somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদে মীলাদুন্নবী (সাঃ) ; নবী প্রেমের নামে ইসলামে পরিবর্তন সাধন

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১২ই রবিউল আউয়াল ৷ বর্তমানে এই দিনকে ঈদে মীলাদুন্নবী (সাঃ) হিসেবে পালন করা হয় ৷ এবং সবাই এই দিনকে মুসলমানদের একটি বিশেষ দিবস হিসেবে জানে ৷

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর জীবন সংক্রান্ত আলোচনা উত্তম ইবাদত ৷ এবং তা ইমানের রুহ ৷
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর জীবনের প্রতিটি ঘটনা চোখের মনির দৃষ্টি স্বরুপ ৷ তাঁর জন্ম, শৈশব, যৌবন, নবুওয়াত, আহবান, জিহাদ, ত্যাগ, জিকির-ফিকির, ইবাদত ও নামাজ, উত্তম চরিত্র, দুনিয়া বিমুখতা ও খোদা ভীরুতা অর্থাৎ, তাঁর প্রত্যেকটি কাজ উম্মতের জন্য উত্তম আদর্শ ও হেদায়াতের ফুল স্বরুপ।
তাঁর জীবনী শিখা ও শিখানো এবং এর আলোচনা করা উম্মতের কর্তব্য।

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর জীবনের দুই অংশ।

১) জন্ম থেকে নবুয়তের আগ পর্যন্ত

২) নবুয়তের পর থেকে ইন্তেকাল পর্যন্ত


তাঁর জীবনের এই দুই অংশকে কুরআন কারীমে "উত্তম আদর্শ" বলা হয়েছে।

তাঁর উত্তম জীবনী বর্ণনা করার দুটি পদ্ধতি।

১) তাঁর উত্তম জীবনের প্রতিটি নকশা নিজের জীবনের ভিতরে ও বাহিরে এভাবে বাস্তবায়ন করা যে, তাকে দেখে প্রত্যেকে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর দাস মনে করে।

২) যেখানে সুযোগ পাওয়া যায়, সেখানেই তাঁর উত্তম কাজের আলোচনা করা। এবং তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নে নিজেকে বিলীন করে দেওয়ার চেষ্টা করা।

পূর্ববর্তী নেক বান্দাগণ কখনোই সীরাতুন্নবী (সাঃ) অথবা মিলাদুন্নবী (সাঃ) এর মাহফিল করেননি।

প্রচলিত মিলাদ মাহফিলের প্রচলন ইসলামের প্রথম ছয় শতাব্দীতে ছিল না। এই ছয় শতাব্দীতে উম্মতে মুহাম্মদী কখনোই এই মাহফিল করেনি।

সুলতান আবু সাঈদ মুজাফ্ফর এবং আবুল খাত্তাব ইবনে ওয়াহইয়া ৬০৪ হিজরীতে সর্বপ্রথম মিলাদ মাহফিলের প্রচলন ঘটায়। যেখানে বিশেষভাবে তিনটি বিষয় ছিল।

এক. ১২ রবিউল আউয়াল মিলাদ মাহফিলের তারিখ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।

দুই. আলেম-উলামা এবং নেক বান্দাদের সমাবেশ ঘটানো হয়।

তিন. মাহফিল শেষে খবার বিতরণের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর রুহে ছওয়াব পৌঁছানো হয়।

উক্ত দুই ব্যক্তির ব্যাপারে ইতিহাসবিদদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে যে, তারা কোন শ্রেণীর লোক ৷
কোন ইতিহাসবিদ তাদেরকে ফাসেক (পাপাচারী) ও কাজ্জাব (মিথ্যাবাদী) বলেছেন। আবার কেউ তাদেরকে ন্যায়পরায়ণ ও বিশ্বস্ত বলেছেন।

যেই কাজ ছাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) ও তাবেয়ীদের জামানায় হয়নি, যেই কাজ ইসলামের প্রথম ছয় শতাব্দীতে হয়নি, বর্তমানে সেই কাজ কীভাবে ইসলামের উৎসব বলা হয় ! এবং এই বানোয়াট উৎসব পালনকারীদের কীভাবে 'আশেকে রাসূল' বলা হয়!
আর যারা এই নবসৃষ্ট উৎসব পালন করেনা তাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর শত্রু মনে করা হয়!
(নাউযুবিল্লাহ)

কথিত 'আশেকে রাসূল' এর দল কখনো এই চিন্তা করেছে যে, ইসলামের পূর্ণতার ঘোষণা তো দেয়া হয়েছে আরাফাহর ময়দানে বিদায় হজ্বের ভাষণে ৷ এরপর কোন নবী এসে এমন একটি বিষয়কে ইসলামের উৎসব ঘোষণা দিয়েছে, যার ব্যাপারে মুসলমানগণ ছয় শতাব্দী যাবত অনবগত ছিল?

ইসলাম কি কারো বাপ-দাদার সম্পত্তি যে, যখন ইচ্ছা, তখন কোন বিষয় সংযোজন করা হবে এবং যখন ইচ্ছা, তখন কোন বিষয় বিয়োজন করা হবে!

ইসলামের পূর্ববতী সম্প্রদায়গুলোর মাঝে তাদের সৎ ব্যক্তি এবং ধর্ম প্রণেতাদের মৃত্য বার্ষিকী পালন করার প্রথা ছিল ৷ যেমন, খৃস্টানরা হযরত ঈসা (আঃ) এর জন্ম দিবসে "ঈদে মীলাদ" (জন্মদিনের আনন্দ) পালন করতো ৷
পক্ষান্তরে, ইসলাম এর থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত ৷ ইসলাম এসব প্রথা বিলুপ্ত করেছে ৷
এক্ষেত্রে দুটি হিকমত রয়েছে ৷

১) সারা বছর যা করা হয়, এসবের সাথে ইসলাম ধর্মের আহবান এবং মৌলিক বিষয়ের কোন সম্পর্ক নেই। এবং ইসলামে এসব বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করতেও বলা হয়নি।

২) অন্যান্য ধর্মের মত ইসলাম ধর্মে বিশেষ কোন দিবস পালনের প্রথা রাখেনি। বরং ইসলাম হল উত্তম একটি বৃক্ষ, যার ফল ও ছায়া সর্বক্ষণের জন্য। এব্যাপারে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, اكلها دائم و ظلها (অর্থঃ তার ফল ও ছায়া স্থায়ী) ৷
ইসলামের আহবান নির্ধারিত কোন দিনের সাথে বিশেষিত নয় ৷ বরং তা সবসময়ের জন্য ৷

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্ম দিবস পালনের প্রথা যদিও সপ্তম শতাব্দী থেকে পালিত হয়ে আসছে এবং পরবর্তীতে তাতে অনেক বিষয় যোগ করা হয়েছে, তবুও কেউ এই দিবসকে "ঈদ" নাম দেয়নি ৷ কেননা, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "আমার কবরকে তোমরা ঈদ বানিও না" ৷
কিন্তু কয়েক বছর যাবত এই দিনকে "ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ)" নামে নামকরণ করা হয়েছে ৷

পৃথিবীর কোন্ মুসলমান জানে না যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুসলমানদের জন্য দুই দিনকে (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা) ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন?

যদি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্মদিবসকে "ঈদ" বলা সঠিক হতো এবং ইসলামী আদর্শের সাথে কোন সম্পর্ক থাকতো, তাহলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজেই ঐ দিনকে "ঈদ" বলতেন ৷
আর যদি তা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট পছন্দনীয় হতো, তাহলে শুধু তিঁনিই না, বরং খোলাফায়ে রাশেদীন (রাঃ) তাঁর জন্মদিবসকে ঈদ মনে করে ঈদে মীলাদুন্নবী (সাঃ) মাহফিলের আয়োজন করতেন ৷ কিন্তু ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) আমাদের চেয়ে অধিক রাসূল প্রেমী হওয়া সত্ত্বেও এমনটি করেননি ৷

জেনে রাখা উচিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্ম তারিখের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে ৷ কেউ বলেছেন ৯ ই রবিউল আউয়াল, কেউ বলেছেন ৮ই রবিউল আউয়াল ৷ তবে প্রসিদ্ধ হল ১২ই রবিউল আউয়াল ৷
কিন্তু, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মৃত্যু ১২ই রবিউল আউয়াল, এ ব্যাপারে কোন মতবিরোধ নেই ৷

আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্মদিন পালন করছি এমন দিনে, যেদিন তাঁর মৃত্যুবরণ করার ব্যাপারে কোন মতবিরোধ নেই ৷
কেউ যদি প্রশ্ন করে যে, আমরা ১২ই রবিউল আউয়াল ঈদে মীলাদুন্নবী (সাঃ) পালন করি তাঁর জন্মের কারণে, না তাঁর মৃত্যুতে খুশি হয়ে?
তখন আমরা কী উত্তর দিবো?

এই দিনকে 'ঈদ' বলাটা সাধারণ কোন ব্যাপার নয় ৷ এটা ইসলাম ধর্মে পরিবর্তন সাধন ৷ কেননা, ঈদ শব্দটি ইসলামী পরিভাষা ৷ আর ব্যক্তিগত মতামতের কারণে নবসৃষ্ট কোন বিষয়ে ইসলামী পরিভাষা প্রয়োগ করাটা ইসলামে পরিবর্তন সাধন ৷ তাই, এর থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক ৷

সর্বশেষ, ঈদে মীলাদুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে আয়োজিত মাহফিল ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়, তা সম্পূর্ণ অপচয় ৷ এবং ঈদে মীলাদুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে যেসব বানোয়াট প্রথা বর্তমানে প্রচলিত, তা ইসলামী আদর্শের পরিপন্থী ৷ ইসলাম কখনোই এসব সমর্থন করে না ৷
তাই, ঈদে মীলাদুন্নবী (সাঃ) পালন করা থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত ৷
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২৫
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×