somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের সক্রেটিস - আরজ আলি যেভাবে একজন আরজ আলি হয়ে ওঠেন

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ ভোর ৪:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভবানীপ্রসাদ সাহুর "অধার্মিকের ধর্ম-কথা" বইটা পড়ছিলাম। হিন্দু, খ্রিস্টান, ইসলাম ধর্মরে পুরা ধুয়ে দিছেন। সমালোচনার ধাঁর ক্ষুরের চাইতেও বেশি। ধমর্ান্ধতার বিরুদ্ধে খুব চমৎকার একটি বই হইলেও দূর্বল ইমানদারদের এই বই পড়া নিষেধ। বইটা শেষ হওনের আগেই নাস্তিক হওনের প্রবল সম্ভাবনা হ্যাজ।

আরজ আলি মাতুব্বরকে নিয়ে লেখা অংশটা পড়ছিলাম। তিনি আরজ আলিকে ডেকেছেন ইসলামী 'চার্বাক' নামে। মাতুব্বরের জীবনের কথা লিখতে গিয়ে আরজ আলির একজন সক্রেটিসে পরিনত হওয়া অংশটা থেকে উদ্ধৃতি করছি (সংক্ষেপিত):

"তারা ছিলেন 3 ভাই, 2 বোন। আরজ আলির 4 বছর বয়সে তার বাবা এন্তাজ আলি মারা যায়। চরম অনটনে তার বিধবা মা লালমন্নেছা বিবি এলাকার কুখ্যাত কুসীদজীবী জনার্দন সেনের কাছ থেকে টাকা ধার করতে বাধ্য হয়। টিনের বসতবাটিও নিলাম করে নেয়। থাকে শুরু ভিটেটুকু। বিধবা মা বাসার কাজ করে সন্তানের খাবার জুটিয়েছেন, লেখাপড়ার যথাসাথ্য চেষ্টা করেছেন।

আরজ আলির যখন 32 বছর তখন তার প্রাণাধিক প্রিয় মা মারা যায়। মায়ের স্মৃতিকে নিজের কাছে চিরজাগরূক রাখার উদ্দেশ্যে মায়ের অন্তত মৃত মুখের একটি ছবির জন্য আরজ আলি মরীয়া হয়ে উঠেন। শহর থেকে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে নিয়ে আসেন একজন ফটোগ্রাফার, মায়ের প্রিয় মুখের ছবি তোলেন।

কিন্তু দাফন কাফনের সময় এল চরম আঘাত; 'ধর্ম' তার হিংস্র দাঁত বের করল। গ্রামের ধমর্ীয় গুরুরা মহাক্রোধে অগি্নশর্মা হয়ে উঠেন। তারা জানাজা পড়াতে অস্বীকার করলেন, যেহেত ু মৃত হলেও মহিলার ছবি তোলা হয়েছে।

.... তার মনে শুরু হলে ধমর্ীয় সংস্কার ও রীতিনীতি নিয়ে প্রবল দ্্বন্দ্ব এবং সেই থেকে শুরু। তারপর দীর্ঘ সময় ধরে স্রষ্টা, কোরান, হাদিস ও ধমর্ীয় নিয়মকানুন সম্পর্কে নিজের চেষ্টায় পড়াশুনা করছেন; বিজ্ঞান ও প্রকৃতি সম্পর্কে নানা বই সংগ্রহ করে পড়তে শুরু করলেন। নানা প্রশ্ন তার মনে জাগল ...."

বেচারা আরজ আলি প্রিয় মায়ের প্রিয় মুখখানি স্মৃতিতে ধরে রাখাকে ধর্মান্ধদের ধর্ম নিয়ে মনোপলি খেলার একটা সুযোগ করে দিয়েছিলো। মানবিক অনুভূতির কোন স্থান নেই তাদের ধর্ম ব্যবসায়। হায়রে আমাদের ধর্মবোধ! ধর্ম গ্রন্থে আছে এক শ্রেনীর মানুষের দিল (হৃদয়) নাকি স্রষ্টা কঠিন আবরন দিয়ে আবৃত করেন; হৃদয় তাদের কঠিন হয়ে যায়; ধর্ম ব্যবসায়ীদের কাঠিন্য দেইখা মনে হয় সেই শ্রেনীর একটা বড় অংশই বোধহয় তেনারা।

......

মারা যাওয়ার পূর্বে নিজের দেহতে দান করে দেওয়ার অছিয়তনামায় তিনি (আরজ আলি) বলেন,
"1. মৃতু্যর পর আমার শবদেহটি জলে ধৌতপূর্বক পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে বস্ত্রাবৃত করবা। হয়তো খোশবু ব্যবহার করবা। তাছাড়া অন্য কোন রূপ চিরাচরিত প্রথা রক্ষার জন্য উদ্্বিগ্ন হবা না।
2. আমার বিদেহী আত্নার কল্যানের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করার জন্য কাউকেও পীড়াপীড়ি বা সেজন্য অর্থব্যয় করবা না। [গাঢ়] তবে কারো স্বেচ্ছায় প্রার্থনা বা আশীর্বাদ আমার অবাঞ্চিত নয়। [/গাঢ়]
3. ... "

এই মহামানবের আত্নার কল্যানে আমি স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে প্রার্থনা করি স্রষ্টার কাছে। স্রষ্টার আশর্ীবাদ হউক তার আত্নার প্রতি। সালাম হে সক্রেটিস।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ বিকাল ৪:৪৩
৪০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×