বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনার এক দেশ। এই দেশ পারেনা এমন কিছুই হয়তো থাকবেনা অদূর ভবিষ্যতে। অসম্ভব কে সম্ভব করে তোলার প্রচেষ্টা এ দেশের মানুষকে করেছে পরিচিত।
আজ আমি এমন এক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি তুলে ধরার চেষ্টা করব। আপামর জনসাধারণের ধারনা এই দেশে গবেষনা কাজে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তার কিছু অংশ ঠিক হলেও সম্পূর্ণটা নয়। বাংলাদেশ এর সর্বচ্চো বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আন্তর্জাতিক মানের গবেষনা হয় তা অনেকের ই অজানা। আমি সৌভাগ্য ক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বিভাগ প্রান রসায়ন ও অনুপ্রান বিজ্ঞান বিভাগ এ পড়ার এবং গবেষণা করার সুযোগ পেয়েছি। এই বিভাগ এবং আমার গবেষণায় কাজ করার সুযোগ আমার আজকের লেখার অনুপ্রেরনা।
প্ল্যান্ট বায়োটেকনোলজী ল্যাব এই আমার গবেষণার হাতেখরি। প্রথমে ধারনা করতাম বাংলাদেশে যেহেতু গরিব দেশ এখানে আর গবেষণা কি হবে? কিন্তু আমার ধারনা ভুল প্রমানিত হলো যখন আমি জানতে শুরু করলাম যে আমাদের এই ল্যাবে কি ধরনের গবেষণা হয়। আসলেই অভাবনীয়। আমি বিস্মিত হলাম, অবাক হয়ে সবকিছু জানলাম এবং ঠিক করলাম যে আমিও এখানেই গবেষণা করব।
সবার ই হয়তো জানার ইচ্ছা করছে যে কি ধরনের গবেষণা হয় এই ল্যাব এ? তাই এর কিছুটা আলোচনা করছি। সবটা হয়তো এই অল্প পরিসরে লেখা সম্ভব হবেনা তবুও পরবর্তীতে ধারাবাহিক ভাবে লেখার ইচ্ছা আছে।
পুরো বিশ্ব এখন মলিক্যুলার লেভেল এ কাজ করে। তার মানে হচ্ছে শুধু বাহ্যিক দিক নয়, কোষ এর অভ্যন্তরে নিউক্লিক এসিড (DNA) এর পরিবর্তন এবং এর ফলে আরো যে সকল পরিবর্তন হয় তার বিশ্লেষণ করা এখন খুবই প্রয়োজন। বিশ্ব যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এই বিষয়ক গবেষণায় সেখানে আমাদের প্রচেষ্টা থাকাটা খুবই জরুরি। সেই প্রচেষ্টা এবং তার সুফল অচিরেই হয়তো আমাদের চোখে পরবে। এক্ষেত্রে সম্প্রতি পাঁট ও একটি ছত্রাক এর জীবন রহস্য উন্মোচন উল্লেখযোগ্য। এধরণের সাফল্য ইঙ্গিত দিচ্ছে আগামীতে হয়তো আমরা আরো সুখবর শুনতে যাচ্ছি।
এবার আসি প্ল্যান্ট বায়োটেকনোলজি ল্যাব এর মলিক্যুলার লেভেল এর কাজ এর বর্ননায়, এই ল্যাব এর একটি মূল উদ্দেশ্য হলো লবন সহিষ্ণু ধান গাছ কৃষক এর হাতে তুলে দেওয়া। এর জন্য বিভিন্ন ভাবে প্রচেষ্টা চলছে। যার মধ্যে মলিক্যুলার লেভেল এর কাজ এর পরিমান খুবই বেশি। এরই মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন পথের মাধম্যে অগ্রসর হয়ে মূল লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে। যার মধ্যে রয়েছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে নতুন জীন (segment of DNA) ধান গাছে প্রবেশ এবং প্রকাশ করা। DNA marker(চিহ্ন) এর মাধম্যে উপযুক্ত বৈশিষ্ট্য কে সনাক্তকরন এবং ক্রসিং এর মাধ্যমে তা অধিক ফলনশীল ধান জাতে স্থায়িকরন। এছাড়াও সম্প্রতি ট্রান্সক্রিপ্ট লেভেল এ কোষ এর অভ্যন্তরে পরিবর্তন লক্ষ্য করার কাজ ও হাতে নেয়া হয়েছে। এসব এর সাথে তো রয়েছেই বায়োইনফরমেটিক্স এর কাজ। সর্বোপরি একেবারেই বিশ্ব মানের কাজ। এসব ই সম্ভব হয়েছে কিছু মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম, মেধা ও মননের কারনে। এক্ষেত্রে আমাদের ল্যাব এর প্রধান গবেষক এর নাম অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়। তিনি হচ্ছেন অধ্যাপক ডঃ জেবা ইসলাম সেরাজ। যার তত্ত্বাবধানে এই ল্যাব এর কাজ পরিচালিত হচ্ছে। এরকম কিছু বিজ্ঞানীর অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধার উপযুক্ত ব্যাবহার এর কারনেই আজকে আমাদের এই বিশ্ব মানের গবেষণা দেখার ও করার সুযোগ হচ্ছে বাংলাদেশে থেকেই।
হয়তো আশানুরূপ সাড়া না পেয়ে অনেক মেধাবী বিজ্ঞানীই আজ বিদেশে গবেষণা করছেন। কিন্তু আমাদের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে যদি আর একটু গুরুত্ব দেয়া হতো আমাদের এই ধরনের গবেষণাকে হয়ত আমারা আরো এগিয়ে যেতাম। তারপরেও আমি খুবই আশাবাদী যে আমাদের সাফল্যের পাখা হয়তো আরো বিস্তৃত হবে ভবিষ্যতে। এই কামনাই করি।