somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাইরে চাকরী, হাইরে আমার কর্মজীবন!!

২২ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে এসেছি। মাত্র দুই রাত বাড়িতে থাকার সুযোগ হয়েছিল। যখন বাড়ি থেকে আসি তখন সবাই মোটামুটি ভালোই আছে। আব্বা আম্মা সামান্য অসুস্থ, বৃদ্ধ বয়সে যেমন হয় আর কি। নানা ধরণের রোগ তো লেগেই আছে। একটা ছাড়ে তো আরেকটা জুড়ে বসে। তবুও ভালোই আছে কোনরকম আগের চেয়ে। ছোট ভাইটি গত মাসেই হাসপাতালে প্রায় দুই সপ্তাহ থেকে এখন মোটামুটি সুস্থ। ঠিকঠাক অফিস করছে। ডাক্তারের পরামর্শক্রমে ওষুধপত্র খাচ্ছে। ধরতে গেলে ভালোই দেখে আসলাম। আমি যথাসময় নিজের কর্মস্থলে এসে হাজির হলাম, তখন রাত প্রায় নটা বাজে। সেদিন আর ফোন দেওয়া হলো না বাড়িতে, যদিও প্রতিবার বাড়ি থেকে এসে পৌঁছেই ফোন দিয়ে জানিয়ে দেই যে, এসে পৌঁছেছি। তাতে সবারই একটা চিন্তা দূর হয়। কিন্তু, এবার কেন যেন ফোন দেওয়া হলো না! যাক, ফোন না দেওয়া তেমন কিছু চিন্তার কারণও নেই, কারণ, আমাকে নিয়ে কেউ তেমন একটা চিন্তাভাবনা করেও না। কিন্তু, আমার চিন্তা হয় প্রায় সবাইকে ভেবেই। বাড়ি থেকে আসার পর বাড়ি হতে পরিচিত করোর ফোন রিসিভ করতে ভয়ই লাগে। না জানি কোন খবর শুনতে হয়। মনের মধ্যে অজানা সব চিন্তা বাসা বাঁধে।

এবার বাড়ি থেকে আসার পরেরদিন গতকাল ফোন দিলাম বৌ এর কাছে। প্রথমে সবই ঠিকঠাক মনে হলো। কিন্তু শেষে সবার কথা জিজ্ঞেস করতেই বললো, মনি হাসপাতালে। কথাটা শুনেই ফোন কেটে আমি আম্মার মোবাইলে ফোন দিয়ে শুনতে পারি, আমি যেদিন আসছি ওই দিন রাতেই ছোট ভাইটার বুকের ব্যথায় চিৎকারে আব্বা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করিয়ে এসেছে। জিজ্ঞেস করলাম এখন কে আছে, আম্মা বললো তোর বাপ ছিল, এখন মনির বৌ আছে। বাড়িতে লোকেরও অভাব। লোক বলতে বৃদ্ধ বাবা মা আর ছোট ভাইটিই। আমার বউ থাকলেও সে না থাকারই মতো। তার দ্বারা কোন সহযোগিতা আশা করাই বোকামি। যাক, সে বিষয়ে বলতে গেলে অনেক ইতিহাস হয়ে যাবে। মা'র কাছ থেকে ফোন কেটে গ্রামে এক চাচাত ভাইয়ের কাছে ফোন দিলাম যে, সে যদি একটু হাসপাতালে আসে তো। সাদ্দামের কাছে ফোন দিতেই সে বলছে আমি যাচ্ছি নয়ন ভাই, জেঠি আমারে ফোন দিছিলো। আমি একটু স্বস্তি পেলাম। কিন্তু এই স্বস্তি রাতে আবার অস্বস্তিতে পরিণত হলো। আম্মার কাছে ফোন দিয়ে জানতে পারি মনিকে জেলা হাসপাতাল থেকে ময়মনসিংহ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সঙ্গে সাদ্দাম আর মনির বৌ আছে শুধু। সাদ্দাম ছোট হলেও হাসপাতালের অনেক কিছুই জানে। গতবারও সে গেছিল মনির সাথে। মনে ভীষণ চিন্তা। কি হবে। ছোট ভাইটির কথা মনে পড়লেই বুকটায় খুব যন্ত্রণা শুরু হয়, চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে। আজ সকালে ফোন দিয়ে কাঁন্না আর ধরে রাখাই কষ্টের। আরও চিন্তা হচ্ছে সাদ্দাম নাকি চলে যাচ্ছে, তার আগামী কাল কি যেন পরীক্ষা। সে একটা ডিপ্লোমা কলেজে পড়ছে। তাই চলে যাচ্ছে। এখন শুধু মনির বৌ আছে। সেও চলে যেতে চাচ্ছে। পিচ্চি মেয়েটিকে বাড়িতে রেখে এসেছে। তাছাড়া দুই রাত দুই দিন হাসপাতালে ঠিক মতো ঘুমোতেও পারেনি। তার বাড়িতে যাওয়া জরুরি হয়েই পড়েছে।

সাদ্দামের কাছে তার চলে যাওয়া শুনে ফোন দিলাম বড় ভাইয়ের কাছে। নূর ভাই বললো, তার আজ যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু যেতে পারছে না। কারণ, আগামী কাল তার অফিসের কি এক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। আমার মাথাটা আরও নষ্ট হয়ে গেল। চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিনা। সঙ্গি সহকর্মীদের পরামর্শ অনুযায়ী আমার ইউনিট ইন্চার্জ কে বললাম বিস্তারিত। সে বললো দেখছি ফোন দিয়ে। কোথায় ফোন দিবে বোঝতে পারলাম না। যাক, তবুও বেরিয়ে এলাম। এসে গোসল করে মোটামুটি রেডি হয়ে আবার গেলাম। এর ফাকে দশ দিনের মঞ্জুর ছুটির ডিও সংগ্রহ করে রাখলাম। তো স্যারকে এবার ছুটির ডিও দিয়ে বললাম। সে এবারও বলছে চেষ্টা করলাম ফোন ধরছে না। দেখি আবার চেষ্টা করে। বেরিয়ে এলাম। মাথায় কিছু কাজ করছে না। কি করবো এখন। ছোট ভাই হাসপাতালে একা শোয়ে আছে, বাঁচা মরা প্রশ্ন। পাশে কেউ নেই।

কিছুক্ষণ পর আবারও গেলাম স্যারের কাছে, সে এবার বলছে অন্য সুরে। সোজা বলে দিচ্ছে ছুটি বন্ধ। আমি তো অবাক আর বিস্মিত হয়ে রইলাম। কোন লোক ছুটিতে নেই বর্তমানে। তো আমাকে ছাড়া তার পক্ষে কোন বাঁধাই নেই। তবুও জিজ্ঞেস করলাম, স্যার কেন বন্ধ কি যেনো বললেন বুঝিনি। সে এবার রাগম্বিত স্বরে বলছে, দুই দিন হল আসলেন, আবার আপনাকে ছাড়তে পারবোনা। আমি বললাম, আমার প্রয়োজন তাই ছুটি যাওয়া দরকার। ছোট ভাই হাসপাতালে, তার কাছে থাকার মতো কেউ নাই। সে বললো বাড়িতে সমস্যা থাকলে ম্যাসেজ দিবে। আমার মুখে আর কোন কথা বের হচ্ছে না। সে কিসের ম্যাসেজ দেওয়ার কথা বোঝাতে চাইল?! রাগে ক্ষোভে দুঃখে চুপ হয়ে রইলাম। ভাবছি এখন কি করবো! এর সাথে কি ঝগড়া করবো! না, চুপ হয়েই রইলাম। মনের অবস্থা খুব খারাপ। কিছুই আর ভালো লাগছে না। বিছানায় শোয়ে রইলাম বেশকিছুক্ষণ। তারপর, আবার বড় ভাইকে ফোন দিলাম, নূর ভাই আমাকে তো ছাড়ছে না। সে বললো থাক, তোর যাওয়া দরকার নেই। আমি যাচ্ছি এখন। আগামীকাল এসে কাজ সেরে আবার যাবো। আমার মনে সামান্য একটু স্বস্তি এলো।

বিকাল সাড়ে চারটার দিকে আমার ফোন বাজছে। ফোন বের করে দেখি মনির ফোন। তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করলাম। কেটে দিয়ে ব্যাক দিবো যদি কানেক্ট না পাই, তাই রিসিভ করে কানে ধরেই ছোট ভাইকে শান্তনা দিতে লাগলাম। ওপাশ থেকে বলছে, ভাই, আমি মনে হয়ে বাঁচবো না, ভাই আমাকে বাঁচাও....। তুমি আব্বাকে একটু বল। আমার বুকের ভিতর আগুন জ্বলছে তখন। বোঝতে পারলাম, কেউ বুঝি তার সাথে নাই। তবুও জিজ্ঞেস করলাম, তোর সাথে এখন কে আছে। সে বললো কেউ নাই নূর ভাই আসছে তাই শাপলা চলে গেল বাড়িতে। আমি বললাম, হ, নূর ভাই যাইতেছে। তুই কোন চিন্তা করিস না। আমি আব্বা আম্মার সাথে কথা বলেছি। তোর কিচ্ছু হবে না। প্রয়োজনে মাদ্রাজ নিয়ে যাবো তোকে। তুই কোনরকম চিন্তা করিস না। নূর ভাই যাচ্ছে। আমি যেতে চেয়েও যেতে পারলাম না। কোন চিন্তা করিস না। ফোন কেটে দিলাম। মনের অবস্থা কি করে বোঝাবো। বারবার কেবল ভেসে ওঠছে, 'ভাই আমাকে বাঁচাও, আমি মনে হয় বাঁচবো না'।

কিছুক্ষণ পর বড় ভাইয়ের কাছে ফোন দিলাম। সে ততক্ষণে হাসপাতালে পৌঁছে গেছে। শুনে একটু শান্তি লাগছে। তখন আর কান্না চেপে রাখতে পারলাম না। বেশিক্ষণ কথা বলতে পারলাম না। ফোন কেটে দিয়ে কিছুক্ষণ কাঁদলাম একা একা। খুউব আফসোস হচ্ছে। হাইরে চাকরি! হাইরে আমার কর্মজীবন! বাবার কথা যদি ছোট সময় শুনে ঠিকমতো লেখাপড়া করতাম, তাহলে আজ ভালো একটা চাকরি করতাম। যেখানে নিজের ছোট ভাইকে হাসপাতালে দেখার সুযোগ অবশ্যই পেতাম।। খুব ঘৃণা হচ্ছে নিজের প্রতি, নিজের চাকরির প্রতি। আমার কান্না আর আত্ম কষ্টের কোন মূল্য নাই এখানে !!!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৩১
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×