একদা মালবেরি গাছের লাল বর্ণের বেরিসমুহ ছিলো তুষারধবল। বর্ণ-পরিবর্তনের কাহিনীটির সাথে জড়িয়ে আছে এক অদ্ভুত ও দুঃখময় ঘটনা।
পাইরিমাস এবং থিসবি, সমগ্র প্রাচ্যে ছেলেটি ছিলো সবচেয়ে সুদর্শন যুবক এবং মেয়েটি ছিলো সবচেয়ে সুন্দরী কুমারী। তারা বাস করত রানী সেমিরাসের নগরী ব্যাবলিনে, যেখানে বাড়িগুলো এমন লাগোয়া ছিলো যে একটি দেয়াল দুটি ঘরের জন্য সাধারন রূপে ব্যাবহার হত। এত কাছাকাছি বড় হতে হতে তারা পরষ্পরকে ভালোবাসতে শিখলো। তারা স্বপ্ন দেখেছিলো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার; কিন্তু তাদের পিতামাতা এতে বাদ সাধলো। কিন্তু প্রেমকে তো দমিয়ে রাখা যায় না। এর লেলিহান শিখাকে যত বেশি নির্বাপিত করার চেষ্টা করা হয়, এর দহন তত তীব্রতর হয়। আর প্রেমের মিলনের জন্য কোনো না কোনো একটি পথ সর্বদাই খোলা থাকে। এদের দুজনকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা ছিলো অসম্ভব।
উভয় গৃহই যে দেয়ালটিকে সাধারন হিসাবে ব্যাবহার করতো তাতে একটি সরু ছিদ্র ছিলো যেটি আগে কেউ লক্ষ্য করেনি। কিন্তু এমন কিছু নেই যা প্রেমিক-প্রেমিকার চোখ এড়িয়ে যায়। আমাদের দুই তরুন-তরুনী এটি আবিষ্কার করলো। এবং এর সাহায্যে তারা কথা বলতো। যে দেয়ালটি তাদের পৃতঃক করে রেখেছিলো সেটিই তাদের যোগাযোগের মাধ্যম হলো। "কিন্তু তুমি না থাকলে আমরা তো পরষ্পরকে স্পর্শ করতে পারতাম,চুমু খেতে পারতাম" তারা বলতো। "কিন্তু তুমি আমাদের কথা বলতে তো দাও। তুমি এমন একটি পথ করে দিয়েছো যা দিয়ে ভালোবাসার কথাগুলো পৌঁছে যায় ভালোবাসার কানে। আমরা অকৃতজ্ঞ নই।" কাজেই তারা কথা বলতো এবং রাত্রি ঘনিয়ে এসে যখন তাদের বিচ্ছিন্ন করে দিত তখন তারা প্রত্যেকেই চুম্বন স্পর্শ দিত দেয়ালের উপর যা অপর পাশের আরেকজনের ঠোঁটে পৌঁছাতে পারতো না।
একদিন তাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলো। তারা সিদ্ধান্ত নিলো যে তারা সে রাতেই পালিয়ে যাবে। তারা "নিনাসের সমাধি" নামক স্থানে একটি গাছের নিচে মিলিত হবে। এটি ছিলো তুষারধবল বেরি ফলে পরিপূর্ণ একটি দীর্ঘ মালবেরি গাছ,যার নিকটে ছিলো একটি শীতল ঝর্নাধারা।
অবশেষে সমুদ্রের অপর প্রান্তে অস্ত গেলো সূর্য এবং জেগে উঠলো রাত্রি। রাতের অন্ধকারে থিসবি চুপিসারে বেড়িয়ে পড়লো এবং রওনা দিলো সমাধির দিকে। পাইরামাস তখনো আসেনি; তবু সে তার জন্য অপেক্ষা করলো। কিন্তু চাঁদের আলোয় হঠাৎ সে একটি সিংহীকে দেখতে পেলো। এটির চোয়াল ছিলো রক্তাক্ত। থিসবি ভয়ে দৌড় দিলো কিন্তু তার ওড়নাটি পড়ে গেলো নিচে। সিংহীটি সেটি দেখতে পেয়ে মুখে তুলে নিলো এবং বনে অদৃশ্য হয়ে যাবর আগেই এটিকে ছিড়ে ফেললো। কয়েকমিনিট পরে এসে পাইরামাস থিসবির রক্তমাখা ওড়না এবং ধুলোর মাঝে সিংহের পদচিন্হ দেখতে পেলো। সন্দেহের অবকাশ রইলো না যে থিসবি বেঁচে নেই। পাইরামাস তার ভালোবাসা দিয়েছিলো এক স্বল্পবয়সী কুমারীকে যে একাকী এসেছিলো বিপদসংকুল এক স্থানে এবং সে সেখানে আগে পৌঁছাতে পারেনি তাকে রক্ষা করার জন্য, পাইরামাস বললো "আমিই তোমাকে হত্যা করেছি" । সে তুলে নিলো থিসবির রক্তমাখা ওড়না এবং বারবার একে চুম্বনে সিক্ত করে নিয়ে গেলো মালবেরি গাছের নিকট। সে বললো " এখন, তুমিও আমার রক্তপান করবে।" সে তার তরবারি বের করলো এবং বিদ্ধ করে দিলো তার নিজের দেহে। তার রক্ত ফিনকি দিয়ে উঠয়ে বেরি ফলগুলোকে রাঙিয়ে তুললো গাঢ লাল রঙে।
থিসবি যদিও সন্ত্রস্ত ছিলো সিংহীর কারনে, আরো বেশি ভীত হয়ে পড়েছিলো তার প্রেমিককে হারানোর ভয়ে। সে তাদের অভিসারের সেই বৃক্ষটির কাছে যাওয়ার দুঃসাহস দেখালো। সেখানে একটি বৃক্ষ ছিলো কিন্তু তার শাখাপ্রশাখায় ছিলোনা ধবল রঙের সামান্যতম ছোঁয়াও। মুহূর্তপরেই সে পাইরামাসকে দেখতে পেলো রক্তস্নাত এবং মৃতপ্রায় অবস্থায়। সে তার কাছে ছুটে গেলো এবং তাকে দু বাহুতে জড়িয়ে ধরলো। সে তার শীতল ঠোটে চুমু খেলো এবং তাকে মিনতি করলো তার দিকে তাকানোর জন্য, তার সাথে কথা বলার জন্য। পাইরামাস একবারের জন্য চোখ খুললো অতঃপর মৃত্যু এসে সেই চোখ দুটিকে বন্ধ করে দিলো চিরতরে।
থিসবি দেখতে পেলো পাইরামাসের তরবারিটি তার হাত থেকে নিচে পড়ে আছে এবং এর পাশে পড়ে আছে তার নিজের শতছিন্ন ও রক্তাক্ত ওড়নাটি। তার বুঝবার আর কিছু বাকি রইলো না। " তুমি নিজ হাতে নিজেকে এবং আমার জন্য আোমার ভালোবাসাকেও হত্যা করলে। আমিও হতে পারি সাহসী। আমিও ভালোবাসতে পারি। কেবল মৃত্যুরই ক্ষমতা আছে আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করার। এটিরও এখন সেই ক্ষমতা থাকবে না। " সে তরবারিটি বসিয়ে দিলো নিজের হৃদপিন্ডে যা তখনও ভেজা ছিলো তার প্রিয়তমের রক্তে।
অবশেষে দেবতারা সহানুভুতিশীল হলেন এবং প্রেকিম যুগলের পিতা-মাতাও। গাঢ লাল বর্ণের মালবেরি ফল হলো এই প্রকৃত প্রেমিক-প্রেমিকার চিরস্থায়ী স্মৃতি যাদের মৃত্যুও আলাদা করতে পারেনি।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:০৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




