somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্রাজিল কিংবা বরিশাল, আমাজন কিংবা কীর্তণখোলা (ভ্রমণ ও ছবিব্লগ)

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- হ্যাঁ বল.....
- কই তু্ই, আমিতো তোর অফিসের নিচে, ট্যাক্সরিটার্ন দিতে আসছি।
- স্যরি দোস্ত, আমিতো অফিসে নাই।
- তাহলে তুই কই ?
- আমি ? আমিতো ব্রাজিল।
- কি ? ফাজলামি করিস ?
- না, দোস্ত। একটুও ফাজলামী না, আমি হোটেল গ্রান্ড পার্ক, ব্রাজিল।
- তাহলে তুই ফোন ধরলি ক্যামনে ?
- ব্রাজিলে কি ফোন ধরা যায়না ?
- না মানে তোর আগের জিপি নম্বরতো.......
- না, এখানে আসার আগে রোমিং করে নিয়েছি ....... তা তুই কি করলি.........তোর ব্যালেন্সতো শ্যাষরে দোস্ত.......

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মিলিসেকেন্ডে লাইন নাই।

- হেই শালা বিপ্পা (বিপু), ফোন কাটলি ক্যান ?
- নাআ.....তা কবে গেলি ব্রাজিল ?
- তুই আমার ফোন ধরলি ক্যান ? তোর টাকার মায়া আছে, আমার নাই শালা........আমি গতকাল গেছি, আগামীকাল ফিরমুু
- তা-এত তাড়াতাড়ী ফিরবি ক্যান, সাম্বানৃত্য দেখবি না ?
- শালা সাম্বানৃত্য তোর ইয়েদিয়ে দেবো। তারপর তুইই সাম্বানৃত্য করবি, আমি বইসা বইসা দেখমু, আমি ব্রাজিল (BRASIL) মানে বরিশাল (BARISAL), আমাজান মানে কীর্তণখোলার তীরে।

হ্যাঁ পাঠক, বরিশালের কথা বলছি। অফিসিয়াল ট্যুরকে প্লেজার ট্যুরে রুপান্তর করার বিষয়ে আমার বিস্ময়কর সুনাম অফিস অঞ্চলে। লঞ্চজার্নির লোভে বিমান এভয়েড করে টিপু-৭ এ করে বরিশাল রওনা দিলাম আনোয়ার ভাই ও আমাদের গাইড হান্নান সহকারে। এটা আমার ২য় লঞ্চট্যুর। প্রথমবার ঘটেছিলো কয়েক বছর অাগে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে, তাও মাত্র ৩ ঘন্টার দিবাজার্নি। এবারই পুর্নাঙ্গ লঞ্চট্যুর। সাড়েআটটার লঞ্চ প্রায় পনের মিনিট পর সদরঘাট থেকে ছাড়লো। আমার আর আনোয়ার ভাইয়ের জন্য ভিঅাইপি টুইন স্যুট। আর গাইড হান্নান এর জন্য সিঙ্গেল কেবিন। যথারীতি এখানেও ডিসক্রিমিনেশন। রাত দশটায় খাবার চলে আসলো। একটু পরপর হান্নান সাহেব কি লাগবে, কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা জানাতে চাচ্ছিলো। বয়সে অনেক বড় হওয়াতে অস্বস্তিও লাগছিলো তাই বললাম, খাওয়াতো শেষ আপনি নিজের কেবিনে গিয়ে রেষ্ট নিন, কোন কিছু লাগলে আমি ফোন দিবো। উনি আমার কথায় হাসিমুখে বিদায় নিলেন। রাত প্রায় ১১ টা। আমিতো চিরকালীন উড়নচন্ডি। স্যুটে শুয়ে বসে কি করব, বের হয়ে আসলাম বারান্দায়। আনোয়ার ভাই রুমে শুয়েশুয়ে টিভিতে ভিডিও দেখতে লাগলেন। কিছুক্ষন বারান্দায় চেয়ার নিয়ে বসে বসে চাঁদের আলোয় নদীর কালো জল দেখছিলাম। বুড়ীগঙ্গা থেকে আমাদের লঞ্চ মেঘনায় ঢুকে পড়েছে। দুএকটা ছোট ছোট লঞ্চকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে আমাদের লঞ্চ, আশেপাশে অনেকগুলো ইলিশ ধরার নৌকা দেখা যাচ্ছে। মাছ ধরার জালকে এভয়েড করে চলার জন্য পাওয়ারফুল টর্চের আলো দিয়ে ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছিলো। চাঁদের আলো নদীতে পড়ায় এক মায়াবী পরিবেশ। নদীর বাতাস অনেক ঠান্ডা। ব্যালকনিতে একা বসে থেকে ভাল লাগছিলো না, আনোয়ারভাইকে দরজা লাগাতে বলে বাইরে বের হয়ে আসলাম। নিচের ডেকে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে তিনতলায় মাষ্টারের চেম্বারে এসে উঠলাম। নিজের পরিচয় দিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের আগ্রহ প্রকাশের ফলশ্রুতিতে সেখানেই অবস্থান গ্রহন। দারুন অনুভুতি। দারুন আগ্রহ নিয়ে লঞ্চচালনা পর্যবেক্ষণ শেষে আবার নিজের স্যুটের বারান্দায়। রাত তিনটায় বিছানায়। সকাল ছয়টায় হান্নানের ডাকাডাকিতে অনিচ্ছানিয়ে ঘুমচোখে বের হয়ে আসতে হলো। হোটেলের গাড়ি লঞ্চটার্মিনালের বাইরে। হোটেলে ফিরেই ফ্রেস হয়ে লাউঞ্জে বের হয়ে আসলাম। বাকিটা ছবিতেই বলা হোক...........

এম.ভি.টিপু-৭ (লঞ্চটি ৩ তলা)



হোটেল এর ফ্রন্ট ভিউ ( এখানেই অবস্থান এবং মিটিং )



হোটেল এর ব্যাক ভিউ (বেল পার্ক এরিয়া)



ইনসাইড দ্য হোটেল রুম



হোটেলের ব্যালকনি থেকে



হোটেলের জানলা থেকে



কীর্তণখোলার তীর থেকে (ছবিটা সুন্দর করে তুলতে পারিনি)



কীর্তণখোলার তীরে ক্রেন



বরিশাল জিলা স্কুল (বাংলাদেশের জিলা স্কুলগুলিকে আমার নিজের স্কুল বলে সবসময়ই মনে হয়)



বরিশাল শিশুপার্ক



বরিশাল পুলিশলাইন



অক্সফোর্ড মিশন গির্জা (এপিফানি গির্জা)। (সময়াভাবে পুর্বানুমতি না থাকায় বর্তমান বাস্তবতায় অতিরিক্ত নিরাপত্তাজনিত কারনে ঢুকতে পারিনি, তাই সাইনবোর্ডের ছবিই সার। বাইরে থেকেই যথেষ্ট সুন্দর এক গির্জা।)



বরিশাল ক্লাব



নদীর তীরের পার্কের ভিতরে



গুটিয়ার মসজিদ দেখতে যাওয়ার পথে পানের বরজ



দূর্গাসাগর দীঘি (যার মাঝখানে ছোট্ট একটি দ্বীপ আছে)



দূর্গাসাগর দীঘির ইতিহাস (অলসতাজনিত কারনে ডিটেইলস লিখতে না চাওয়ায় এই ছবি)



ইনসাইড দ্য গুটিয়া মসজিদ (শহর থেকে প্রায় ২৫ কি.মি. দুরে গ্রামের ভিতর এই মসজিদের নির্মাণশৈলির সুনামেই দেখতে আসা)



গুটিয়ার মসজিদ (রাতের ভিউ)



শহরটি যথেষ্ট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, রাস্তাঘাটগুলো সুন্দর এবং ছিমছাম। এই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কথা বলে রিক্সাওয়ালা ভাইয়ের মুখে লেইট মেয়র হিরণ সাহেবের সুনাম খুবই শুনলাম। তবে একটা কথা না বললেই নয়, বরিশালের ভাষাটা আসলেই রিদমিক। লঞ্চ টার্মিনাল, বরিশালের শহরে ও আসেপাশে যখনই সাধারনের মাঝে ছিলাম, ভাষাটা আমাকে যথেষ্ট আকৃষ্ট করেছিলো।

বরিশাল নিয়ে যেহেতু লিখছিই, বরিশাল নিয়ে দুলাইনের একটি চুটকি মনে হয় বলতেই পারি। "গ্রাম থেকে দুই ভাতিজা বরিশালের শহরে এসেছে দেখার জন্য। সারাদিন শহর দেখা শেষে দুজনেই মহাখুশি, একজন খুশিটাকে পুর্নাঙ্গ করার্থে আরেকজনকে বললো, শহরেতো আইছিইরে ভাই, যাবার আগে চাচার নামে একটা কেইস করেই যাই।"
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:২৪
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×