গত শতকের প্রায় তিন চতুর্থাংশ সময়ই ছিল বামদের রাম রাজত্ব। সাম্রাজ্যবাদ দমণের নামে, শ্রেণী বৈষম্য দূর করার নামে তারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিপ্লবের নামে রক্তের বন্যা বইয়েছে। নিরীহ মানুষের রক্তে রঞ্জিত এই বাম কুলাঙ্গারদের হাত। সাম্রাজ্যবাদ দূর করতে গিয়ে নিজেরাই ইতিহাসের বৃহত্তম সাম্রাজ্যবাদী শক্তিদের কাতারে নাম লিখিয়েছে। নিচের মানচিত্র দুটি লক্ষ্য করুন,
গত শতকের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন
সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং বিশ্বের অন্যান্য কমিউনিস্ট সরকারের অধীনে বিভিন্ন দেশ, ১৯৫৯ সালের কিউবান বিপ্লবের পরে এবং ১৯৬১ তে চীন সোভিয়েত বিভাজনের আগে
দ্য ব্ল্যাক বুক অব কমিউনিজমে বলা হয়েছে যে, কমিউনিস্ট শাসকদের হাতে প্রায় ৯৪ মিলিয়ন (১ মিলিয়ন = ১০ লাখ ) বনী আদম নিহত হয়েছে। নিহতদের সংখ্যা কমিউনিস্ট শাসক অনুপাতে নিম্নরূপ,
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে ৬৫ মিলিয়ন
সোভিয়েত ইউনিয়নে ২০ মিলিয়ন
কম্বোডিয়ায় ২ মিলিয়ন
উত্তর কোরিয়ায় ২ মিলিয়ন
আফ্রিকাতে ১.৭ মিলিয়ন
আফগানিস্তানে ১.৫ মিলিয়ন
পূর্ব ইউরোপের কমিউনিস্ট দেশগুলোতে ১ মিলিয়ন
ভিয়েতনামে ১ মিলিয়ন
লাতিন আমেরিকায় দেড় লাখ
এছাড়াও প্রায় দশ হাজার নিহত হয়েছে উপরোল্লিখিত দেশগুলোর বাইরে বিশ্বব্যাপী সংগঠিত কমিউনিস্ট বিপ্লবের কারণে
এই পরিসংখ্যান থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, কমিউনিস্টরা গত শতকে জনসংখ্যা হ্রাস করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। আর এটাই এদের প্রধান কৃতিত্ব। এই বইটি সম্পাদনা করেছেন স্টেফেন করটয়েস। তার মতে পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোন আদর্শ, বিপ্লব বা মতবাদের কারণে এত মানুষ নিহত হয়নি যে পরিমাণ মানুষ নিহত হয়েছে কমিউনিস্ট বিপ্লবের কারণে। কমিউনিস্ট ও সোস্যালিস্টদের এই সব হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহতা ও ব্যাপকতা জার্মান নাৎসীদের চেয়েও অনেক অনেক বেশী, প্রায় চারগুণ।
এবার আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশের দিকে লক্ষ্য করুন। স্বাধীণতার পর এ দেশে গজিয়ে ওঠা জাসদের কর্মকান্ড, সর্বহারা, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি, জনযুদ্ধের কৃতকর্মের সাথে পত্র পত্রিকার মাধ্যমে আমরা সবাই কমবেশী পরিচিত। বাম বুদ্ধীজীবিরা সুকৌশলে সাধারণ মানুষের ব্রেইন ওয়াশ করার চেষ্টা করছে। মুক্তমনা ও প্রগতিশীলতার কথা বলে আমাদের কান ভারি করার চেষ্টা করছে। যে পরিমান সময় তারা নিজেদের আদর্শ প্রচারে ব্যয় করে, তার চেয়ে অনেক অনেক বেশী সময় ব্যয় করে অন্য আদর্শের সমালোচনা করে। অভিধানের ভালো শব্দগুলো নিজেদের জন্য রেখে খারাপগুলো ব্যবহার করে প্রতিপক্ষের জন্য। সন্ত্রাসী চরমপন্থী হয়েও এরা নিজেদের বিপ্লবী বলে দাবী করে। এর একটা চমৎকার উদাহরণ হলো চে গেভারা। এই কিলিং মেশিনের হাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অসংখ্য নিরপরাধ বনী আদম নিহত হয়েছে, অথচ এই সন্ত্রাসীকে এরা বিপ্লবী হিসেবে তুলে ধরছে। নিরপরাধ মানুষ হত্যা করে যদি চে বিপ্লবী হয়, তাহলে ওসামা বিন লাদেন, আইম্যান আল জাওয়হিরি কি? সন্ত্রাসী না বিপ্লবী। আপনাদের কাছে প্রশ্ন রইলো?
বীর মুক্তিযোদ্ধা জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মেজর এম এ জলিলের নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই। জাসদ থেকে তার পদত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি তাঁর ‘কৈফিয়ত ও কিছুকথা’ গ্রন্থে লিখেছেন, "“দলীয় জীবনে জাসদের নেতা-কর্মীরা ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রায় সম্পূর্ণভাবে বিসর্জন দেয়ার ফলে নৈতিকতার ক্ষেত্রে অবক্ষয় ঘটে, ব্যক্তিজীবনে আসে বিশৃঙ্খলা এবং ধর্মীয় নৈতিকতা এবং মূল্যবোধে পরিচালিত সমাজদেহ থেকে নিজেরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেও সমাজে বসবাসরত জনগণকে ঐতিহ্যবাহী ইসলামী সাংস্কৃতিক জীবন এবং মূলবোধ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে মোটেও সক্ষম হয়নি। প্রচলিত পারিবারিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনধারা থেকে কেবল নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রাখলেই বিকল্প সংস্কৃতি জন্ম নেয় না, বরং এই ধরনের রণকৌশল অবলম্বন সমাজে প্রচলিত নীতি, নৈতিকতা, আচার-অনুষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রতি তাচ্ছিল্য, উপহাস এবং ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়, যা প্রকারান্তরে বিপ্লবী আন্দোলনের বিপক্ষে চলে যায়।"
পরিশেষে বলি, বামেরা ছদ্মবেশী। এরা মুখে বলে এক আর অন্তরে ধারণ করে আরেক। ক্ষমতা পেলেই এরা এদের স্বরূপে আবির্ভূত হবে। গত শতকের রক্তাক্ত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাবে। বামেরা সন্ত্রাসী, অন্যসকল সন্ত্রাসী দলের মত বামদেরকেও নিষিদ্ধ করা হোক। এদের সামাজিকভাবে বয়কট করা হোক। একবিংশ শতক হোক বাম মুক্ত।একটি বাম মুক্ত সুন্দর পৃথিবীর প্রত্যাশাই হোক সকলের কাম্য।
তথ্যসূত্রঃ
The Black Book of Communism
অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা - মেজর (অব.) এম. এ. জলিল
The Great Terror
Great Purge
Soviet Union
Che Guevara Exposed: The Killer on the Lefties’ T-Shirts
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৫