কাহলীল জিবরান লেবাননী বংশোদ্ভুত আমেরিকান কবি ও চিত্রশিল্পী। যাঁর জন্ম ১৮৮৩ আর মৃত্যু ১৯৩১। যিনি আরবী ও ইংরেজী উভয় ভাষাতেই লিখেছেন। ১৯২৩ সালে তার দ্য প্রফেট গ্রন্থের মাধ্যমে তিনি সারা বিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি পান। এই দ্য প্রফেট সম্পর্কে তিনি নিজের কলমেই লিখেছেন - এই গ্রন্থটি হচ্ছে শুধুই একটা ক্ষুদ্র অংশ, যা আমি দেখেছি ও প্রতিদিন যা দেখি এবং বহু জিনিষের একটা ক্ষুদ্র অংশ....।
দ্য প্রফেট এর আমার ভাললাগা কয়েকটি লাইন বিষয়াকারে নিচে তুলে ধরলাম, যা কোনভাবেই পুরো গ্রন্থটির ব্যাপকতা ও বিশালতাকে প্রতিনিধিত্ব করে না, এমনকি মূল সুরতো নয়ই। এর দ্বারা শুধু তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির কিছুটা বোঝা যাবে। তারপরও আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে।
শিশু:
তোমরা শিশুদের ভালবাসা দিতে পার কিন্তু তোমাদের চিন্তাগুলি নয়। কেননা তাদের নিজস্ব চিন্তাধারা রয়েছে। তাদের দেহকে তোমরা গৃহবন্দী করতে পার কিন্তু আত্মাকে নয়। কেননা তাদের আত্মা বসবাস করে আগামীকালের ঘরে, যে ঘর তোমরা পরিদর্শন করতে পারনা এমনকি স্বপনেও নয়। বরং তোমরা তাদের মত হবার চেষ্টা করতে পার, কিন্তু তাদেরকে তোমাদের মত করার চেষ্টা করো না। কারন জীবন যেমন অতীতে পরিভ্রমন করে না, আবার অতীত কলঙ্ক নিয়েও বসে থাকে না।
আনন্দ ও বেদনা :
কেউ বলে আনন্দ বেদনার চেয়ে বড়, আবার কেউ বলে, না বেদনা আনন্দের চেয়ে......। আমি তোমাদের বলি- তারা বিভাজনযোগ্য নয়। তারা একত্রে আসে আর যখন একজন একাকী আসে এবং বসে তোমার সাথে খাওয়ার টেবিলে তখন অন্যজন অপেক্ষা করে তোমার জন্য তোমার বিছানায়।
গৃহ:
তোমাদের গৃহগুলি নৌকার মাস্তুল হবে কিন্তু নোঙ্গর হবে না। এটা কখনই হবে না চকচকে ফিনফিনে আবরন যা একজন আহতকে ঢেকে ফেলে, কিন্তু চোখের একটা পাতলা পাতাই পুরো চোখকে দেখে রাখে।
আর বেঁচে থাকার জন্য তোমরা মৃতের তৈরী সমাধীতে বসবাস করো না।
অপরাধ ও শাস্তি:
খুন হয়ে যাওয়া ব্যক্তি নিজের খুনের জন্য দায়ী হয় না এমন নয় এবং অপহরনের শিকারও সর্বদা নির্দোষ নয় যখন যে অপহৃত। ন্যায়পরায়নতা নির্দোষ নয় যখন দুর্বৃত্ত সেটা দিয়ে তার কৃতিত্ব প্রদর্শন করে । আর মানবহত্যায় যার হাত কলঙ্কিত নয় তার হাতও পবিত্র নয় যখন সে নৃশংস কাজের প্রতিভূ।
তোমরা কিভাবে তাকে শাস্তি দেবে যার অপকর্ম তার অনুতাপের চেয়ে বড়। অনুতাপ কি ন্যায়পরায়নতা নয় যা সেই আইন দ্বারা পরিচালিত।
আইন:
তোমরা আইনকে ধরাশায়ী করে খুশি হও, আরও বেশী খুশি হও আইনকে খুন করে। আমি তাদের সম্পর্কে কি বলব যারা সুর্যের দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুর্যালোকে।
স্বাধীনতা:
আমি দেখেছি মন্দির ও নগর দুর্গের ছায়ায় তোমাদের মাঝের সবচাইতে স্বাধীনমানুষ নিজের স্বাধীনতা হিসেবে জোয়াল ও হাতকড়া পরে বসে আছে। আর তোমাদের স্বাধীনতা যখন তার শৃঙ্খল হারায় তখন সে নিজেই বৃহত্তর স্বাধীনতার শৃঙ্খলে পরিনত।
যন্ত্রণা:
যন্ত্রণা হলো সে খোলসের ভাঙ্গন, যে খোলস বোঝাবুঝিকে অবরোধ দিয়ে রাখে।
বন্ধুত্ব:
তোমাদের বন্ধু হলো তোমাদের নিরুত্বর প্রয়োজনগুলি। আর বন্ধূত্বের ভিতর উদ্দেশ্যকে প্রশ্রয় দিওনা উদ্যমের গভীরতাকে রক্ষা করতে।
আনন্দ:
আনন্দের সাত বোন। আর সবচেয়ে ছোটটি আনন্দের চেয়েও অধিক সুন্দরী।
সৌন্দর্য্য:
অত্যাচারিত ও আহতের কাছে - সৌন্দর্য্য হচ্ছে, দয়ালু ও বিনয়ী।
আবেগপ্রবনের কাছে - প্রবল ক্ষমতা ও আনন্দের বস্তু।
ক্লান্ত ও পরিশ্রান্তের কাছে - কোমল ফিসফিসানি, যে উদ্দীপনার কথা বলে।
রাতের নগরপাহারাদার এর কাছে - ভোরবেলায় উদিত হবে পুর্বদিক থেকে।
শীতকালে তুষারপাতে ভ্রমণে অক্ষম ব্যক্তির কাছে - বসন্তের সঙ্গে সঙ্গে আসবেই......
সৌন্দর্য্য সম্পর্কে তোমরা যা বলেছ, যদিও সত্যের ভেতরে তোমরা তার সম্পর্কে বলনাই যতটা বলেছ তোমাদের অতৃপ্ত বাসনা থেকে। আর সৌন্দর্য্য একটি চাহিদা নয়, সৌন্দর্য্য একটি পরমানন্দ। সৌন্দর্য্য হচ্ছে জীবন।
ঈশ্বর:
যদি তোমরা ঈশ্বরকে জেনে থাক তাহলে ধাঁধাঁর সমাধানকারী হতে যেয়ো না, বরং চারপাশের ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ কর, দেখবে তিনি শিশুদের সাথে খেলছেন, আর মহাশুণ্যের দিকে তাকাও, দেখবে তিনি মেঘের ভেতর হাঁটছেন, অবতরন করছেন বৃষ্টির সাথে। আরও দেখতে পাবে তিনি ফুলের ভেতর হাসছেন........
জীবন ও মৃত্যু:
জীবন ও মৃত্যু হচ্ছে একজন, যেমন একজন নদী ও সমুদ্র।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:৪৭