somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপারেশন জ্যাকপট- বাঙালি সুপারম্যানদের কান্ড

১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার এক আমেরিকান বন্ধু আছে নাম রবার্ট। ব্যাটা বহুত অহংকারী পাবলিক। নিজেদের সামরিক শক্তি নিয়ে অনেক অহংকার করে। এই সেদিন কথা হচ্ছিল
বন্ধু- ইউ ন উই হ্যাভ ফিফথ জেনারেশন ফাইটার প্লেন।
আমি- ব্যাটা থাম, অপারেশন জ্যাকপটের নাম শুনেছিস
বন্ধু- ইন ইরাক ওর আফগানিস্তান
আমি- ইরাক ও না আফগানিস্তান ও না। বাংলাদেশ।
বন্ধু- হোয়াট ?
আমি- চার ঘন্টায় ২৬ টা জাহাজ ডুবাইয়া দিছিলাম উইদাওট এনি মিসাইল
বন্ধু- অসম্ভব

হা করে ঘটনা শুনল সে। অবশ্য তার দোষ কি। আমাদের পোলাপাইন অনেকেই জানেনা অপারেশন জ্যাকপটের কথা। তেল্লিশ বছর আগে ১৫ই অগাস্টের সে রাত।

অপারেশন জ্যাকপট। টার্গেট চট্টগ্রাম, মংলা,চাদপুর, নারায়ণগঞ্জ দেশের সবগুলো সমুদ্র ও নদী বন্দর। সুইসাইডাল অপারেশন ছিল। প্রত্যেক কে একটা ফর্মে সই করতে হয়েছিল যাতে লেখাছিল "আমি দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন বিসর্জন দিতে সম্মত হয়েই এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছি, আর যুদ্ধে আমার মৃত্যু ঘটলে কেউ দায়ী থাকবে না।"



ডেটলাইন ১৫ ই অগাস্ট রাত , রাত ১ টা
সাবমেরিনার ওয়াহিদ চৌধুরী তার দল নিয়ে কর্নফুলি নদীর তীরে পৌছে যান রাত সাড়ে এগারোটার মধ্যে। ঠিক একই সময়ে মংলা বন্দরে কমান্ডার আমিনুর খসরুর নেত্তৃত্তে পৌছে যায় আরেকদল কমান্ডো। চট্টগ্রামে কমান্ডার ওয়াহিদ চৌধুরী সবার উদ্দেশে বললেন, 'শোনো কমান্ডোরা, বন্দরের দিক থেকে কর্ণফুলীর পানিতে মাঝেমধ্যেই সার্চলাইট ফেলে সতর্কতামূলক গুলি করা হয়। কারো শরীরে সেই গুলি লাগলে চিৎকার না করে সঙ্গে সঙ্গে পানিতে ডুবে যাবে। এখনো সময় আছে, কারো ভয় লাগলে অপারেশন থেকে সরে দাঁড়াও। আই রিপিট দিস ইজ এ সুইসাইডাল অপারেশন। '

এদিকে মংলায় তখন ২৪ জনের দল ৬ জন করে ভাগ হয়ে মাইন লাগাতে নেমে গেছে পানিতে। রাত ১টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রামে প্রথম বিস্ফোরণ ঘটে। তারপর একে একে সব গুলো মাইন বিস্ফোরিত হয়। একই সাথে চাদপুর আর নারায়ণগঞ্জে ফাটতে শুরু করে মাইন। মংলায় ৬.৩০ মিনিট থেকে মাইনগুলো ফাটতে শুরু করে।এঁকে এঁকে ডুবে যায় পাকিদের রসদ অস্ত্র গোলাবারুদ বাহি ২৬ টা জাহাজ যার মোট ওজন ছিল ৫০৮০০ টন। চারঘন্টার ব্যাবধানে পাক বাহিনীর নৌ সেক্টরকে পানিতে ডুবিয়ে দেয় মাত্র দুইশ জনের একদল কমান্ডো। কোন আধুনিক অস্ত্র ছাড়াই। আত্মঘাতী অপারেশনে প্রাণ দেয় বিশজন কমান্ডো।



এ ঘটনার চল্লিশ বছর পড়ে ঢাকা থেকে এক ডাক্তার যায় নৌ কমান্ডো ফজলুর রহমানের কাছে। সাথে একটি ক্যামকর্ডার। ফজলুর রহমানের হতদ্ররিদ্র অবস্থা দেখে ডাক্তার বলেন 'এই যে যুদ্ধ করলেন,কি পাইলেন? দেশ স্বাধীন করলেন অথচ এখন এই বয়সে ও আপনে ঠেলা গাড়ি চালান, পুকুর পাড়ে ভাঙ্গা ঘরে থাকেন”।
ফজলুর রহমানের ভাবলেশ হীন উত্তর “ বিল্ডিং দেওনের লাইগ্গা তো আর দেশ স্বাধীন করি নাই। আমরা আসিলাম সুইসাইড টিম। মরনের লাইগ্গা যুদ্ধ করছি। বাইচ্চা যে রইছি , স্বাধীন দেশটারে দেখলাম, এইডাইতো বেশী”।

তেতাল্লিশ বছর আগে একাত্তরের পনের অগাস্টের রাতে ফজলুর রহমানরা শুধু মাত্র মাইন দিয়ে ৫০০০০ টন জাহাজ অস্ত্র গোলাবারুদ ধ্বংস করে দেয়। প্রজন্ম অবশ্য আই হেইট পলিটিক্স। মুক্তিযুদ্ধ তাদের কাছে পলিটিক্স। ডার্টি থিংস। থ্রিডিতে অ্যাভেঞ্জার দেইখা সন্তুষ্ট। টম ক্রুজ থেকে সালমান খানের মাসল দেইখা পাগল হয়। মিশন ইম্পসিবল থেকে দাবাঙ্গের স্পেশাল ইফেক্ট দেইখা উহ আহ করে। জানেনা আমাদের জন্মটাই মিশন ইম্পসিবল ছিল। বুঝেনা আমাদের স্পেশাল ইফেক্ট লাগেনা,আমরা শত্রুর এল এম জি দিয়া শত্রুকে খুন করি
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×