somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলাম শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম

২০ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইসলাম শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম। মানব সমাজ থেকে ফেতনা-ফাসাদ জুলুম-অনাচার দূর করে ন্যায় ও ইনসাফের সমাজ উপহার দেওয়া ইসলামের অন্যতম লক্ষ্য। এ জন্য যুগে যুগে মানবতা বিচ্যুত মানুষকে ন্যায়ের পথে ফিরিয়ে আনতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বহু নবী-রাসূল সা. প্রেরণ করেছেন। যারা অন্ধকার জগতের বাসিন্দাদের আলোর পথে ফিরিয়ে এনেছেন। দিশাহীনদের সঠিক পথ বাতলে দিয়েছেন। অসহায় ও মাজলুমদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

ইসলাম সব সময় মানবতার মুক্তির সুধা বিলি করেছে। কখনো তার অধপতনের কারণ হয়নি। মানবতা ও বিশ্ব-শান্তির ভয়ংকরতম শত্রু হচ্ছে ফেতনা-ফাসাদ। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত শান্তির পৃথিবীকে কেউ যেন বিনষ্ট না করে তাই আল্লাহ তাআলা কঠোর হুশিয়ারী দিয়েছেন।

وَلَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَاحِهَا... } سورة الأعراف: ৫৬{

শান্তি প্রতিষ্ঠার পর তোমরা জগতে বিশৃংখলা সৃষ্টি করো না। (সূরা আ’রাফঃ ৫৬ )

শান্তি-শৃংখলায় বিঘ্ন ঘটে এমন কাজ ইসলাম নিষেধ করে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই কোন শরয়ী নিয়ম ছাড়া মানবহত্যাও ইসলাম কঠোরভাবে হারাম করেছে। ইরশাদ হচ্ছে-

أَنَّهُ مَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا } سورة المائدة: ৩২{

কেউ যদি কাউকে হত্যা করে এবং তা অন্য কাউকে হত্যা করার কারণে কিংবা পৃথিবীতে ফিতনা বিস্তারের কারণে না হয়। তবে সে যেন সমস্ত মানুষকে হত্যা করলো। আর যে ব্যক্তি কারো প্রাণ রক্ষা করে সে যেন সমস্ত মানুষের প্রাণ রক্ষা করলো। (সূরা মায়েদাঃ ৩২)

এরপরের আয়াতে দলগতভাবে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টিকারী ও অন্যায়ভাবে সম্পদ লুন্ঠনকারীদের ব্যাপারে ইরশাদ হচ্ছে-

إِنَّمَا جَزَاءُ الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا أَنْ يُقَتَّلُوا أَوْ يُصَلَّبُوا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ مِنْ خِلَافٍ أَوْ يُنْفَوْا مِنَ الْأَرْضِ ذَلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِي الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ} سورة المائدة: ৩৩{

যারা আল্লাহ ও তার রাসূল এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি এটাই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত-পা কেটে দেওয়া হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে দূর করে দেওয়া হবে। এটা তাদের পার্থিব লাঞ্ছনা। আর আখেরাতে তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি। (সূরা মায়েদাঃ ৩৩)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রকৃত মুমিন ও মুসলিমের পরিচয় সম্পর্কে বলেছেন,

المسلم من سلم الناس من لسانه و يده و المؤمن من أمنه الناس على دمائهم و اموالهم.

মুসলিমতো সে, যার জিহ্বা ও হাত থেকে মানুষ নিরাপদ থাকে আর মুমিনতো সে, যার থেকে অন্য লোক নিজের জান ও মাল কে নিরাপদ মনে করে। (সুনানে নাসায়ী শরীফ, হাদিস নং-৪৯৯৫)

যারা অন্যের জান ও মালের ধ্বংশ সাধন করে অনর্থক রক্তপাত ঘটায় তাদের হুশিয়ারী দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

اول ما يقضى بين الناس يوم القيامة فى الدماء.

কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে বিচার করা হবে তা তাদের মধ্যে সংঘটিত রক্তপাত ও হত্যার বিচার।
(সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৬৫৩৩, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-১৬৭৮)

অন্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফেতনা থেকে যথাসম্ভব বেঁচে থাকার কথা বলেছেন-

ستكون فتن القاعد فيها خير من القائم و القائم خير من الماشى و الماشى فيها خير من الساعى من تشرف لها تشرف فمن وجد منها ملجأ او معاذا فليعذ به.

অচিরেই অনেক ফেতনা দেখা দেবে। তখন উপবিষ্ট ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তির চে’ উত্তম। দাঁড়ানো ব্যক্তি পদচারীর চে’ উত্তম, পদচারী ব্যক্তি ধাবমান ব্যক্তির চে’ উত্তম হবে। যে ব্যক্তি ফিতনার দিকে তাকাবে ফিতনা তাকে পেয়ে বসবে। তখন কেউ যদি কোন আশ্রয়স্থল কিংবা নিরাপদ জায়গা পায় তাহলে সে যেন তথায় আতœরক্ষা করে। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৭০৮১)

এ ছাড়াও অন্য এক হাদিসে ফিতনা সৃষ্টি করাতো দূরে থাক, জনমনে আতংক সৃষ্টি হয় এমন কোন আচরণ বা কর্ম করতেও নিষেধ করেছেন-হযরত জাবের রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-

ان النبى صلى الله عليه و سلم فنهى ان يتعاطى السيف مسلولا.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উন্মুক্ত তরবারী লেনদেন করতে নিষেধ করেছেন।
(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-২৫৮৮, সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-২১৬৩)

অন্যত্র আল্লাহর রাসূল সা. ইরশাদ করেন,

من أشار على أخيه بحديدة لعنه الملائكة.

যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি ধারালো কিছু দিয়ে ইশারা করে তাহলে ফিরিশতাগণ তার উপর লা’নত করেন।
(সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-২১৬২)
উপরোল্লিখিত হাদিসদ্বয়ের মাধ্যমে বুঝা গেল, অন্য কাউকে কষ্ট দেয়াতো দূরের কথা, কষ্ট পাবার আশংকা আছে এমন কোন কাজ করাও নিষেধ।
অশান্তি ও বিশৃংখলা ইসলাম সমর্থন করে না। কেউ যদি ইসলামের বিরুদ্ধে এসবের দায় চাপাতে চায় তাহলে মুসলিম উম্মাহর উচিত তার তীব্র প্রতিবাদ জানানো।
সুতরাং কুরআন-সুন্নাহর আলোকে উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা একথাই প্রতিয়মান হলো, ইসলাম সর্বপ্রকারের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। যে কোন ধরণের ফিতনা-ফাসাদ- চাই তা যেখানেই হোক না কেন বা যার সঙ্গেই হোক না কেনো, এগুলোকে ইসলাম সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে।
ইসলামী বিধান সব যুগেই শান্তি-শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে প্রণিত হয়েছে। অতএব, সন্ত্রাসবাদের কোন স্থান ইসলাম ধর্মে নেই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সুমতি দান করুন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×