somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভিযানের নাম 'মেজবান সঙ্গে লইয়া ভ্রমন'। গন্তব্য শুভর বাড়ি এবং চতুর্থ মৃতু্যর উপাখ্যান

১০ ই মার্চ, ২০০৭ রাত ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় ব্লগার শুভর বাড়ি নিমন্ত্রন ছিলো গতকাল। দিনে যাবো, রাতে ফিরবো। সুহৃদ মাশা আর ঝড়ো হাওয়া সফরসঙ্গী। ঢাকা থেকে যাবো ঢাকার বাইরে। শুভ একটা কাজে ঢাকায় থাকায় সেও আমাদের সফরসঙ্গী, গন্তব্য তার নিজের বাড়ি। ট্রেনে আমরা উঠলাম কমলাপুর থেকে, শুভ এয়ারপোর্ট থেকে। অত:পর মেজবান সঙ্গে লইয়া এক আনন্দময় ভ্রমনের শুরু।

শুভরে যতবার দেখি ততবার আমি নি:সঙ্গোচে চিল্লাই (মনে মনে এবং বাইরে), আপনে একটা পাগলা। মানুষটা আসলেই পাগলা। মনে পড়ে দোহারের একটা প্রিয় গান হইলো 'পাগল'। গানের কথাগুলা এইরকম:
পাগল, পাগল - সবাই পাগল
তবে কেন পাগল ঘুটা?
দিল দরিয়ায় ডুব দিয়া দ্যাখ
পাগল বিনে ভালো কেডা?

এই ভালো মানুষ পাগলটা আমাদের নিয়া তার প্রিয় শহরে পৌছাইলো। রাস্তায় যায় আর আমাদের জিগায় এরপরে কোন দিকে? নিজের বাড়ি, আমাদের জিগায় কোন দিকে যাবে? আমরা র্যান্ডমলি বলি ডাইনে নাইলে বামে। কখনো এক দিকে কতদূর গিয়া, আমাদের বিভ্রান্ত কইরা বলে না, তাইলে অন্যদিকে যাই।

অবশেষে অনতিবিলম্বে তার রাজপ্রাসাদে পৌছালাম। পরিচয় হইলো তার টুকটুকে রাজপুত্তুর আর শাহজাদীর সাথে। আরো পরিচয় হইলো তার অসম্ভব ভালো বউটার সাথে।

আমার ধারনা বোকারা (আর শিশুরা) খুব দ্রুত আর সহজে মুদ্ধ হয়। বুঝলাম আমি একলা বোকা না, আমার সাথে বাকি দুই বন্ধুও (ঝড়ো আর মাশা) বোকা অথবা এখনো শিশু। কারন আমরা তিনজনেই দারুন মুদ্ধ শুভ'র সবকিছু নিয়ে। ওর বাড়ি ঘর, ওর জীবনযাপন, ওর পরিবার এবং ওর অসম্ভবক রকমের মিষ্টি বউটারে নিয়ে।

ঘরে পৌছেই ভাবীর আতিথেয়তায় আমাদের এক দফা হত্যা করা হইলো। সেটা ছিলো অনেকগুলো ধারাবাহিক মৃতু্যর সুচনা। হত্যার ভেনু্য শুভ'র ডাইনিং টেবিল। এমন উপচানো আয়োজন দেইখা খবর। ভাবী অসাধারন জিনিসপত্র বানায়।

খাইয়া শুভর সাথে আড্ডা, গান শোনা, ব্লগ বিষয়ক কথাবার্তা, বইপত্র লাড়াচাড়া, শুভর বিশাল প্রাচীনতার সংগ্রহ দর্শন হইলো। এর মধ্যে শুভ গ্যালো গোসলে। মাশা উসখুশ করে আর বলে, নতুন জায়গায় বইসা থাকলে ক্যামনে কি? আমরা তিনজন বেরিয়ে আসি ঘরের বাইরে।

তিতাস একটি নদীর নাম থাকলেও সেটা বদলে এখন তিতাস একটি খালের নাম। সেই প্রায় মরা তিতাসের উপরে বাঁশের সাকো পেরিয়ে এদিক সেদিক। বাড়ি ফিরে এসে আরেক প্রস্থ হত্যা হইতে হইলো। এত অল্প সময়ে মানুষকে খুন করা প্রথম শ্রেনীর অপরাধ। কিন্তু বাঙ্গালী আতিথেয়তা বইলা কথা। হও খুন। সমবেতভাবে আমরা আবারও খুন হইলাম একই ভেনু্যতে, শুভ'র ডাইনিং টেবিলে। এইবারে হত্যার আয়োজন আরো ভয়াবহ। আমিসহ সবাই (শুভ বাদে) ব্যাপক উৎসাহ ও তৃপ্তিতে খুন হই। আমি তখন প্রায় নিশ্চিত এই দফায় আর শহরটা ঘুরে দেখা যাবে না। ওরকম খেয়ে নড়া যায়?!

কে যেন একবার প্রিয় মানুষের রান্না কেন এত সুস্বাদু হয় তার মেটাফিজিক্সের ব্যাখ্যা দিয়েছিলো, পড়েছিলাম। সে বলছিলো, প্রিয় জনদের (যেমন মা) যত অল্প আয়োজনে রান্না করুক না কেন, সেটা এত মজার হয় কেন বলোতো? কারন রান্নায় মসলা ছাড়াও প্রিয় জনের রান্নায় আরেকটা গুওুত্বপূর্ণ উপাদান থাকে, সেটা হলো মমতা। শুভর অসম্ভব ভালো বউটাও যে প্রচুর মমতা মিশিয়ে রান্না করেছিলেন সেইটা খেতে খেতে বেশ বুঝতে পারছিলাম। তবে শুভ বেটা বদ। নিজে না খেয়ে আমাদের চোখের পাতা না কাপিয়ে উপর্যুপরি খুন করে গেছে।

দ্বিতীয়বার খুন হওয়ার পরে চা পান করে আমাদের যীশুর মতো প্রায় অলৌকিক পুনরুত্থান ঘটে শুভর পড়ার ঘরে। আমরা এবার সুযর্ালোকে বেরিয়ে আসি। আশেরপাশের কয়েকটা দর্শনীয় জায়গা দেখাই উদ্দেশ্য। অপ্রত্যাশিতভাবে সবুজ ধানের খেতের ভিতরে এক সুপ্রাচীণ স্মৃতিমন্দির দেখে আমরা সবাই পুলকিত। কি যে সুন্দর! তারপরে পাগলের সাথে, পাগলে মতো একটা বিশাল বোকার মতো কাজ করি। রেললাইনের উপর দিয়ে (যেখানে পাশে নামার কোন উপায় নেই) সেরকম পায়ে হাটার জন্য নিষিদ্ধ একটা ব্রীজ চার পাগলে পার হই। নীচে মাটি আর পানির দূরত্ব প্রায় চারতলা। ওই সময়ে একটা ট্রেন আসলে কি যে হইতো উপরওয়ালা জানে। আমরা ট্রেন লাইন হেটে আসার একটু পরেই ভগবান আমাদের 'হতে পারতো আমাদের যম' ট্রেনটাকে দর্শন করায়। 7 মিনিটের ব্যবধানে সেটা গর্জন করে ওই ট্রেন লাইনের উপর দিয়েই চলে যায়। আমরা একটা চমৎকার ঘাম ছুটানো দু:স্বপ্নের মূলধন মগজে জমিয়ে সামনে এগিয়ে যাই।

ভাবী, মানে শুভ'র বউয়ের কথা আলাদা করে লিখতেই হয়। এইরকম মমতাময়ী মানুষ খুব বেশি দেখা যায় না। বাইরে ঘুরে আমরা যেন সরাসরি ট্রেনে না চলে যাই, বাড়ি যেন অবশ্যই আসি তার জন্য সে প্রথমবার খোদা হাফেজটা পর্যন্ত জানালো না। পরিশেষে সত্যি সত্যি, ফিরে আসার আগে আবার শুভর বাড়ি। ভাবী যে তৃতীয়বার আমাদের খুন করার পরিকল্পনা করছে সেইটা বুঝলাম হাতেনাতে।

সারাদিনের মেনু্যর কথা নাই বা বললাম। তাতে আপনাদের আফসোসটাই বাড়বে। তবে এটা জানিয়ে রাখি, একটা খুব বড় হৃদয়, অনেক মমতা, অপরিসীম ভালোবাসা আর শুভর মতো একটা ভালো মানুষ পাশে থাকলে কি ধরনের অকৃত্রিম আতিথেয়তা পাওয়া যায় সেটা হাড়ে হাড়ে বুঝে আমরা বিদায় নিয়েছি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর শহর থেকে।

বোকার খুব সহজে মুদ্ধ হয়। আমি একটু বেশি বোকা। তাই মুদ্ধতার সব পর্ব লিখলাম না। শুভ আর শুভনীকে বিব্রত করতে চাই না। আমি জানি ওদের মতো (পৃথিবী থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া) ভালো মানুষদের বিব্রত করা পাপ। এর'চে হাসিমুখে ওদের হাতে মৃতু্যবরণ করা অনেক পূণ্যের।

চতুর্থবার আমরা খুন হই ট্রেনের কামরায়। তখন মাশার হাতে শুভ ভাবীর ধরিয়ে দেওয়া ব্যাগের ভিতরে অন্য পৃথিবী। আমরা একটু সময় নিয়ে আবার মৃতু্যবরণ করি, মু্দ্ধতায় ডুব দিয়েই। মানুষ এতো ভালো হয়! এই বিস্ময় গোপন করার প্রাণপন চেষ্টায় আমি সাবধানে ভিতরে চেপে থাকা শ্বাস ছাড়ি। ওদিকে শুভ'র ফোন বাজছে মোবাইলে ...

পুনশ্চ:
শুভ,
গতকাল ভাবীকে অনেকবার রসিকতা করে বলছিলাম, শুভ নামের পাগলটার সাথে থাকাটা যন্ত্রনার। কথা ফিরিয়ে নিলাম। আসলে শুভ নামক ভালো মানুষের আশেপাশে থাকতে পারা সৌভাগ্যের।

ভাবী,
আপনি অসম্ভব ভালো একটা মানুষ। আমাদের সবার ভীষন ভালো লেগেছে আপনাকে এবং আপনাদের সব। বাংলাদেশে আবার কবে আসি ঠিক ঠিকানা নাই। সুতরাং কবে আবার দেখা হয় কি না, কোন ঠিক নাই। সুতরাং যেখানেই থাকেন, অনেক ভালো থাকবেন।

ছবি: শুভর বসার ঘরের দেওয়াল জুড়ে দেশের ঐতিহ্য। ওর কাছে বহুৎ দেখার মতো পুরনো ঐতিহ্যময় জিনিস আছে। বাড়িটা অনেকটা যাদুঘর। নিজেও কথার যাদুকর, মিলায়ে বাড়িটাও।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০০৭ রাত ১:০০
২৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×