somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নদীগর্ভে বিলীন পুরনো শহর নোয়াখালী

২২ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ৮:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নোয়াখালীতে কেউ বেড়াতে এলে অবাক হয় জেলা শহরের নাম শুনে। বাংলাদেশে নোয়াখালীই একমাত্র জেলা, যার জেলা শহরের নাম জেলার নামে নয়। নোয়াখালী’র জেলা শহরের নাম মাইজদী। কেন নোয়াখালী’র জেলা শহরের নাম মাইজদী হলো তা জানতে হলে পিছনের ইতিহাস জানতে হবে।

নোয়াখালী জেলার পত্তন হয় ১৮২১ সালে। বৃটিশ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ ১৮২২ সালে নোয়াখালীর জন্যে একটি জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেটের পদ সৃষ্টি করে। একজন স্বতন্ত্র কালেকটর নিযুক্ত হয় ১৮৩০ সালে। জেলা হিসেবে নোয়াখালী পূর্ণ মর্যাদা লাভ করে ১৮৭৬ সালে। ঐ বছরেই নোয়াখালীতে একজন সেসন জজ ও সিভিল জজ নিয়োগ করা হয় এবং প্রথম পৌরসভা গঠিত হয়। সুধারাম মজুমদার নামে এক ব্যক্তির দানকৃত স্থানে শহরটি স্থাপিত হয়েছিল বলে প্রথম থেকেই এই শহর সুধারাম নামে পরিচিতি লাভ করে।

নোয়াখালী শহরের ইতিহাস ভাঙা গড়ার ইতিহাস। কথায় বলে,

“ভাঙ্গা-গড়া চোরাবালী
তার নাম নোয়াখালী”


চল্লিশের দশকে নোয়াখালী অনেক ছোট ছিলো। শহরটি আরো দক্ষিণে বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে গড়ে উঠেছিলো। কালক্রমে নদী ভাঙনের ফলে উত্তরে সরে আসে। নদী ভাঙনের ফলে কালক্রমে নোয়াখালীর মূল শহরটি উত্তরাংশ অর্থাৎ সোনাপুর হতে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

নোয়াখালী শহর নদীগর্ভে বিলুপ্তির কাজটি ত্বরান্বিত করে নোয়াখালী খাল। সাগরের প্রবল জোয়ার এই খালটির মধ্যদিয়ে এসে জেলার তীরবর্তী এলাকায় প্রচন্ডভাবে আঘাত হানতো। নদীর ভাঙন যখন সর্বগ্রাসী মূর্তি ধারণ করে নোয়াখালী শহরকে গ্রাস করতে উদ্যত ঠিক সে সময়ে দীর্ঘ প্রবাস জীবনযাপনের পর সুধারামে ফিরে এসেছিলেন খ্যাতনামা ইঞ্জিনিয়ার ওবায়দুল্লাহ। নদীর ভাঙন থেকে নোয়াখালী শহর তথা সুধারামকে রক্ষার জন্য তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে দেন দরবার শুরু করেন। কিন্তু ততকালীন সরকার বাঁধ দিয়ে শহর রক্ষা করা সম্ভব নয় বলে অভিমত প্রদান করলে জনাব ওবায়দুল্লাহ নিজ উদ্যোগে ও অর্থব্যয়ে কয়েক হাজার শ্রমিকের সাহায্যে মন্তিয়ারঘোনার মুখে একটা বিরাট বাঁধ নির্মান করেন। জনাব ওবায়দুল্লাহর মৃত্যুর পর নানা কারণে সেই বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণের কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আর তাই অচিরেই জাঁকজমকপূর্ণ বর্ধিষ্ণু এ শহরটি তার সকল এতিহ্য নিয়ে ক্ষুদ্ধ মেঘনার করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে গেলো। নদী ভাঙনের পর সোনাপুর থেকে দত্তের হাট পর্যন্ত পুরনো শহর তথা পৌরএলাকার ভগ্নাংশটুকুই অবশিষ্ট রইলো।

কালিতারা বাজারের কাছে মিউনিসিপ্যালিটির যে শেষ লাইটপোস্ট ছিলো, ঠিক ওখানে গিয়েই নদীর ভাঙনটা বন্ধ হয়ে গেলো। বিচ্ছিন্ন উপকূল হিসেবে সোনাপুর রক্ষা পেলো। আর মূল শহরটা শুধু পৌরসভা সীমারেখা বরাবর বিলুপ্ত হয়ে গেলো।

১৯২২ থেকে ১৯৩২ এবং ১৯৪৮ থেকে পর্যায়ক্রমে মোট চারদফা ভাঙনের পর নোয়াখালী শহরটি তার বাগ-বাগিচা এবং দর্শনীয় সৌধমালাসহ চিরকালের মতো হারিয়ে যায় ভূ-পৃষ্ঠ থেকে।

পুরনো শহর নদী গর্ভে বিলুপ্ত হওয়ার পর ১৯৫০ সালে জেলার সদর দপ্তর অস্থায়ীভাবে মাইজদীতে স্থানান্তর করা হয়। পুরনো শহরের নদী ভাঙা মানুষগুলো তাদের বাড়ী-ঘর, দোকান-পাট, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সহায় সম্পত্তি সবকিছু হারিয়ে বাঁচার আশায় মাইজদীতে কোন রকম মাথা গোঁজার মত ঠাঁই করে নেয়। ক্রমান্বয়ে এখানে বসতি ও জনপদ গড়ে উঠে। ১৯৫৩ সালে শহরের পুরনো এলাকা কালিতারা, সোনাপুর ও মাইজদীসহ কাদির হানিফ ইউনিয়নের কয়েকটি মৌজা নিয়ে গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে নোয়াখালী পৌর এলাকা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সুদীর্ঘ প্রায় একযুগ পর্যন্ত মাইজদীকে নোয়াখালী জেলার সদরদপ্তর হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি বিতর্কিত অবস্থায় ছিলো। অবশেষে ১৯৬২ সালে মাইজদীকে নোয়াখালী জেলার স্থায়ী সদর দপ্তর হিসাবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

নদী এখন আর কাছে নেই। চর পড়তে পড়তে দক্ষিণে সরে গেছে চল্লিশ কিলোমিটারের ও বেশি। নদীগর্ভ থেকে জেগে উঠেছে বিশাল চরাঞ্চল। নতুন করে গড়ে উঠেছে জনবসতি। কিন্তু সাথে নিয়ে গেছে আদি নোয়াখালী শহরের সবকিছু। শুধু স্মৃতিটুকুই আছে।
#


সহায়ক প্রবন্ধসমূহ:
নোয়াখালী পৌরসভা পরিক্রমা: মোহাম্মদ শামছুল আলম
নোয়াখালীর ঐতিহাসিক ও ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য: সানাউল্লাহ নূরী
মেঘনা গর্ভে নোয়াখালীর প্রাচীন শহর: সালাদিন
স্মারকগ্রন্থ “নোয়াখালী": নোয়াখালী পৌরসভা
ছবি: উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ৮:৪৮
৩০টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×