somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পার্বত্য জনগনঃ উদ্বাস্তু হতে হতে ক্রমশঃ আলাদা হয়ে যাওয়া... জেগে ওঠা বিচ্ছিন্নতার বোধ...

০২ রা ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তির আজ ১২ বছর পুর্তির দিন। সংবাদকর্মীদের একটি দলের সাথে সম্প্রতি ঘুরে এলাম পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে। শুরু করতে যাচ্ছি পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান সংঘাত, শান্তি চুক্তি, তার সম্ভাবনা আর প্রতিকুলতা নিয়ে কিছু লেখা।

আজ শুরু করলাম পার্বত্য চট্টগ্রাম সংকট শুরু হওয়ার ইতিহাস দিয়ে।

হিলটন চাকমা নামের কিশোরটির সঙ্গে আজ আমার পরিচয় হলো নানিয়াচরের পাহাড়ি রাস্তায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের এই অঞ্চলে হিল শব্দটা ততটা অপরিচিত নয় অনুমান করি, কিন্তু ‘হিলটন’ শব্দ দিয়ে কি অর্থ বোঝায়? দুনিয়া জুড়ে হিলটন নামের বিখ্যাত হোটেল চেইন আছে, আছে তার চেয়েও বিখ্যাত (?) তার মালকিন প্যারিস হিলটন... কিন্তু আমি নিশ্চিত নই হিলটন শব্দের নিজস্ব কোন অর্থ আছে কিনা।

হিলটন চাকমা নিজেও লাজুক হাসলো, তার নামের কি মানে হয়, এটা জিজ্ঞেস করায়। গত কয়েকদিন ধরে আমরা সফর করছি পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটা জেলায়। আজ নভেম্বর মাসের ২৩ তারিখ, এই মুহুর্তে আমরা ফিরছি খাগড়াছড়ি থেকে, আমাদের পরবর্তী গন্তব্য রাঙামাটির উদ্দেশ্যে। পথের মধ্যে এই নানিয়াচর, রাঙামাটি শহর এখান থেকে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে। আমাদের সাথে তিনটা গাড়ী, টেলিভিশন আর প্রিন্ট মিডিয়ার বিভিন্ন সংবাদ কর্মী দিয়ে ঠাসা, তারই কোন একটা গাড়ীতে অনেকক্ষন ধরে পাহাড়িদের ভাষায় একটা গান বাজছিল। বেশ সুরেলা এই গানটি বেশ আকর্ষণীয়, ঘুরে ফিরে শুনতে বেশ লাগে। এমন কি শোনার পরও ইচ্ছা হয় গানের ভাষা আর তার অর্থ বুঝতে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ভাষা বলতে চাকমা ভাষাই সামনে চলে আসে। এই এলাকায় চাকমা ছাড়াও মারমা, ত্রিপুরা হলো প্রধানতম গোষ্ঠী, সেই সাথে বম, মুরং, চাক, খুমি, খিয়াং সহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীও রয়েছে। তবে তাদের ভাষা এত বহুল পরিচিত নয়। গান বেজে যাওয়ার সেই মুহুর্তে আশে পাশে অনেকেই ছিল — চাকমা ভাষা যাদের মাতৃভাষা, কিন্তু গানটার অর্থ বুঝাতে তারা বেশ হিমশিম খাচ্ছিল। আর তখনই আমার সাথে দেখা হলো রাঙামাটি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র হিলটন চাকমার। খুবই সপ্রতিভ ভঙ্গিতে হিলটন আমাকে গানের কথাগুলো বুঝিয়ে বলছিল।

গত ২১শে নভেম্বর তারিখে, ঢাকা থেকে আমরা রওনা হয়েছি পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি আর বান্দরবানের উদ্দেশ্যে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের বর্তমান হাল হকিকত সরেজমিন দেখার জন্য সিএইচটি কমিশন বিভিন্ন মিডিয়ার এক ঝাঁক নবীন সংবাদকর্মীদের সু্যোগ করে দিয়েছে তিন পার্বত্য জেলা ঘুরে দেখার। সিএইচটি কমিশন (চিটাগাং হিল ট্রাক্টস কমিশন) কোপেনহেগেন ভিত্তিক একটা মানবাধিকার সংস্থা, যারা পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে ১৯৯০ সাল থেকে কাজ করে আসছে। সিএইচটি কমিশন ১৯৯০ সালে প্রথম পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ব্যাপক ভিত্তিক মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধানী কাজ শুরু করে। মাঝখানে দীর্ঘ সময় নিস্ক্রিয় থাকার পর ২০০৮ সালের জুন মাস থেকে কমিশন পুনরায় সক্রিয় হয়। সিএইচটি কমিশন বিশ্বাস করে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার ঘটনাটি পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বয়ে আনবে। শান্তিচুক্তির পরিপুর্ণ বাস্তবায়ন চায় সিএইচটি কমিশন।

১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তি সম্পাদনের পরে এই ২০০৯ সালে আক্ষরিক অর্থেই প্রায় একযুগ কেটে গেছে। ইতিমধ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পালায় আওয়ামীলীগ আবার সরকারে। দীর্ঘ দিনের দাঙ্গা হাঙ্গামার পালা শেষ করে, পেরিয়ে আসা বিগত ১২টি বছরে বিক্ষুব্ধ পাহাড়ি জনপদে ইতিমধ্যে শান্তি কতটা প্রতিষ্ঠা হলো, শান্তিচুক্তির পরিপুর্ণ বাস্তবায়নে অন্তরায় গুলি কি কি? সেটা বোঝার জন্য এই সংবাদকর্মীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি আর বান্দরবান ঘুরে দেখার। তাদের কাজ হলো স্থানীয় জনগণের সাথে কথা বলা, তাদের সার্বিক অবস্থা জানা এবং সংবাদ মাধ্যমে তাদের নিয়ে রিপোর্ট করা।

সাধারণভাবে সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে সমালোচনা হলো, তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখেন না। সিএইচটি কমিশন মনে করে সংবাদ মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম, বিশেষ করে পাহাড়িদের নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টগুলিতে পাহাড়িদের সার্বিক অবস্থার ছবি ফুটে উঠে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে সংবাদকর্মীদের সার্বিক অজ্ঞতা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষনের অভাবই এর মুল কারন। এছাড়াও অভিযোগ আছে, অনেকেই স্পটে না গিয়েই টেলিফোনে কথা বলে রিপোর্ট করেন, অনেকেই খুব বেশি নির্ভর করেন সেনাবাহিনীর সরকারী ভাষ্য আইএসপিআর এর তথ্য বিবরণীর উপর।

এই সফরের শুরু হওয়ার আগে ১৭ই নভেম্বর থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত সিএইচটি কমিশন তার ঢাকার ইকবাল রোডের কার্যালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে একটা ওয়ার্কসপ এর আয়োজন করেছিল। সেই ওয়ার্কসপের দ্বিতীয় পর্যায় হচ্ছে তিন পার্বত্য জেলায় আমাদের বর্তমান ফিল্ডট্রিপ। টেলিভিশনের চারটি চ্যানেল, বাংলা ইংরেজী মিলিয়ে ৫টি দৈনিক পত্রিকা, সেই সাথে অনলাইন নিউজ এজেন্সির প্রতিনিধি, সব মিলিয়ে ১৪/১৫ জন সংবাদকর্মী যুক্ত হয়েছে এই সফরে। মুলধারার এই সংবাদ মাধ্যমগুলোর পাশাপাশি এবার ডাকা হয়েছিল বিকল্প মাধ্যম হিসাবে বিভিন্ন বাংলা ব্লগসাইটকেও। বলা বাহুল্য বাংলা ব্লগ সাইট হিসাবে শুধু মাত্র সামহোয়্যারইন ব্লগই এই কর্মসুচিতে অংশ নিয়েছিল।

... আমাদের এই রাঙামাটি শহরটা খুব সুন্দর... এখানের মানুষগুলো খুব আন্তরিক... তুমি অবশ্যই এই শহর আর শহরের মানুষগুলোকে পছন্দ করবে। সুরেলা এক নারী কন্ঠ ঘুরে ফিরে গেয়ে যাচ্ছিল গান, আর চোখে মুখে হাসি ফুটিয়ে হিলটন চাকমা আমাকে বোঝাচ্ছিল গানের অর্থ।


রাঙামাটি সরকারী কলেজে হিলটন চাকমার বন্ধুদের অনেকেই সেটেলার বাঙালী, অর্থাত সেই সব বাঙালি যারা ৭০ দশকের শেষ ভাগ এবং আশির দশকে সমতল ভুমি থেকে এসে পার্বত্য অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছেন। পাহাড়ি ছেলে হিসাবে তাদের সঙ্গে তার কখনই কোন ধরনের কোন বিরোধ হয় নাই। খুবই বন্ধুত্বপুর্ণ পরিবেশে তারা কলেজে তাদের সময় কাটায়। সন্দেহ নাই, হিলটনের বন্ধু ভাগ্য বেশ ভাল, শান্তিপুর্ণ ভাবে সে তার শিক্ষাজীবন চালিয়ে যেতে পারে। যদিও হিলটনের আত্মীয়স্বজন এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা নিজদের অতটা সৌভাগ্যবান ভাবতে পারেন না। কলেজের পরিচিত এই গন্ডি থেকে বেরিয়ে এলে পার্বত্য অঞ্চলের বৃহত্তর যে সামাজিক পরিবেশ, সেখানে বাঙালীদের সাথে হিলটনের পরিবার এবং অন্যান্য পাহাড়িদের বসবাসের অভিজ্ঞতা মোটেও একই রকম নয়। একই রাষ্ট্রীয় ভুখন্ডে, একই সংবিধানের আওতায় বসবাসরত বাঙালী আর পাহাড়ীদের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা পারস্পরিক দ্বন্ধ, সন্দেহ আর অবিশ্বাস। রয়েছে আত্মনিয়ন্ত্রনাধিকারের দাবীতে পাহাড়ীদের ন্যায্য আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া আর সে আন্দোলনের পথ পরিক্রমায় সশস্ত্র হওয়ার ইতিহাস। রয়েছে দীর্ঘ দিনের বঞ্চনা আর দূর্বিষহ জীবনের রক্তাক্ত হওয়ার ইতিহাস।

উদ্বাস্তু হতে হতে ক্রমশঃ আলাদা হয়ে যাওয়া... জেগে ওঠে বিচ্ছিন্নতার বোধ

বড় দীর্ঘ পাহাড়িদের এই রক্তাক্ত হওয়ার ইতিহাস। নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য পরিচয়ে শান্তিপুর্ণ ভাবে বসবাসের স্বপ্ন, পাহাড়িদের জন্য চিরকাল অধরাই রয়ে গেছে। মোগল বা বৃটিশ-ভারত শাসনামলে যেমন তেমনই ঘটুক, আয়ুব খানের পাকিস্তান আমল তাদের জীবন ওলটপালট করে দেবার ক্ষেত্রে সবচেয়ে নির্ধারক হয়ে উঠেছিল। পাহাড়িদের প্রাণ ও পরিবেশের বৈচিত্র বলতে যা বোঝায় তা ধ্বংস করে পাহাড়ি কাপ্তাই নদীতে বাঁধ দিয়ে হাইড্রলিক বিদ্যুত প্রকল্প সব দুঃখ সংঘাতের উৎস হয়ে উঠেছিল। বাঁধ দেবার কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রাণবৈচিত্রের উপর প্রভাব যাই ঘটে থাকুক, এলাকার মানুষের জীবন জীবিকার ক্ষতি হয়ে উঠেছিল মারাত্মক ও চিরস্হায়ী। বাঁধের ফলে পানির উচ্চতা স্হায়ীভাবে বেড়ে দাঁড়িয়ে যায়, এক বিস্তীর্ণ এলাকার জনপদকে ভিটামাটি, চাষের জমি থেকে উৎখাত করে ফেলে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দাদের কি পরিনতি হবে, প্রকল্প প্রণয়নের সময় সে বিষয়টি একেবারেই হিসাবে ধরা হয় নাই।

ফলে — এই বিদ্যুত সমতলের বাসিন্দাদের ভোগের জন্য – আর তাতে পাহাড়িদের জীবন, জীবিকাশুণ্য হয়ে তারা উদ্বাস্তুতে পরিনত হবে কী না সেটা সরকারী ভাবে চিন্তাও করা হয় নাই। এ সরকার কি তাদের কথা ভাবে, এ সরকার কি আদৌ তাদের নিজের সরকার...? — পাহাড়িদের দিক থেকে এভাবে প্রশ্ন তোলার সমস্ত শর্তই তৈরি করা হয়েছিল এই প্রকল্প পরিকল্পনায়। পাহাড়ি বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের নূন্যতম বিষয়টাকেও মাথায় আনা হয় নাই। পাহাড়ি আর সমতলবাসীদের সরকার বলে একটা যে ভাগাভাগি, চিরবৈরিতার যে বীজ বপন করা হয়েছিল; এভাবেই তা ডালপালা মেলে অসাম্য আর সম্প্রীতিহীনতার বিষবাস্প ছড়াতে থাকে। পাহাড়িদের প্রতি উপেক্ষা আর তাচ্ছিল্যের অভিযোগ পাহাড়িদের মনে চিরস্হায়ী আসনও করে নেয়।

পার্বত্য এলাকায় বাঙালীদের বসতি শুরুর ইতিহাস আমাদের স্বাধীনতার আগের। পার্বত্য এলাকায় চাষাবাদ করার জন্য সমতল এলাকা থেকে কৃষি শ্রমিকদের নিয়ে যাওয়ার রেওয়াজ ছিল। সীমিত ভাবে কিছু বাঙালী পরিবার তখন থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করতে থাকে। কাপ্তাই প্রকল্প চালু হওয়ার জন্য যে সমস্ত স্থানীয় অধিবাসী উচ্ছেদ হয়ে যায়, তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক বাঙালী পরিবারের খোঁজও পাওয়া যায়, যারা পরবর্তীকালে বান্দরবান জেলায় পুনর্বাসিত হয়েছেন।

একই ভৌগলিক ভুখন্ডে বিভিন্ন আলাদা বৈশিষ্টের লোকের মত পাহাড়ি ও সমতলবাসী তাদের ভিন্ন বৈশিষ্ট্য সত্বেও শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করতেই পারে। যেমন, নোয়াখাইল্যা আর চাটগৈয়া বলে অনেক আলাদা বৈশিষ্ট্য আমরা চাইলে খুজে বের করতে পারব। কিন্তু এটা কোন ইস্যু নয়, ভিন্ন বৈশিষ্টের মানুষের একসাথে এক রাষ্ট্রে বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে এমন নয়। কিন্তু এই পাহাড়ি ও সমতলবাসী বৈশিষ্ট্যগত তফাৎ থাকাটা এক জিনিষ আর তা বিবাদের ইস্যু হয়ে উঠা আর এক জিনিষ, আর এক পর্যায়। অথচ এখানে তাই ঘটে গিয়েছিল। পাহাড়িদের স্বার্থ উপেক্ষা আর তাচ্ছিল্যের কারণে, "আমরা পাহাড়ি তাই আমাদের স্বার্থ আলাদা" - এই বোধটা ইস্যু হয়ে উঠা ও গেড়ে বসতে সময় লাগেনি। সমতলের বৃহত্তর জনগনের থেকে মানসিক ভাবে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে পাহাড়ী আদিবাসীরা।

এই সংবিধানে আমি আমাদের খুঁজে পাই না...

এমন কি ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা লাভের পরে নিজস্ব সংবিধান প্রনয়নের সুযোগ লাভের সময়েও বাঙালী জ্যাতাভিমানি অতি-উচ্ছাসের ঠেলায় পাহাড়ি রেসিয়াল (racial) স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যকে আর একবার পায়ের তলায় মারানো হয়েছে। "বাংলাদেশের সবাই বাঙালী" এই দম্ভভরা অন্য-জাতি (race) বিদ্বেষী উচ্চারণ আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, নিজেদের কী ক্ষতি করছে খেয়াল রাখিনি। কাপ্তাই বাঁধের অভিজ্ঞতায় পাহাড়িদের মনে যেটা ঘাঁ সৃষ্টি করে রেখেছিল - এই বিশেষ পটভুমিতে সেটা পুরানো ঘাঁয়ের উপর নুনের ছিটার মত প্রভাব ফেলেছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে মানবেন্দ্র লারমা ছিলেন সে সময় সংবিধান প্রনয়নের গণপরিষদের সদস্য। বাঙালী জাতীয়তার পাশাপাশি, পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠির উল্লেখ যাতে সংবিধানে থাকে সে দাবী তিনি তুলেছিলেন। ১৯৭২ সালের গণপরিষদে আমাদের সংবিধানের খসড়া পাস হওয়ার দিনে মানবেন্দ্র লারমা খেদের সঙ্গে বলেছিলেন –"একজন চাকমা কোন সংজ্ঞা অথবা যুক্তিতেই একজন বাঙালি হতে পারেন না... এটা এমন একটা সংবিধান রচনা করা হলো, এই সংবিধানে আমি আমাদের খুঁজে পাই না..."।

বাঙালী জনগোষ্ঠির গণঅধিকারের দাবীতে এত বিশাল মাপের একটা আন্দোলন সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে সফল সমাপ্তি ঘটেছিল ১৯৭১ সালে, আমাদের স্বাধীন একটা রাষ্ট্র অর্জন ঘটেছিল এর মধ্য দিয়ে। অথচ প্রথম সুযোগেই আমরা যে সংবিধান পেলাম তা চরিত্রের বিচারে এর মৌলিক গনতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য হারিয়েছিলাম আমরা। সংখ্যাগরিষ্ঠের কন্ঠ ভোটে সেদিন আমাদের জাতিগত আত্মগরিমায় ভরা বাঙালীর একক জাতিসত্ত্বার সংবিধান সংসদে পাস হয়ে গিয়েছিলো, বলা বাহুল্য মানবেন্দ্র লারমার কথায় সেদিন কেউই কর্ণপাত করেন নাই... না সংবিধান "রচয়িতার" ধ্বজাধারী কামাল হোসেন, না অন্য কেউ; সারাজীবন গণমানুষের অধিকারের জন্য লড়ে রক্তঘামে, জেলজুলুম ভোগ, জীবনের হুমকি তাচ্ছিল্য করে যে আমাদের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিব হয়েছিলেন - সংবিধান বিশেষজ্ঞ হিসাবে বড়াই যাদের, এরাই অবিসংবাদিত নেতার সারাজীবনের অর্জনে কলঙ্ক লাগিয়ে দিয়েছিলেন; কেউই একটা পরামর্শ নিয়ে তাঁর কাছে হাজির হননি। সংবিধানে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর কোন স্বীকৃতির উল্লেখ না থাকাটা আমাদের আদি সংবিধানকে আজও কলঙ্কিত করে রেখেছে। এটা নিঃসন্দেহে মৌলিকভাবে অপুর্ণাঙ্গ আর সাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্যের। বিশেষ করে যখন ইতোমধ্যেই পাহাড়ি ও সমতলবাসী জনগনের বৈশিষ্ট্যগত তফাত একটা বিবাদের ইস্যু হয়ে পাহাড়িদের মনে জেগে গেছে।

সাংবিধানিক এই অস্বীকৃতির পরপরই মানবেন্দ্র লারমা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সংগঠিত করার কাজ শুরু করেন। ১৯৭৩ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে মানবেন্দ্র লারমা এই দলের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। প্রকাশ্য এই সংগঠনের একটি গোপন সশস্ত্র ইউনিটও গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা পরিচিতি লাভ করে শান্তি বাহিনী নামে। এটাই এভাবে ধাপে ধাপে পাহাড়ীদের "আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের অমীমাংসিত প্রশ্ন" বলে আমাদের সামনে হাজির হয়ে যায়। একদিকে পাহাড়ি স্বতন্ত্র রেসিয়াল (racial) বৈশিষ্ট্যের স্বীকৃতি অগ্রাহ্য করে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবীর কোন রাজনৈতিক সমাধান যেমন করা হলো না, অন্য দিকে ফুঁসে ওঠা বিক্ষুব্ধ পাহাড়ীদের দমন করার জন্য সামরিক বল প্রয়োগের রাস্তার পক্ষেও যুক্তি হাজির পাওয়া গেল। শান্তি বাহিনীর দিক থেকে দেখলে, তার আত্মরক্ষার চেষ্টায় হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়া ন্যায়সঙ্গতঃ। পার্বত্য অঞ্চলে সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি ও তাদের বিভিন্ন মাত্রার সামরিক অভিযান মোকাবেলা করাই শান্তি বাহিনীর গড়ে ওঠাকে ন্যায্যতা যোগাতে থাকল। আবার শান্তি বাহিনীর সশস্ত্র তৎপরতা বাংলাদেশে উপস্হিত রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও অখন্ডতার জন্য হুমকি - এই পরিস্হিতি সৃষ্টি করতে পেরেছিল। এটা নতুন ঘটনা। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দিক থেকে দেখলে সংবিধান পাসে কন্ঠভোটে অস্বীকার করতে পারলেও এবার এই হুমকি সে উপেক্ষা করতে পারে না, বসে থাকতে পারে না।

পার্বত্য চট্টগ্রামঃ বাইরের শক্তির উপস্থিতি

১৯৭৫ সালে রশিদ-ফারুকের সামরিক অভ্যুত্থানে শেখ মুজিব নিহত হওয়ার সময় ভারতে ক্ষমতায় ছিলেন কংগ্রেসের ইন্দিরা গান্ধী। শেখ মুজিবের মৃত্যু বাংলাদেশের কাছে ছিল এমন, যে এর সাধারণভাবটা নিয়ে বললে-- শেখ মুজিবের শাসন হয়ত অসহনীয় হয়ে উঠেছিল, কিন্তু মৃত্যু? না এটা টু মাচ। কিন্তু ফ্যাক্টস হলো শেখ মুজিব আর বেঁচে নাই - এই সত্যটা সবাই টের পাচ্ছিল। ফলে এক হতবিহ্বল কিংকর্তব্যবিমুঢ় অবস্হা। কিন্তু বাংলাদেশের কাছে যাই হোক কংগ্রেস বা ইন্দিরার কাছে এটা ছিল অগ্রহণযোগ্য, অনেকটা ব্যক্তিগত পরাজয়ের মতো। বাইরে বাইরে কুটনৈতিক শিষ্টাচারে মোশতাকের সরকারকে স্বীকার করে বিবৃতি দিলেও বাংলাদেশের নতুন সরকার তার ক্ষমতার বলয় থেকে দূরে চলে যাবে কিনা ইত্যাদি নানান আশঙ্কায় বাংলাদেশের উপর চাপ প্রয়োগ এবং নতুন সরকারকে ব্যাতিব্যস্ত রাখার প্রয়োজন অনুভব করেছিল। সহজ তবে চরম রাস্তা, নাশকতা চালানোর (subversive to a state) সিদ্ধান্ত নেয় ভারতীয় সরকার।

এই পর্যায়ে শেখ মুজিব হত্যার প্রতিবাদরতঃ আওয়ামীলীগের কাদের সিদ্দিকিকে ভারতীয় সরকার বেছে নেন। বাংলাদেশের নতুন সরকারের ভয়ে পালিয়ে ভারত সরকারের আশ্রয়ে থেকে কাদের সিদ্দিকির বাহিনী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রেল লাইন উপড়ে ফেলা, ব্রিজ উড়িয়ে দেবার মতো নাশকতায় লিপ্ত হয়েছিল। আর এ সময়ই ভারত সরকারের নজর পড়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি বাহিনীর উপর। ইতিমধ্যেই নিজেদের আত্মনিয়ন্ত্রনের অধিকারের দাবী তুলে হাতে অস্ত্র নিয়েছিল শান্তি বাহিনী, এবার তাদেরকে আশ্রয়, যাবতীয় অস্ত্র আর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেবার সিদ্ধান্ত নেয় ভারতীয় সরকার।

বলা যায়, পাহাড়ি সমস্যা তার ডালপালা মেলে আমাদের জন্য মহীরুহ হয়ে উঠার তৃতীয় অধ্যায়ে প্রবেশ এটা। ১৯৭৬ সাল থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে শান্তি বাহিনীর সশস্ত্র শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে, বাড়তে থাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি তার হামলার তীব্রতা। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে মৃত্যু আর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। তৃতীয় অধ্যায় কারণ, এর আগের অধ্যায়ে যেটা বাংলাদেশে উপস্হিত রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও অখন্ডতার জন্য হুমকি হয়ে থেমে প্রহর গুনছিল, সক্ষম ভারতীয় সামরিক মদদে পুষ্ট হয়ে এটা আর শুধু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও অখন্ডতার জন্য হুমকি হয়ে থাকলো না, হয়ে উঠলো সরাসরি সামরিক হুমকি। ভারতীয় সহযোগিতা পেয়ে শান্তি বাহিনী আমাদের জন্য প্রত্যক্ষ সামরিক হুমকি হতে পেরেছিল।

প্রতিটি অধ্যায়ে যেখানে দরকার ছিল একটা রাজনৈতিক সমাধান, স্বীকৃতি, জনগোষ্ঠিগত সমঝোতা অথচ তা না করার কারণে সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর হওয়ার পথে গিয়েছে; কাপ্তাই বাঁধ, সাংবিধানিক উপেক্ষা অস্বীকৃতি, অস্ত্র তুলে নিয়ে সামরিক বাহিনীর মুখোমুখি দাঁড় করানো আর সবশেষে বিদেশি রাষ্ট্রের হাতের পুতুল হয়ে খোদ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে খাড়া হয়ে যাওয়া – এ সবই আমাদের দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে হয়েছে। কারণ আমরা কেউই সময়ের কাজ সময়ে করিনি। একটা সামাজিক রাজনৈতিক চিন্তা ও তৎপরতার ব্যর্থতা আমাদের কোথায় নিয়ে ফেলতে পারে তার আদর্শ উদাহরণ সম্ভবত এটাই। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্য সত্যিকারের সামরিক হুমকি হিসাবে দেখা দিতে থাকে শান্তি বাহিনী।

আগেই বলেছি, শেখ মুজিব হত্যা আর বাংলাদেশের ক্ষমতার পালাবদলের পরবর্তী ঘটনাগুলো তৎকালীন ভারতীয় শাসকদের কাছে ছিল অনেকটা রাজনৈতিক অবাধ্যতার মত। এই অবাধ্যতা মেনে নেওয়া যায় না। এই অবাধ্যতার শাস্তি স্বরুপ ১৯৭৭ সালের দিকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর পরিকল্পনায় বাংলাদেশে বড় মাপের এক সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নেয়, ভারতের ইন্দিরা সরকার। সাম্প্রতিক প্রকাশিত ভারতীয় সাংবাদিক বিবিসির পুর্বাঞ্চলের সংবাদদাতা সুবীর ভৌমিকের প্রকাশিত বই ট্রাবলড পেরিফেরিঃ ক্রাইসিস অব ইন্ডিয়ান নর্থ ইস্ট আমাদের এক ভয়াবহ খবরের কথা জানাচ্ছে। তিনি জানাচ্ছেন, ১৯৭৭ সালের দিকে ত্রিপুরা এবং আগরতলার সেনা ছাউনিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শান্তি বাহিনীর প্রায় ১৫হাজার গেরিলা যোদ্ধাদের প্রস্তুত করা হতে থাকে — বাংলাদেশের অভ্যান্তরে সামরিক অভিযান চালানোর জন্য। কিন্তু ১৯৭৭ সালের একই বছরে ভারতের সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস ও ইন্দিরা গান্ধী পরাজয় বরণ করলে বাংলাদেশ এক বিরাট ধরনের সম্ভাব্য হামলার বিপদ থেকে বেঁচে যায়, ইন্দিরা গান্ধীর পরাজয়ে ‘র’এর পুরো পরিকল্পনা ওলটপালট হয়ে যায়, বাধ্য হয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ তার পুর্ব পরিকল্পনা বাতিল করে। কারণ ভারতে নির্বাচনের এই পটপরিবর্তন সাধারণ ঘটনা ছিল না।

ভারতের নতুন সরকার মোরারজি দেশাইয়ের নতুন পররাষ্ট্রনীতির কারণে এ অঞ্চলে সোভিয়েত প্রভাবের পরিবর্তে মার্কিন প্রভাব বাড়তে থাকে। ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন এক মাত্রা পায়, বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতীয় অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে, ঢাকা সফর করেন মোরারজি দেশাই। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ভারতীয় সরাসরি আগ্রাসনের এক সম্ভাব্যতা থেকে মুক্তি পায় বাংলাদেশ।

এবার বিষয়গুলোকে অন্যদিকে থেকে দেখি। বস্তুতঃ এভাবে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতের মুঠোয় শান্তি বাহিনীর চলে যাওয়ার এই ঘটনাগুলোর ফলাফল হয়েছিল পার্বত্য জনগণের মুক্তি আন্দোলনের জন্য এক ধরনের বিপর্যয়মূলক ট্রাজেডি। যা ছিল পাহাড়ি জনগনের ন্যায্য আন্দোলন, তার সঙ্গে সমতলের অন্যান্য গণতান্ত্রিক শক্তি, যারা বৃহত্তর জনগনের গনতান্ত্রিক অধিকারের জন্য আন্দোলনের সাথে ছিল, তাদের সবার সাথে তার মৈত্রীর সম্পর্কটা গড়ে উঠল না। বাংলাদেশের গনতান্ত্রিক শক্তির অ্যালি (Ally) হয়ে উঠা, তার পক্ষে সাহায্য আর সমর্থন আদায় করে নেওয়া এবং তার বিজয় ছিনিয়ে আনা — এটাই হতো পার্বত্য জনগনের মুক্তি আন্দোলনের জন্য স্বাভাবিক ঘটনা। অথচ তার বদলে ভারতীয় স্বার্থের সাথে শান্তি বাহিনী নিজের স্বার্থকে জড়িয়ে এই ধরনের অশুভ আতাঁত, সমতলের বৃহত্তর জনগনের চোখে শান্তি বাহিনীর প্রতি যাবতীয় বিশ্বাস আর আস্থা টলিয়ে দেয়, তাদের প্রতি সহানুভুতির জায়গাটা নষ্ট হয়ে যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার কোন রাজনৈতিক সমাধান পথ আরও দূরে চলে যায়; সামরিক বাহিনী দিয়ে পার্বত্য এলাকায় দমন নীতি, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের একমাত্র করনীয় হয়ে দাঁড়ায়। অথচ আমরা সবাই জানি বুঝি এটা কোন সমাধান নয়, শুধু তাই নয় অপ্রত্যক্ষে সমাধানকে আরও দূরবর্তী করে ফেলা।

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:১৬
১৪৩টি মন্তব্য ১৩৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×