তুই যে আমার সুখের পাখি,
তোকে আমি কোথায় রাখি।
মনের খাঁচায় যতন করে,
রাখবো তোকে ভালোবেসে।
ভুল বুঝিয়া যাস’না দূরে,
দিস’না রে তুই আমায় ফাঁকি।
সকাল বিকাল মনের ঘরে,
দেখি আমি শুধুই তোরে।
তুই ছাড়া এই ত্রিভুবনে,
কে আছে আর আমায় বোঝে।
কাছে দূরে যেথায় থাকি,
তোকেই আমি ভালোবাসি।
তুই যে আমার সুখের পাখি।।
নিশি জাগি একলা ঘরে,
তুই যে থাকিস অনেক দূরে।
পারিনা তোর পাশে যেতে,
যদি আমায় দাও ফিরিয়ে।
প্রতি রাতে একলা কাঁদি,
তোরে ছাড়া কেমনে থাকি।
তুই যে আমার সুখের পাখি।।
কতটা ভালোবাসা আর বিরহ ছিল তা কি আর পুরোপুরি বোঝানো যায়…। উপরের লেখাটি সম্ভবত ৯৭ বা ৯৮ সালের মধ্যেই লিখেছিলাম। এই কবিতার মতো লেখাটা দেখে মোটামুটি বুঝেছি, বিরহ যাতনা আর কিসের এত কষ্ট প্রতিটি পাতা জুড়ে। তার প্রেমে যেমন সুখী মনে করেছি, আবার তাকে হারানোর ভয়েও পুড়েছি প্রতিনিয়ত। রাত হলে ঘরে একা একা ভাবতাম আর কাঁদতামও অনেক সময়। দুই পরিবারই আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে বিরোধী ছিল। তার ফ্যামিলি নিয়ে যতটা না ভাবতাম তারচেয়েও বেশি ভয়ে ছিলাম আমার ফ্যামিলি নিয়ে, আমার আব্বাকে। কান্নার কারণটা এটাও একটা বড় কারণ ছিল। আমার কাছে মনে হতো, আমাকে নিয়ে আমার সুখের চিন্তা কেউ করেনা। না ভালোবাসার মানুষ, না আমার পরিবারের কেউ। তাই, তখন ভালোবাসার সুখ যেমন ছিল, বিরহ কষ্ট আর হারানো ভয়ে আমাকে পুড়তে হয়েছে সবসময়।
নিচের লেখাটি মনে আছে ২০০২ইং সালের শেষদিকে লিখেছিলাম। তখন ঢাকায় থাকি। তখন আমি বিয়ে করেছি। কিন্তু, বিয়ের পরও কেমন যেন অসুখী মনে হয়েছিল নিজেকে। আর এই অসুখী ভাবটা আমার অনেকদিন পর্যন্ত পুড়িয়েছে। জীবনের প্রথম ভালোবাসা হারানোর পর যতো প্রিয় আর আপনজনের সঙ্গেই থাকা হোক, সেই প্রথম প্রেম হারানোর যন্ত্রণা কভু শেষ হতে চায় না। অনেকেই পারে নিজেকে পাল্টে নিতে। কিন্তু, আমার মতো অনেকেই হয়তো ভুলতে পারেনা…..! সেসময়ের কি সব অদ্ভুত চিন্তা মাথায় ঘুরেছে তা নিচের লেখার প্রশ্ন গুলোতে সামান্য আচ্ করা যেতে পারে….
মিলেনা….
মানুষ কিসের আশায় পথ চলে বলতে পারেন…?
কেউ কি কখনো চলার শেষ খুঁজে পায়….!
আচ্ছা, বিশ্বাস কি…?
এটা কি টাকায় পাওয়া যায কখনো…?
নয়ন অনেক আশার মালা গাঁথে
মনের ঘরে চুপিচুপি।
নয়ন একটা নিরাপদ আশ্রয় চায়,
চায় ভালোবাসার মতো নিষ্পাপ একটি মন।
এখনো সে আশায় পথ চলতে চায়…।
নয়ন নিরাশ আর হতাশার ছত্রছায়ায় পড়ে আছে।
কিন্ত কেন….?
আচ্ছা- কেউ যদি প্রতারণা করে,
নয়ন কেন পারেনা
তার ভালোবাসার সাথে প্রতারণা করতে…?
অনেকেই তো মনের মূল্য দেয় না,
তারা তো ভালোই থাকে সবার কাছে…!
নয়ন যে সত্যিই প্রতারিত তাতেও তার সন্দেহ,
এটা শুধু তার মনের ভ্রান্ত ধারণা মাত্র।
এটা কি সত্যি নাকি ভুল…?
আচ্ছা, আকাশে যদি মেঘ জমে
তাহলে হয়’তো বৃষ্টি ঝরবে ভাবাই যায়।
মাঝেমাঝে ঝড়ও তো নেমে আসে…!
আবার সেই মেঘ সরে সূর্যও তো ভাসে আকাশে।
মিলছে না, নয়নের কিচ্ছু আর মিলেনা,
এর কোন উত্তর খুঁজে পায় না….!
আরেকটা পাতায় দেখি, কিছু স্মৃতিচারণা করা। এর কিছুদিন আগেই আমরা গিয়েছিলাম পাহাড়ে ঘুরতে। তিনদিন দুই রাত্রির অনেক মধুর স্মৃতি যেমন আছে তেমনি অনেক কষ্টও আছে মিশে। তার কয়েক মাস পরেই তার সাথে আমার সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়। আমাকে সে ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। সেই সময়টা আমাকে অনেক পুড়িয়েছে। সে আসবে আমার কাছে যেমন বিশ্বাস ছিল মনে, তেমনি ভয়ও ছিল প্রচুর। যদিও প্রায় সাত বছরের সময়ে আমার সাথে অনেকবার সে অভিমান করে চলে গেছে। কিন্তু থাকতে পারেনি কোনওসময় বেশিদিন। ঠিক কিছুদিন পর ফিরে এসেছে আমার বুকে। বলেছে, আমার ভুল হয়েছে, তুমি রাগ করো না প্লীজ। তার এইরকম ফিরে আসাতে সবসময় আমার সব বিরহ কষ্ট যন্ত্রণা মুহূর্তেই হারিয়ে গেছে। সুখের স্বপ্নে মেতেছি আবার দুজনা….
নিচের লেখাটি ২০০০ই সালের ফেব্রুয়ারির শেষদিকে লিখেছিলাম। আবারও মিনতি রাগ করে চলে যাওয়ার পর সময়টুকুতে।
এই’তো সেদিন
এই’তো সেদিন
দুজন বসেছিলাম ঝর্ণার পাশে।
তোমার কুলে মাথা রেখে শুয়েছিলাম।
একা থাকার বিরহ যন্ত্রণার কথাগুলো বলতেই,
দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল জল।
সেদিন, কতনা সোহাগে মুছে দিলে চোখদুটি…।
দুজনার বুকে ছিল গভীর ভালোবাসা,
দুচোখে স্বপ্ন ছিল, মনে কতো আশা…
এখনো মনে হয় সেই দিনগুলি।
এত মধুর সেই ক্ষণ মাত্র কয়দিনেই
মুছে গেল ওই পাষাণ হৃদয় থেকে!
আমি তো পারিনা,
কি করে বলো সেই সুখটুকু ভুলি…!
চলে গেলে তুমি
দিয়ে গেলে একবুক হতাশা।
এই মন পুড়িয়ে, সব স্মৃতি মাড়িয়ে,
সেই সুখ প্রেম তুমি,
এত সহজেই কিভাবে পারো ভুলতে…!
বলেছিলাম বাবা তোমার হবে না রাজি।
তুমি শান্তনা দিলে, তাতে হয়েছে’টা কি…
আমি তো আছি, থাকবো তোমারি,
জীবন মরণে তোমাকেই মানি গো স্বামী।
ওগো আমার সুখের পাখি….
সেই কথাগুলো কি আর এখন
হয় না তোমার মনে…?
সে যখনই আমার সাথে অভিমান করে চলে গেছে, আমার দুনিয়া বিষাদে ভরে থাকতো তার ফিরে আসার আগ পর্যন্ত। মনের কষ্টগুলো একমাত্র কাছের বন্ধুরাই বুঝতো। আর যদি কেউ বুঝতো সে ওই উপরওয়ালা। রাত গভীরেও বসে থাকতাম খোলা আকাশের নিচে। গাইতাম আছে যতো বিরহের গান। মাঝেমধ্যে নিজের কথাগুলোও সাজিয়ে গান গাইতে চেষ্টা করতাম। তেমনি একটি গানের মতো হয়তো সাজাতে চেয়েছিলাম হয়তো, লেখা দেখে তেমনই মনে হচ্ছে….
নিচের লেখাটা ১৯৯৮ইং সালে লেখা, তারিখটা উল্লেখ না থাকায় দিতে পারলাম না।
হৃদয়ের কান্না
পিরিতি পিরিতি বিষম পিরিতি
পিরিতি গলার মালা।
অন্তর পুড়িয়া কয়লা করিয়া
বাড়ায় মনের জ্বালা।।
নয়নে রাখিয়া তোমার ও’নয়ন
বলেছিলে তুমি জীবন ও মরণ।
কি সুখের আশায় আমাকে ভুলিয়া,
অন্যের বুকে আজ বাঁধিলে বাসা।।
ভালোবাসার এক রঙিন মহল
ভাঙিয়া দিয়ে গেলে তুষেরি দহন।
কেন’রে এতো হইলে পাষাণ,
পৌঁছে না কি এই হৃদয়ের কান্না।।
‘৯৮ইং সালে প্রায় ৭/৮ মাস তার সাথে আমার দেখা হয়নি। কোন যোগাযোগ করতে পারিনি তার সাথে। সেই নরকস্থ সময় গুলোই আমার প্রতি তার ভুলটা আরো বৃদ্ধি করে শেষে। কিন্তু আমার সেই কষ্টের দিনগুলো সে বুঝেনি। আমার জীবনে ধ্বংসের পথ সেই সময়েই পাকাপোক্ত হয়। দিনরাত আমাকে নেশায় ডুবে থাকতে হয়েছে। আজও সেই দিনগুলি চোখে অশ্রু এনে দেয়। কোথায় না গিয়েছিলাম তাকে দেখার জন্য। মিলেনি, কোথাও তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার সুযোগ। তাকে ভুলে থাকতে করতে হয়েছে অনেককিছু…. আর সেই ভুলেই ভুল বোঝে সে গেছে গেছে আমার সীমানা ছাড়িয়ে….! শেষ পর্যন্তও তাকে আর বোঝাতে পারিনি… সে বোঝতে চায়’নি……
৩০-৩-২০০০ইং তারিখ লেখা নিচের কথাগুলো, সেদিন মরণটাই কাম্য ছিল….
সেই শীতল দিন গুলো পেরিয়ে
আমি আজ বাস্তবতার নির্মমতায়
একবুক যন্ত্রণায় ডুবে আছি।
এই জীবনে আর কি আশা করবো!
আমার আশার দিনগুলো মুছে দিয়ে গেছে
কোনএক বেদনার প্লাবন।
মিথ্যা আর প্রতারণাই আমার জীবনে
প্রতিদান হয়ে ধরা দিল…।
ভালোবাসার প্রতিদানে ছলনা
আমার জীবন অংশ হলো।
আজ মনে পড়ে
আমার ভুল ধারণা, ভুল বিশ্বাস
আমাকে কতটা পিছিয়ে দিয়েছে জীবন থেকে।
আমি বোবাকান্নায় অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছি।
হাইরে অবুঝ মন- তোর চাওয়াটাই ভুল
ভুল তোর ভালোবাসা….!
সুখ, তুই বড়ই কঠিন জিনিশ
যেন সোনার পাখি…!
মরণটাই কাম্য রইল…..
আমি আজও দিব্যি বেঁচে আছি। এখন এই বোকা বোকা কথাগুলো দেখে মাঝেমধ্যে হাসি। আবার কখনো হারিয়ে যাই ভাবনার সীমাহীন প্রান্তরে….
তুই ছিলী আমার জীবনের চরম অধ্যায়…। সেই তুই যখন হারিয়ে গেলি…. তাহলে আর কাকে বিশ্বাস করবো…। আমার বিশ্বাস ভেঙে দিয়ে, ভালোবাসা ভুলে গিয়ে- আহত করে রেখে গেলি….!
হে আল্লাহ্! এর বিচার করিস………
(লেখাটুকু ১৪-৪-২০০০ইং তারিখের লেখা)
হা হা হা হাসছি এখন, যাকে এত ভালোবেসেছি তার জন্যও আত্মচিৎকার করে বিচার চেঁয়েছি আল্লাহ্’র কাছে….!
পুরনো ডায়েরী থেকে- নয়ন (পর্ব-১)
দেখা হবে পরের পর্বে আমার ‘পুরনো ডায়েরী থেকে’ নেয়া কথা নিয়ে। আজকের মতো বিদায়….
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৭