somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যাপক বিনোদন: পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বইয়ে অনেক ভুল

৩০ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেই দিন পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা কাস নিতে যাই। ছুটিকালীন শিক্ষকের কাস। পড়া ছিল ‘সুন্দরবনের প্রাণী’ অধ্যায়। প্রথম পাঁচ লাইন পড়ার সাথে সাথে কিছু ভুল ধরা পড়ে। বইয়ের আরো লাইন পড়লে তাতেও ভুল লক্ষ করি। ওই দিন রাতেই বইটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লাম। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক ২০১৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য বইটি প্রকাশিত। বইটিতে সহজ ও সমকালীন ভাষাভঙ্গি ব্যবহার করা হয়েছে। বাক্যবিন্যাসে আধুনিকতা আছে। ভাষার এ নতুনত্ব ও পরিবর্তনশীলতা শিশুদের শেখাতে হবে। কিন্তু বইয়ে ভুল থাকলে যে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হবে।
সুন্দরবনের প্রাণী (পৃ. ১০) নিবন্ধে লেখা ‘বিশ্বে কোনো কোনো প্রাণীর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে দেশের নাম বা জায়গার নাম। যেমন, ক্যাঙ্গারু বললেই অস্ট্রেলিয়ার কথা মনে হবে। সিংহ বললেই মনে হবে আফ্রিকার কথা। তেমনি বাঘ বা টাইগার শুনলেই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের কথা স্মরণ হবেই।’ পাঠক লক্ষ করুন, শুরুতে বলা হয়েছে প্রাণীর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে দেশের নাম বা জায়গার নাম। সে ক্ষেত্রে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সাথে বাংলাদেশের নাম জড়িত হওয়ার কথা। কিন্তু বাক্যটিতে পূর্ববর্তী অংশের সাথে পরের অংশের ধারাবাহিকতা নেই। ১১ পৃষ্ঠায় একটি ভুল তথ্য দেয়া আছে, ‘ইংরেজ আমলের প্রথম দিকে অর্থাৎ শ’ তিনেক বছর আগে, সুন্দরবনের গণ্ডারের সংখ্যাধিক্য ছিল।’ ইংরেজ আমলের প্রথম দিক অর্থাৎ ১৭৫৭ সালের পরের এক-দুই বছরের দিকে হবে। পাঠক, হিসাব করে দেখুন ওই সময়টা এখন থেকে ৩০০ বছর আগে কী করে হয়? ১২ পৃষ্ঠায় আছে ‘এখন বাংলাদেশে শকুন প্রায় দেখাই যাচ্ছে না’Ñ কয়েক লাইন পর বলা হয়েছে ‘মানুষের যা ক্ষতিকর, সেসব আবর্জনা শকুন খেয়ে ফেলে এবং সে কারণেই আমাদের চার দিকের পরিমণ্ডল বসবাসের যোগ্য রয়েছে। আমরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছি না।’ যে প্রাণীটি প্রায় দেখাই যায় না, সে প্রাণীটির কল্যাণে আমরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দিয়ে আক্রান্ত হচ্ছি না। যুক্তির ভেতর সাযুজ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। শেষের প্যারাটি লক্ষ করুন, ‘রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’ নামটি পৃথিবীতে সবাই জানে এবং জানে যে এই টাইগার বেঙ্গলে অর্থাৎ বাংলাদেশেই একমাত্র দেখা যায়। যদি বাঘই না থাকে তো রয়েল বেঙ্গল টাইগার থাকবে কিভাবে? শেষ বাক্যটির মানে কী? রয়েল বেঙ্গলের বেঁচে থাকা কি বাঘের ওপর নির্ভর করে? বাঘ ও রয়েল বেঙ্গল কি আলাদা প্রাণী, যার একটি না বাঁচলে অন্যটি বাঁচবে না? এ তুলনীয় বাক্যটি সঠিক নয়। তুলনীয় বাক্য বোঝার সুবিধার্থে উদাহরণ দিচ্ছিÑ যদি পানিই না থাকে তো মাছ থাকবে কিভাবে?’ এ তুলনীয় বাক্যটি সঠিক তথ্য প্রকাশ করে। কারণ মাছের বেঁচে থাকা পানির ওপর নির্ভরশীল। ভাবুক ছেলেটি গল্পে (৮২ পৃ.) আছে ‘ছেলের কথা শুনে মা হাসেন। বাবা কিন্তু হাসলেও ছেলের প্রশ্নের জবাব দেয়ার চেষ্টা করেন। ওর বাবা ম্যাজিস্ট্রেট হলেও আগে যে স্কুলশিক্ষক ছিলেন। ছেলেটি কিন্তু বড় হতে থাকে।’ এসব বাক্যের মধ্যে অর্থগত পারস্পর্য ও ব্যাকরণগত শুদ্ধতা নেই। দু’বার অকারণে ‘কিন্তু’ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা নেই। ৮২ পৃষ্ঠার শেষ দিকে আছে “এর প্রতিবাদে তিনি দীর্ঘ তিন বছর বেতন না নিয়ে কর্তব্য পালন করেন। শেষ পর্যন্ত ইংরেজ সরকার তাকে স্বীকৃতি দিয়ে সব বকেয়া পরিশোধ করে চাকরিতে স্থায়ী করে। তখন থেকেই তিনি ‘বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু’ হয়ে ওঠেন।” এসব লাইন পড়লে মনে হয় বকেয়া প্রাপ্তির সাথে সাথেই বিজ্ঞানী হয়ে ওঠেন। বকেয়া প্রাপ্তির সাথে ‘বিজ্ঞানী’ হয়ে ওঠার কোনো সম্পর্ক নেই। এখানে অযৌক্তিক প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়েছে। বইয়ের বিভিন্ন পৃষ্ঠায় কিছু বিদঘুটে বাক্য রয়েছে। ৫৪ পৃষ্ঠায় দেখুন, ‘যেতে যেতে পথে কাঞ্চনমালা চোখের জল ফেলতে ফেলতে দুঃখের সব কথা সেই মানুষকে না বলে পারেন না।’ ‘স্মরণীয় যারা চিরদিন’ এ রচনায় (পৃষ্ঠা ৯১) বলা হয়েছে ‘এই বিজয়কে পাবার আগে দেশবাসীকে করে যেতে হয় এক তীব্র মুক্তিযুদ্ধ’। মুক্তিযুদ্ধের আগে এখানে ‘তীব্র’ বিশেষণটি বেমানান। ‘আমাদের সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছে শত্রু সেনাদের সঙ্গে’ এখানে শত্রু সেনাদের ‘সাথে’ হবে না, হওয়া উচিত শত্রু সেনাদের ‘বিরুদ্ধে’। আরেকটি ভুল তথ্য : ‘সশস্ত্র যুদ্ধে আমাদের মুক্তি সেনারা প্রাণ দেন’ সবাই কি প্রাণ দিয়েছেন? ‘বীরের রক্তে প্রতিষ্ঠিত দেশ’ শীর্ষক নিবন্ধে সর্বশেষ বাক্যটি (পৃ. ৩২) ‘বীরের পুত-পবিত্র রক্তস্রোত আর মাতার অশ্রুধারায় স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে বাংলাদেশের।’ অর্থাৎ বাংলাদেশ যেন কোনো দেশ বা ভূখণ্ড নয়, বাংলাদেশ মানে যেন একটি স্বাধীন জাতি। দেশ আর জাতি শব্দ দুটোর মধ্যে অনেক তফাত। এখানে স্বাধীন জাতি না হয়ে স্বাধীন দেশ হবে।
বাংলা বইয়ে এ রকম পারস্পর্যহীন ও অর্থহীন কথা আছে আরো। শিশুদের জন্য বিদঘুটে বাক্য, প্রয়োগ করা ঠিক নয়। বইয়ের পাঠ শিখি (পৃ. ১৩), এতে আছে, ‘বইয়ের পড়া স্মরণে রাখার জন্য ভোরবেলায় উঠে পড়তে হয়’। এ কথায় শিশুদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে। ভাববে, তা হলে বুঝি ভোরবেলায় উঠে পড়লেই পড়া মনে থাকে। অন্য সময় পড়লে মনে থাকবে না? পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বইতে কিছু বানান বিভ্রাটও দেখা যায়। ৮৪ পৃষ্ঠায় ‘দই’-এর স্থলে হবে দুই। ১০৯ পৃষ্ঠায় ‘পৌঁছুলেন’ বানান হবে ‘পৌঁছলেন’। ৯৫ পৃষ্ঠায় ‘কথনো’ এর স্থলে কখনো হবে। ৯২ পৃষ্ঠায় ‘হত্যাকা’ হবে না, হবে হত্যাকাণ্ড। ৯৩ পৃষ্ঠায় ‘রষ্ট্রভাষা’ হবে রাষ্ট্রভাষা। বিভিন্ন রকম ভুলের উদাহরণ বাংলা বইটি থেকে টানতে পারি। বইটি সঙ্কলন, রচনা ও সম্পাদনা করেছেন চারজন প্রখ্যাত ব্যক্তি। বইটিতে মোট ২৩টি রচনা স্থান পেয়েছে। ১২টি রচনার সাথে লেখকের নাম যুক্ত আছে। বাকি ১১টিতে রচয়িতার নাম নেই। তা হলে আমরা ধরে নিতে পারি, ওই ১১টি রচনা তাদেরই হাত থেকে এসেছে অথবা অন্য কারো দিয়ে লিখিয়েছেন। কিন্তু আমাদের যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ভুলে ভরা বই আমরা শিশুদের দিতে পারি না। শিশুর বাংলা ভাষাজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার কাজটি মনে প্রাণে এবং নিষ্ঠার সাথে করা উচিত।

সংগৃহীত ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:২৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=স্মৃতির মায়ায় জড়িয়ে আছে মন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০৯


ঘাস লতা পাতা আমার গাঁয়ের মেঠো পথ, ধানের ক্ষেত
জংলী গাছ জড়ানো লতাবতী - আহা নিউরণে পাই স্মৃতির সংকেত,
রান্নাবাটির খেলাঘরে ফুলের পাপড়িতে তরকারী রান্না
এখন স্মৃতিগুলো পড়লে মনে, বুক ফুঁড়ে বেরোয় কান্না।

ফিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×