বুয়েটে যেদিন প্রথম ক্লাস করতে আসলাম সেদিনের কথা, ভার্সিটির সামনের শহীদ মিনারে বসে আছি এক বন্ধুর সাথে। তো একটা ছেলে এসে আমার বন্ধুর সাথে কথা বলতে লাগল, আর আমাকে দেখে সালাম দিল! আমি অবাক! বললাম আমি তো র্ফাস্ট ইয়ার!। সে বেচারা আমাকে ভেবেছিল সিনিয়র ভাই! প্রথম দিনের ক্লাশেই ল্যাব ছিল। ভেবেছিলাম প্রথম দিন কি আর ল্যাব হবে, কিন্তু একি! সেদিন ই টানা ২ ঘন্টা ল্যাব করে বের হলাম!
হল এর সিটে উঠলাম। প্রথম দিন রাতেই ডাক পড়ল সিনিয়র ভাইদের রুমে। এক ভাইয়া এসে মধুর করে বললেন, উপরে এত নম্বর রুম এ আস ভাইয়া। গেলাম। তারপর? এতদিন শুধু র্যাগ কাকে বলে শুনেছিলাম। এবার নিজে খাইলাম! আহা, কি অদ্ভুত উপায় ভাইদের র্যাগ দেয়ার! কি বাক্য বর্ষণ! এমন রাগ হচ্ছিল যে , ভাবতেছিলাম, তোদের পাই একবার, দেখামু! কিন্তু এখন সেই ভাইয়া রাই সবচয়ে হেল্পফুল আর ফ্রেন্ডলি!
ডাইনিং এর খাবার প্রথম দিন খেতে বসে দুঃখে ,"বাড়ী থিকা আইলাম ক্যান, বুয়েটে পড়ুম না", এই কথা মনে হয় নি এমন কোন ছেলে ছিল না! পানির মত ডাল, মাংস খুজে পাওয়া যায় না এমন এক পিস ফার্ম এর মুরগি, আর মুখে না দেয়ার মত এক চামচ সব্জি! এই হল খাবারের মেন্যু।এখন? এই খাবারই খিদা পেলে গোগ্রাসে গিলি! ফিস্ট (পোলাও, মাংস, রোস্ট, এইসব আর কি!) এর দিনে ডাইনিং এ হুড়োহুড়ি দেখে মনে হতে পারে আমরা সবাই বহুদিন ভালমন্দ না খেতে পাওয়া মানুষ! যদিও আমরা বুয়েট এর পোলাপান নিয়মিতই চাংখার পুলে, পেনাং এ, স্টার এ খাওয়ার উপর ই বেচেঁ আছি!
ল্যাব এর কথা আর কি বলব।মেক্যানিকাল ড্রইং এর রিপিট খাওয়া, আর মেশিন ল্যাব এর পরিশ্রম দেখে কতদিন যে মনে হইছে আর না , এইবার পালামুই , তার ঠিক নাই!
পি এল( পরীক্ষার আগে প্রিপারেশন এর জন্য ছুটি, ১৪ দিন) পাওয়ার পর আমরা যেভাবে বাড়ি তে যাওয়ার জন্য ছুটছিলাম, জেলখানার বন্দিরাও এভাবে পালায় না!
পি এল শেষ। পরীক্ষা শুরু। সবার মুখেই কেমন এক উদাস বাউলের ভাব! একেকটা পরীক্ষার মাঝে ৬-৭ দিন বন্ধ থাকে। দুই দিন ঘুমাই, দুইদিন কম্পিউটারে মুভি দেখি, আড্ডা মারি, আর দুই দিন পড়ি! পরীক্ষার রেসাল্ট এর পর......................আরে এই টার্ম গেছে তো কি হইছে, সামনের টার্ম এ আমি দেখামু! এরকম ভাব আমার! (যদিও যা পাইছি এতেই খুশি!!!!!!!)
সকাল আটটা থেকে একটা পর্যন্ত ক্লাশ, সার দুপুর ল্যাব,অসংখ্য ক্লাশ টেস্ট, চরমতম কঠিন টার্ম ফাইনাল এর সাথে সন্ধ্যায় শহীদ মিনারে আড্ডা, মজার হল এর জীবন, রাতে একসাথে বাইরে খেতে যাওয়া, পরীক্ষার দুই দিন আগে নাক-মুখ বন্ধ করে পড়া, ভালই তো কাটছে বুয়েট লাইফ টা!শেষ পর্যন্ত এভাবে গেলে মন্দ হয় না! যাচ্ছে জীবন যাক না চলে, যাচ্ছে যখন এমনি করে!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১২ সকাল ৭:১২