somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেনা অভ্যুত্থানের আশ্বাস পেয়েছিলেন খালেদা জিয়া? - ফজলুল বারি - নিউজ সোর্স সহ

১০ ই মে, ২০১৩ রাত ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হেফাজতের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার আশ্বাস পেয়েছিলেন খালেদা জিয়া! তাকে বলা হয়েছিল হেফাজতের প্রোগ্রামকে কেন্দ্র করে ঢাকা শহরে বিশেষ একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারলে সেনাবাহিনীর একাংশ চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে আসবে! এই আশ্বাসে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর সংলাপ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে হেফাজতের কর্মসূচি সফল করতে মনোযোগ দেন! কিন্তু খবরটি সরকারের কাছে পৌঁছে যাবার পর দ্রুত হার্ড লাইন নেয় সরকারের হাইকমান্ড! তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দিয়ে একটি জরুরি সংবাদ সম্মেলন করানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফ হেফাজতকে সন্ধ্যার মধ্যে ঢাকা ছেড়ে যাবার কথা বলে হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেন, তাদের আগামিতে আর ঢাকায় আসতে দেয়া হবেনা! কিন্তু রাতের মধ্যে র্যাব-পুলিশ-বিজিবির যৌথ অভিযানে সরকার শাপলা চত্বর হেফাজত মুক্ত করতে পারায় ভন্ডুল হয়ে যায় সব প্ল্যান! দায়িত্বশীল সূত্রগুলো এসব তথ্য দিয়েছে।
সূত্রগুলো বলেছে সেনাবাহিনীতে বিএনপি-জামায়াত আমলের একটি অংশকে এই ষড়যন্ত্রে সম্পৃক্ত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে! এদের প্রায় সবাই জুনিয়র পর্যায়ের অফিসার! তবে সাভারের নবম ডিভিশনকে এরসঙ্গে পাওয়া যায়নি। আবার এই ষড়যন্ত্র জেনেও হেফাজত শান্তিপূর্ণভাবে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি শেষ করে চলে যাবে এই আশ্বাসের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত ঝুঁকি নিয়ে তাদের শাপলা চত্বরে সমাবেশ কর্মসূচির শর্তসাপেক্ষ অনুমতি দেন। শর্তটি ছিল বিকেল পাঁচটার মধ্যে সমাবেশ শেষ করে চলে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর ধারনা ছিল হেফাজতকে শাপলা চত্বরে সমাবেশের অনুমতি না দিলে তারা ঢাকার চারপাশে ব্যাপক ধবংসযজ্ঞ চালাতে পারে। এতে করে যে পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে, সে সুযোগ তারা পেয়ে যাবে!
কিন্তু অনুমতি পেয়ে হেফাজতের নেতাকর্মীরা স্রোতের মতো শাপলা চত্বরের দিকে আসতে থাকার সময়ই জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা পরিকল্পনা অনুসারে তাদের কাজ শুরু করে দেয়! পুরানা পল্টন, বিজয় নগর, বায়তুল মোকাররম এলাকার ধবংসযজ্ঞ কিন্তু জামায়াত-শিবিরের পরিকল্পনা-অংশগ্রহনেই শুরু হয়। পুরনো পল্টন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ব্যাংক সহ নানা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাংচুর, সিপিবি অফিসে হামলা, আগুন ধরিয়ে দেয়া, আওয়ামী অফিসে হামলার চেষ্টা, বায়তুল মোকাররম এলাকার কোরান শরীফের দোকান সহ নানাকিছু পুড়িয়ে সোনার দোকানগুলো লুটের চেষ্টা, মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকায় ব্যাপক ভাংচুর, এসব তান্ডবের বীভৎস রূপ দেখে এরসঙ্গে সরকারের কাছে থাকা তথ্য সংযু্ক্ত করে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুলের মাধ্যমে একটি সংবাদ সম্মেলন সহ জরুরি কিছু সিদ্ধান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সৈয়দ আশরাফুলও উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে লালবাগ মাদ্রাসায় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা হেফাজতের নেতা আল্লামা শফির সঙ্গে বৈঠক করছিলেন! আল্লামা শফিকে সারাক্ষন ঘিরে রাখতে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের আগেভাগেই দায়িত্ব দেয়া হয়। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এক পর্যায়ে আল্লামা শফিকে শাপলা চত্বরের সমাবেশে গিয়ে প্রতিশ্রুতি অনুসারে সমাবেশ শেষ করতে রাজি করান। আল্লামা শফি সেভাবে শাপলা চত্বরের উদ্দেশে রওয়ানাও হন। কিন্তু পথে তার গাড়িতে ফোন আসে খালেদা জিয়ার! ফোনে তিনি আল্লামা শফিকে লালবাগ ফিরে যেতে বলেন, আর বলেন তিনি হেফাজতের কর্মসূচি সফল করতে বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন! এখন থেকে এই কর্মসূচি সফল করার দায়িত্ব তার। দায়িত্বশীল একটি সূত্র দাবি করেছে আল্লামা শফির সঙ্গে খালেদা জিয়ার এসব কথোপকথনের প্রমাণ এখন তাদের হাতে!
খালেদার ফোন পেয়ে আল্লামা শফি লালবাগ ফিরে যান। পরিকল্পনা অনুসারে দিগন্ত ও ইসলামিক টিভিতে একই ভাষার একটি ঘোষনা স্ক্রল আকারে প্রচার শুরু হয়। ঘোষনায় বলা হয় ‘খালেদা জিয়া হেফাজতের কর্মসূচিতে যোগ দিতে দলের নেতাক র্মীদের নির্দেশ ও ঢাকাবাসীকে আহবান জানিয়েছেন’, ‘১৩ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত হেফাজতের নেতাকর্মীদের শাপলা চত্বরে অবস্থান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লামা শফি’! সূত্রগুলোর মতে খালেদার ফোনে আল্লামা শফির লালবাগ ফিরে যাওয়ার আগেই অবশ্য শাপলা চত্বরে অভিযান চালিয়ে সে এলাকা দ্রুত হেফাজত মুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্তের পরই সৈয়দ আশরাফুল সংবাদ সম্মেলন করেন। খালেদার ফোনে শফির লালবাগ ফিরে যাবার পর অভিযান ত্বরান্বিত হয়। ওই পরিস্থিতিতে দিগন্ত-ইসলামিক টিভিতে ঘোষনা দুটি প্রচারকে উস্কানি হিসাবে চিহ্নিত করে সিদ্ধান্ত হয় টিভি চ্যানেল দুটি বন্ধ করে দেবার । সরকারের হাইকমান্ডের নির্দেশ পাবার পর খুব অল্প সময়ের নোটিশে অভিযান সাজায় র্যাব-পুলিশ ও বিজিবি। পুরো অভিযান গণভবনে বসে টিভিতে দেখেন প্রধানমন্ত্রী। সে রাত প্রধানমন্ত্রী সহ দায়িত্বশীলরা নির্ঘুম কাটিয়েছেন।
সূত্রগুলোর মতে অভিযানের কথা আগেভাগেই হেফাজতের নেতাদের জানালে নেতারা একে একে সেখান থেকে সরে পড়েন। অভিযানের সময় শাপলা চত্বর এলাকায় অবস্থানরত কয়েক হাজার লোকজনের বেশিরভাগই ছিলেন অল্পবয়সী মাদ্রাসা ছাত্র। যাদের অনেকে এই প্রথম ঢাকা শহরে এসেছেন। মুহুর্মুহু টিয়ারশেল আর সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে ভড়কে গিয়ে পড়ি কি মরি করে যে যেভাবে পারে পালাতে শুরু করে! ওই সময় যত মানুষ আহত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগ হুড়োতাড়ায় নানাকিছুতে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। কিন্তু এত অল্পতে যে শাপলা চত্বর মুক্ত হয়ে যাবে তা অভিযানকারীরা ভাবতে পারেননি! টিকাটুলি হয়ে মতিঝিল-দিলকুশা এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে যাবার সময় তারা পথের দু’পাশে ব্যাপক ধবংযজ্ঞ চালায়। ওই এলাকা থেকে বেরিয়ে যাওয়া হেফাজতের কর্মী-সমর্থকদের রাতে ডেমরা-কাঁচপুর এলাকার বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসায় আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়। যারা যানবাহনে উঠতে পেরেছেন তাদের অনেকে সে রাতেই বা সকালের দিকে ঢাকা ছাড়েন। মসজিদ-মাদ্রাসায় যাদের আশ্রয় হয়েছে তাদের দিয়েই পরেরদিন কাঁচপুর এলাকায় সন্ত্রাস চালানো হয়।
খালেদা জিয়ার নির্দেশ পাবার পর দলের নেতাকর্মীদের হেফাজতের কর্মসূচিতে নিয়ে যেতে কাজে নেমে পড়েন সাদেক হোসেন খোকা সহ কয়েক নেতা। কিন্তু রাতের বেলা নেতাকর্মী তেমন জোগাড় করতে তারা ব্যর্থ হন। অনেকে প্রতিশ্রুতি দেন সকালের দিকে কর্মসূচিতে যোগ দেবার। এর আগে হেফাজতের কর্মসূচির আগের দিন খালেদা জিয়া ৪৮ ঘন্টার যে আল্টিমেটাম দেন, এরসঙ্গেও সরকারের কাছে নানা খবর আসছিল। সর্বশেষ বিএনপির নেতাকর্মীরা ৬ মে সকালের দিকে দলে দলে শাপলা চত্বরে যোগ দেবে, এমন খবরও সরকারের কাছে পৌঁছে গেলে রাতের মধ্যে যে কোন মূল্যে শাপলা চত্বর মুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। আবার রাতের বেলাতেই অভিযানে শাপলা চত্বর দখলমুক্ত হয়ে যাওয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীদেরও আর হেফাজতের কর্মসূচির জন্য কষ্ট করতে হয়নি! এরপর খালেদা জিয়ার কাছে ভালো হতে সাদেক হোসেন খোকা সহ কয়েক নেতা শুরু করেন হাজার হাজার লাশ গুমের গল্পের প্রচার! অপরদিকে নয় মন ঘি জোগাড় হয়নি বলে রাধাও নাচেনি! বিএনপি-জামায়াত ঢাকায় প্রতিশ্রুত বিশেষ একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে কথিত সামরিক সম্পৃক্তির ঘটনাও আর ঘটেনি! কিন্তু সূত্রগুলোর মতে এমন কিছুর যে চিন্তা হয়েছিল, এতেই বিব্রত সরকারের হাইকমান্ড। এ সরকারের আমলে এর আগে যে সামরিক অভ্যুত্থানের ব্যর্থ চেষ্টা হয়েছিল, এর জড়িত অনেককেও এখনও গ্রেফতার করা যায়নি।


সূত্র:
সেনা অভ্যুত্থানের আশ্বাস পেয়েছিলেন খালেদা জিয়া?

ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৩ রাত ১:০৩
১৬টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন-হাদিস অনুযায়ী তারা পাকিস্তান এবং অন্যরা অন্যদেশ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২১



সূরাঃ ৮ আনফাল, ৬০ নং আয়াতের অনুবাদ-
৬০। তোমরা তাদের মোকাবেলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী প্রস্তত রাখবে। এর দ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত রাখবে আল্লাহর শত্রুকে, তোমাদের শত্রুকে, এছাড়া অন্যদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×