সর্বশেষ হরতালপুর্ব সন্ধ্যায় টিভিস্ক্রিনে আমরা দেখলাম বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বক্তব্য শেষ করার পরই জামায়াতের মুখপাত্র তাঁর পাশে বসেই হরতাল ঘোষনা দিলেন। তাও কিসের জন্য ? উত্তর হলো, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রত্যাহারের জন্য। যা মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে কলঙ্কমুক্ত হতে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য দুঃখজনক ও লজ্জাজনক।
এখন বিএনপি যতই বলুকনা কেন জামায়াত তাদের কর্মসুচী দিয়েছে এতে আমাদের কিছু করার নেই। এটা দেখলে বা শুনলে হাস্যকর লাগছে না ? জনগনকে কি লজেন্স খাওয়া বাচ্চা মনে করেন নাকি আমাদের রাজনীতিবিদরা ? ধরুন, একজন ভালমানুষের পাশের চেয়ারে বসে থেকে অন্য একজন একটা অন্যায় কাজের ঘোষনা দিলে তার দায় কি পুর্বোক্ত মানুষটি অস্বীকার করতে পারেন ? ভালমানুষটি তখন চুপচাপ বসে তা দেখলেন, তাহলে তিনি কি আর ভালমানুষ থাকেন ? তাঁর এই আচরন দিয়ে কি বোঝা যায় ?
পুরো দেশের মানুষের মানষিকতার বিরুদ্ধে গিয়ে জামায়াতের রাজনীতিকে সমর্থন করতে বিএনপি বাধ্য হচ্ছে ?
বেশী বলা হয়ে যাচ্ছে কিনা তা জানিনা, তবে এটা বলতে বাধ্য হচ্ছি, বিএনপি নামক দলটি দিনদিন জামায়াতের মাঝে বিলীন হতে যাচ্ছে । মানি আর না মানি, বিএনপির বর্তমানের থার্ডক্লাস রাজনীতিই এই কাজটিকে ত্বরা্ন্বিত করছে।
যে বিএনপি দলটির এদেশের রাজনীতিতে আরও অনেক দেয়ার ছিলো, দ্বিদলীয় একটা ব্যবস্থা যেদলটি সহ হতে পারতো সেটা তাদেরই নেতাদের অর্বাচিনতার ও বুদ্ধিহীনতার জন্য ভেস্তে যেতে বসেছে। মাঝখান থেকে জামায়াত এর মত একটা অসভ্যদল চুড়ান্তভাবে লাভবান হচ্ছে।
সামনের ইলেকশনে যদি বিএনপি পাওয়ারে না আসতে পারে তাহলে আর একটি ইলেকশন পরই রাজনীতি হবে আওয়ামীলীগ বনাম জামায়াত। যেখানে বিএনপি জামায়াতের জায়গা নিবে। বিএনপির এভাবে ক্ষয়ে যাওয়ার পিছনে তাদেরই পুরো অবদান। তবে বিএনপির এভাবে বিলীনতার দিকে যাওয়ার পিছনে আওয়ামীলীগেরও অবদান আছে। তাদের উচিত ছিলো তাদের স্বার্থে এবং দেশের স্বার্থে বিএনপিকে সঠিক পথে রেখে জামায়াতকে ভ্যানিশ করে দেয়া। যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে যেটার সুযোগ এসেছিলো। কিন্তু তারাও তাদের অদুরদর্শিতার জন্য সেটাতে ব্যর্থ হয়েছে, যা দেশের জন্য এবং তাদের জন্যও ভয়ংকর হতে পারে।
কারন মধ্যডান বিএনপিকে মোকাবেলা করা মধ্যবাম হিসেবে তাদের জন্য যতটা সহজ ছিলো, বিএনপির অনুপস্থিতিতে কট্টর ডান জামায়াতকে মোকাবেলা করা ততটাই কঠিন হবে।
এই বিষয়টা জাময়াতের থিম্কট্যাম্ক ভালকরেই জানে কিন্তু আওয়ামীলীগ বা বিএনপির নেতৃত্ব যেটা বুঝতেই পারছেন না। বিএনপির প্রতিদ্বন্দী হলো আওয়ামীলীগ, কিন্তু বিএনপি'র আসল শত্রু হলো জামাত। জামাত ভালকরেই জানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপির উপস্থিতিতে তাদের এর চাইতে সামনে যাবার সুযোগ নেইই বলা যায়।
সাধারনত প্রতিটি দেশেই বাম ও ডান এই দুটি ধারা বিরাজ করে। আর যার সমর্থনও প্রায় ফিফটি-ফিফিটি। বাংলাদেশের বামপন্থিদের অযোগ্যতার কারনে মধ্যবাম হিসেবে আওয়ামীলীগ সবসময়ই একটা সুবিধাজনক অবস্থায়। কিন্তু ডানপন্থিদের সরব ও শক্তিশালী উপস্থিতিতে মধ্যডান বিএনপি সমর্থন সর্বদাই হুমকির মুখে। আর সেখানে কট্টর ডান জামায়াতের যেকোন ধরনের প্রতিষ্ঠা বিএনপির ভবিষ্যতকে দিনদিন ধুসরই করে তুলবে, এটা বিএনপি যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবে ততই তাদের এবং দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১২:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



