে তাকায় শাওন। শূন্য দৃষ্টি। দেখে কিছু বোঝার উপায় নেই।
- একটা ট্যাক্সি ডাকো। আমি আমার মা-মণির সাথে এক অ্যাম্বুলেন্সে বাসায় ফিরতে পারবো না।
হঠাৎ কেবিনের ভেতর থেকে বাচ্চার কান্নার শব্দ ভেসে আসে। উঁকি দিয়ে দেখে শাওন। রুম ভর্তি উৎসুক মানুষের ভীড়। আব্বা-আম্মা-দুলাভাই-ভাইয়া, ভাবির আত্মীয়- স্বজন আর রুদ্র অথচ শান্ত ভঙ্গিতে বাবুকে বুকে জড়িয়ে ভাবি। যেন এবার আর কিছুই বাবুকে ছুঁতে না পারে। এ যখন বড় হবে, তখন হয়ত জানতে পারবে, তার বড় বোন টাকার অভাবে আর সঠিক চিকিৎসার অভাবে প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। সকলের অগোচরে। একা আর অসহায়। ভুল চিকিৎসায়। আর এখন! এ হাসপাতাল না ও হাসপাতাল। আপুর দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে শাওন। আঁচল দিয়ে চোখ মুছিয়ে দেন আপু। “ধূর বোকা! ওসব নিয়ে এখন ভাবতে আছে? নতুন বাবু। ওর জন্য দোয়া কর।”
দূরে কোথাও, হয়ত রেডিওতেই বাজতে থাকে,
‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে,
বিরাজ সত্য সুন্দর।’
(পুরো গল্পটি-ই কাল্পনিক। আমাদের দেশের ডাক্তারদের ওপর আমার সম্পূর্ণ আস্থা আছে।)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১০:২৯