"এখানে প্রছাব করা নিষেধ,
পিছনে.................আছে "
শাহবাগ থেকে হেটে হেটে কারওয়ান বাজারের আসতেই একটা ঝাঁঝালো - পাগল করে দেয়া গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে একটা দেয়ালে এই সাইনবোর্ড দেখতে পেলাম।
সাইনবোর্ড এর ঠিক নিচেই বেশ ভেজা দেখতে পেলাম। ধুলা জমে সেখানে ঘনত্বও বেড়েছে বেশ। কিছু কিছু এখনো বেশ টাটকা, গড়িয়ে পড়ছে। দেয়ালে বেশ কয়েকটা টাটকা ডিজাইন ও দেখতে পেলাম।
অপূর্ব!!!
এতো অপূর্ব ঝাঁঝালো গন্ধে আমারও খানিকটা ছাড়তে ইচ্ছে হলো।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে করার, মানে ছাড়ার ইচ্ছে হচ্ছিল। কিন্তু লুংগি পড়ে দাঁড়িয়ে ছাড়তে গেলে লুংগি ভিজে যাওয়ার আশংকা আছে।
সাইনবোর্ড এর লেখার প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা দেখিয়ে সেখান থেকে সরে সাইনবোর্ড টার পাশেই বসে পড়লাম। অনেক টা সময় লাগলো। চাপটা একটু বেশিই ছিল মনে হয়।
হঠাতই কোমড়ের কাছে কেঁপে উঠলো, লুংগি তে গুজে রাখা ফোনটা বাজছে।
-হ্যালো। আচ্ছা তুই কি মুতিস নাকি??
-মানে কি?
-মানে আমি এই মাত্র, আরকি মুতলাম তো!! তাই তোরেও জিজ্ঞেস করলাম আরকি!!
হিহুহিহুহিহুহিহু!!
-ছি!! একটা মেয়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানিস না??
-জানি তো!! কিন্তু আমি যে একটা মেয়ের সাথে কথা বলছি খেয়ালই করি নাই।
হিহুহিহুহিহুহিহু।
-উফফফফফ!!!!!
-পূর্না?
-কি!!!
-কিছু না।
দু'জনেই "টুটটুট টুটটুট টুটটুট ......." শুনতে লাগলাম।
হাটতে কষ্ট হচ্ছে খুব। এক পা দিয়ে হাটতে পারছি ঠিক মতো কিন্তু, আরেকটা পা টেনে হাটতে হচ্ছে।
পকেটে ৩০ টাকা আছে। ফার্মগেট যেয়ে একটা জুতা কিনবো। একপাটি জুতা ছিড়ে গেছে। মেরামত করে এখনো হয়তো চালানো যাবে। কিন্তু, গতবার মুচি আমার জুতা সারাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। এজন্য এইবার নতুন সিদ্ধান্ত। কিন্তু খুব খুধা লাগছে, কিছু খাওয়া দরকার। ৩০ টাকায় জুতা+খাওয়া!!! সম্ভব??? উঁহু। যেকোনো একটাই করতে হবে।
ব্রীজের উপরে দাড়িয়ে আছি, নিচের দিকে তাকিয়ে। গাড়িগুলোর নিরন্তর ছুটে চলা দেখতে খুব ভাল লাগে। আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস গুলির একটা। কিন্তু প্রায় ঘন্টা খানেক ( সময় দেখিনি, আন্দাজে বললাম, হতে পারে ৫ মিনিট ১০ মিনিট কিংবা অনেক বেশি। হয়তো কোনো সময়ই না) গাড়ির চাকা তেমন একটা ঘুড়তে দেখলাম না। একটু ও নড়ছে না গাড়িগুলো। তাই আমিই নড়েচড়ে ভাবতে লাগলাম।
এই ৩০ টাকায় কোনটা বেশি লাভজনক??
হুম............!!!
যদি আমি কিছু খেয়ে ফেলি তাহলে সেটা বড়োজোর ১০ ঘন্টা পেটে থাকবে এরপর...........
যাই হোক, মানুষ ৬-৭ দিনও না খেয়ে থাকতে পারে আমি হয়তো একটু কম থাকতে পারবো। আবার জুতা কিনলে আমি সেটা পড়ে টাকার সন্ধান এ ঘুরতে পারবো। খাবারের চেয়ে অন্তত জুতা বেশি দিন টিকবে। পূর্নার থেকে সাজেশন নিলে ভাল হতো। কিন্তু, এখন বোধ হয় সে টয়লেটে। না! না! শাওয়ারের নিচে বসে আছে।
সবাই আড়চোখে আমার খাওয়া দেখছে। পূর্না বলে আমি নাকি এই একটা কাজই খুব মনোযোগ দিয়ে করি।
খেলাম, খুব খুব মনোযোগ দিয়েই।
কোমড়ে হাত দিলাম, তিনটা মুচড়ানো দশ টাকার নোট থাকার কথা কিন্তু বাইরে থেকে বুঝা যাচ্ছে না। বোধহয় নেইও।
সত্যিই নেই। কিন্তু সত্যিই ছিল।
আবার ভাবছি, এখন শুধু ভাবনা গেটটা কতটা জোরে পার করা যায়। দৌড়াতে হবে হয়তো।
আরেকটা ভাবনা আছে, সাইনবোর্ড এ ফাকা যায়গাটায় কি লেখা ছিল।
এখন যেয়ে দেখতে হবে।