somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভোট ও ভোটাধিকার – দেখুন ইসলাম কী বলে...

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নির্বাচন ২০০৮। আর মাত্র একটি দিন বাকি। প্রার্থীদের শেষ প্রচারণাও শেষ হওয়ার পথে। অনেকেই ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন কাকে ভোট দিবেন। কেউ আবার সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। কেউ ভাবছেন, একজনকে দিলেই তো হয়; যার জেতার সম্ভাবনা বেশি তাকে দিলেই বরং ভালো, ভোটটা আর বেকার যায় না।

কিন্তু কেউ কি ভেবে দেখেছেন যে, ভোট দেওয়া এক মহান দায়িত্ব। পরকালে এ ব্যাপারে কঠিন জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে। সৎ প্রার্থীকে ভোট দিলে তো কথাই নেই। কিন্তু জেনে শুনে অসৎ প্রার্থীকে ভোট দিলে তার পরিণাম কী হবে?

ইসলাম ভোট ও ভোটাধিকারকে তিনটি প্রায় অভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে।

১. সাক্ষ্য প্রদান।
২. সুপারিশ করা।
৩. উকিল বানানো বা দায়িত্ব দেওয়া।

এবার একটু ব্যাখ্যা করা যাক...

১. সাক্ষ্য প্রদান: কাউকে ভোট দেওয়ার অর্থ হলো তার ব্যাপারে এই মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করা যে, তিনি সৎ ও যোগ্য; দেশ ও জাতির উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে তিনিই সবচেয়ে উপযুক্ত।

কেউ সৎ ও যোগ্য না হলেও তাকে ভোট দেওয়া আর তার ব্যাপারে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া একই রকম। উভয়টাই মহাপাপ বরং হারাম। কুরআন ও হাদীসে এমন ভাষ্যই পাওয়া যায়।

আল্লাহ বলেন,

- “তোমরা মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান থেকে বিরত থাক”। (সূরা হাজ্জ্ব: ৩০)
- “হে ঈমানদারগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক; আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও”। (সূরা নিসা: ১৩৫)
- “হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে অবিচল থাকবে এবং কোন সম্প্রদায়ের শত্রতার কারণে কখনও ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করো না”। (সূরা মায়েদা: ৮)

নবীজীও স: আমাদেরকে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান হতে সতর্ক করেছেন।

- হযরত আনাস রা: হতে বর্ণিত, নবীজীকে স: একবার কবীরা গোনাহ বা মহাপাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি উত্তরে বললেন, “আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া, মানুষ হত্যা করা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। (বুখারী: ২৫১০)
- আয়মান বিন আখরাম রা: বলেন, একদিন নবীজী স: খুতবায় দাঁড়িয়ে বললেন, “হে লোকসকল! মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া আর আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করার একই রকম”। (তিরমিযী: ২২৯৯)

আবার যোগ্য কাউকে না পেয়ে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকাও হারাম। কেননা ভোট না দেওয়া আর সাক্ষ্য গোপন করা একই রকম। আর আল্লাহ বলেন,

- “তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না। যে কেউ তা গোপন করবে তার অন্তর পাপপূর্ণ হবে”। (সূরা বাক্বারা: ২৮৩)

২. সুপারিশ করা: ভোট দেওয়ার অপর অর্থ হলো ভোটপ্রার্থীর জন্য এ মর্মে সুপারিশ করা যে, আমার দৃষ্টিতে তিনিই সবচেয়ে সৎ ও যোগ্য। অতএব, আমি তাকে নির্বাচিত করার সুপারিশ করছি।

আর জেনে শুনে অসৎ ব্যক্তির জন্য ভোট বা সুপারিশ করলে পরবর্তীকালে তার সব অসৎ কর্মকান্ডের বোঝা ভোটারের উপরও আসবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“যে লোক সৎকাজের জন্য কোন সুপারিশ করবে, তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে। আর যে লোক মন্দ কাজের জন্য সুপারিশ করবে, সে তার বোঝারও একটি অংশ পাবে”। (সূরা নিসা: ৮৫)

৩. উকিল বানানো বা দায়িত্ব দেওয়া: কাউকে ভোট দেওয়ার আরেক অর্থ হলো তাকে জাতির উন্নয়নের দায়িত্ব দেওয়া এবং উকিল বানানো।

নিজ প্রয়োজনে কাউকে উকিল বানালে তো তার লাভ-ক্ষতি কেবল নিজের উপরই বর্তায়। কিন্তু কাউকে ভোট দেওয়ার অর্থ তাকে পুরো জাতির উকীল বানানো, যার লাভ-ক্ষতি সমগ্র জাতিকেই ভোগ করতে হয়। ফলে সমগ্র জাতির কাছে এই ভোটারকে অপরাধী হতে হয়। সে সাথে প্রার্থী জয়যুক্ত হয়ে অন্যায় ও দুর্নীতি করলে তার পাপের বোঝাও ভোট প্রদানকারীর উপর বর্তায়।

তো কী করা যেতে পারে? এ প্রশ্ন সবারই। আগে ‘না ভোট’ –এর ব্যবস্থা ছিল না। কোন একজনকে ভোট দেওয়া ছাড়া আর কোন গত্যান্তর ছিল না তখন। তাই সে প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত কম খারাপ প্রার্থীকেই ভোট দেওয়া সঙ্গত ছিল। কিন্তু বর্তমানে ‘না ভোট’ –এর ব্যবস্থা থাকায় সৎ ও যোগ্য প্রার্থীর অভাবে তা দেওয়াই সঙ্গত হবে।

সারকথা:

১. ভোটের ব্যাপারটা কেবল পার্থিব নয়। পরকালেও এ ব্যাপারে যথেষ্ট প্রশ্নের সম্মুখীন দিতে হবে।
২. ভোট না দেওয়া হারাম। আবার অসৎ ও অযোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়াও হারাম। এ ক্ষেত্রে পরবর্তীকালে অসৎ প্রার্থীর অসৎ কর্মকান্ডের পাপের ভাগী ভোটারকেও হতে হবে।
৩. দল-মত নির্বিশেষে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দিতে হবে। এতে পরবর্তীকালে তিনি যা যা ভালো কাজ করবেন তার সওয়াব ভোটারও পাবেন।
৪. সৎ প্রার্থীর জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও তাকেই ভোট দিতে হবে। নতুবা এটি জেনে শুনে অন্যায়ের সাপোর্ট বলে গণ্য হবে।
৫. অসৎ প্রার্থীকে ভোট দেওয়া একটি অমার্জনীয় অপরাধ। এ থেকে তাওবার সুযোগ দ্বিতীয়বার আর আসে না।
৬. কোন সৎ প্রার্থী না থাকলে নিজের দায়মুক্তির জন্য ‘না ভোট’ দেওয়াই শ্রেয়।

ভোট দেওয়ার আগে তাই ভেবে নিন আরেক বার...
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিরিতের সংস্কৃতিওয়ালা তুমি মুলা’র দিনে আইলা না

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৬


---- আমাদের দেশে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সমুন্নয়ন তলানিতে। তেমন কোন সংস্কৃতিবান নেই, শিরদাঁড়া সোজা তেমন মানুষ নেই। সংস্কৃতির বড় দান হলো ভয়শূন্য ও বিশুদ্ধ আত্মা। যিনি মানবের স্খলনে, যেকোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×