ভবানীপ্রসাদ সাহুর "অধার্মিকের ধর্ম-কথা" বইটা পড়ছিলাম। হিন্দু, খ্রিস্টান, ইসলাম ধর্মরে পুরা ধুয়ে দিছেন। সমালোচনার ধাঁর ক্ষুরের চাইতেও বেশি। ধমর্ান্ধতার বিরুদ্ধে খুব চমৎকার একটি বই হইলেও দূর্বল ইমানদারদের এই বই পড়া নিষেধ। বইটা শেষ হওনের আগেই নাস্তিক হওনের প্রবল সম্ভাবনা হ্যাজ।
আরজ আলি মাতুব্বরকে নিয়ে লেখা অংশটা পড়ছিলাম। তিনি আরজ আলিকে ডেকেছেন ইসলামী 'চার্বাক' নামে। মাতুব্বরের জীবনের কথা লিখতে গিয়ে আরজ আলির একজন সক্রেটিসে পরিনত হওয়া অংশটা থেকে উদ্ধৃতি করছি (সংক্ষেপিত):
"তারা ছিলেন 3 ভাই, 2 বোন। আরজ আলির 4 বছর বয়সে তার বাবা এন্তাজ আলি মারা যায়। চরম অনটনে তার বিধবা মা লালমন্নেছা বিবি এলাকার কুখ্যাত কুসীদজীবী জনার্দন সেনের কাছ থেকে টাকা ধার করতে বাধ্য হয়। টিনের বসতবাটিও নিলাম করে নেয়। থাকে শুরু ভিটেটুকু। বিধবা মা বাসার কাজ করে সন্তানের খাবার জুটিয়েছেন, লেখাপড়ার যথাসাথ্য চেষ্টা করেছেন।
আরজ আলির যখন 32 বছর তখন তার প্রাণাধিক প্রিয় মা মারা যায়। মায়ের স্মৃতিকে নিজের কাছে চিরজাগরূক রাখার উদ্দেশ্যে মায়ের অন্তত মৃত মুখের একটি ছবির জন্য আরজ আলি মরীয়া হয়ে উঠেন। শহর থেকে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে নিয়ে আসেন একজন ফটোগ্রাফার, মায়ের প্রিয় মুখের ছবি তোলেন।
কিন্তু দাফন কাফনের সময় এল চরম আঘাত; 'ধর্ম' তার হিংস্র দাঁত বের করল। গ্রামের ধমর্ীয় গুরুরা মহাক্রোধে অগি্নশর্মা হয়ে উঠেন। তারা জানাজা পড়াতে অস্বীকার করলেন, যেহেত ু মৃত হলেও মহিলার ছবি তোলা হয়েছে।
.... তার মনে শুরু হলে ধমর্ীয় সংস্কার ও রীতিনীতি নিয়ে প্রবল দ্্বন্দ্ব এবং সেই থেকে শুরু। তারপর দীর্ঘ সময় ধরে স্রষ্টা, কোরান, হাদিস ও ধমর্ীয় নিয়মকানুন সম্পর্কে নিজের চেষ্টায় পড়াশুনা করছেন; বিজ্ঞান ও প্রকৃতি সম্পর্কে নানা বই সংগ্রহ করে পড়তে শুরু করলেন। নানা প্রশ্ন তার মনে জাগল ...."
বেচারা আরজ আলি প্রিয় মায়ের প্রিয় মুখখানি স্মৃতিতে ধরে রাখাকে ধর্মান্ধদের ধর্ম নিয়ে মনোপলি খেলার একটা সুযোগ করে দিয়েছিলো। মানবিক অনুভূতির কোন স্থান নেই তাদের ধর্ম ব্যবসায়। হায়রে আমাদের ধর্মবোধ! ধর্ম গ্রন্থে আছে এক শ্রেনীর মানুষের দিল (হৃদয়) নাকি স্রষ্টা কঠিন আবরন দিয়ে আবৃত করেন; হৃদয় তাদের কঠিন হয়ে যায়; ধর্ম ব্যবসায়ীদের কাঠিন্য দেইখা মনে হয় সেই শ্রেনীর একটা বড় অংশই বোধহয় তেনারা।
......
মারা যাওয়ার পূর্বে নিজের দেহতে দান করে দেওয়ার অছিয়তনামায় তিনি (আরজ আলি) বলেন,
"1. মৃতু্যর পর আমার শবদেহটি জলে ধৌতপূর্বক পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে বস্ত্রাবৃত করবা। হয়তো খোশবু ব্যবহার করবা। তাছাড়া অন্য কোন রূপ চিরাচরিত প্রথা রক্ষার জন্য উদ্্বিগ্ন হবা না।
2. আমার বিদেহী আত্নার কল্যানের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করার জন্য কাউকেও পীড়াপীড়ি বা সেজন্য অর্থব্যয় করবা না। [গাঢ়] তবে কারো স্বেচ্ছায় প্রার্থনা বা আশীর্বাদ আমার অবাঞ্চিত নয়। [/গাঢ়]
3. ... "
এই মহামানবের আত্নার কল্যানে আমি স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে প্রার্থনা করি স্রষ্টার কাছে। স্রষ্টার আশর্ীবাদ হউক তার আত্নার প্রতি। সালাম হে সক্রেটিস।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ বিকাল ৪:৪৩